#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৪৯
#নিশাত_জাহান_নিশি
“বেশী এটিটিউট থাকা ছেলেরা ভালো হয়না! কানা ছেলে আপনার পছন্দ হলেও সে ছেলে আপনার ম্যান্টালিটির সাথে যাবেনা!”
রূপলের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলনা নীহারিকা। নির্বোধ দৃষ্টিতে সে রাগে ডুবুডুবু রূপলের দিকে তাকিয়ে রইল। রূপলের রাগ এবং কথার সাথে বর্তমান পরিস্থিতি মেলাতে পারছেনা সে। রূপলের আচরণ তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল। দোমনায় ভুগে অবিলম্বেই কপাল কুঁচকে এলো তার। ভ্রু যুগল উঁচিয়ে সে রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“হোয়াট? কার এটিটিউট বেশি? কোন কানা ছেলের কথা বলছেন আপনি? কিছুই তো বুঝতে পারছিনা আমি।”
সিগারেটটি ধুম করে হাত থেকে ছুড়ে ফেলল রূপল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সে নীহারিকার দিকে তাকালো! যতটা সম্ভব নীহারিকার মুখোমুখি এসে দাড়ালো। দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন ছুড়ল,
“কেন? আপনি কিছু জানেন না?’
“কী জানব আজব? হয়েছেটা কী?”
“সিরিয়াসলি আপনি কিছু জানেন না?”
“না বললে আমি জানবটা কীভাবে? আমি কী মনোবিজ্ঞানী? যে সবার মনের কথা পড়ে বসে আছি?”
“আপনার বিয়ের জন্য বাড়ি থেকে একটা ছেলেকে ঠিক করা হচ্ছে!”
বেকুব বনে গেল নীহারিকা! ধ্যান জ্ঞান তার পাল্টে গেল। চোখের পলক ফেলতে ফেলতে সে হতভম্ব গলায় শুধালো,
“এহ্! কে বলল আপনাকে এসব ফেইক নিউজ?”
নীহারিকার গাঁ ছাড়া ভাব দেখে যেন রূপলের গাঁ পিত্তি রাগে আরও রি রি করছিল! এই সিরিয়াস বিষয়টাকে নিয়ে হেলাফেলা করছে নীহারিকা? এই সময়টা কী দুষ্টুমি করার সময়? ঝাঁজালো গলায় সে নীহারিকাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বলল,
“কী? ট্রাস্ট হচ্ছেনা আমার কথা? ফেইক মনে হয় আমাকে?”
“তা নয়ত কী? আমার জন্য বিয়ে আসা বা পাত্র ঠিক করাটা তো হলো পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যের মত! অযথা এসব আজগুবি কথা বিশ্বাস করতে যাব কেন আমি?”
“সেই ভেবে তো আমিও নিশ্চিন্ত ছিলাম! বাট এখন দেখি কাহিনী ঘটে গেল উল্টো! আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিলো আপনার পরিবার আর ঐ কানা ছেলেটা মিলে! মাথা কাজ করছেনা আমার। কী করব আমি?”
কথার ঠেলায় রূপল তার মনের সব নিংড়ানো অনুভূতি প্রকাশ করে দিলেও নীহারিকা ব্যস্ত ছিল তার নিজের খেয়ালে! রূপলের কোনো কথাই যেন তার কান অবধি পৌঁছোয়নি। হুট করেই সে কপালে কয়েক দফা ভাজ ফুটিয়ে তুলল। চিন্তিত স্বরে বলল,
“ওহ্ আচ্ছা বুঝতে পেরেছি। এজন্যই ভাবি ও আম্মু মিলে আমাকে আকার ইঙ্গিতে বলছিল টিউশনিটা ছেড়ে দিতে? ঘটনা তাহলে এখানেই?”
