#এক_মুঠো_অনুভূতি💖
লেখিকা- তাহসীন নাওয়ার রীতি
পর্ব:০২ + ০৩
ক্যান্টিনে গালে হাত রেখে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে ওহি। জাইমা তার দিকে একটা জুসের প্যাকেট এগিয়ে দিতেই ওহি বলে উঠল,
–ওই ছেলেটা আমার গায়ে হাত তুলেছে আর তুই কিছু বললিও না। আবার আমাকেও টেনে নিয়ে আসলি নয়তো আমি একটা শিক্ষা দিয়েই আসতাম।
–থামবি তুই? কতো বড় ঝামেলা থেকে যে বেঁচে গিয়েছি এটা ভেবে এখন চুপ থাক।
–কেনো চুপ থাকবো? জানিস কতো জোরে চ/ড় মেরেছে? দাঁতসহ ব্যাথা করছে আমার।
–তো? তুই কি ভেবেছিলি? ভাইয়া তখন তোর প্রোপজাল শুনে তোকে জড়িয়ে ধরে আই লাভ ইউ টু বলবে?
–আরে এমন ভাববো কেনো? যতো যাই হোক আমি একজন মেয়ে, উনি এভাবে আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না।
–হুম, তা ঠিক। শুনেছি, আশ্বিন ভাইয়া এখন পর্যন্ত ভার্সিটির সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া টপ স্টুডেন্ট। স্যার ম্যাম’রা উনাকে খুব পছন্দ করেন। তাই তো ভার্সিটির ছোট খাটো সকল দায়িত্ব উনার উপর দেওয়া হয়। মোট কথা হলো, উনি ভার্সিটির সবার লিডার। আর..
জাইমা কথাগুলো বলে সামনে তাকাতেই দেখে রোহান আর মিতু তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ওহি জাইমার হঠাত চুপ হয়ে যাওয়া দেখে তার দৃষ্টি অনুসরণ করে রোহানকে দেখতে পায়। তারা ওহির কাছে এসে,
–এই নাও তোমার বই। ফাইনালি তুমি মিশন কমপ্লিট করেছো, গুড জব।
ওহি বইগুলো হাতে নিয়ে ভালোভাবে খেয়াল করে,
–এখানে তিনটা বই কেনো? আর দুটো বই কোথায়?
–বাকি দুটো বই নেক্সট মিশন কমপ্লিট করে পাবে।
রোহানের কথায় ওহি আর জাইমা রেগে উঠে দাঁড়িয়ে,
–নেক্সট মিশন মানে? এটা কিন্তু কথা ছিলো না। আমার বই ফেরত দিন বলছি।
মিতু ওহির সামনে এসে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে,
–রোহান যখন যা বলবে, সেটাই কথা। সে যখন একবার বলেছে বই নেক্সট মিশনের পর পাবে মানে, তাই হবে। কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নেক্সট মিশনের অপেক্ষা করো। গুড লাক।
রোহান মুচকি হেসে মিতুকে নিয়ে চলে যায়। জাইমা রেগে ওহির দিকে তাকিয়ে,
–দেখেছিস? কিছু বলছি না দেখে কিভাবে আমাদের সুযোগ নিচ্ছে তারা।
–একবার তাদের কথা মেনে নিয়েছি বলে ভাবছে আমাদের দিয়ে যা ইচ্ছা তাই করাতে পারবে। জাইমা, এর একটা শিক্ষা না দিলে কিন্তু আমার রাতে ঘুম হবে না।
–আমারও মনে হচ্ছে একটা শিক্ষা দেওয়া উচিত। বল কি করবি?
–তেমন কিছু না। তবে প্রাথমিক ভাবে তাদের বোঝাতে হবে যে আমরা তাদের বিরুদ্ধে যু/দ্ধ ঘোষণা করেছি।
–হুম। সেটা কিভাবে?
ওহি কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা মুচকি হাসি দিয়ে জুস খাওয়া শুরু করে। জাইমা তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
বাইক পার্কিং-এ দাঁড়িয়ে আছে ওহি আর জাইমা। জাইমা সামনে থাকা সকল বাইক’গুলোর দিকে তাকিয়ে,
–ওহি, এতোগুলো বাইকের মাঝে কোনটা রোহানের বাইক ছিলো?
