#এক_মুঠো_অনুভূতি💖
লেখিকা- তাহসীন নাওয়ার রীতি
পর্ব:১১
ওসমান সকাল থেকেই ওহিকে কল দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বরাবরই ফোন অফ দেখাচ্ছে ওহির। আর না জাইমা ফোন রিসিভ করছে। সকাল পেরিয়ে এখন প্রায় শেষ বিকেল।
এদিকে ওহি ফিরে না আসায়, ওহির মা চিন্তিত হয়ে বসে আছেন।
–ওসমান, জাইমাকে আর একবার ফোন দিয়ে দেখো না কি বলে। ওহি তো কখনও এতো দেরি করে না, কোন বিপদ হলো না তো?
ওসমান মায়ের দিকে তাকিয়ে জাইমাকে ফোন করে। দুবার রিং হওয়ার পর জাইমা ফোন রিসিভ করে,
–জাইমা কোথায় ছিলি তুই? কতোবার কল দিয়েছি তোকে।
–সরি ওসমান ভাই, ফোন সাইলেন্স ছিলো তাই খেয়াল করিনি।
–ওহি কোথায়? তোর সাথে আছে ওহি?
–ওহি? না তো। ওহির তো বলেছিলো আজ নাকি তুমি ওহিকে ভার্সিটি থেকে নিয়ে আসতে যাবে। তাই তো আমি একাই চলে এসেছিলাম।
–মানে তোর সাথে ওহি নেই!
–না। ওহি এখনো ফিরে আসেনি ভাইয়া?
–না। তাই তো তোর কাছে জিজ্ঞেস করছি।
ওসমান জাইমার সাথে কথা বলতে বলতে মায়ের দিকে তাকিয়ে,
–মা, তুমি বাসায় থাকো। আমি ওহিকে খুঁজতে যাচ্ছি। ওহি যদি ফিরে আসে তাহলে আমাকে জানিও।
ওসমান কথাটা বলেই বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে। এদিকে ওহি এখনো বাসায় ফিরে যায়নি শুনে জাইমাও চিন্তিত হয়ে পড়ে।
–এই শহরে তো ওহির কোন আত্মীয়স্বজনও নেই। তাহলে কোথায় যেতে পারে ওহি?
জাইমা কিছুক্ষণ ভেবে আফরাকে কল দেয়।
রোদ্দুর আর আশ্বিন তখন আফরাদের বাসায় বসে আড্ডা দিচ্ছিল। আফরার ফোন বেজে উঠায় ফোনের দিকে তাকিয়ে,
–আরে রোদ, আমাদের ভাবি ফোন করেছে। দেখি কি বলে। সকালে ক্লাস মিস দিয়ে একসাথে কোথায় কোথায় ঘুরেছিস, এখন জানবো আমরা।
–জাইমার ফোন? দে তো আমাকে..। আমি কথা বলছি।
রোদ্দুর কথাটা বলেই আফরার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিতে চাইলে আফরা হাত সরিয়ে ফেলে ফোন রিসিভ করে,
–হ্যালো জাইমা?
–আফরা আপু, ওহি কি তোমার সাথে আছে?
–না তো। ওহি কেনো আমার সাথে থাকবে?
–আপু ওহিকে পাওয়া যাচ্ছে না। ভার্সিটি শেষে এখনও বাসায় ফিরে যায়নি সে। সবাই খুব চিন্তা করছে।
–কি বলো এসব? তুমি কোথায় আছো এখন?
–ওহিকে খোঁজার জন্য বের হচ্ছি।
–ঠিক আছে। আমরাও আসছি। তুমি চিন্তা করো না, ওহিকে পেয়ে যাবো।
আশ্বিন এতোক্ষণ চুপচাপ আফরার কথাগুলো শুনছিলো। আফরা ফোন রেখে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,
–ওহিকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
–খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে? ফাইজা!
আশ্বিন কথাটা বলেই উঠে দাঁড়িয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে। রোদ্দুর আর আফরাও তার পিছু নেয়।
এদিকে,
–এমন বোকার মতো একটা কাজ তুমি কিভাবে করতে পারলে মিতু? তুমি কি ভেবে ওহিকে সেখানে বন্দি করে চলে এসেছো? আর কি মনে করেছো তুমি, মাথায় ঐ সামান্য আ/ঘা/তে ওহি মা/রা যাবে?
