একটা বসন্ত বিকেলে পর্ব ১০

0
789

#একটা_বসন্ত_বিকেলে
#অরনিশা_সাথী

|১০|

কেনাকাটা শেষ। এত্ত এত্ত শপিং ব্যাগ। শ্রাবণের ভয়ে বেশি দোকান ঘুরেও দেখেনি, দু/একটা দোকান ঘুরে যা পছন্দ হয়েছে তাই কিনেছে। বেশি ঘুরলে যদি আবার ধমক দেয়? সেই ভয়েই বেশি ঘুরাঘুরির চিন্তা মাথায় আনেনি। নিজের জন্য শাড়ি, থ্রি-পিস, কূর্তি, টপস গাউন সবই নিয়েছে। অবশ্য শ্রাবণই বলেছে। একবারেই প্রয়োজনীয় সব কিনে নিতে। ও বারবার অফিস ফেলে আসতে পারবে না। তাই আয়াতও আর টু শব্দ করেনি। শপিং করতে আয়াতের বরাবরই ভালো লাগে। তাই তো পছন্দের সবকিছুই কেনাকাটা করেছে। সাথে শাশুড়ী আর দেবরের জন্যও টুকটাক কিনেছে। সব ব্যাগগুলো অবশ্য শ্রাবণই বহন করছে। আয়াত নিতে চাইলেও দেয়নি। সবকিছু কেনাকাটা শেষ বের হতে গেলে মনে হলো শ্রাবণের জন্য কিছু নেয়নি। আচ্ছা ওর জন্যও কি নিবে? শ্রাবণ কি পড়বে সেসব? এই সম্পর্কটাকেই তো সারাজীবন বয়ে যেতে হবে। স্বাভাবিক হতে হবে লোকটার সাথে। লোকটা এসবে মানে না ঠিক আছে। না মানার পেছনেও অবশ্য কারণ আছে। নিজের বাবার থেকেই বড় আঘাতটা পেয়েছে। হ্যাঁ আয়াতেরও মানতে কষ্ট হচ্ছে। ফারাবীকে ভুলা সহজ না। কিন্তু ভুলতে তো হবে। ভুলতে না পারলেও ভুলে থাকার চেষ্টা করতে তো হবেই। শ্রাবণের সাথে নিজের জীবনটা জুড়েছে ও। শ্রাবণের কাছে এই সম্পর্কের মূল্য না থাকলেও ওর কাছে তো আছে। ও না হয় এক ধাপ এগিয়ে দেখুক। তাছাড়া শাশুড়ী মাকে কথা দিয়েছে শ্রাবণের ভুল ভাঙাবে। সেই চেষ্টা তো ওকে করতেই হবে। মনে মনে এসব ভেবে আয়াত বললো,
–“আরো কিছু কেনার ছিলো।”

শ্রাবণ তাকালো আয়াতের দিকে। আয়াত মাথা নামিয়ে নিলো। কিছু সেকেন্ড নিরব থেকে শ্রাবণ বললো,
–“চলো।”

এই বলে শ্রাবণ শপের দিকে এগিয়ে গেলো। পেছনে আয়াতও গেলো। আয়াতকে ছেলেদের শপে যেতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো শ্রাবণ। পরমূহুর্তেই ভাবলো হয়তো শানের জন্যই আরো কিছু নিবে। তাই আর কোনো প্রশ্ন করলো না। আয়াত সবকিছু ঘুরেফিরে দেখছিলো। শ্রাবণের ফোন আসায় ও বললো,
–“তুমি পছন্দ মতো নিয়ে নাও, আমি ফোনটা ধরে আসছি।”

আয়াত সম্মতি জানাতেই শ্রাবণ হাতের ব্যাগগুলো একপাশে রেখে ক্ষানিকটা দূরে গিয়ে ফোন রিসিভ করলো। এই ফাঁকে আয়াত শানকে ফোন করে শ্রাবণের টি-শার্ট এবং শার্টের মাপ জেনে নিলো। পছন্দ মতো সবকিছু কিনে চোখ গেলো ধূসর রঙের একটা পাঞ্জাবির দিকে। অসম্ভব সুন্দর দেখতে পাঞ্জাবিটা। ভাবলো শ্রাবণের জন্য নিবে। কিন্তু শ্রাবণ বোধহয় পাঞ্জাবি পড়ে না। কেননা ওর আলমারিতে একটা পাঞ্জাবিও দেখেনি আয়াত। কিন্তু কি মনে করে যেন পাঞ্জাবিটাও নিয়ে নিলো আয়াত। শ্রাবণ কথা বলা শেষ করে আয়াতের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,
–“শেষ?”

