#এক_মুঠো_অনুভূতি💖
লেখিকা- তাহসীন নাওয়ার রীতি
পর্ব:০৬
দ্বিতীয় দিনের প্র্যাক্টিস শেষে ওহি স্টেজের উপর বসে ভ্রু কুঁচকে দূর থেকে জাইমাকে দেখছে। জাইমা একটু দূরে বসে রোদ্দুরের সাথে হেসে হেসে গল্প করছে।
–কাল থেকে দেখছি, এই মেয়ে আর রোদ্দুর ভাইয়া মিলে কি নিয়ে এতো গল্প করে, আজব! তুই আমার বান্ধবী, আমার পাশে থাকবি। তা না, গিয়ে কখন থেকে রোদ্দুর ভাইয়ার সাথেই গল্প করছে।
ওহি জাইমার দিকে তাকিয়ে মনে মনে কথাগুলো বলে একটা ভেংচি কেঁটে মুখ ফিরিয়ে নেয়। হঠাত রাফিন এসে তার পাশে বসে,
–ওহি, প্র্যাক্টিস শেষ?
–জি ভাইয়া।
–গুড। তোমার গানের কণ্ঠ কিন্তু অনেক সুন্দর। অথচ সেদিন বলেছিলে, তুমি গান তেমন পারো না।
ওহি রাফিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে,
–আসলে আগে কখনো কোন ফাংশনের জন্য নাচ গানে নাম দেইনি। তাই আরকি একটু নার্ভাস।
–ভয়ের কিছু নেই। আমার তোমার উপর বিশ্বাস আছে। আমার তো মনে হয়, হাসান স্যারও তোমার কণ্ঠে গান শুনলে খুব খুশি হবে।
রাফিনের কথায় ওহি হেসে কিছু বলতে যাবে। তখনই ছোটু এসে,
–রাফিন ভাই, আপনার চা। আর বড় স্যারে আপনারে ডাকছে।
–ঠিক আছে। তুই যা।
ছোটু চলে যেতেই রাফিন চায়ের কাপ ওহির হাতে দিয়ে,
–নাও, এই চা খেয়ে চিল মুডে থাকো।
রাফিন কথাটা বলে আলতো করে ওহির গাল টেনে চলে যায়। ওহি মুচকি হেসে রাফিনের যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিলো তখনই কেউ তার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে নেয়।
ওহি ভ্রু কুঁচকে সাথে সাথে পাশে ফিরে দেখে আশ্বিন তার পাশে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে,
–ছিঃ! এতো চিনি দিয়ে কেউ চা খায় নাকি? এটা তো পুরাই শরবত হয়ে গিয়েছে।
ওহি আশ্বিনের দিকে রাগি ভাবে তাকিয়ে,
–এটা আমার চা ছিলো।
আশ্বিন ওহির দিকে তাকিয়ে,
–তো, আমি কখন বলেছি এটা আমার চা? এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? খাবে তুমি? এই নাও, খাও। এমনিতেও আমি এতো চিনি দিয়ে চা খাই না।
আশ্বিনের এমন কথায় ওহি রাগি ভাবে একবার তার দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আশ্বিন ওহির এমন কান্ড দেখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে,
–চশমা, তোমার হাসিটা কিন্তু খুব সুন্দর।
ওহি একটু অবাক হয়ে আড়চোখে একবার আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে,
–ধন্যবাদ। সবাই বলে আমার হাসি নাকি অনেক সুন্দর।
ওহির কথায় আশ্বিন একবার তার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে,
–একদম ঠিক বলে সবাই। স্পেশালি তোমার দাঁত-গুলো, অনেকটা ইঁদুরের দাঁতের মতোই। অনেক কিউট। আমার মনে হয়, তুমি ছোট বেলায় দাঁত পড়ে গেলে সেগুলো ইঁদুরের গর্তে ফেলে দিতে। তাই না?
আশ্বিন কথাগুলো বলে শান্ত ভাবে ওহির দিকে তাকিয়ে থাকে। এদিকে ওহি রেগে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে,
–আপনার সাথে কথা বলাই আমার ভুল হয়েছে।
ওহি রেগে ব্যাগ নিয়ে উঠে জাইমার কাছে এসে,
–অনেক গল্প করেছিস। এখন বাসায় চল। বাকিটা ফোনে বলিস।
ওহির কথায় জাইমা কিছুটা থতমত খেয়ে ওহির দিকে একবার তাকিয়ে আবার রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে একটু জোরপূর্বক হেসে,
–আচ্ছা, পরে নাহয় কথা হবে। বাই।
রোদ্দুর ওহির এমন রেগে যাওয়া দেখে একবার পিছনে ফিরে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে দেখে সে তাদের দিকেই বাঁকা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে।
–ঠিক আছে। তাহলে কাল দেখা হচ্ছে। বাই।
রোদ্দুরের কাছে বিদায় নিয়ে ওহি জাইমার হাত ধরে অডিটোরিয়াম থেকে বেরিয়ে আসার সময় একবার রেগে পিছনে ফিরে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে চলে যায়। আর ওহিকে এভাবে তাকাতে দেখে আশ্বিন হাসতে হাসতে আবার চায়ের চাপে চুমুক দেয়। তখন আফরা আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,
–এভাবে একা একা হাসছিস কেন তুই?