আমি তোমাকে বলেছিলাম ওহিকে ভয় দেখানোর কথা, তাকে মে/রে ফেলতে বলিনি আমি।
–আমার কাছে এটাই ঠিক মনে হয়েছে রোহান।
–বোকার মতো কথা বলো না মিতু। ওহিকে বাসায় না ফিরতে দেখে তার ফ্যামিলি তাকে খুঁজতে শুরু করবে। আমরা পুলিশ কেইসে ফেঁ/সে যাবো। তারপর যদি ওহি হাসান স্যারকে আমাদের কথা বলে দেয়। তখন কি হবে?
–ওহি আমাকে দেখেনি রোহান।
–তুমি ওহির ফোন সাথে করে নিয়ে এসেছো। ওহির প্রথম সন্দেহ আমাদের উপরেই যাবে। ফোন লক করা, আমরা ভিডিও ডিলিট করেও পারছি না।
রোহানের কথায় মিতু চুপ হয়ে যায়। ওহির উপর রাগ বেশি থাকায় হিতাহিত জ্ঞান ভুলে এমন একটা ভুল করে ফেলেছে সে। এখন তার ভুল বুঝতে পারছে মিতু।
–এখন কি করবো আমরা রোহান?
রোহান কিছুক্ষণ চুপ করে ভেবে,
–আগে ভার্সিটি চলো। দেখি ওহিকে কি করা যায়।
ওসমান,জাইমা,আফরা,রোদ্দুর আর আশ্বিন মিলে পুরো শহর তন্ন-তন্ন করে খুঁজেও ওহিকে পায়নি। এদিকে, সন্ধ্যা পেরিয়ে চারদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। ওহির মা এতোক্ষণে ওহির বাবাকে খবর পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি ব্যবসার কাজে দূরে থাকায় মুহূর্তেই বাড়ির পথে রওনা হন।
ওসমান জড়োসড়ো হয়ে রাস্তার ধারে শান্ত হয়ে বসে পড়ে। প্রতিদিনের মতোই ক্লাস শেষে ওহিকে ভার্সিটি থেকে নিয়ে যেতে এসেছিলো সে। কিন্ত ঘন্টা দুয়েক পেরিয়ে যাওয়ার পরও ওহি বেরিয়ে না আসায় বাড়ি ফিরে যায় সে।
সারাদিন ধরে বোনকে খুঁজে না পেয়ে ক্লান্ত শরীর আর উস্কসুস্ক চুলে ওসমানকে এভাবে বসে থাকতে দেখে আফরার অনেক মায়া হয়।
এদিকে, আশ্বিন ওহি হারিয়ে গিয়েছে কথাটা শোনার পর থেকেই অস্থির হয়ে আছে। পাগলের মত হন্ন হয়ে এদিক সেদিক ওহিকে খুঁজে যাচ্ছে সে। অদ্ভুত এক শূণ্যতা এসে গ্রাস করছে আশ্বিনের মনে।
কিছুক্ষণ ভেবে রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে,
–রাফিন কিছু করেনি তো আবার? আমার উপর প্রতিশোধ নিতে এটা রাফিনের কাজও হতে পারে, রোদ।
–ঠিক বলেছিস। আমারও তাই মনে হচ্ছে।
আশ্বিনের কথায় আফরা তাদের দুজনের দিকে তাকায়। আশ্বিন আর রোদ্দুর এক মুহূর্ত দেরি না করে রাফিনের বাসার দিকে রওনা দেয়।
একের পর এক কলিং বেল-এর শব্দ শুনে রাফিন এসে দরজা খুলতেই আশ্বিন রেগে রাফিনের শার্টের কলার টেনে ধরে,
–ফাইজা কোথায় রাফিন? আমি জানি তুই তাকে আটকে রেখেছিস।
–কি বললে? ফাইজাকে আটকে রেখেছি মানে? আগে, কলার ছাড়ো আমার।
রাফিন আশ্বিনের হাত ছাড়িয়ে তার দিকে রেগে কিছু বলতে যাবে তখন রোদ্দুর বলে উঠে,
–রাফিন, তোমার শত্রুতা আমাদের সাথে। এর মাঝে ওহির কি দোষ ছিল? ভালোয় ভাল বলছি, ওহিকে কোথায় রেখেছো বলে দাও।
–ওহিকে আমি কোথায় রাখবো? হ্যাঁ, এটা ঠিক বলেছো তোমাদের সাথে আমার শত্রুতা আছে। কিন্ত ওহি আমার কাছে বন্ধুর মতোই। ওহির কোন ক্ষতি করার কথা আমি কখনো ভেবেও দেখিনি।
–আচ্ছা? স্বার্থ ছাড়া তুমি আজ পর্যন্ত কার সাথে বন্ধুত্ব করেছো রাফিন?