এদিকে স্বস্তির শ্বাস ফেলতে ব্যস্ত রূপল! নীহারিকা তার কোনো কথাই শুনেনি! মনে মনে যদিও রূপল নীহারিকাকে চাইছে তবে এই মুহূর্তে তা প্রকাশ করতে চাইছেনা সে। সময়, সুযোগ, পরিস্থিতি বুঝে নিশ্চয়ই সে তার অনুভূতি নীহারিকার কাছে ব্যক্ত করবে। যদি এর আগেই নীহারিকা তার অনুভূতি বুঝতে পেরে যায় তাহলে তো আর কোনো দুঃশ্চিন্তাই রইল না! সবকিছুর একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। সেই সময়ের আগে পরে কিছু করতে চাইলে হীতে বিপরীতই হয় বেশী! সেই ভেবে রূপল এখন তার অনুভূতিকে দমিয়ে রাখতে চাইল। গলা ঝাড়ল রূপল। শান্ত থাকার চেষ্টা করল। শার্টের কলারটা ঠিক করে সে ধীর গলায় নীহারিকাকে শুধালো,
“এখন আপনার কী মতামত? বিয়েটা কী এখনি করতে চান?”
“আরে ধুর! আপনিও কী আমার মা, বাবা, ভাইয়া, ভাবির মত পাগল হইছেন? এতই সহজ বিয়ে? আগে তো আমাকে পছন্দ করতে হবে ছেলের। এরপর তো বিয়ে!”
“যদি বলি ছেলের গোষ্ঠী শুদ্ধু আপনাকে পছন্দ করে ফেলেছে তখন?”
অট্ট হাসিতে ফেটে পরল নীহারিকা! হাসি থামাতে না পেরে সে বিদ্রুপের স্বরে বলল,
“হাউ ফানি রূপল! আমাকে করবে পছন্দ? তাও আবার ছেলে এবং ছেলের পরিবার মিলে? শেগুড়ে বালি!”
নিজেকে নিয়ে খিল্লি উড়ানো যেন শেষই হচ্ছিলনা নীহারিকার! রাগকে সংযত করতে না পেরে রূপল বাইকে জোরে এক ঘুঁ’ষি মারল! আঙুলে প্রচণ্ড ব্যথা লাগলেও সেই ব্যথাকে তোয়াক্কা না করে রূপল চোয়াল উঁচু করে তীক্ষ্ণ গলায় নীহারিকাকে শুধালো,
“আমি একদিন বলেছিলাম না আপনাকে? নিজেকে সবসময় ছোটো মনে না করতে? তবুও কেন একই কাজ রিপিট করছেন আপনি? কথা গাঁয়ে লাগেনা আমার? খুব প্রশ্রয় দিয়ে ফেলছি বলে মাথায় ওঠে গেছেন? সহজ সরল ভাবতে শুরু করেছেন আমাকে?”
রূপলের হঠাৎ রেগে যাওয়াটা খুবই অস্বাভাবিক মনে হলো নীহারিকার কাছে। নিজেকে আঘাত করা এসব আবার কীসের রাগ? রাগ দেখানোরও তো একটা লিমিট থাকা উচিৎ। হাসি থামিয়ে নীহারিকা এবার তৎপর হয়ে উঠল। সোজা হয়ে দাড়ালো সে। কঠিন গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“এসব কী ধরনের রাগ রূপল? নিজেকে আঘাত করা রাগ দেখানোর কোনো নমুনা হলো? তাছাড়া হয়েছেটা কী আপনার? আমার জন্য যদিও বিয়ে এসে থাকে তাতে আপনার কী? এতে আপনার এত বাড়াবাড়ি করার কী আছে? তাড়াহুড়ো দেখিয়ে টিউশন থেকে আমাকে ডেকে ডাকলেন। ছেলে দেখতে কানা তাও বলছেন! বিয়েতে রাজি কী-না জিজ্ঞেস করছেন এসবের কারণ কী?”
নিরুত্তর রূপল! হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে সে মাথা নুইয়ে মুখ ফুটে কিছু বলতে না পারার দ্বিধায় ভুগছে! হুট করেই নীহারিকাকে কিছু বলতে বা বুঝাতে চায়না সে! নীহারিকা হয়ত তাকে বা তার অনুভূতিকে পজেটিভলি না ও নিতে পারে! এমনিতেও মেয়েদের মন বুঝা বড়ো মুশকিল! মুখ ফসকে বেফাঁস কিছু বলে সে সেই মুশকিল কাজকে আরও বেশি মুশকিল করতে চাইছেনা সে।
রূপলের নীরবতা দেখে নীহারিকা একটু করে রূপলের দিকে এগিয়ে গেল। মনের ভুলেই নীহারিকা হুট করে রূপলের ব্যথা পাওয়া হাতের আঙুলটি বেশ শক্তপোক্তভাবেই ধরল! শিথিল গলায় শুধালো,
“কী হলো বলুন?”
অমনি রূপল আঙুলের ব্যথায় উহ্ করে উঠল! সঙ্গে সঙ্গেই নীহারিকা রূপলের হাতটি ছেড়ে দিলো। অস্থির দৃষ্টিতে সে ব্যথাতুর রূপলের দিকে তাকালো। অধীর গলায় শুধালো,
“কী হলো? ব্যথা লাগল?”
নীহারিকার দিকে ফিরেও তাকালো না রূপল! অভিমান নিয়ে উল্টো দিকে ফিরে গেল সে। বাইকে ওঠে স্টিয়ারিংয়ে হাত রাখল। গম্ভীর গলায় নীহারিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“বাইকে উঠুন৷ আজ একটু আর্লি বাড়ি ফিরতে হবে।”
রূপলের ভাবশূণ্য কাজকর্ম দেখে অবাক হলো নীহারিকা। বাইকে উঠতে উঠতে সে রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“কেন? কী এমন বিশেষ কাজ আছে আজ?”
“পিয়াসার রিসিপশন নিয়ে কিছু কাজ আছে।”
বাইক স্টার্ট করে দিলো রূপল। রাতের ঠাণ্ডা হাওয়া গাঁয়ে লাগতেই মন প্রাণ জুড়িয়ে গেল নীহারিকার। ঠোঁটের কোণে আচমকা এক চিলতে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠল। হাসি মুখে রেখেই সেগ নির্জীব রূপলকে শুধালো,
“আচ্ছা কাল বিকেলের দিকে আপনি ফ্রি আছেন?”
“কেন?’
“আগে তো বলুন ফ্রি আছেন কী-না?”
“কারণটা বললে সময় বের করব!”
“কাল আমরা শপিংয়ে যাব। আমি, ভাইয়া, ভাবি। তাই জিজ্ঞেস করলাম আপনি ফ্রি আছেন কী-না।”
“ফ্রি থাকলেও আমি আপনাদের সাথে যাবনা! মেয়েদের সাথে শপিংয়ে যাওয়া আর নিজের গালে নিজে ঠাস ঠাস করে চ’ড় মারা সমান!”
“হোয়াট? এসব কে বলল আপনাকে?”
“কেউ বলেনি। আমি নিজেই রিয়েলাইজ করি।”
“ওহ্ বুঝেছি! সুহাসিনীর সাথে সবসময় শপিংয়ে যাওয়া হতো তাইনা?”
“হুম। আর এখন এটা অতীত! তবে এক্সপেরিয়েন্স তো রয়েই গেছে। সেই এক্সপেরিয়েন্স থেকেই বলছি মেয়েদের কোনো কাজে ছেলেদের যাওয়া উচিৎ নয়! বিশেষ করে শপিং আর পার্লারে।”
“ওকে ওকে! আপনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি বসেও নেই! যেতে না চাইলে যাবেন না! এতে বরং ভালোই হবে। রিল্যাক্স মোডে আরও বিশটা ত্রিশটা দোকান ঘুরে দেখা যাবে!”
