#ফেরার_কোন_পথ_নেই ( এক)
#কলমে #রেহানা_পুতুল
জনরা #সামাজিক
“তুমি আমার প্রথম স্ত্রী। কিন্তু প্রথম ও শেষ ভালোবাসা নয়।”
এহসান অর্থাৎ আমার স্বামীর মুখে একথা শোনার পর আমি কেবল বোকা বোকা চাহনিতে ওর দিকে অপলক চেয়েছিলাম। এ নির্মম সত্যটি যখন আমার কাছে আবিষ্কার হলো। তখন আমার বিয়ের পনেরো বছর হতে চলছে। এই দীর্ঘ সময়ে সংসারে আমার অর্জন নিপুণা বধু। পতিভক্তি ধৈর্যশীলা সতী নারী। গৃহকার্যে অদ্বিতীয়া। পরিপক্ক গৃহরমনী ও মিষ্টিভাষী মানুষ। এবং পরপর তিন সন্তানের মমতাময়ী জননীও হয়ে গেলাম। এতসব কিছুর তকমা পেয়ে আমি সত্যিই হাওয়াই বেলুনের মতো আকাশে ভাসছি।
ভাসতে ভাসতে চোখেই পড়লনা এই আমার। উপলব্ধিই করতে পারিনি বোকার স্বর্গে বাস করা এই আমিটা। এই অসীম ভালোবাসা ও দরিয়াসম বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু যেই মানুষটা,
সে কেন আজকাল সময়ের আগে বাসা থেকে বের হয়ে যায়? দোকানতো খুলবে দশটায় এবং স্টাফ এসে।
কেন সে যেখানে সেখানে ফেলে রাখা মোবাইলটা খুব সন্তপর্ণে রাখে এখন? নিজের হাতে নইলে বুক পকেটে।
কেন সে কয়মাস যাবৎ মা বাবার কবর জেয়ারতের নামে প্রতি সপ্তাহ গ্রামে যায়? এই দুটো কবর তো পাঁচ বছর ধরেই আছে।
কেন চা সিগারেটের নাম করে ঘন ঘন বাসার ছাদে যায়, নিচে বেরিয়ে যায়? আগেতো এমন অভ্যাস ছিলনা তার।
কেন আজকাল বাচ্চাদের সাথে ও আমার সাথে রূঢ় বিহেভিয়ার করে?
বোঝায় ব্যবসায়ীক লেনদেনে মাথা ঠিক থাকেনা।
কেন বাসায় সব খরচ কমিয়ে দিয়ে টানাপোড়েন দেখায় দোকানে লস হচ্ছে বলে?
অথচ দোকান আগের মতই চলছে৷
কেন সে এখন আর আমার…থাক এটা পরেই বলি।
যখন সব বুঝতে পারি। তখন বেলা বেশ গড়িয়ে যায় দিনশেষে অস্তমিত সূর্যের মতন। আমার জীবনের চারপাশে অমানিশার ঘোর আঁধার নেমে এলো। জীবনের রঙিন ঘুড়ির সুতাটা ছিঁড়ে কোন সূদুরে যে হারিয়ে গেল। আমি আর খুঁজে পাইনা। পথ হারা অন্ধ পথিকের মত দিক হাতড়ে বেড়াই আমি।
হৃদপিণ্ডের প্রতি ভাঁজে ভাঁজে ব্যাথার বুদবুদেরা জমাট বেঁধে যন্ত্রণার ফেণা তোলে থেকে থেকে।
আমি শিলা। বর্তমান বয়স বত্রিশ। পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয় আমার। ঢাকায় উত্তরায় আমার ভাড়া বাসা। আমার স্বামীর ব্যবসাও বাসার পাশাপাশি উত্তরাতেই। আমার বড় মেয়ে এশা ক্লাস এইটে পড়ে। বড় ছেলে মাহিন ক্লাস ফাইভে পড়ে উত্তরাতেই। ছোট মেয়ে আয়রাকে স্কুলে দিয়েছি সবে।
সেদিনও ভোরের স্নিগ্ধতা ছিল। আকাশ ভরা তারা ছিল। বারান্দা জুড়ে হলদে রোদের মায়া ছিল। বাগান ভরা ফুল ছিল। সে ফুলে সুবাস ছিল। শাখায় শাখায় কোকিলের কুহুরব উঠেছিল। প্রকৃতিতে রাশি রাশি মায়া ছিল। শুধু ছিলনা কারো হৃদয়ে আমার হৃদয়ের আশ্রয়টুকু।
এহসান ওয়াশরুমে শাওয়ার নিচ্ছিল। সে দেখেছে আমি কিচেনে শত ব্যস্ততায় ডুবে আছি। কোন এক কারণে আমি রুমে যাই। ওর মোবাইলে ভাইব্রেশন হলে আমি কোন কৌতুহল ছাড়াই দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। যদি ওর কোন গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ হয়ে থাকে এই ভেবে মোবাইলটা হাতে তুলে নিই।
আমার দৃষ্টিভ্রম হলো নাকি। একি দেখছি আমি। নাকি কিচেনে রোদের ঝাঁঝ থেকে আসাতে চোখে ধোঁয়াশা দেখছি। মোবাইলে ডার্ক মুড অফ করে ব্রাইটনেস বাড়িয়ে দিলাম। দুবার মেসেজটি পড়লাম।
” এহসান কি করছ? দোকানে গিয়েছ? বাসা ভাড়াটা বিকাশ করে দাও। বাড়িওয়ালা ভাড়া চেয়েছে। তোমার ফোনের অপেক্ষায়। তোমার প্রথম অনুভূতি সুমনা।”
চোর সবসময় চুরি করে পার পেয়ে যায়। কিন্তু একদিন না একদিন গৃহস্থের হাতে ঠিক ধরা পড়ে যায় নিজের অগোচরেই। ছোট বড় কোন প্রমাণ রেখে যায় ভুল করে। কিন্তু এহসান নামক এই নষ্ট অ’ মানুষ চোরটা যখন ধরা খেল। তখন অবিশিষ্ট যে আর কিছুই নেই। আমার নিমিষেই মনে হলো তিন সন্তানের কথা। আমি মোবাইলটি যথাস্থানে রেখে দিলাম। আরেকটি ওয়াশরুমে ঢুকে ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লাম।
#ফেরার_কোন_পথ_নেই ( শেয়ার দিবেন ও মন্তব্য করবেন)