–কিছু না, এমনি।
–এমনি না আফরা। কাল থেকে আশ্বিন ওহিকে বিরক্ত করে মজা নিচ্ছে। আজও বেচারিকে রাগিয়ে দিয়েছে, এখন আবার হাসছে।
–রোদ, তুই নিজের কথা বল। জাইমার সাথে গল্প করছিলি। ফাইজা এসে তাকে নিয়ে গিয়েছে বলেই তোর এতো সমস্যা হচ্ছে।
আশ্বিনের কথায় আফরা রোদ্দুরকে দিকে তাকিয়ে হাসতে শুরু করে। আর রোদ্দুর মুখ ফুলিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
——————–
ভার্সিটি থেকে ওহি বাসায় ফিরে নিজের রুমে আসতেই ওসমান আর ফারজানা বেগম তার কাছে আসে।
–ওহি দেখ, মা তোর জন্য কি কিনে এনেছে।
ওসমানের কথায় ওহি মায়ের দিকে তাকাতেই ফারজানা বেগম মুচকি হেসে একটা প্যাকেট তার দিকে এগিয়ে দেয়। ওহি মায়ের হাত থেকে প্যাকেট নিয়ে খুলে অবাক হয়ে,
–শাড়ি! তাও আবার লাল রঙের শাড়ি!
–খুব শীঘ্রই তোর বিয়ে দিয়ে দিচ্ছি আমরা। এই লাল শাড়ি পড়েই তো হবে তোর বিয়ে..।
ওসমানের কথায় ওহি মুখ ফুলিয়ে মায়ের দিকে তাকাতেই,
–তোমার নবীন বরণের অনুষ্ঠানে এই শাড়িটা পড়ে যাবে মা। ওসমানকে নিয়ে অনেক খুঁজে এই শাড়ি তোমার জন্য কিনে নিয়ে এসেছি। পছন্দ হয়েছে তো?
–অনেক অনেক পছন্দ হয়েছে, মা।
ওহি কথাটা বলে শাড়ি নিয়ে বাচ্চাদের মত লাফাতে শুরু করে। ওসমান মুচকি হেসে,
–শাড়িটা কিন্তু আমার পছন্দে কিনেছে। আমিই চয়েজ করে দিয়েছি মাকে। তাই না মা?
–হুম।
–তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
ওসমান ওহির কথায় তার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে,
–ক্লাসে যাচ্ছি আমি। এসে কথা হবে।
ওহি মুচকি হেসে মাথা নাড়ল। ফারজানা বেগম ওসমানকে নিয়ে চলে যেতেই ওহি শাড়িটার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়।
বিকেলে,
পুরো দুই ঘন্টা ধরে জাইমা আর ওহি শপিং এ ঘুরেই যাচ্ছে। ওহি জাইমার দিকে তাকিয়ে,
–আর কতক্ষণ এভাবে ঘুরঘুর করবো আমরা?
–যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি একটা সুন্দর শাড়ি কিনতে পারছি।
–শাড়ি কিনবি তাহলে শাড়ির দোকানে চল না। এভাবে পুরো শপিং মল ঘুরঘুর করছিস কেনো? জামা,জুতা, ব্যাগ এমনকি ছেলেদের শার্টের দোকানেও ঘুরে এসেছি আমরা।
–শপিং-এ এসে একটু ঘোরাঘুরি না করলে আমার ভালো লাগে না। সামনের দোকানটা একটু ঘুরে তারপর নাহয় শাড়ির দোকানে যাই।
জাইমার কথায় ওহি একটু উঁকি দিয়ে সামনের দোকানের দিকে তাকিয়ে,
–আরে এটা তো পাঞ্জাবীর দোকান। আমরা এখানে গিয়ে কি করবো? আজব!
–আরে এতো কথা বলিস কেনো? চল আমার সাথে।
ওহির কথায় পাত্তা না দিয়ে জাইমা তাকে টেনে দোকানে ঢুকে পড়ে। জাইমা ঘুরে ঘুরে দোকানের সবকিছু দেখছে আর ওহি জাইমার পিছু পিছু বিরক্ত হয়ে ঘুরছে। হঠাত পাশ থেকে পরিচিত এক কন্ঠস্বর শুনে সেদিকে তাকিয়ে দেখে আশ্বিন আর রোদ্দুর মিলে পাঞ্জাবী সিলেক্ট করছে।
তাদের এখানে দেখে ওহি বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে জাইমার হাত ধরে টেনে তাকে নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করে।
–আরে এভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছিস কেনো?