আশ্বিন রেগে কথাটা বলতেই রাফিন তার দিকে তাকিয়ে শান্ত ভাবে,
–আমার যাকে ভালো লাগে, তার সাথে বন্ধুত্ব করতে কোন স্বার্থ আমি দেখি না।
রাফিনের কথায় আশ্বিন চুপ হয়ে যায়। রাফিন যে ওহিকে পছন্দ করে তা অন্য ভাবে আশ্বিনকে বুঝিয়ে দিলো সে। আশ্বিন রাগি রাগি চোখে রাফিনের দিকেই তাকিয়ে আছে।
লুকিয়ে ভার্সিটি এসে, ঐ রুমে প্রবেশ করেছে রোহান আর মিতু। ফোনের লাইট অন করে ওহির সামনে এনে দেখে, ওহি এখনো জ্ঞান হীন অবস্থায় পড়ে আছে। মিতু তার দিকে তাকিয়ে,
–এর কি ব্যবস্থা করবে রোহান?
–আমার এক বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি। আপাতত চশমিশকে উনার কাছেই নিয়ে যাবো। তারপর দেখা যাক কি হয়।
রোহানের কথায় মিতু মাথা নাড়ল।
এদিকে, সবাই মিলে ভাগে ভাগে ওহিকে খুঁজে যাচ্ছে। আশ্বিন, রোদ্দুর আর রাফিন মিলে ভার্সিটিতে এসেছে ওহির খোঁজে।
–রোদ তুই এদিকটা দেখ, রাফিন তুমি ওদিকে দেখো। আমি মুল ভবনের দুই আর তিন তালায় দেখছি।
দুইজন রাজি হয়ে যার যার মত করে খোঁজ শুরু করে। রাত হয়ে যাওয়ায় চারদিক অন্ধকার। ফোনের লাইট অন করে আশ্বিন প্রতিটি রুম ভালোভাবে দেখে যাচ্ছে। তিন তালা ভালো ভাবে খেয়াল করে সিঁড়ির কাছে চলে আসছে হঠাত একটা শব্দ শুনতে পায় সে। শব্দ শুনে আশ্বিন থেমে গিয়ে শব্দের উৎস বুঝে ধীরে ধীরে তিন তালার স্টোর রুমের কাছে চলে আসে।
রোহান আর মিতু মিলে ওহিকে উঠানোর চেষ্টা করছিলো। হঠাত কারো পায়ের শব্দ শুনে ওহিকে রেখে দ্রুত লুকিয়ে পড়ে তারা।
আশ্বিন রুমের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই অন্ধকারে পা কিছুর সাথে লেগে পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। কি আছে নিচে দেখার জন্য লাইট সেদিকে ধরে দেখে ওহি মুখ বাঁধা অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে। ওহিকে এভাবে দেখে আশ্বিনের মাথায় মুহূর্তেই আকাশ ভেঙে পড়ে।
–ফাইজা!
আশ্বিন মেঝেতে বসে ওহিকে আধশোয়া অবস্থায় কোলে তুলে তার মুখ ও হাতের বাঁধন খুলে দেয়,
–ফাইজা! এসব কে করেছে? ফাইজা চোখ খুলো। তাকাও আমার দিকে। ফাইজা!
আশ্বিন পাগলের মত ওহিকে কিছুক্ষণ ডেকে ফোন বের করে রোদ্দুরকে কল দেয়।
রোহান আর মিতু এতোক্ষণ আড়াল থেকে আশ্বিনকে দেখছিলো। মিতু রোহানের দিকে ইশারায় কি করবে এখন বলে। এদিকে, রোহান আশ্বিনকে দেখে ঘাবড়ে যায়। এখন আর ওহিকে সরিয়ে ফেলা সম্ভব না। এই মুহূর্তে এখান থেকে পালিয়ে যেতে পারলে পরবর্তিতে কি হবে দেখা যাবে।
রোহান আশেপাশে তাকিয়ে একটা লাঠি হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে আশ্বিনের কাছে এসে তার মাথায় স্বজোড়ে আঘাত করে। আচমকা কেউ আঘাত করায় মুহূর্তেই আশ্বিন মাথায় হাত রেখে মেঝেতে পড়ে যায়। মিতু রোহানের এমন কান্ড দেখে অবাক হয়ে বেরিয়ে এসে রোহানের হাত টেনে সেখান থেকে চলে যায়।
–চলবে(ইনশাআল্লাহ)
((আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? দুঃখিত কাল গল্প দিতে না পারায়। জ্বর নিয়ে গল্প লিখতে পারিনি। ভুল ক্ষমার চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ))