#মহাপ্রস্থান
#পর্ব_২
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_______________
‘জনপ্রিয় অভিনেতা রাফসান চৌধুরীর নামে খু-নে-র মামলা। নির্জন ফ্ল্যাটে গার্লফ্রেন্ডকে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে খু-ন করেছিলেন তিনি। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পূর্বে শুনতে পাওয়া গেছে; যা নিয়ে তুমুল ঝড় উঠেছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। এক সাক্ষাৎকারে রাফসান চৌধুরীর বিরুদ্ধে সকল প্রমাণ তার নিকট আছে বলে জানিয়েছিলেন এডভোকেট শিলা চৌধুরী। তবে বর্তমানে তিনি নিখোঁজ। হুট করেই যেন উধাও হয়ে গেলেন তিনি।’
এইটুকু নিউজ দেখেই টিভি বন্ধ করে রাখলেন আতোয়ার চৌধুরী। রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে উঠছে। তার আদরের ছেলে জেলে পড়ে আছে। সে কী করেই বা থাকবে শান্তিতে?
আরশান বাইরে থেকে মাত্রই বাড়িতে ফিরেছে। বাবাকে চিন্তিতমনে ড্রয়িংরুমে বসে থাকতে দেখে রুমে না গিয়ে আগে সে বাবার কাছে গেল। খুব নিকটে বসে জিজ্ঞেস করল,
“আপনি কি কিছু নিয়ে চিন্তিত বাবা?”
আতোয়ার চৌধুরী আরশানের দিকে তাকিয়ে ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস নিলেন। পরমুহূর্তেই চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন,
“ঐ মেয়েটার কোনো খবর পেয়েছ?”
আরশান শান্তকণ্ঠে বলল,
“হ্যাঁ। ও এখন আমার কাছেই আছে।”
উত্তেজিত হয়ে উঠলেন আতোয়ার চৌধুরী। বললেন,
“কোথায় আছে? আমাকে বলো। আমি ওকে খু-ন করে ফেলব।”
“রিল্যাক্স বাবা! আপনি এত উত্তেজিত হতে হবে না। রাফসানকে জেল থেকে বের করার দায়িত্ব আমার। আপনার ভরসা নেই আমার ওপর?”
আতোয়ার চৌধুরী কিছুটা দমে গেলেন। সে তার ছেলেকে বিশ্বাস করে। ভরসা আছে তার। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। পাঞ্জাবি টেনে সোজা করে থমথমে মুখে বললেন,
“যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাফসানকে বাড়িতে আনার ব্যবস্থা করো।”
আতোয়ার চৌধুরী রুমে চলে যাওয়ার পর আরশান সোফায় গা এলিয়ে বসল। মাথার ভেতর নানানরকম চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। মেয়েটা তো বারংবার বলে যাচ্ছে সে কিছু করেনি। কিছু জানে না। এরকমভাবে আচরণ করছে আরশান না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে কোনো স্টেপ নিতে। তবে যা-ই হোক না কেন, তাকে সম্পূর্ণ কাজটা করতে হবে ঠান্ডা মাথায়। রাফসানকে জেল থেকে বের করার একমাত্র রাস্তা হচ্ছে শিলা। ওর জবানবন্দি ব্যতীত রাফসানকে মুক্ত করা যাবে না।
.
.
শান্তিনিকেতনে আজ অশান্তির ছায়া নেমে এসেছে। শান্তি বেগম ফ্যাসফ্যাস শব্দ করে কাঁদছেন। তার পাশেই অগ্নিমূর্তি ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছেন দেলোয়ার রহমান। বাবা-মা দুজনের বাকবিতণ্ডায় ঘুম ভেঙে গেছে তাদের একমাত্র কন্যা দোলার। সে হাই তুলতে তুলতে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। চোখ ডলে বলল,
“সকাল সকাল কী শুরু করলে তোমরা?”
দেলোয়ার রহমান বললেন,
“শুরু তো আমি করিনি। করেছে তোর মা। এখন আর তার আমাকে ভালো লাগে না। অদূরে ফ্ল্যাটের ছোকরা ছেলেকে পছন্দ হয়েছে। ছাদে উঠে হাই, হ্যালো করে প্রতিদিন।”
শান্তি বেগম তেলে-বেগুনে জ্ব-লে উঠে বললেন,
“একদম মিথ্যে কথা বলবে না বলে দিচ্ছি। আমি কাউকে হাই, হ্যালো করিনি। ঐ ছোকরা আমায় কেন হাই দেয় তা আমি কী করে বলব?”
দোলা শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার মা শান্তি বেগম দেখতে এখনও যথেষ্ট ইয়ং এবং সুন্দরী। খুব ভালো করে খেয়াল করলে, তাকে হয়তো দোলার চেয়েও বেশি সুন্দরী বলে আখ্যায়িত করা যাবে। শান্তি বেগমের বিয়ে হয় তিনি খুব ছোটো থাকতেই। দেলোয়ার রহমানের সাথে বয়সের ব্যবধানও বিরাট। প্রায় পনের বছর! সেই সময়ে বয়স নিয়ে তেমন মাতামাতি না হলেও এই সময়ে এটাকে বিরাট ইস্যু বলাই চলে। সেজন্য দেলোয়ার রহমানের তুলনায় শান্তি বেগমের বয়স, সৌন্দর্য, রূপ-লাবন্য সবই জিইয়ে রয়েছে। পাশের বাড়ির ছোকরা যদি প্রেম করার উদ্দেশ্যেও শান্তি বেগমকে হাই দিয়ে থাকে তাহলে সেটা অস্বাভাবিক কিংবা অবিশ্বাস্য কোনো ঘটনা নয়। তবে দোলা তো তার মাকে চেনে। সে ভীষণ স্বামী ভক্ত। আর যাই হোক, প্রেম-পিরিতি তার ধাতে নেই। তবুও যে বাবা কেন মাকে সন্দেহ করছে! হয়তো সেও খুব ভালোবাসে তাই।
শান্তি বেগম শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে বললেন,
“তুই কোন কচুর পুলিশ হয়েছিস রে দোলা? তোর মাকে একটা হাঁটুর বয়সী ছেলে প্রতিদিন হাই দিচ্ছে; এ নিয়ে তোর বাবার সাথে আমার মনোমালিন্য হচ্ছে। তুই পুলিশ হয়েও চুপ করে আছিস? গিয়ে ছোকরাটাকে দু’ঘা দিচ্ছিস না কেন?”
দোলা প্রলম্বিত শ্বাস নিয়ে বলল,
“দেখছি আমি বিষয়টা। তোমরা প্লিজ আগে ঝগড়াঝাঁটি থামাও!”
দোলা নিজের রুমে চলে এলো। থানায় যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। তৈরি হতে হবে। ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে এসে সে থমকে যায়। বুকে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। ছোটো থেকেই সে পুলিশ অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখত। একজন সৎ পুলিশ অফিসার হবে সে। এই স্বপ্নটা তার মাঝে জাগ্রত হয়েছিল তার ছোটো কাকাকে দেখে। তার কাকা এক মিশনে গিয়ে মৃ-ত্যুবরণ করেন। সেই শোক কাটিয়ে উঠতে দোলার অনেকটা সময় লেগে গেছিল। তবে সে ভয়ে দমে যায়নি; বরঞ্চ পুলিশ হওয়ার বাসনা তাকে আরও বেশি করে ভেতর থেকে তাড়া দিচ্ছিল। তার এই স্বপ্নের বিরুদ্ধে ঘোর আপত্তি করেছিলেন শান্তি বেগম। দেবরের মৃ-ত্যু তার ওপর দোলা মেয়ে মানুষ; সব মিলিয়ে সে আ-ত-ঙ্কে-র মাঝে ছিলেন। সেই সময়ে শান্তি বেগমকে সামলাতে দেলোয়ার রহমান মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। দোলার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন ধরেই তার মনে হচ্ছে, এই স্বপ্নটা বোধ হয় না দেখাটাই ভালো ছিল। এক অপ্রিয় সত্যের মুখোমুখি হতে হতে সে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
শান্তি বেগম রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে ডাকলেন,
“দোলা? খেতে আয়।”
দোলা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
“তুমি যাও, মা। আমি রেডি হয়ে আসছি।”
পুলিশের ইউনিফর্ম পরে তৈরি হয়ে সে বাবা-মায়ের সঙ্গে খেতে বসেছে। অল্প কিছু খাবার খেয়ে সে থানার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
দোলা থানায় পৌঁছানো মাত্রই এক সেন্ট্রি এসে সালাম ঠুকে বলল,
“ম্যাম, রাফসান চৌধুরী আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছেন।”
দোলা ভ্রুকুটি করে বলল,
“কেন?”