–পরে বলছি। আগে চল তুই।
ওহি জাইমাকে নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে চলে যেতে নিবে ঠিক তখনই আফরা তাদের সামনে পরে,
–আরে তোমরা এখানে?
ওহি আফরার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে,
–জি আপু। নবীন বরণের কেনাকাটা করতে এসেছি।
–ভালো করেছো। আমিও এই কারণেই এসেছি। তবে আমি একা আসিনি। আমার সাথে…।
আফরা কথাটা বলে দোকানের ভেতর আশ্বিন আর রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে,
–এই আশ্বিন রোদ্দুর দেখ, ওহি আর জাইমাও এসেছে।
আফরার ডাকে দুজন এদিকে তাকিয়ে তাদের সামনে এসে,
–তোমরা এখানে?
–যেই ভয় পেয়েছিলাম, তাই হলো।
ওহি মনে মনে কথাটা বলে আড়চোখে একবার আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,
–শপিং করতেই এসেছি।
–ভালো করেছো। চলো তাহলে আগে সবাই মিলে আইসক্রিম খেয়ে আসি।
রোদ্দুরের কথায় ওহি বাদে সবাই সাই দিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে এসে বসে। আশ্বিন আড়চোখে একবার ওহির দিকে তাকিয়ে নিজের ফোন দেখতে শুরু করে।
–ভালোই হয়েছে তোমাদের পেয়ে। আমিও ভেবেছিলাম নবীন বরণের জন্য এবার শাড়ি কিনবো। আগে কখনো শাড়ি কেনা হয়নি তাই এই দুজনকে জোর করে নিয়ে এসেছিলাম, আমার শাড়ি পছন্দ করে দিতে।
–আপু আপনার মাকে নিয়েই তো আসতে পারতেন। ভাইয়ারা কি পারবে নাকি শাড়ি পছন্দ করে দিতে?
জাইমার কথায় আফরা একটু চুপ থেকে পরমূহুর্তে একটা হাসি দিয়ে,
–আমার মা নেই, জাইমা। বাবা আর এই দুই বন্ধুই আছে আমার আপন।
আফরার কথায় জাইমা আর ওহি একে অপরের দিকে তাকায়। ওহি আলতো করে আফরার হাত ধরে,
–আপু তুমি আমাদের সাথে চলো। আমরা মেয়েরা একটা টিম হয়ে ঘুরবো আর অনেক শপিং করবো।
আফরা মুচকি হেসে মাথা নেড়ে,
–ঠিক আছে। শপিং শেষে আমি তোদের কল দিবো।আমাদের বাসায় পৌছে দিবি তুই আশ্বিন। আবার, রেখেই চলে যাবি না কিন্তু।
আশ্বিন একবার ওহির দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে মাথা নেড়ে হ্যা বোঝায়।
ওহির কথা মতো আফরা জাইমা আর ওহি একসাথে হয়ে ঘুরেঘুরে অনেক কিছুই কিনে ফেলে। এই প্রথম শপিং করতে কোন মেয়ে সঙ্গী পেয়ে আফরারও খুব ভালো লাগছে।
শপিং শেষে আশ্বিনকে ফোন দিতেই সে তাদের পার্কিং-এ চলে আসতে বলে। তারা যেতেই রোদ্দুর আফরার দিকে তাকিয়ে,
–এতোকিছু কিনে ফেলেছিস! তাই তো বলি এতো দেরি হচ্ছে কেনো তোদের।
–রোদ! বেশি কথা না বলে আমাদের শপিং ব্যাগ গুলো গাড়িতে রাখতে সাহায্য কর।
রোদ্দুর তাদের হাত থেকে ব্যাগগুলো নিতে চাইলেই ওহি বলে উঠে,
–আপু আমরা দুজন মিলে যেতে পারবো। তোমাদের কষ্ট করতে হবে না।
–একদম না। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, ওহি। এখন একা যাওয়া ঠিক হবে না তোমাদের। এসো আমাদের সাথে।
আফরার কথায় বাধ্য হয়ে ওহি জাইমা গাড়িতে উঠে বসে। সবাই বসতেই আশ্বিন গাড়ির লুকিং গ্লাসে ওহির দিকে একবার তাকাতেই ওহির সাথে তার চোখাচোখি হয়ে যায়। আশ্বিন দ্রুত চোখ নামিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
–চলবে(ইনশাআল্লাহ)
((আসসালামু আলাইকুম। ভুল ত্রুটি ক্ষমা চোখে দেখবেন। গল্পের রিচ কমে যাচ্ছে🙂। প্লিজ সবাই গঠনমূলক কমেন্ট করবেন। ধন্যবাদ))