#বিবর্ণ_বৈশাখে_রংধনু
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৮
রুহানীর লেখাগুলো পড়ে রিহা বিরক্তি নিয়ে বলল,
“হোয়াটেবার! তুই কথা বলতে পারিস আর না পারিস তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি শুধু তোর এই ভালো মানুষীর আর ইনোসেন্সের নাটক দেখতে দেখতে টায়ার্ড হয়ে গিয়েছি। তোর এই ইনোসেন্সে সবাই ইমোশনাল ফুল হতে পারে কিন্তু এই রিহা শেখ না। তুই একটা সে*লফিশ!”
রুহানীর খাতাটা বিছানার মধ্যে ছুড়ে ফেলে দিয়ে রিহা চলেই যাচ্ছিল তৎক্ষনাৎ রুহানী রিহার হাত চেপে ধরল। তারপর নিজের দিকে ফেরাল। রিহা রুষ্ট স্বরে বলে,
“আবার কী?”
রুহানী বিছানা থেকে খাতাটা উঠিয়ে তাতে ছোটো করে লিখল,
“দাদাবাড়ি ও নানাবাড়ির দিক দিয়ে আমরা কিন্তু একই র*ক্ত আপু! আর বাকিসব তো মানসিকতার পার্থক্য।”
রুহানী লেখা শেষ করে রিহাকে দিলে রিহা লেখাটা পড়ে রুহানীর দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকায়। কিন্তু রুহানীর ওষ্ঠকোণে ঝুলে আছে মিষ্টি হাসি। রিহা রাগে দরজা খুলে রূঢ়ভাবে টান দিলে দরজার দ্বারা পায়ে ব্যাথা পেয়ে ‘আহ’ করে আর্তনাদ করে উঠলে বাহির থেকে এক পুরুষ কন্ঠ ভেসে আসে।
“এতো রাগ ভালো না, ম্যাম! একটু কম রাগ করবেন। তাহলে আপনারই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। দেখুন না, বেশি রাগ করতে গিয়ে নিজেই কিন্তু নিজের পায়ে ব্যথা পেলেন!”
রিহা আচানক দরজার বাহিরে আরহানকে পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়। সে বলে,
“আপনি এখানে?”
“হ্যাঁ আমি। আসলে বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। এখানে এসে অর্ধেক সিঁড়িতে একটা রুম দেখে কৌতুহলের কারণে দাঁড়ালাম আর আপনি নিজের মনে সকল রাগ-দুঃখ দরজার উপর ঢেলে দরজা খুলতে গিয়ে নিজেই আহত হয়ে গেলেন! সো স্যাড।”
আরহানের রম্যতা রিহার মোটেও পছন্দ হলো না। সে মুখাবরণে বিরক্তি ফুটিয়ে চলে গেল। তা দেখে আরহান হালকা হেসে রুহানীর দিকে তাকিয়ে দেখে রুহানী ভ্রুঁ কুঁচকে তারই দিকে তাকিয়ে আছে। আরহান রুমের ভেতরে ঢুকে জিজ্ঞেসা করে,
“আপনার আবার কী হলো? আমাকে এমন ঘুর ঘুর করে দেখছেন কেন?”
রুহানী মাথা দুই দিকে নাড়িয়ে কিছু হয়নি বুঝালে আরহান ওর অনেকটা কাছে এসে ওর গালে আঙুল ছোঁয়ায়। হঠাৎ কাণ্ডে রুহানী হকচকিয়ে দূরে সরে গিয়ে বিছানার সাথে পা লেগে সেখানে বসে পরে। আরহান বলে,
“রিল্যাক্স। আমি খারাপ ইনটেনশনে আসিনি। আপনি বললেন কিছু হয়নি কিন্তু আপনার চোখ, গড়িয়ে পরা অশ্রধারার চিহ্ন, ছড়ানো কাজল তো অন্যকিছু বলছে।”
রুহানী চোখ-মুখ আলতো করে মুছে ইশারায় বুঝায় সে ঠিক আছে। আরহান বলে,
“ঠিক থাকলেই ভালো। বাই দ্যা ওয়ে, আজ কিন্তু আবার রাতে চা বাগানে বেরিয়ে পরবেন না। দিনের সূর্যের আলোতেই পিছলে পরে গেছেন তাহলে নির্জন অন্ধকার রাতে কী যেন হয়! গতরাতের মতো আমাকে তো পাবেন না। আমি আজই চলে যাচ্ছি।”
রুহানীর মনে হলো ছেলেটা অতিরিক্ত অহেতুক কথা বলে, তাকে শক্ত করে কিছু বলতে হবে। তাই খাতায় লিখল,
“এভাবে কথা বলা কি আপনাে স্বভাব? কথায় কথায় পুরোনো কথার জালে জড়ান কেন? খোঁ*চা দিয়ে দিয়ে কথা বলেন! আমি আপনাকে গতকাল রাতে বলেছিলাম, আমাকে হেল্প করুন? তাহলে? নাকি আজ সকালে কিছু বলেছিলাম? আমি কোথায় যাব না যাব তা আপনাকে বলব কেন?”