“এই যে দেখলেন? মিলে গেলনা? এখন থেকেই এসব বলছেন। না জানি কাল শপিংয়ে যাওয়ার পর কী কী করবেন! জিজুর মাথা শুদ্ধু খেয়ে ফেলবেন। বেচারা জিজুর জন্য আমার এখন থেকেই টেনশন হচ্ছে! আহারে! দু’দুটো বেডি মানুষ! বেচারা জিজু আমার শপিং ব্যাগগুলো সামলাবে কীভাবে।”
রূপলের সাথে কথা বাড়ালোনা নীহারিকা! পুরোপুরি চুপ হয়ে গেল। ভেতরে ভেতরে রাগে ফোসতে লাগল! নীহারিকার নীরবতায় রূপলের কোনোরূপ ভ্রুক্ষেপ হলোনা। এক ধ্যানে সে বাইক চালাতে লাগল। নীহারিকাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে রূপল তার বাড়ি ফিরে গেল। যাওয়ার সময় হৃদির জন্য হাতভর্তি চকোলেট, চিপস, আইসক্রীম নিয়ে গেল। রূপলের জন্য অপেক্ষা করতে করতে হৃদি সেই কখন ঘুমিয়ে পরেছে। হৃদির মাথার পাশে চুপটি করে বসল রূপল। পাশ থেকে নাজনীন বেগম উদ্বিগ্ন গলায় রূপলকে বলল,
“হৃদির জন্য আমার খুব টেনশন হয় রে।”
হৃদির ঘুমন্ত মুখের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থেকে রূপল শূণ্য গলায় বলল,
“কী টেনশন মা?”
“মেয়েটার ভবিষ্যৎ কী হবে রে? না পাচ্ছে বাবাকে না পাচ্ছে মাকে! কিছুক্ষণ আগেও মেয়েটা তার মা -বাবার জন্য কান্নাকাটি করে ঘুমিয়েছে। মায়ের কাছে যাবে বলছিল। এভাবে আর কতদিন তাকে বুঝিয়ে রাখব বল?”
“যতদিন অবধি আমি তার জন্য মা খুঁজে না পাই ততদিন অবধি মা! তাকে নিয়ে তুমি অযথা চিন্তা করো না। আমি হৃদিকে সামলে রাখব।”
নাজনীন বেগমকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলোনা রূপল! ঘুমন্ত হৃদিকে কোলে নিয়ে সে তার রুমে চলে এলো। বিছানায় হৃদিকে শুইয়ে দিয়ে রূপল যেইনা বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবে অমনি হৃদি রূপলের হাত টেনে ধরল! অবাক হয়ে রূপল পিছু ফিরে দেখল হৃদি ঘুম থেকে ওঠে গেছে। চোখে তার জল! শুকনো মুখে হৃদি অশ্রুসিক্ত গলায় রূপলকে বলল,
“আমি মায়ের কাছে যাব বাবা! বাবাও আমাকে ছেড়ে চলে গেল! এখন মা ও চলে গেল! তারা কেউ আমাকে ভালোবাসে না বলো?”
রূপল তার আবেগকে ধরে রাখতে পারলনা! চোখে জল নিয়ে সে হৃদিকে জড়িয়ে ধরল। ভরাট গলায় বলল,
“কেউ তোমাকে ভালোবাসে না এসব তোমার মনের ভুল হৃদি। তুমি এত মিষ্টি একটা মেয়ে তোমাকে ভালো না বেসে থাকা যায় বলো? আমি থাকতে তোমার বাবার প্রয়োজন কেন মা? তোমার বাবা-মা সব আমি! কী? রাইট বলছি তো আমি?”
ফুপিয়ে কেঁদে হৃদি বলল,
“তাহলে কী সত্যি সত্যি আমার মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে বাবা?”
নিরুত্তর রূপল! মন তো চাইছিল হৃদিকে সব সত্যি বলে দিতে। তবে ছোট্টো হৃদি, নাজুক মন তার। মানতে পারবেনা সে তার জীবনের এই তিক্ত সত্যি!তাই খামোশ খেয়ে গেল রূপল। শুধু নির্বাক গলায় হৃদিকে বলল,
“তুমি যদি সত্যিই আমাকে বাবা মনে করে থাকো। তাহলে আমার উপর ভরসা রাখবে বিশ্বাস রাখবে। আমার সব কথা মেনে নিবে। আমি এখন তোমার মা-বাবার প্রসঙ্গে কিছু বলতে চাইনা মা! শুধু এতটুকুই বলতে চাই, ” আমিই তোমার বাবা, আমিই তোমার মা। তোমার জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে আমাকে পাশে পাবে। তোমার এই বাবা তোমাকে কখনও ছেড়ে যাবেনা।”
কথা শেষ করতেই রূপল খেয়াল করল হৃদি এতক্ষণে ঘুমিয়ে পরেছে! হৃদির সেই ঘুমকে আর ভাঙাতে চাইলনা রূপল। জায়গা থেকেও উঠল না সে। হৃদিকে বুকে জড়িয়ে ধরে প্রায় ঘণ্টাখানিক কাটিয়ে দিলো। অফিস থেকে রূপলের বাবা বাড়ি ফিরতেই রূপল এবং তার পরিবার মিলে পিয়াসার রিসিপশন সম্পর্কিত ব্যাপারে আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে গেল।
রাত তখন দুটোর কাছাকাছি প্রায়। কিছুতেই যেন চোখে ঘুম লাগছিলনা রূপলের। হৃদিকে নিয়ে টেনশনের পাশাপাশি সে নীহারিকার বিয়ে নিয়েও গভীর টেনশনে আছে! যেকোনোভাবেই হোক নীহারিকার বিয়ে ভাঙতে হবে তার। প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে। হৃদির পাশ থেকে ওঠে গেল রূপল। রূপলদের বাড়ির পাশের বাড়িটাই হলো রূপলের চাচার। এই মাঝরাতেই সে সজল এবং শাকিলের কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে বাইক চেপে চলে এলো সোজা উজ্জলের বাড়ির সামনে! ঘুমে লকলকিয়ে পরে যাচ্ছিল শাকিল এবং সজল! বাইক চালানোটাই তাদের জন্য রিস্কি হয়ে গিয়েছিল। রূপলের হুমকি ধমকি খেয়ে যদিও দুজন সোজা হয়ে বসেছিল তবে কিছুক্ষণ পর পর আবার হেলেদুলে পরছিল!
উজ্জ্বলের বাড়ির মেইন গেইটের সামনে বাইক পার্ক করে রূপল নাইট গার্ডদের মতো ঘুরছিল বাড়ির আশেপাশে! শকুনের দৃষ্টি তার। রূপলের এসব পাগলাটে কাজকর্ম দেখে রাগে ফুসছিল সজল এবং শাকিল! দুজনই বাইকে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। বুকের উপর হাত গুটিয়ে। রূপলের দিকে তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শাকিল সজলকে বলল,
“আমাদের বংশের মধ্যে যে হঠাৎ করেই এমন পাগল ছাগল উৎপাদন হবে কে জানত? আমার বড়ো চাচার সুখ শেষ। হেরে তো তালাফি করার দরকার! রাত-বিরাতে যে হারে পাগলামি শুরু করছে।”
“আমার তো কিছু সুবিধার লাগছেনা রে শাকিল! ভাই এখানে চু’রি-ডা’কা’তি করতে এলো না তো?”
“হোয়াট? চু’রি ডাকাতি?”
“যদি তা না-ই হয় তাহলে ভাইয়া এই গভীর রাতে আমাদের নিয়ে এখানে এলো কেন? দেখ দেখ বাড়িটাকে এমনভাবে দেখছে যেন চোখ দিয়েই পরিমাপ করছে বাড়িতে কী কী আছে! আমি বাপু চু’রি, ডা’কাতি করতে পারবনা!”
