#হৃদহরিনী
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ৪
হায়াতিকে বললাম, ওই ডা’ইনি তুই আমার সাথে রিকশায় যাবি কেন? তোর মত পে’ত্নির সাথে আমি যাবোনা। ওরা থাকতে তুই আমার সাথে যাবি কেন? তোরে আমি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করিনা। তুই আমাকে রিকশা থেকে ফেলে দিতে পারিস।
হৃদিতা বললো, আপু তুমি আমার সাথে আসো। অর্ণ ভাইয়া আর নির্ঝর ভাইয়া একসাথে যাক।
হায়াতি বললো, এই ফা’জিল ছেলেটাকে বিশ্বাস নেই। দেখা যাবে ও নির্ঝরকে একা রিকশায় রেখে চলে যাবে।
” ও ভাই কেও আমাকে বি’ষ দাও। এই ডা’ইনি কি বললো এটা৷ আমি নাকি রিকশা থেকে চলে যাবো। কপাল আমার! ওই আমি এত সুন্দর করে রেডি হয়ে আসলাম রিকশা থেকে লাফ দেওয়ার জন্য। তোর মত মনে করিস নাকি সবাইকে।
‘ দিতেও পারিস। তুই তো আর নিজ ইচ্ছায় আমাদের ট্রিট দিচ্ছিস না। তোকে আমরা জোর করে নিয়ে যাচ্ছি। তুই ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে মা’থা ঘুরার, মেমোরি লসের অভিনয় করেছিস। এরপর তো তোকে কিছুতেই বিশ্বাস করা যাবেনা৷ সুযোগ পেলেই তুই পালিয়ে যাবি। নির্ঝরের মত সহজ সরল ছেলে তোর চালাকি বুঝবেনা। তাই আমিই তোর সাথে আসবো। আর তোর অতিত রেকর্ডও খুব একটা সুবিধার না৷
আরিয়া বললো, হায়াতি আপু ঠিক বলেছে। অর্ণ ভাইয়া পালিয়ে যেতে পারে৷ এর আগেও ভাইয়া অনেকবার এরকম চালাকি করে চলে গেছে। হায়াতি আপু অর্ণ ভাইয়ার সাথে আসলে তখন আর পালিয়ে যেতে পারবেনা।
” ওদের কথা শুনে আমি বো’কার মত দাঁড়িয়ে আছি। অতিত রেকর্ড খা’রাপ বলে কি সবসময় এরকম করবো নাকি। এখানে এরকম দাঁড়িয়ে থাকলে আশেপাশের মানুষ মজা নিবে। আমি ওদেরকে বললাম, তাড়াতাড়ি রিকশায় উঠো সবাই। আমার সাথে যে আসার আসুক।
এটা বলেই আমি প্রথমে রিকশায় উঠলাম। হায়াতি রিকশায় উঠতে যাবে তখন বললো, ওই দিকে যাচ্ছিস না কেন। আমাকে কি রিকশা থেকে ফেলে দেওয়ার মতলব করছিস নাকি?
‘ আমি আর আগাতে পারবো না৷ তোর সমস্যা হলে অন্য রিকশায় যা।
তারপর ডা’ইনিটা আমায় জোরে ধা’ক্কা দিলো। আমি একটুর জন্য রিকশা থেকে পরে যাইনি৷ আমি হায়াতিকে বললাম, তুই আসলেই একটা ডা’ইনি,পে’ত্নি, শাঁ’ক’চূ’র্ণী, গোপাল ভাড়ের বউ, বিন্দুমাশী৷ আর একটু হলেই তো আমি পরে যেতাম।
” তুই হলি গোপাল ভাড়ের ওই মন্ত্রীটা। যার মাথায় সব সময় কূ-বুদ্ধি থাকে৷ তোকে ওইদিকে আগাতে বললাম তখন শুনলিনা কেন
‘ আজকে তুই আমায় যা বাঁ’শ দিছোস। এর শোধ আমি তুলবো৷
‘ তুই যে কিছু অনর্থক করবি তা আমি জানি। কিন্তু কথা হচ্ছে আমি কেন জানি এখনও বিশ্বাস করতে পারছিনা তুই আমাদের ট্রিট দিবি। নিশ্চয়ই কোনো প্ল্যান করে রেখেছিস।
‘ আমাকে কি তোর মত মনে হয় নাকি! এসব প্ল্যান করা তোর কাজ। আমি একটা সহজ- সরল,নম্র – ভদ্র ছেলে৷ তোর জন্য আমার রুহাশা চলে গেলো। এখন পর্যন্ত কলও দিতে পারিনি৷
‘ হ্যা,আপনাকে তো নম্র- ভদ্রের নোবেল দেওয়া দরকার৷ তোর কি মনে হয় রুহাশা এখনও তোকে ব্লক করে নায়
” আমার কান্না করতে ইচ্ছা করছে৷ কতটা কষ্ট করে রুহাশাকে পটিয়ে ছিলাম৷ বন্ধুদের ট্রিটও দিতে হয়েছে এর জন্য। তোর জন্য আমার রুহাশা গেলো, রেস্টুরেন্টের বিল দিতে হলো, এখন আবার ট্রিট দিতে হবে৷
‘ তুই তোর বন্ধুদের ট্রিট দিতে পারিস আর আমাদের দিতে রাজি হচ্ছিস না৷ ওয়েট আমি এটা ওদেরকে বললো শুধু রিকশা থেকে নামি আগে৷
” এই রে আবার বাঁ’শ খেয়ে গেলাম৷ আজকে আমি যা বলি সবই আমার বিপক্ষে চলে যায়। আর কথাই বলবোনা। আমার সিচুয়েশন দেখে ডা’ইনিটা হাসতে লাগলো৷ হাসুক সময় আমারও আসবে।
কিছুখন পর***
হায়াতি বললো, কিরে চুপ করে আছিস কেন? মনে মনে আবার কি ফন্দি করছিস৷ রিকশা থেকে লাফিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করছিস নাকি
‘ আমি কি তোর মত বা’নর নাকি যে লাফ দিবো।
‘ দিতেও পারিস। তোকে বিশ্বাস নেই
কপাল আমার!এই ডা’ইনিটা আজকে আমার সাথে বেশি বেশি করছে। জাস্ট একটা সুযোগ পাই আমি। কিন্তু তার আগে ওর সাথে এখন ভালো ব্যবহার করতে হবে। আজকে আব্বু ওকে টাকা দিয়েছে৷ দেখি ওর থেকে কিছু নিতে পারি কিনা। আমি নরম সুরে বললাম, “হায়াতি ”
ডা’ইনিটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ও হয়তো বুঝতে চেষ্টা করছে এটা সত্যিই আমি কিনা। হায়াতি বললো, তোর মতলবটা কি শুনি? এত নরম সুরে ডাকার কারন মিঃ অর্ণ
‘ তোকে কি আমি হায়াতি বলে ডাকতে পারিনা!