অতঃপর রুষ্ট নয়নে তাকিয়ে খাতাটা আরহানের দিকে বাড়াল। আরহান খাতাটা নিয়ে লেখাগুলো পড়ে হেসে ফেলল আর বলল,
“এই তেজটাই যদি আপনার বোনকে দেখাতে পারতেন, তবে তার সাহস হতো না ওসব কথাগুলো বলার।”
আরহান আর সেখানে অপেক্ষা করল না। খাতাটা রেখে হালকা হেসে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রুহানীর মুখশ্রীতে আষাঢ়ে কাদম্বিনী ভর করেছে। সে দরজা লাগিয়ে টেরেসে গিয়ে বসে।
আরহান নিচে গিয়ে বসে। কিছুক্ষণ গল্পগুজব শেষে তার দাদীকে বলল,
“আমাদের বেরোতে হবে। আমার ফ্লাইট আছে জানোই তো। বেশিক্ষণ থাকতে পারব না।”
“আচ্ছা আমি বলছি।”
আয়েশা খানম, জাহানারা শেখকে ডাকেন। তারপর বলেন,
“আমাদের বেরোতে হবে মিসেস শেখ। আমার নাতির আজ সন্ধ্যায় ফ্লাইট আছে।”
“কী বলেন খালাম্মা? এতো জলদি? সবে তিনটা বাজে। আরেকটু পর যান। আলাপ-পরিচয় তো সবে শুরু হলো।”
“কিছুক্ষণ থাকতে পারব মা।”
জাহানারা শেখ সায় দিয়ে রান্নাঘরে গেলেন হালকা মিষ্টি নাস্তার ব্যাবস্থা করতে।
________
আরহানরা বেরোনোর সময় আয়েশা খানম রুহানীর খোঁজ করলে আরহান বলে,
“মিস রুহানী মেবি একটু সিক। আরাম করছে। তুমি পরে এসে আবার মিট করে নিও দাদী।”
“ওহ আচ্ছা। মেয়েটিকে দেখেও অসুস্থ লাগছিল। আসি মিসেস শেখ। আপনাদের আতিথ্য খুব মুগ্ধ করেছে। আশাকরি, একদিন আমাদেরও সেই সুযোগ দিবেন।”
আয়েশা খানমের কথার প্রত্যুত্তরে জাহানারা শেখ হেসে বলেন,
“অবশ্যই। আমাদেরও খুব ভালো লাগেছে।”
অতঃপর বিদায় নিয়ে ওরা চলে যায়।
______
সন্ধ্যাবেলা, আরহান সিলেট আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে হাজির। নিজের লাগেজটা কিয়ৎক্ষণ স্থির করে ও মাথার ক্যাপটা ঠিক করে নিয়ে আবারও হাঁটা ধরল। ইমিগ্রেশন ক্রস করে বিমানের কাছে যেতে গাড়িতে উঠলে দেখা হয়ে যায় তার কলিগদের সাথে। অবশ্য কলিগ বললে ভুল হবে, কলিগ কম বন্ধু বেশি। আরহানের বন্ধু রাফাত বলল,
“ওয়েলকাম ক্যাপ্টেন আরহান ইশরাক খান। অতঃপর আপনার হাত ঠিক হয়েছে।”
“হয়েছে আরও কয়েকদিন আগে কিন্তু ডাক্তারের প্রিকয়েশন মানতে হতো। তোর কোথায় গন্তব্য আজ?”
“আমার আজ ডোমেস্টিক ফ্লাইট। কালকেই লন্ডন থেকে ফিরলাম। আজ তুই যাবি।”
“সাফাকে যে দেখছি না? কই ও?”
সাফার কথা শুনে রাইদা নামের এক ফ্রেন্ড বলে ওঠে,
“ও তো লন্ডনে। কালকের ফ্লাইটে গিয়েছে। তোর সাথে কিন্তু আজ নুহাশাও যাচ্ছে!”
নুহাশার নাম শুনে আরহানের মুখে বিরক্তি ফুটে ওঠে।
“নুহাশা কেন? ওর এটিটিউট লাগামহীন। আমার কথা তো শুনবেই না। ওর আমার সাথে এতোই প্রবলেম হলে অন্য এয়ারলাইন্সে জব সুইচ করলেই পারে, যেখানে তার সে আছে!”
তন্নি বলে,
“বাদ দে ভাই। আমিও আছি আজ। তোর কিছু লাগলে আমাকে বলিস। তাছাড়া সাদমান ভাইও আজ তোর কো-পাইলট। নুহাশা আর যাই হোক, সাদমান ভাইয়ের সাথে এটিটিউট দেখাবে না।”
আরহান ফুঁশ করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“তা ঠিক। তবে তোর বদলে রাইদা থাকলে বোধহয় ভালো হতো? তাই না রাই? সাদমান ভাইয়ের কাছাকাছি!”
আরহানের সাথে রাফাত, তন্নিও তাল মেলালে রাইদা কপট রাগ দেখিয়ে আরহানের বাহুতে আঘা*ত করে বলে,
“তুই বেশি কথা বলিস। সাদমান ভাই সবার সাথেই সফটলি কথা বলে। তাই তোদের অতিরিক্ত ভাবার কারণ নাই।”
“ঠিক ঠিক। আই এগ্রি উইথ ইউ। শুধু তোর সাথে সফটলি কথা বলা উচিত।”
রাইদা এবার রাফাতকেও কয়েক ঘা লাগাল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা বিমানের কাছে পৌঁছে গেলে যে যার যার ডিউটির বিমানে উঠে পরে।
_______
সন্ধ্যাবেলার চা-নাস্তার সময় রুহানী তার চাচাকে লিখে জানাল যে, সে সিলেটেই অনার্সে ভর্তি হতে চায়। এখানেই তার ভালো লাগছে। ঢাকাতে যেতে চায় না। সিলেটের এমসি কলেজেই পড়তে চায়। রহমত শেখ রুহানীর লেখা পড়ে গম্ভীর হয়ে বসে আছেন। জবাবে কী বলবেন তা ভেবেই রুহানী বেশ চিন্তিত।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।