–“হু।”

শ্রাবণ বিল পে করতে করতে বললো,
–“ভেবে বলো।”

–“ভেবেই বলেছি।”

অতঃপর দুজনে বেরিয়ে পড়লো শপিংমল থেকে। শ্রাবণ শপিংব্যাগ গুলো গাড়ির পেছনের সিটে রেখে আয়াতকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“চলো।”

–“আবার কোথায়?”

–“ফোন নিতে হবে না?”

–“আমার ফোন আনিয়ে__”

শ্রাবণের শান্তশিষ্ট ওমন চাহনী দেখে আয়াত আর কিছু বলতে পারলো না৷ শ্রাবণের সাথে গিয়ে একটা নতুন ফোন কিনে নিলো। অতঃপর একেবারে ডিনার সেরে গাড়ির দিকে এগোলো। গাড়িতে উঠার সময় পাশ থেকে দুটো ছেলের আপত্তিকর কথা কানে আসে। যা আয়াতকে নিয়েই বলা হয়েছে। চোয়াল শক্ত হয়ে এলো শ্রাবণের। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো। আয়াতকে গাড়িতে বসতে বলে শ্রাবণ এগিয়ে গেলো ছেলে দুটোর দিকে। আয়াতের ফোন আসে। ইরার ফোন। ইরার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ায় শ্রাবণের দিকে আর লক্ষ্য করলো না আয়াত। শ্রাবণ ছেলে দুটোকে ঠাটিয়ে দুটো চ/ড় মারে। এলোপাথাড়ি লাগায় কয়েক ঘাঁ। ছেলে দুটো সেখান থেকে পালিয়ে যায় একপ্রকার।

ফারাবী আজ বাসায় ফিরেই রাইতার সাথে খুব নরম স্বরে কথা বলছে। যেন ওদের সম্পর্কটা অন্যসবার মতোই স্বাভাবিক। এসব দেখে রাইতার ভীষণ ভালো লাগছে। রাইতা ফারাবীর হাত ধরে বললো,
–“আমাকে একটা সুযোগ দিচ্ছো ফারাবী?”

ফারাবী দুহাতে রাইতার গাল ধরে বললো,
–“হুম, দিচ্ছি।”

রাইতা খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরলো ফারাবীকে। ফারাবী বাঁকা হাসলো। আলতো করে রাইতার পিঠে হাত রাখলো। রাইতা ফারাবীর গালে চুমু দিয়ে বললো,
–“আমি তোমাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি ফারাবী।”

ফারাবী হাসলো শুধু। রাইতা আবারো জিজ্ঞেস করলো,
–“তুমি কি আমাকে ভালোবাসবে না?”

ফারাবী হেসেই রাইতার মাথায় চুমু খেয়ে বললো,
–“অবশ্যই। তুমি তো আমার বিয়ে করা বউ। ভালোবাসতে তো হবেই।”

রাইতা বেশ কিছুক্ষণ জাপ্টে ধরে বসে রইলো ফারাবীকে। রাইতা বললো,
–“আমি তোমাকে সম্পূর্ণ ভাবে চাই ফারাবী। আমাকে তোমার করে নিবে?”

–“অবশ্যই নিবো। তার আগে আমার একটা কথা রাখবে রাইতা?”

–“হ্যাঁ বলো না।”

–“বেশি কিছু না, শুধু একটা সাইন করে দিবে তাহলেই হবে।”

–“কিসের সাইন?”

–“বিশ্বাস করো না আমায়?”

