#মহাপ্রস্থান
#পর্ব_২১
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
__________
“এই সিক্রেট গার্ল কে?”
আরশান ড্রয়িংরুমে এসে সিগারেট খাচ্ছিল। পৃথুলা ইতোপূর্বে কখনো তাকে সিগারেট খেতে দেখেনি। সাথেও পায়নি। এমনকি কখনো সিগারেটের গন্ধও আরশানের শরীরে পায়নি। তাই আজ হঠাৎ এই মানুষটাকেই সিগারেট খেতে দেখে যারপরনাই অবাক হচ্ছে পৃথুলা। তবুও সে নিজের বিস্ময় চেপে রেখে ফোনটি আরশানের চোখের সামনে ধরে উক্ত প্রশ্নটি করে।
অস্থরিতা এবং নিজের দুর্বোধ্য ইচ্ছে ও কামনাকে কন্ট্রোলে আনতে জ্ব’ল’ন্ত সিগারেটে অনবরত টান দিচ্ছিল আরশান। ধোঁয়ায় চতুর্দিক ভর্তি। পৃথুলা কাঁশছে। আরশানের এটা বোধোদয় হতেই সে সিগারেটটি ফ্লোরে ফেলে পা দিয়ে পিষে ফেলল। হাত দিয়ে পৃথুলার সামনে থেকে ধোঁয়াগুলো সরাতে সরাতে বলল,
“সরি পৃথু, সরি!”
পৃথুলা কাঁশতে কাঁশতে বলে,
“ইট’স ওকে। এই মেয়েটা কে?”
এবার আরশানের খেয়াল গেল ফোনের দিকে। তখনও ফোনের রিংটোন বেজে চলেছে। এক প্রকার ছো মেরেই সে ফোনটা পৃথুলার থেকে কেড়ে নিল। উদভ্রান্তের মতো ছুটে গেল ছাদে। তার এমন আচরণে পৃথুলা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আজ এই ছেলের কী হয়েছে? এমন আচরণই বা কেন করছে?
পৃথুলা গায়ের শার্ট ঠিক করে সোফায় বসল। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর আরশান আসে। খুবই শান্তকণ্ঠে বলে,
“আজ আর বাড়িতে যেতে হবে না। রুমে গিয়ে ঘুমাও।”
পৃথুলা কথার জবাব না দিয়ে মুখোমুখি দাঁড়াল। চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করল,
“আমি জানতে চেয়েছিলাম এই সিক্রেট গার্লটা কে?”
আরশান অপ্রস্তুত হয়ে বলে,
“তুমি চিনবে না। আর আমি সরি পৃথু! তখন যে হঠাৎ কী হয়েছিল, আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি।”
“প্রসঙ্গ বদলাবেন না। আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।”
“বাচ্চাদের মতো জেদ করছ কেন? আমি বললাম তো, তুমি চিনবে না।”
“বেশ! জাস্ট আমাকে এতটুকু এক্সপ্লেইন করুন যে, ‘সিক্রেট গার্ল’ এরকম একটা নাম দিয়ে নাম্বার কেন সেভ করা? এর মানেটা কী? এই মেয়েটাই বা আপনার কী হয়?”
“আমার কাজের সাথে জড়িত। তুমি যেমন ভাবছ, তেমন কেউ নয়।”
“আপনার কাজ কী?”
আরশান চুপ করে থাকে। পৃথুলা ফোর্স করে জানার জন্য।
“আপনার কাজ কী?”
“আমি বিজনেস করি তুমি তো জানোই।”
“কোনো বিজনেসম্যানের যে সিক্রেট গার্ল থাকে সেটা তো জানতাম না।”
“তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছ?”
“বাধ্য হচ্ছি! আপনি আমাকে বাধ্য করছেন সন্দেহ করতে। কী লুকাচ্ছেন আমার থেকে?”
আরশান এগিয়ে এসে পৃথুলার মুখটা দু’হাতের আজলায় নিয়ে বলে,
“আমার ভালোবাসা নিয়ে সন্দেহ কোরো না পৃথু!”
পৃথুলার চোখে অশ্রু এসে জড়ো হয়। সেই মুহূর্তে আবারও আরশানের ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। দুজনে একই সঙ্গে স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে ‘সিক্রেট গার্ল।’
পৃথুলার রাগ, জেদ, ক্ষোভ একসঙ্গে একত্রিত হয়। সে আরশানের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে রিসিভ করতে যাবে, ঠিক তখনই আরশান ফোনটা নিয়ে নেয়। প্রচন্ড জোরে ধমক দিয়ে বলে,
“সমস্যা কী তোমার?”
পৃথুলাও যেন ক্ষোভে উন্মাদ হয়ে গেছে। সেও চেঁচিয়ে বলে,
“আমি জানতে চাই, কে এই মেয়ে। ফোনটা আমাকে দিন। আমি কথা বলব।”
“লিমিট ক্রস কোরো না পৃথু। সবকিছুতে ইন্টারফেয়ার করবে না।”
“কেন করব না? আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড। আমার রাইট আছে আপনার সবকিছুতে।”
“না, নেই। নেই আমার সবকিছুতে তোমার রাইট। ভালোবাসি বলে তোমার সব ক্রেজ আমি এলাউ করব না। তোমাকে এটা মেনে নিতে হবে।”
দুজনের বাকবিতণ্ডার মাঝে তখনো কল আসছিল। এদিকে ওদের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে পাশের রুম থেকে শিমুলও বেরিয়ে আসে। আরশান কাঠিন্য বজায় রেখেই বলে,
“আমায় এখন যেতে হবে। আসছি।”
আরশান চলে যাচ্ছে দেখেও পৃথুলা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। আরশান যে এখন ঐ সিক্রেট গার্ল নামে সেভ করা মেয়েটির কাছেই যাবে সেটা বুঝতে তার বেগ পেতে হয় না। অঝোরে তার চক্ষুদ্বয় থেকে পানি ঝড়ছে। সে শুধু পেছন থেকে আরশানের উদ্দেশ্যে বলে,
“আপনি কি কোনোভাবে আমাকে ঠকাচ্ছেন?”
আরশান মন কেমন করা দৃষ্টিতে ফিরে তাকায়। তার মুখাবয়ব অন্যরকম। যেন কিছু বলতে গিয়েও অদৃশ্য কিছু বলতে দিচ্ছে না। সে মায়ায় আটকে না গিয়ে, এমনকি কোনো জবাবও না দিয়ে চোখের পলকেই প্রস্থান করে।
পৃথুলা কান্নাজড়িত টলমলে চোখ মেলে শিমুলের দিকে তাকায়। পৃথুলার অন্তর্ভেদী দৃষ্টি দেখে বুক কেঁপে ওঠে শিমুলের। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে পৃথুলা জিজ্ঞেস করে,
“আপনি কি জানেন কে এই সিক্রেট গার্ল?”
শিমুল মাথা নত করে ফেলে। এর অর্থ, সে জানলেও বলতে পারবে না। আরশানের অগোচরে তার ব্যাপারে অজানা কিছু জানানো তো বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। এতদিনে পৃথুলা এতটুকু বুঝেছে যে, দুনিয়াতে যা কিছু হয়ে যাক, শিমুল কখনোই আরশানের বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না। তাই সে শিমুলকে আর জোর করেনি। কাঁদতে কাঁদতেই রুমে এসে শুয়ে পড়েছে। একসময় ক্লান্ত হয়ে সে ঘুমিয়েও পড়ে।
কাজ শেষ করে আরশানের বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত দুটো বেজে যায়। শিমুল তখনো জেগে ছিল।
“পৃথু কোথায়? ঘুমিয়েছে?” জানতে চাইল আরশান।
শিমুল বিষন্নস্বরে বলল,
“মনে হয়।”
আরশান পৃথুলার কাছে গেল। পৃথুলা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। গালে লেপ্টে আছে চোখের পানি। চটচটে লাগছে গাল দুটো। আরশান আলতো করে গালে হাত বুলাল। কপালে চুমু খেয়ে বুকে টেনে নিল। ম্রিয়মাণ কণ্ঠে বলল,
“আই এম সরি পৃথু!”
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।
বিঃদ্রঃ পরীক্ষার পড়া বাদ দিয়ে এইটুকুই লেখার সময় পেয়েছি। ছোটো পর্ব বলে কেউ অভিযোগ করবেন না প্লিজ! ৩০ তারিখ পরীক্ষা শেষ হবে। সেই পর্যন্ত সবাই একটু অপেক্ষা করুন।]