“জানিনা ম্যাম। গতকাল আপনি থানা থেকে চলে যাওয়ার পর থেকেই আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে। আমি বলেছি, আপনি নেই। সে শুনছে না। রাত থেকে এক কথা বলে বলে মাথা নষ্ট করে ফেলছে।”
“আপনি যান। আমি আসছি।”
দোলা নিজের চেয়ারে বসে বড়ো বড়ো দম নিল। নিজেকে সামলে নিচ্ছে সে। রাফসানের সামনে ভেঙে পড়লে চলবে না। তাকে শক্ত থাকতে হবে। মিনিট পাঁচেক পর দোলা রাফসানের কাছে গেল। রাফসান তখন সেলের ভেতর হাঁটু মুড়ে মাটিতে বসে ছিল। দোলা নিঃশব্দে সেলের বাইরে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমায় ডেকেছেন কেন?”
রাফসান মাথা তুলে তাকাল। দোলাকে দেখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল তার ওষ্ঠে। সে ব্যাকু্ল হয়ে বলল,
“দোলা! আমি আর এখানে থাকতে পারছি না। প্লিজ, আমাকে সাহায্য করো।”
“বেশিদিন আপনাকে এখানে থাকতেও হবে না। খুব শীঘ্রই আপনাকে কোর্টে তোলা হবে। শিলা চৌধুরীর কাছে সব প্রমাণ আছে। তিনি কোর্টে সব প্রমাণ দিলেই আপনার ফাঁ-সি অনিবার্য। কয়েকটা দিন একটু কষ্ট করে নিজের মৃ-ত্যুর জন্য অপেক্ষা করুন।”
“তুমিও কি বাকিদের মতো ভাবছ খু-ন-টা আমি করেছি?”
“আমার ভাবা না ভাবায় কী আসে যায়? ডে-ড-ব-ডি আপনার ফ্ল্যাটে পাওয়া গেছে। লা-শে-র শরীরে আপনার চিহ্নও রয়েছে। বাকিসব প্রমাণ তো শিলা চৌধুরীই দেবেন। আর কিছু?”