–আমিও বুঝতে পারছি না। এই কালো রঙেরটা হতে পারে।
–আমারও তাই মনে হচ্ছে। তবুও শিওর হয়ে নিলে ভালো হতো না?
–এখন আর শিওর হওয়ার সময় নেই। যা হবে দেখা যাবে। প্যাকেট’টা দে আমার কাছে।
জাইমা ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করে ওহির হাতে দিয়ে,
–সাবধান ওহি। কেউ যদি আমাদের দেখে নেয়, তাহলে কিন্তু আমরা শেষ।
–আমি তো এটাই চাই যেনো রোহানের বন্ধুরা কেউ আমাদের দেখে নেয়। তবেই তো জমবে খেলা।
ওহি কথাটা শেষ করেই একটা ডিম ছুঁড়ে ফেলে বাইকের উপর। ওহির দেখা দেখি জাইমাও একটা ডিম ছুঁড়ে দেয়। দুজন মিলে ইচ্ছা মতো বাইকটা নষ্ট করছে। তখনই পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠল,
–কি হচ্ছে এখানে?
হঠাত করেই কণ্ঠটা শুনে বুকে ধক করে উঠলো ওহির। জাইমার দিকে তাকাতেই দেখে সে চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। বুকে সাহস নিয়ে দুজন মিলে পিছনে ঘুরে তাকাতেই দেখে আশ্বিন আর রোদ্দুর দাঁড়িয়ে আছে।
রোদ্দুর একবার বাইকের দিকে তাকিয়ে আবার ওহি আর জাইমার দিকে তাকিয়ে,
–আশ্বিন, তোর বাইক!
রোদ্দুরের মুখে আশ্বিনের বাইক কথাটা শুনে ওহি আর জাইমা বিদ্যুতের গতিতে চোখ বড় করে একে অপরের দিকে তাকিয়ে একসাথে বলে উঠে,
–আশ্বিনের বাইক!!
এদিকে আশ্বিন দাঁতে দাঁত চেপে ওহির দিকে তাকিয়ে,
–এসব কি করছিলে তুমি?
ওহি গালে হাত রেখে অসহায় ভাবে তার দিকে তাকায়। সকালে এক চ/ড় খাওয়ার পর তার আর সাহস নেই আশ্বিনকে কিছু বলার।
ওহিকে এরূপ চুপ থাকতে দেখে আশ্বিন তার দিকে কিছুটা এগিয়ে আসতেই ওহি আচমকা এক চিৎকার দিয়ে সজোরে দৌড়াতে শুরু করে। জাইমা ওহির এমন হুটহাট দৌড়ে দেখে প্রথমে কিছুটা অবাক হলেও পরে কিছু একটা ভেবে সেও উল্টো দিকে দৌঁড়ে যেতে শুরু করে।
এদিকে, রোদ্দুর আর আশ্বিন আহাম্মকের মতো তাদের এমন দৌড়ে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আশ্বিন ওহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
–এই চশমা দাঁড়াও বলছি।
কে শোনে কার কথা? ওহি এক দৌঁড়ে ভার্সিটির বাহিরে চলে যায়। রোদ্দুর তাদের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে,
–চশমা না, আশ্বিন। ওর নাম ওহি, ফাইজা বিনতে ওহি।
আশ্বিন ওহির থেকে চোখ সরিয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকাতেই রোদ্দুরের হাসি বন্ধ হয়ে যায়। আশ্বিন কঠোর ভাবে একবার ওহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবার বাইকের দিকে তাকিয়ে ভার্সিটির ভেতর চলে যায়।
এদিকে, ওহি এক দৌঁড়ে বাড়ি ফিরে এসে ধপ করে সোফায় বসে পড়ে। ফারজানা বেগম রান্না ঘর থেকে এসে ওহির দিকে তাকিয়ে,
–ওহি? এভাবে দৌড়ে বাসায় আসলে কেনো? রাস্তায় কেউ বিরক্ত করছিলো না তো মা?
ওহি মাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওসমান ওহির সামনে বসে,
–আরে মা, তুমি ভাবলে কি করে যে ওহিকে কেউ বিরক্ত করবে? তোমার মেয়ে নিজেই তো মানুষকে বিরক্ত করে সময় পায়না।
–ভাইয়া!