কথাগুলো বলে সজল দম নেওয়ার সময়ও পেলনা! এরমধ্যেই রূপল বাড়ির মেইন গেইটে বেয়ে সোজা বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল! সঙ্গে সঙ্গেই মুখে হাত চলে গেল শাকিল এবং সজলের! বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে শাকিল সজলের দিকে তাকালো। বলল,
“আইলা! সত্যি সত্যিই চুরি করবে না-কী?”
আতঙ্কিত গলায় সজল বলল,
“পালা শাকিল পালা! ভাইকে কোনোভাবেই ফলো করা যাবেনা। ভুলে যাস না আমাদের দুজনেরই কিন্তু গার্লফ্রেন্ড আছে! তারা যদি চু’রি চামারির বিষয়ে কিছু জানতে পারে পাক্কা ব্রেকাপ করে দিবে! বহু কষ্টে তোর ভাবিরে পটাইছি আমি!”
বলেই দুজন রাস্তার দুদিকে দৌড় দিলো! পিছু ফিরে আবারও দুজন একই জায়গায় ফিরে এলো। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মৃদু চিৎকার করে বলল,
“চোর হলেও আমাদের ভাই তো! তাকে একা ফেলে কীভাবে পালাই আমরা?”
অমনি রূপল বাড়ির গেইট টপকে বাড়ির বাইরে বের হয়ে এলো! হাত দুটো ঝেড়ে সে ক্রুর হেসে সজল এবং শাকিলের দিকে হেঁটে এলো! তার ভাবসাব দেখে মনে হলো মনের মতো কোনো এক কাজ করে এসেছে সে! বাহিরে বেশ ভালোভাবেই আত্মতৃপ্তি প্রকাশ করছে। দু-কদম বাড়িয়ে সজল রূপলের দিকে এগিয়ে গেল। হতবাক গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“কী চু’রি করলেন ভাই?”
অমনি সজলের গালে কষে এক চ’ড় পরল! গালে হাত দিয়ে সজল আক্রমনাত্নক রূপলের দিকে তাকিয়ে রইল! রূপলের চোখের গরমে সিদ্ধ হওয়ার চেয়ে ভালো বরং দু-কদম পিছিয়ে যাওয়া! হুড়োহুড়ি করে সজল শাকিলের পাশে এসে দাড়ালো। ভীতু হয়ে দাড়িয়ে থাকা শাকিলের দিকে তাকিয়ে সে ঠাস করে শাকিলের গালে চ’ড় মেরে বসল! কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
“তুই কেন বাদ থাকবি? চো’র তো তুইও ভাইয়াকে বলেছিলি!”
গালে হাত দিয়ে শাকিল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সজলের দিকে তাকিয়ে রইল! কী হলো না হলো সব তার মাথার উপর দিয়ে গেল। তখনি তেড়ে এলো রূপল দুই আসামীর দিকে! চোয়াল উঁচিয়ে দুজনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“কী বললি আমি চু’রি করতে গিয়েছিলাম ঐ বাড়িতে? আমাকে দেখতে তোদের চো’র মনে হয়?”
আঙুল দিয়ে শাকিল সজলকে দেখিয়ে ভীতিকর গলায় বলল,
“আমি না ভাই! সজল বলেছে তুমি না-কী চু’রি করতে ঐ বাড়িতে ঢুকেছ!”
“এই শাকিল একদম মিথ্যে বলবি না! আমরা দুজন মিলেমিশেই কিন্তু বলেছিলাম ভাইয়া চু’রি করতে গেছে!”
দুজনের মধ্যে বেশ তর্কাতর্কি শুরু হয়ে গেল! দুজনের দিকে ফিরে তাকাতে তাকাতে রূপলের ঘাড় ব্যথা হয়ে গেল। শেষমেশ বিরক্ত হয়ে গেল রূপল! চোয়াল উঁচিয়ে সে দুজনের কান টেনে ধরল! গজগগজিয়ে বলল,
“হেই স্টপ। উজ্জ্বলের বাইকের হাওয়া পাংচার করতে গিয়েছিলাম আমি! চু’রি করতে নয়!”
#চলবে…?