–“নিজের থেকেও বেশি।”

–“তাহলে আর কোনো প্রশ্ন করবে না। আমি চাই সবটা ঠিক করে নিতে। আর সেজন্যই__”

–“আচ্ছা সাইন করে দিবো।”

ফারাবী খুশি হয়ে একটা পেপার এগিয়ে দিলো রাইতার সামনে। রাইতাও কোনো কিছু না ভেবেই সাইন করে দিলো। ফারাবীর একটু মিষ্টি কথায় রাইতা এতটাই খুশি যে পেপারে কি লেখা আছে সেটা পড়ার কথা ওর মাথাতেই আসেনি। খুশি মনেই পেপারে সাইন করে দিলো রাইতা। তারপর শক্ত করে ফারাবীকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“আমি তোমাকে ভালোবাসি ফারাবী।”

মূহুর্তেই ফারাবীর চেহারার রঙ পালটে গেলো। রাইতাকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“আমি জাস্ট ঘেন্না করি তোমায়।”

রাইতা অবাক চোখে তাকালো ফারাবীর দিকে। একটু আগের ফারাবীর সাথে এখনকার এই ফারাবীকে মেলাতে পারছে না। অবিশ্বাস্য কন্ঠে বললো,
–“একটু আগে যে বললে___”

–“নাটক ছিলো সবটা।”

–“মানে?”

–“মানে খুব সহজ, তুমি যেমন আমার সাথে নাটক করেছিলে আমিও ঠিক তেমন ভাবেই নাটক করলাম তোমার সাথে।”

রাইতা তখনো অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে ফারাবীর দিকে৷ ফারাবী বললো,
–“বোঝোনি বোধহয়, আচ্ছা আমিই বুঝিয়ে বলছি।”

এই বলে ফারাবী রাইতার সামনে পেপারটা মেলে ধরলো৷ পেপারটা দেখে রাইতার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। ডিভোর্স পেপার এটা৷ তারমানে ফারাবীর নরম স্বরে কথা বলার, সবটা মেনে নেওয়ার উদ্দেশ্য এই পেপারে সাইন করানো ছিলো? রাইতা বললো,
–“মানি না, মানি না আমি।”

এই বলে পেপারটা নিতে গেলেই ফারাবী সরিয়ে ফেলে। তারপর বললো,
–“তুমি যেমন আমাকে পাওয়ার জন্য মিথ্যে নাটক করেছিলে, তেমনি আমিও এই ছোট্ট নাটক করলাম ডিভোর্স পেপারে তোমার সাইন নেওয়ার জন্য।”

এই বলে ফারাবী আলমারি থেকে কাবিনের টাকা বের করে রাইতার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
–“এক্ষুনি বেরিয়ে যাবে আমার বাড়ি থেকে।”

কথাটা বলে ফারাবী টানতে টানতে রাইতাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। রাইতা কাঁদছে। আকুতি করছে ফারাবীর কাছে৷ কিন্তু ফারাবী ওর কথা শুনছে না৷ রাইতার কান্না শুনে ফারাবীর মা বাবা ভাই আসলো সেখানে৷ রাইতার কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে রাইতা নিজেই সবটা বললো সবাইকে। ফারাবী কিছু না বলে রাইতাকে টেনে নিয়ে বাসা থেকে বের করে দিয়ে দরজা আটকে দিলো। আজকে ফারাবীর পরিবারের কেউ কোনো টু শব্দ করেনি। কেননা একদিন উনারাই ফারাবীকে অবিশ্বাস করেছিলেন। তাই আজ আর কিছু বলার মুখ নেই উনাদের। ফারাবী নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।

সবেই বাসায় ফিরলো শ্রাবণ আর আয়াত। শান আর সানিয়া মেহরাব সোফায় বসে ওদের জন্যই অপেক্ষা করছিলো। আয়াত একে একে সব জিনিসপত্র দেখায় সবাইকে। সাথে সানিয়া মেহরাব ও শানের জন্য আনা জামাগুলো ওদের হাতে দেয়। শ্রাবণ তখন অন্যপাশের সোফায় বসে গলায় বাঁধা টাই ঢিলে করছিলো। একজন সারভেন্ট এসে শ্রাবণ এক গ্লাস পানি দিয়ে যায়। শান শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে আবার আয়াতের দিকে তাকালো। আয়াতকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“ভাইয়ার জন্য কিছু কেনোনি আয়ু ভাবী?”