ওহি গাল ফুলিয়ে ওসমানের দিকে তাকাতেই ওসমান মুচকি হেসে ওহির গাল টেনে দিয়ে,
–বলে ফেলেন বোন আমার। আবার কি অঘটন ঘটিয়ে এসেছেন ভার্সিটিতে?
ওহি একবার ওসমান আর মায়ের দিকে তাকিয়ে আজকের সকল ঘটনা বলে দেয়। ওহির কথায় ফারজানা বেগম মুচকি হেসে রান্না ঘরে চলে যায় আর ওসমান হাসতে হাসতে,
–ওহি, বোন তুই তো শেষ।
–ভাইয়া, আমি ভেবে নিয়েছি সাতদিন ভার্সিটিতে যাবো না। সবকিছু স্বাভাবিক হলে তবেই যাবো।
ওহির কথায় ফারজানা বেগম রান্নার চামচ হাতে নিয়ে এসে ধমক দিয়ে,
–খবরদার ওহি। তোমার সব দুষ্টুমি মেনে নিচ্ছি তাই বলে ভেবো না তুমি পড়া বাদ দিবে আর আমি সেটাও মেনে নিবো। একদিনও ক্লাস মিস করবে না তুমি। কথাটা মনে রেখো।
মায়ের কথায় ওহি মুখ ফুলিয়ে ওসমানের দিকে তাকায়। ওসমান উঠে দাঁড়িয়ে ওহির সামনের চুলগুলো এলোমেলো করে এপ্রোন পড়ে ক্লাসের জন্য বেড়িয়ে যায়। ওহি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমে চলে আসে।
———————
পরদিন,
আশ্বিন একটা চিরকুট হাতে নিয়ে মাঠের কোণে বসে আছে। আফরা আশ্বিনের হাতে থাকা চিরকুটের দিকে তাকিয়ে,
–আজও চিরকুট এসেছে আশ্বিন?
আশ্বিন কিছু না বলে চিরকুট খুলে দেখায় সেখানে লেখা আছে,
”দেখা হচ্ছে তোমার সাথে নবীন বরণের দিন। অপেক্ষায় থেকো।”
–খুব চালাক এই চিরকুট লেখক। নিজের পরিচয় কীভাবে লুকিয়ে রেখেছে দেখেছিস?
আশ্বিন আফরার দিকে তাকিয়ে,
–যতো চেষ্টাই করুক না কেনো, তাকে তো আমি খুঁজে বের করবোই। আর হ্যা, নবীন বরণে তার সাথে দেখা হচ্ছে অবশ্যই।
আশ্বিন কথাটা বলে চিরকুট’টা হাতের মাঝে চেপে ধরে রোদ্দুরকে একটা ইশারা দিতেই সে মাথা নেড়ে উঠে চলে যায়।
ওহি এতোক্ষণ ধরে দেয়ালের আড়াল থেকে আশ্বিন, আফরা আর রোদ্দুরকে কথা বলতে দেখছিলো। মূলত সে মুগ্ধ নয়নে আশ্বিনকেই দেখে যাচ্ছিলো। তার কথা বলার ধরণ, মায়াবী মুখের উপর চিন্তার ছাপ সব মিলিয়ে খুব সুন্দর লাগছে আশ্বিনকে। ওহি ঘোর লাগা চাহনিতে তাকিয়ে আছে আশ্বিনের দিকে।
হঠাত কাধে কারো হাত রাখায় ওহি চমকে পিছনে ঘুরে দেখে জাইমা।
–আরে আমি আমি।
–এভাবে চমকে দিতে হলো তোর? ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
–এভাবে কি দেখছিলি তুই লুকিয়ে লুকিয়ে?
কথাটা বলে জাইমা ওহির পিছনে ফিরে আশ্বিন আফরাদের দেখতে পায়।
–আরে কিছু দেখছিলাম না। ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলাম হঠাত করে আশ্বিন ভাইয়াকে দেখে এখানে এসে লুকিয়েছি।
–ওহ! কি দরকার ছিল আজকে ভার্সিটিতে আসার? তোর ম্যাসেজ দেখে আমাকেও আসতে হলো। নাহয় দুদিন পরেই আসতাম। তোর জন্য কাল একটা অঘটন ঘটিয়ে আজই ভার্সিটিতে চলে এসেছি আমরা।
–শোন জাইমা। এসব ছোটখাট বিষয়ে ভয় পেয়ে ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার মেয়ে আমি না। বুঝতে পেরেছিস তুই?
