এক মঠো অনুভূতি পর্ব ২৬

0
671

#এক_মুঠো_অনুভূতি💖
লেখিকা- তাহসীন নাওয়ার রীতি
পর্ব:২৬

খাওয়া শেষে একসাথে বসে মুভি দেখছে আফরা আর ওহি। আশ্বিন ওহির হাত ধরে তার কাধে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। ওহি একনজর আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে আফরার দিকে ফিরে দেখে আফরা মুভির দিকে তাকিয়েই মুখ টিপে হাসছে।
আফরার এই হাসি আরো বেশি অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছে ওহিকে। তাই আশ্বিনের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে।

বিকেল গড়িয়ে এখন সন্ধ্যা। আশ্বিনের জেদের জন্য আর দুজনের বাইরে ঘুরতে যাওয়া হলো না। কতো প্ল্যান করলো দুজন মিলে শাড়ি পরে ঘুরবে, কিন্তু এখন সব নষ্ট করে দিল এই আশ্বিন। তাই ওহি আশ্বিনের থেকে মুখ ফিরিয়ে বসে আছে। আশ্বিন বিষয়টা খেয়াল করে,
–এখনও রেগে আছো তুমি? আরে বললাম তো বিয়ের পর তুমি যতো খুশি শাড়ি পরবে, সুন্দর করে সাজগোজ করবে। আমি নিজে তোমাকে ছাদে নিয়ে গিয়ে সুন্দর করে অনেক ছবি তুলে দিবো।
ওহি আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে রেগে,
–আমি শাড়ি পরে ঘুরতে যেতে চাই।
–যাবেই তো। আমি নিজে তোমাকে নিয়ে যাবো। ভবিষ্যত বর হিসেবে আমার তো একটা দায়িত্ব আছে, তাই না?
আশ্বিনের কথায় ওহি কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আশ্বিন গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে ওহির দিকে ফিরে তাকিয়ে হেসে উঠে।
তার পক্ষে যে মায়াবিনীকে একা ছাড়া সম্ভব না, কে জানে, তারই মতো কে আবার তার মায়াবিনীর মায়ার সাগরে হারিয়ে যায়!

ওহিকে বাসায় পৌছে দিয়ে আশ্বিন চলে যায়। ওহি বাসায় এসেই মায়ের রুমে গিয়ে মায়ের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে নিজের রুমে চলে আসে। ওসমান এখন বাসায় নেই, নয়তো এখনই গিয়ে ভাইয়ের সাথে আফরাকে নিয়ে কথা বলতো সে।

আফরার জন্য খারাপ লাগছে তার, মেয়েটা ছোট থেকেই খুব একা। আঙ্কেল, আশ্বিন আর রোদ্দুর তাদের নিয়েই আফরার পৃথিবী, এর মাঝে সে ভালোবাসার মানুষ হিসেবে ওসমানকে ঠাঁই দিতে চেয়েছিলো। ওহি কখনোই চায় না ওসমান তার বোকামির জন্য আফরার মতো কাউকে হারিয়ে ফেলুক।
ওসমানের রুমে বসে বসে কথাগুলো ভাবছে ওহি। তখনই ওসমান ঘরে এসে।
–আমার রুমে কি করছিস তুই? চকলেট চু/রি করতে এসেছিস তাই না?
–ভাইয়া, তোমার সাথে আমার কথা আছে।
–ঠিক আছে, বসে থাক। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
ওহি কিছু না বলে চুপচাপ ওসমানের ঘরের বারান্দায় গিয়ে বসে। কিছুক্ষণ পর ওসমান এসে ওহির পাশে বসে পড়ে।

–ভাইয়া আফরা আপুর সাথে তোমার কি হয়েছে?
–এটা তো আমারও প্রশ্ন, আফরার কি হয়েছে? দুদিন ধরে ম্যাসেজ দিচ্ছি, কল দিচ্ছি কোন খোঁজ নেই। হুট করেই কি হলো তার?
ওসমানের কথায় ওহি সোজা হয়ে বসে ওসমানের দিকে তাকিয়ে,
–ভাইয়া, নোভা আপুর সাথে তুমি সেদিন রেস্টুরেন্টে কি করছিলে?
ওহির কথায় ওসমান তার দিকে তাকিয়ে,
–কি করছিলাম মানে? এক মিনিট, তুই জানলি কিভাবে?
–আফরা আপু দেখেছে তোমাদের একসাথে। পরপর দুদিন একসাথে দেখেছে। অথচ আমরা সবাই জানি তুমি প্র্যাকটিকেল নিয়ে ব্যস্ত।
–আফরা..। মানে সে এই কারনে আমার সাথে দুদিন ধরে কথা বলছে না? তুই জানিস না, নোভা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রাজিবের গার্লফ্রেন্ড? এই এক সপ্তাহ আগেই তো তাদের এক ভুল বোঝাবুঝির জন্য ব্রেকআপ হয়েছে। নোভার মনের অবস্থা ভালো না তাই আমার সাথে কথাগুলো বলতে চেয়েছিলো। এই কারণেই সেদিন রেস্টুরেন্টে গিয়ে ছিলাম আমরা দুজন।