‘ আমি নিশ্চিত তোর এর পিছনে কোনো উদ্দেশ্য আছে।
না আর প্যাচানো যাবেনা। এই মেয়ে আমার সব পরিকল্পনা বুঝে ফেলে। সরাসরি বলেই দেই ওকে। বলছিলাম কি আজকে তো আব্বু তোকে টাকা দিলো৷ আমার কাছে যা ছিলো তা তো রেস্টুরেন্টে বিল দিলাম। এখন তুই আমাকে ধার দে আমি তোকে পরে শোধ করে দিবো৷
‘ আগে বলবিনা। আমি তো বাসা থেকে টাকা নিয়ে আসিনি। আগে বললে নিয়ে আসতাম।
‘ বুঝেছি। তুই দিবিনা। কপাল আমার!
‘ তাহলে এই প্ল্যান করেছিস। তোর কি মনে হয় তুই এরকম নরম সুরে ডাকলেই আমি তোকে টাকা দিয়ে দিবো৷
‘ দিবিনা তা তো বুঝেছি। তারপরও যদি দিতিস সেই আশায় বলেছি৷
‘ ওরে আমার প্রত্যাশা রে!
একটু পর আমরা চলে আসলাম। আমি রিকশা থেকে নামার পর হায়াতি বললো, আমার হাত ধর আমি নামবো৷ এখানে আর কিছু বললাম না। ও শাঁড়ি পড়ে এসেছে তাই নামতে সমস্যা হবে। আমি হায়াতির হাত ধরে ওকে রিকশা থেকে নামালাম। রিকশা থেকে নেমে আমি এক হাজার টাকার একটা নোট দিলাম। আমি নিশ্চিত সে এখন ভাঙতি দিতে পারবেনা। খুচরা দিতে বলবে আমাকে। পরে আমিও বলবো, আমার কাছে খুচরা নাই। তখন বাধ্য হয়ে হায়াতির দেয়া লাগবে। এর জন্যই বাসা থেকে খুচরা টাকা নিয়ে আসিনি।
যা ভেবেছিলাম তাই হলো। রিকশাওয়ালা মামা বললো, আমার কাছে ভাঙতি নাই। খুচরা দেন।
তখন আমিও বললাম, আমার কাছেও তো ভাঙতি নাই। এখন এই তিন রিকশার ভাড়া ওই ডা’ইনিটার দিতে হবে৷
হায়াতি রিকশাওয়ালার থেকে টাকাটা নিয়ে বললো, আমার কাছে ভাঙতি হবে৷ হায়াতি এক হাজার টাকা ভাঙতি দিলো রিকশাওয়ালকে৷ আমি হাসবো না কাদবো বুঝতে পারছিনা। হায়াতি আমার দিকে তাকিয়ে ওর সেই বিখ্যাত ডা’ইনি হাসি দিলো। আমাকে বললো, আমি আগেই ভেবেছিলাম তুই এরকম কিছু করবি। তাই আগেই বাসা খেকে খুচরো টাকা নিয়ে বের হয়েছিলাম।
” আমার মনে হয় এই ডা’ইনি ভবিষ্যতে উকিল হবে। আমার সব প্ল্যান আগে থেকেই বুঝে ফেলে। এখন আর কোনো প্ল্যান বাকি নেই। তাদের সব আবদার এখন পূরন করতে হবে৷ আমার পকেটের উপর আজকে সুনামি হয়ে যাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা৷
সবাই কত হাসি- খুশি আর আমি ভাবছি আজকে আমার পকেটের কি অবস্থা হবে৷ হায়াতি আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছে আর ওর সেই বিখ্যাত ডা’ইনি হাসি দিচ্ছে৷ হৃদিতা আমাকে বললো, ভাইয়া তুমি সবার পিছনে কেনো আমাদের সাথে আসো। তুমি এমন ভাবে আছো মনে হয় যেনো অপরিচিত কেও।
” আর সাথে! জীবনটাই বেদনা। প্রেমে ছ্যা’কা খেয়ে আমি দেবদাস হয়ে গেছি! মনের কথা মনেই রাখলাম। ওদেরকে বললাম,আমি পিছনে থেকে তোদের অনুসরণ করছি।
হঠাৎ দেখলাম রুহাশা কোন ছেলের সাথে যেনো কথা বলছে। এটা দেখে হায়াতি আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো। রুহাশা হায়াতিকে দেখে ওর সাথে কথা বলতে আসলো।
চলবে—-