–হুম বুঝেছি। আমি নিশ্চিত তুই খালামনির বকা খেয়ে বাধ্য হয়ে এসেছিস।
–বেশি কথা বলিস তুই। চল ক্লাসে যাই।
জাইমা আর কথা না বাড়িয়ে ওহির সাথে ক্লাসের দিকে আসতে থাকে ঠিক তখনই চোখ যায় অডিটোরিয়ামের দিকে। সে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে,
–ওহি, ওখানে কি হচ্ছে?
ওহি জাইমার কথায় সেদিকে তাকিয়ে দেখে রোহান, মিতু আর তাদের বন্ধুরা মিলে হল পরিষ্কার করছে। তাদের এসব কাজ করতে দেখে ওহি যেনো আকাশ থেকে পড়ে। তখনই সেখান থেকে একটা মেয়ে বেরিয়ে আসতেই ওহি আর জাইমা তাকে ধরে,
–এক মিনিট দাঁড়াও। এখানে কি হচ্ছে?
–কিছুদিনের মধ্যেই নবীন বরণের আয়োজন হবে তো তাই অডিটোরিয়াম ঠিকঠাক করা হচ্ছে।
মেয়েটির কথায় জাইমা অবাক হয়ে ওহির দিকে তাকিয়ে,
–কি ব্যাপার বল তো ওহি? রোহান আর তার বন্ধুরা মিলে হল পরিষ্কার করছে! আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না।
–আমারও না। রোহান করছে জুনিয়রদের বরণের জন্য কাজ! এতো ভালো কবে থেকে হয়ে গেলেন উনি?
তাদের কথায় মেয়েটি মুচকি হেসে,
–আরে না। রোহান মিতু আর বাকিদের তো শাস্তি স্বরূপ এই কাজ করতে দেওয়া হয়েছে। শুনেছি কোন জুনিয়রদের সাথে নাকি রেগিং করেছিলো।
জাইমা আর ওহি অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে,
–শাস্তি দিয়েছে! কে শাস্তি দিয়েছে তাদের?
–কে আবার? আশ্বিন ভাইয়া।
মেয়েটি কথাটা বলেই মুচকি হেসে চলে যায়। এদিকে মেয়েটির মুখে আশ্বিনের নাম শুনে ওহি স্তব্ধ হয়ে যায়। মুহূর্তেই অজানা এক অনুভূতির ছোঁয়া এসে লাগে তার মনে। মিশ্র এক অনুভব নিয়ে জাইমার দিকে তাকাতেই দেখে সে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তারই দিকে। ওহি একনজর হলরুমের দিকে তাকিয়ে সামনে ফিরে দেখে দূরে আশ্বিন আনমনে ফোনে কথা বলতে বলতে এগিয়ে যাচ্ছে।
দূর থেকে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে ওহির ঠোঁটের কোণে ফুঁটে উঠে মুচকি হাসি। আর কিছু না বলে জাইমাকে নিয়ে ক্লাসে চলে আসে সে।
–চলবে(ইনশাআল্লাহ)
((আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? কিছুটা অগোছালো ভাবেই গল্পটা লেখা হচ্ছে। তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। ইনশাআল্লাহ সময়ের সাথে সাথে লেখার ধরনের পরিবর্তন হবে। ধন্যবাদ))
#এক_মুঠো_অনুভূতি💖
লেখিকা- তাহসীন নাওয়ার রীতি
পর্ব:০৩
ক্লাস শেষে ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছিল ওহি আর জাইমা। তখন দেখতে পায় রোহান এক প্রকার রেগে হন্তদন্ত হয়ে অডিটোরিয়াম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। জাইমা তার দিকে তাকিয়ে,
–বেচারা হয়তো হল পরিষ্কার করে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে।দেখ কিভাবে রেগে চলে যাচ্ছে।
–একদম উচিত শিক্ষা হয়েছে তার। আশা করি আর কখনও জুনিয়রদের বিরক্ত করবে না।
–তাই যেন হয়। কিন্ত আমার মনে হচ্ছে না রোহান এতো সহজে ভালো হয়ে যাবে।
ওহি কিছু না বলে রোহানের দিকে একবার তাকিয়ে জাইমার সাথে ক্যান্টিনের দিকে এগিয়ে যেতে নিতেই পেছন থেকে কেউ একজন ডেকে উঠে,
–এই চশমা দাঁড়াও!
ওহি কণ্ঠটা শুনে চোখ বড় করে একবার পিছনে ফিরে দেখে আশ্বিন তার দিকেই এগিয়ে আসছে। আশ্বিনকে দেখেই ওহি দৌড়ে যেতে নিতেই আশ্বিন দ্রুত বলে উঠে,
–ফাইজা দাঁড়াও বলছি।
আশ্বিনের কণ্ঠে নিজের নাম শুনে থমকে যায় ওহি। সে সুযোগে মুহূর্তেই আশ্বিন তার সামনে এসে দাঁড়ায়। ওহি একনজর আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে পর মুহূর্তে চোখ সরিয়ে,
–আমাকে ওহি বলেই ডাকতে পারেন। সবাই আমায় এই নামেই ডাকে।
–প্রয়োজন না সবাই যেই নামে তোমায় ডাকবে আমাকেও সেই নামে ডাকতে হবে। তুমি দৌঁড়ে যাচ্ছিলে দেখে ফাইজা বলে ডেকেছি। নয়তো তোমার নাম চশমা’ই ঠিক আছে।
ওহি কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে দেখে আশ্বিন মুচকি হেসে দুটো বই তার সামনে দিয়ে,
–তোমার বই। নাও।
ওহি মুচকি হেসে আশ্বিনের হাত থেকে বই নিয়ে,
–ধন্যবাদ।
–ধন্যবাদ? ম্যাডাম, আপনি কাল আমার বাইকের উপর কি করেছিলেন, মনে আছে তো?
আশ্বিনের কথায় ওহি মুখ কালো করে তাকিয়ে,
–আমি তো ইচ্ছে করে করিনি। সত্যি! আমি ভেবেছিলাম সেটা হয়তো রোহানের বাইক। তাই তো আমি..
–কার বাইক সেটা আসল বিষয় না। যদি সেটি রোহানের বাইক হতো, তবুও তোমার এমন করা উচিত হতো না। কারণ, তুমি যদি তার বাইক নষ্ট করতে তাহলে পরবর্তীতে সে আবারও তোমাদের বিরক্ত করতো। এভাবে এই ছোট্ট বিষয়টা আরো বড় হতো। সব সময় কোন কাজ করার আগে বুঝে করবে, যে এরপর কি হতে পারে। মনে থাকবে?
–জি ভাইয়া।
–গুড। এখন শাস্তির জন্য প্রিপারেশন নাও।
ওহি এতোক্ষণ আশ্বিনের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে বুঝছিলো। হঠাত শান্তির কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,
–শাস্তি মানে? কিসের শাস্তি?
–তুমি যে আমার বাইক নষ্ট করেছো, এটা কি ভুলে গিয়েছো?
–তাই বলে আমি সরি বলেছি তো।
–হুম। তবুও শাস্তি পেতে হবে। এখন লাইব্রেরীতে যাও। তারপর এক,দুই আর তিন নম্বর বুক-সেল্ফে যতগুলো পুরোনো বই আছে সবগুলো আলাদা করবে। বইগুলোর একটা লিস্ট করে দুই ঘন্টার মধ্যে আমাকে এনে দিবে।
আশ্বিনের কথায় ওহি ভুত দেখার মতো করে তাকিয়ে,
–এসব কি আমি করবো?