“দোলা! আমাকে একটু বিশ্বাস করো। আমি খু-ন করিনি।”
দোলা তাচ্ছিল্য করে হাসল। শ্লেষেরসুরে বলল,
“বিশ্বাস! আপনাকে? আপনি বিশ্বাস করার মতো মানুষ? শুনুন, আপনাকে যতবার জেরা করা হয়েছে আপনি এক কথাই বলেছেন। আপনি খু-ন করেননি। এই প্রসঙ্গে তো আর কিছু বলার নেই। আপনার কেস এবার কোর্টে উঠবে। আপনি খু-ন করেছেন কি করেননি সেসব কথা কোর্টে গিয়ে বলবেন। আমাকে নয়।”
দোলা সেখান থেকে চলে আসে। রাফসান বারবার দোলার নাম ধরে চিৎকার করে ডাকছে। তবুও দোলা পিছু ফিরে তাকায়নি। পিছু ফিরে তাকানোর অভ্যেস বহু আগেই সে ছেড়ে দিয়েছে। আজও সে তাকাবে না।
_______
সারা রাত একভাবে চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায় ছিল পৃথুলা। পিঠ, কোমর ব্যথা হয়ে রয়েছে। ঘাড়েও হচ্ছে প্রচুর যন্ত্রণা। খিদেয় ইচ্ছে করছে ম-রে যেতে। কেন এভাবে তাকে এত কষ্ট দেওয়া হচ্ছে? সে ভেতর থেকে কেমন যেন দুর্বল হয়ে পড়েছে। ঐ সময়েই দরজা খোলার শব্দ হলো। ঘোলাটে দৃষ্টিতে সে সেদিকে তাকাল। আরশান এবং শিমুল বসেছে। গতকালের ন্যায় আজও আরশান পৃথুলার মুখোমুখি চেয়ারটিতে বসল। তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে সে পৃথুলাকে পর্যবেক্ষণ করছে। সারা মুখে, হাতে-পায়ে মশার কা-ম-ড়ে-র দাগ। চোখ-মুখও কেমন ফুলে গেছে। সে মুখে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সোজা হয়ে বসে বলল,
“এত কষ্ট কেন করছেন শুধু শুধু? আমার কথা শুনলেই তো আপনাকে আমি ছেড়ে দেই।”
পৃথুলা হেসে দুর্বল কণ্ঠে বলে,
“আমিও তো আমার প্রশ্নের জবাব পাইনি।”
“জেদ করছেন?”
“না। সত্যিটা বললে বিশ্বাস করবেন?”
“কোন সত্যি?”
“আমার পরিচয়।”
“আপনার পরিচয় আমি জানি।”
“জানেন না।”
“তাই?”
“হ্যাঁ। আমি শিলা নই। শিলার যমজ বোন পৃথুলা।”
আরশান শব্দ করে হেসে উঠল। গা কাঁপিয়ে হেসে বলল,
“সুন্দর গল্প। বই-টই খুব পড়েন মনে হচ্ছে?”
পৃথুলা চুপ করে রইল। আরশান হাসি থামিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
“আমি ভালোভাবে বলছি আমার কথাটা জাস্ট শুনুন। আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দেবো।”
“কী কথা শুনব? যেখানে আমি শিলা নই, সেখানে আপনার কথা আমি শুনব কী করে?”
আরশানের মেজাজ চটে যায়। সে ক্ষুব্ধ হয়ে শিমুলকে বলে,
“যতদিন না সে আমার কথা শুনছে ততদিন তাকে এই বদ্ধ রুমেই আটকে রাখো।”
শিমুল আরশানের মুখের ওপর কথা বলতে ভয় পায়। তবুও সে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বলল,
“স্যার, একটা কথা বলি? যদি রাগ না করেন?”
আরশান থমথমে কণ্ঠে বলল,
“বলো।”
“উনাকে দেখে মনে হচ্ছে অসুস্থ। এভাবে যদি খাবার-দাবার না দিয়ে এখানে আটকে রাখি তাহলে তো আরও অসুস্থ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে সে যদি আমাদের কথা মেনে নিয়ে রাজি হয় মিডিয়াতে স্বীকারোক্তি দিতে যায় তখন কিন্তু একটু ঝামেলা হয়ে যাবে। কারণ এভাবে আটকে রাখলে তার চেহারায় অন্য একটা ছাপ থাকবে। তখন কিন্তু সাংবাদিকরা অন্য খবর রটাতে পারে।”
“যেমন?”