–ভাইয়া, নোভা আপুকে এত ইনোসেন্ট ভেবো না। রাজিব ভাইয়ার সাথে সে নিজ থেকেই ব্রেকআপ করেছে। কেনো দুজন ব্রেকআপ করেছে এটা তুমি রাজিব ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করো। কিন্তু নোভা আপু কেনো তোমার সাথে রেস্টুরেন্টে দেখা করেছে এটা আমি বলছি।
আফরা আপু যখন বলেছে পরপর দুদিন সে তোমাদের একসাথে দেখেছে তখন আমি কিছুটা অবাক হয়েছিলাম, আরো অবাক হয়েছি যখন আফরা আপু বললো তোমার সাথে যে মেয়েকে দেখেছে তার নাম নোভা। আপুর তো নোভা আপুর নাম জানার কথা না, তাই সন্দেহ বশত আমি আপুর ফোন চেক করি। গত কদিন ধরেই নোভা আপু আফরা আপুকে ম্যাসেজ দিচ্ছে। সে এটাও বলেছে তোমরা নাকি রিলেশন করো, তার প্রমাণ হিসেবে সেদিন আপুকে রেস্টুরেন্টে যেতে বলেছিলো।
–কিহহ?
ওহির কথায় ওসমান অবাক হয়ে যায়। তার আড়ালে নোভা তার নামে এসব বলে বেড়াচ্ছে অথচ সে তার কিছুই জানে না।

–ওহি আমি এসবের কিছুই জানি না। আর, আফরা এসব আমাকে একবার বলতে পারতো। আমাকে তো জিজ্ঞেস করতে পারতো এসব সত্যি কিনা। তা না করেই…তুই এক কাজ কর, তুই এখনই কথা বল আফরার সাথে।
–আফরা আপুকে ভালোবাসো তুমি ভাইয়া?
ওহির প্রশ্ন শুনে চুপ হয়ে যায় ওসমান।
ভালোবাসা! কথাটা অর্থ বোঝা খুব কঠিন তার কাছে। আফরাকে সে ভালোবাসে নাকি তাকে ভালোলাগে এই সম্পর্কে কিছুই জানে না সে। শুধু জানে আফরার সাথে থাকলে মনে যে প্রশান্তি কাজ করে তা এই দুদিন আফরার গাফিলতির মাঝে ছিলো বিশাদময়।

–আমি জানি না।
–তাহলে আফরা আপুর থেকে দূরে সরে যাও ভাইয়া। আফরা আপু খুব ভালো একটা মেয়ে, খুব সরল মনের। আমি জানি তোমাকে আপু ভালোবাসতে শুরু করেছে।আমি চাই না তুমি এর থেকে বেশি আপুর মনে জড়িয়ে যাও, কারণ আপুর মন ভেঙে যাওয়া আমার সহ্য হবে না ভাইয়া।
ওহি কথাগুলো বলেই সেখান থেকে উঠে চলে আসে। ওসমান এখনও স্তব্ধ হয়ে সেখানে বসে আছে। ওহি হয়তো ঠিকই বলছে, আফরার মনে কষ্ট দেওয়া ওসমানের পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু সে কি থাকতে পারবে আফরাকে ছাড়া?
——————–

আজ সাতদিন পর আশ্বিন আফরা আর রোদ্দুর ভার্সিটি এসেছে মাস্টার্সে ভর্তির জন্য। গতকাল থেকে ওহি আর জাইমা ক্লাস শুরু করে দিয়েছে।
মাঠের গাছতলায় বসে ওহি আর জাইমা তাকিয়ে আছে দূরে একসাথে দাঁড়িয়ে থাকা আশ্বিন আফরা আর রোদ্দুরের দিকে।
–আর কতো দেখবি আশ্বিন ভাইয়াকে?
–কি বললি? মাথা ঠিক আছে তোর? আমি আফরা আপুকে দেখছিলাম।
ওহির কথায় জাইমাও আফরার দিকে ফিরে তাকায়।
–আফরা আপু কদিনের মাঝেই কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গিয়েছে, তাই না ওহি? আপুর কি কিছু হয়েছে?
জাইমার কথায় ওহি কিছু না বলে চুপ করে আফরার দিকে তাকিয়ে থাকে। এই সাতদিন ওসমান ওহির কথায় আফরাকে ইগনোর করে চলেছে। ওহি চাইলেই সবটা সমাধান করতে পারতো, কিন্ত সে চাইছে ওসমান তার নিজের মনের অনুভূতি বুঝতে পারুক।

আফরা আর রোদ্দুর এসে ওহির পাশে বসে পড়ে। রোদ্দুর সবার জন্য চিপস নিয়ে এসেছে। ওহি সেগুলো হাতে নিয়ে আফরার সাথে টুকটাক গল্প করে সামনে তাকাতেই দেখে আশ্বিন এদিকে আসার সময় কোথা থেকে একটা মেয়ে দৌঁড়ে এসে আশ্বিনের সামনে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে গল্প করে যাচ্ছে। আশ্বিন অবশ্য শুধু মেয়েটার কথায় তাল মিলিয়ে উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই সামান্য ব্যাপারটাও সহ্য হচ্ছে না ওহির। কে এই মেয়ে? কি নিয়েই তাদের এতো কথা?
ওহি সেদিকে তীক্ষ্ণ ভাবেই তাকিয়ে আছে। হঠাত মেয়েটাকে আশ্বিনের হাত ধরতে দেখেই ওহির রাগ উঠে যায়। কথা বলছে বলুক, আবার হাত কেনো ধরবে? আশ্বিন হাত ছাড়িয়ে আড়চোখে একবার ওহির দিকে ফিরে তাকায়। ওহি রেগে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।

–এই ওহি, চিপসের প্যাকেট ছিড়তে পারছি না আমি। একটু সাহায্য কর তো।
জাইমার কথায় ওহি সেদিকে না তাকিয়েই প্যাকেটায় ঠাস করে কলম দিয়ে ফোঁটা করে ফেলে। আশ্বিন দূর থেকে ওহির এমন কাজে চমকে উঠে। সে ঠিকই বুঝতে পারছে যে ওহি ভয়ংকর রেগে আছে। এখান থেকে দ্রুত সরে না গেলে আজ আর রক্ষা নেই তার। তাই সে মেয়েটাকে কোনরকম বিদায় জানিয়ে এসে ওহির পাশে বসে পড়ে। ওহি রেগে আশ্বিনের থেকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে।

–আফরা আপু, কি হয়েছে তোমার? হঠাত এতো চুপচাপ।
জাইমার কথায় আফরা কিছু না বলে হেসে উঠে। রোদ্দুর আফরাকে একটা খোঁচা দিয়ে,
–বিয়ের ফুল ফুটেছে আফরার। খুব শীঘ্রই তার বিয়ে।
–কিহহ?
ওহি আর জাইমা রোদ্দুরের কথায় অবাক হয়ে আফরার দিকে ফিরে তাকায়।
–ঠিক বলেছে রোদ। বাবা তার পরিচিত এক আঙ্কেলের ছেলের সাথে আমার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছে। সব ঠিকঠাক থাকলে খুব শীঘ্রই বিয়ে।
আফরার কথায় ওহি অবাক হয়ে আশ্বিনের দিকে ফিরে তাকায়। আশ্বিন ওহির দিকে ফিরে চুপচাপ বসে থাকে। তার এখন কি করার আছে?

ওহি আফরার বিয়ের কথা শুনেই কোন মতে উঠে আশ্বিনের সাথে তার বাসায় চলে আসে। ওসমানকে যে বলতেই হবে আফরার বিয়ের কথা। তাই বাসায় যেয়েই সে ওসমানের ঘরে ঢুকে,
–ভাইয়া, আফরা আপুর বিয়ে ঠিক হচ্ছে। তুমি জানো?
ওহির কথায় ওসমান পাত্তা না দিয়ে কাগজে কি সব লিখতে লিখতে,
–হুম জানি আমি।
–কিছু করবে না তুমি?
–কি করবো?
–কি করবো মানে? তুমি কি সত্যিই আফরা আপুকে ভালোবাসো না ভাইয়া?
ওহির কথায় ওসমান তার দিকে ফিরে কিছুক্ষণ চুপ থেকে,
–হুম, ভালোবাসি। তাই তো বাবাকে পাঠিয়ে আফরার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করছি। একবারে পারমানেন্ট ভাবে তাকে নিজের করে নিতে যাচ্ছি, ভালো হবে না ওহি?
ওসমানের কথায় ওহি ভুত দেখার মতো চমকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ওসমান হেসে উঠে ওহির গাল টেনে কিভাবে কি হয়েছে তা বলতে শুরু করে।

–চলবে(ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here