–আমার মনে হচ্ছে আমি এতোক্ষণ তোমার সাথেই কথা বলছিলাম। যাই হোক, দুই ঘন্টার মধ্যেই লিস্ট আমার হাতে চাই। এখন যাও।
আশ্বিন কথাটা বলেই চলে যায়। ওহি আবাক হয়ে জাইমার দিকে ফিরে দেখে সে তার দিকে তাকিয়েই ইশারায় বলছে, “আজ আমরা শেষ।”
——————
লাইব্রেরীতে দাঁড়িয়ে একের পর এক পুরোনো বই আলাদা করে টেবিলের উপর রাখছে ওহি আর জাইমা। ওহি রাগে আশ্বিনকে কখন থেকে বকে যাচ্ছে,
–কতো বড় পাজি ছেলে দেখেছিস? আমি তো ভেবেছিলাম হয়তো পাজি হলেও, উনি মানুষ ভালো। কিন্ত এখন বুঝলাম আমার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।
–তুই তো কালও ভাইয়াকে বকছিলি, এর মাঝে ভাইয়া যে ভালো, এমনটা কখন ভেবেছিস?
ওহি হাতে থাকা বইগুলো টেবিলের উপর রেখে,
–রোহানদের শাস্তি দিয়েছে দেখে ভেবেছিলাম হয়তো মানুষ ভালো আছে। এখন তো ইচ্ছে করছে এই বইগুলো দিয়ে উনার মাথা ফাটিয়ে দিতে।
–তুই যাই বলিস না কেনো। আমরা ভুল করেই হোক আর যাই হোক, ভাইয়ার বাইক কিন্তু নষ্ট করেছি। তাই..
–জাইমা, খবরদার তুই উনার হয়ে একটা কথাও বলবি না। তুই আমার বান্ধবী, তুই সবসময় আমার কথায় সম্মতি জানাবি। কথাটা মনে রাখ।
জাইমা ওহির কথায় হাসতে হাসতে হাতের বইগুলো টেবিলে রেখে,
–নে সব বই আলাদা করা শেষ। এখন শুধু লিস্ট করা বাকি।
জাইমা কথাটা বলতেই তার ফোন বেজে ওঠে। ফোনের দিকে তাকিয়ে,
–ওহি, আম্মু ফোন করেছে। তুই লিখা শুরু কর। আমি কথা বলে আসছি।
জাইমার কথায় ওহি মাথা নেড়ে লিখতে শুরু করে। কিন্তু মনে মনে সে এখনো আশ্বিনকে বকে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর জাইমা এসে বলে,
–ওহি, আম্মু ফোন দিয়ে বললো আব্বু নাকি ফিরে এসেছে। শুনেছিস তুই? আমার আব্বু এসেছে মানে তো তোর আব্বুও এসেছে। জলদি চল ভাইয়াকে বলে আজ দুজনেই চলে যাই, বাকিটা নাহয় পরে করে নিবো।
–আরে না, তুই চলে যা। বইগুলো তো আলাদা করা শেষই। এখন একটা লিস্ট করা তেমন বেশি কিছুনা। আমি লিস্ট করেই চলে যাবো, তুই ভাবিস না।
জাইমা প্রথমে যেতে না চাইলেও পরে ওহির কথায় যেতে বাধ্য হয়। জাইমা চলে যেতেই ওহি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে লিস্ট করতে শুরু করে তখনই ফোনে একটা টেক্সট আসে ওসমানের,
”ওহি, বাবা বিজনেস ট্যুর থেকে ফিরে এসেছে। ক্লাস শেষ হলে দ্রুত চলে আসিস। আমিও বাসায় যাচ্ছি।”
ওহি তার ছোট্ট ফোনটা পাশে রেখে থমকে বসে আছে। “বাবা ফিরে এসেছে” কথাটা শুনে যেখানে তার খুশি হওয়ার কথা সেখানে তার মাঝে কোনরূপ আগ্রহের প্রকাশ নেই। ওহি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বইয়ের উপর মাথা রাখে। মুহূর্তেই ঘুমের ঘোরে তলিয়ে যায় সে।
এদিকে, দুই ঘন্টা প্রায় হয়ে যাওয়ার পরেও ওহি না আসায় আশ্বিন লাইব্রেরীতে এসে দেখে ওহি বইয়ের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। তা দেখে সে একটা বাঁকা হাসি দেয়।
ওহির সমানের ছোট চুলগুলো এসে মুখের উপর পড়ে আছে। চশমা চোখ থেকে সরে গিয়ে, ঠোঁট উল্টে অনেকটা বাচ্চাদের মত করে ঘুমাচ্ছে সে।
–চশমা, এই চশমা উঠো। ফাইজা!