“তারা বলতেই পারে, রাফসান চৌধুরীর লোকজন আটকে রেখে অথবা কোনোভাবে জোরজবরদস্তি করে এই স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেছে। তাছাড়া শিলা চৌধুরী যে নিখোঁজ এই খবর কিন্তু অলরেডি ছড়িয়ে পড়েছে। বেশিদিন এভাবে তাকে আটকে রাখলে হতে পারে কেসটা অন্য কোনো এডভোকেটের হাতে চলে গেল। এখন সেই এডভোকেট আবার কেমন হবে তা কিন্তু আমরা জানিনা। যেই মেয়ের মৃ-ত্যু হয়েছে তার বাবারও কিন্তু কম ক্ষমতা নেই। সূতরাং তার পক্ষের উকিলকে হাত করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। আমরা তখন চাইলেও রাফসান স্যারকে মুক্ত করতে পারব না।”
আরশান কিছুক্ষণ মৌন থেকে শিমুলের কথাগুলো বলল। প্রতিটা কথাতেই যুক্তি আছে। সে আড়চোখে একবার পৃথুলার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ঠিক আছে। চোখ বেঁধে উনাকে বাগানবাড়িতে নিয়ে আসো।”
শিমুল একটা রুমাল দিয়ে পৃথুলার চোখ বাঁধল। হাত-পায়ের বাঁধন খুলতে গিয়ে চমকিত হয়ে বলল,
“ওহ মাই গড!”
“কী হয়েছে?” জানতে চাইল আরশান।
“উনার গায়ে তো প্রচুর জ্বর, স্যার।”
আরশান দ্বিধায় পড়ে গেল। কয়েক সেকেন্ড ভাবুক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থেকে বলল,
“তাকে বাগানবাড়িতে রেখে তুমি গিয়ে ওষুধ আর কিছু খাবার নিয়ে আসো।”
অন্ধকার রুম থেকে শিমুল পৃথুলাকে নিয়ে বের হলো। আরশান আগেই বেরিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। পাশেই তাদের বাগানবাড়ি। বিশাল বিশাল কাঠগাছ, আমগাছ, আর বটগাছের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে এই বাড়িটা। পৃথুলাকে দাঁড় করিয়ে শিমুল অন্ধকার রুমের দরজায় তালা দিচ্ছিল। পৃথুলা দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। তার মাথা ভার হয়ে আছে। শরীর ম্যাজম্যাজ করছে। সবচেয়ে একটা বিরক্তিকর অনুভূতি হচ্ছে তার। তার মনে হচ্ছে চারপাশের সবকিছু ঘুরছে। যন্ত্রণায় সে চোখ বন্ধ করে ফেলল। শরীরের ভার আর সহ্য করতে না পেরে সে নিচে বসার জন্য উদ্যত হয়। আরশান ভাবে, পৃথুলা পড়ে যাচ্ছে। তাই সে চটজলদি দু’হাতে ধরে ফেলে পৃথুলাকে এবং শিমুলের চেয়েও বেশি অবাক হয়ে যায় পৃথুলার গায়ের তাপমাত্রা অনুভব করে। সে আলতো করে পৃথুলার গালে চাপড় দিয়ে বলে,
“আর ইউ ওকে?”
পৃথুলার গায়ে সামান্যতম শক্তিটুকুও নেই। আরশান ছেড়ে দিলেই সে যেকোনো মুহূর্তে নিচে পড়ে যাবে। দুর্বল কণ্ঠে শুধু বলল,
“ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে!”
আরশান কঠোর ধরণের মানুষ। নারী বলতে এক মা-ই ছিল তার জীবনে। যার প্রতি ছিল তার ভালোবাসা, মায়া। মা পৃথিবীর মায়া ছাড়ার পর থেকেই তার মন থেকেও সকল মায়া উঠে গেছে। কিন্তু আজ মনে হয় সেই মায়া আবার ফিরে এসেছে। মেয়েটার প্রতি তার মায়া হচ্ছে। কিন্তু কেন? পারতপক্ষে তো মেয়েটা তার শত্রু। তাহলে কেন হচ্ছে মায়া?
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]