আশ্বিনের ডাকে ওহি ধীরে ধীরে উঠে বসে হাত দিয়ে চোখের চশমা ঠিক করে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,
–আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম?
–কি মনে হয় তোমার? কাজ বাদ দিয়ে এতোক্ষণ ঘুমাচ্ছিলে তুমি। আমি এসে ডেকে দিলাম এখন আমাকেই জিজ্ঞেস করছো তুমি ঘুমাচ্ছিলে কিনা?
–ভালো করেছেন আমাকে ডেকে দিয়ে। নয়তো বাসায় যেতে দেরি হয়ে যেতো। ধন্যবাদ।
ওহি কথাটা বলে হাই তুলতে তুলতে উঠে দাঁড়িয়ে চলে যেতে নিতেই,
–আরে চশমা দাঁড়াও। লিস্ট করা শেষ হয়েছে তোমার?
লিস্টের কথা শুনে ওহি আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,
–এখনো শেষ হয়নি লিস্ট করা।
–তাহলে চুপচাপ এখানে বসে লিস্ট করো।
কথাটা বলেই আশ্বিন একটা বই নিয়ে ওহির মুখোমুখি বসে পড়তে শুরু করে। ওহি আশ্বিনের দিকে একবার তাকিয়ে রাগে একটা ভেংচি কেটে লিস্ট লিখতে শুরু করে।
ওহি এক মনে কাজ করছে আর আশ্বিন আঁড়াল থেকে দু’এক বার তাকিয়ে দেখছে তার কোন কাজে ভুল হচ্ছে কিনা।
ওহি লিস্ট লিখতে লিখতে,
–আশ্বিন ভাইয়া, শুনেছি আপনি ভার্সিটির টপ স্টুডেন্ট। এখন পর্যন্ত কেউ আপনার রেকর্ড ভঙ্গ করতে পারেনি।
–ভার্সিটিতে আমার থেকেও অনেক মেধাবী স্টুডেন্ট আছে, আগেও ছিলো, ভবিষ্যতেও আসবে। সর্বোচ্চ নম্বর না পেলেই কখনো কারো মেধাকে অস্বীকার করা যাবে না।
–ঠিক। আচ্ছা, কেমন লাগবে আপনার যদি কখনো কেউ আপনার এই রেকর্ড ভঙ্গ করে দেয় তো? তখন কিন্তু স্যার ম্যাডামরা তাকে আপনার থেকেও বেশি স্নেহ করবে।
ওহির কথায় আশ্বিন বই থেকে চোখ তুলে ওহির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে,
–অবশ্যই খুশি হবো আমি। ইভেন, আমি তাকে নিজে হাতে একটা পুরস্কার দিবো।
–কি পুরস্কার দিবেন?
–এখনো ঠিক করিনি। সময় হলে দেখা যাবে।
ওহি লেখা শেষ করে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে লিস্টটা তার দিকে এগিয়ে,
–তাহলে ঠিক করে রাখুন ভাইয়া। খুব শীঘ্রই আমি আপনার টপ রেজাল্টের এই রেকর্ড ভঙ্গ করতে যাচ্ছি।
ওহি কথাটা বলেই কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে যায়। ঠিক তখনই রোদ্দুর লাইব্রেরীতে প্রবেশ করে ওহির বলা শেষ কথাটা শুনে অবাক হয়ে,
–আশ্বিন, ও কি তোকে চ্যালেঞ্জ করলো?
প্রতিউত্তরে আশ্বিন একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওহির লিখা লিস্টটা দেখতে থাকে। রোদ্দুর আশ্বিনের এমন চুপ থাকতে দেখে তার পাশে এসে বসে। আশ্বিন এক নজর রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে,
–পিচ্চি হলেও তার হাতের লিখা কতো সুন্দর, দেখ। হায়রে চশমা!
ফাইজা অন্য মেয়েদের মতো না রোদ্দুর। এই প্রথম কেউ আমাকে আমার রেকর্ড ভাঙার চ্যালেঞ্জ দিয়েছে। ইমপ্রেসিভ! এখন দেখা যাক, করতে পারে কিনা।
আশ্বিন কথাটা বলে মুচকি হেসে লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে যায়। রোদ্দুর অবাক হয়ে আশ্বিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
–চলবে(ইনশাআল্লাহ)