আয়াত একপলক শ্রাবণের দিকে তাকালো। রেস্তোরা থেকে বের হওয়ার পর থেকেই শ্রাবণকে বেশ রাগান্বিত দেখছে ও। লোকটার হঠাৎ করে কি হয়েছে সেটাও বুঝতে পারছে না। শ্রাবণ ভাবলেশহীন ভাবে পানি পান করছিলো। শ্রাবণের জন্য কেনা জামার ব্যাগগুলো এগিয়ে দিলো শানের দিকে। শান আর সানিয়া মেহরাব মুচকি হাসলো। শ্রাবণ পানিটুকু শেষ করে হনহনিয়ে উপরে চলে গেলো। আয়াত ওদের দুজনের সাথে আরো টুকটাক কথা বললো। শেষে সানিয়া মেহরাব বললো,
–“খেয়ে ফিরেছিস নিশ্চয়ই? বড্ড টায়ার্ড না? ফ্রেস হয়ে শুয়ে পড়, যা।”

আয়াত সম্মতি জানিয়ে শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে উপরে নিজেদের ঘরে চলে গেলো। আয়াত ঘরে গিয়ে দেখে শ্রাবণ ততক্ষণে ফ্রেস হয়ে নিয়েছে। আয়াত তিনটে ব্যাগ হাতে নিয়ে শ্রাবণের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
–“এগুলো আপনার জন্য, ভালো লাগলে পড়বেন প্লিজ।”

শ্রাবণ শক্ত চোখে তাকালো। যা দেখে আয়াত ভড়কে গেলো ক্ষানিকটা। আচমকাই শ্রাবণ একটানে আয়াতের কাঁধ থেকে শাড়ির আঁচল খুলে নিলো। অতঃপর টেনে টেনেই আয়াতের গায়ে থেকে শাড়ি খুলে নিলো। আয়াত হাজার চেষ্টা করেও শাড়িটা ধরে রাখতে পারলো না। শ্রাবণের গলায় ঝুলানো টাওয়ালটা নিয়ে আয়াত দ্রুত নিজের গায়ে জড়িয়ে নিলো। অবাক কন্ঠে বললো,
–“আরেহ কি করছেন আপনি? এভাবে শাড়ি টেনে খুললেন কেন?”

শ্রাবণ কোনো কথায় জবাব দিলো না। ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ার খুঁজে লাইটার বের করলো। আয়াত শ্রাবণের কাছে গিয়ে শাড়িটা নিতে গেলে শ্রাবণ সরিয়ে ফেলে সেটা৷ আয়াত কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই শ্রাবণ শাড়িতে আগুল ধরিয়ে সেটা ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে। আয়াত মৃদু চিৎকার করেই বললো,
–“পাগল হইছেন আপনি? আমার শাড়িটাতে এভাবে আগুন ধরালেন কেন?”

বলে আয়াত শাড়ির কাছে গিয়ে হাত দিয়ে শাড়ির আগুন নেভাতে গেলে শ্রাবণ ওর বাহু ধরে টেনে দাঁড় করায়। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“যে শাড়ি পড়লে পেট দেখা যাবে। যে শাড়ি পড়লে ছেলেরা হ*ট, সে*ক্সি এসব কথা বলবে সে শাড়ি পড়ার কোনো দরকার নেই। ইন ফিউচারও যদি এরকম কোনো শাড়ি দেখি আমি তাহলে সেগুলোতেও এটার মতোই আগুন ধরিয়ে দিবো৷ মাথায় থাকে যেন।”

কথাটা বলে আয়াতকে ছেড়ে দিয়ে ব্যালকোনিতে চলে গেলো শ্রাবণ। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো আয়াত৷ শ্রাবণের এমন ব্যবহারে ভীষণ কষ্ট লাগছে ওর। ভালো ভাবে বললেই হতো। তার জন্য এমন করার কি আছে? বাহু শক্ত করে চেপে ধরাতে সেখানেও ব্যাথা পেয়েছে অনেকটা৷ তার উপর চোখের সামনে নিজের পছন্দের শাড়িটা এভাবে পুড়ে ছাই হয়ে যেতে দেখে কান্নাগুলো যেন আরো থামতে চাইছে না। কাবার্ড থেকে একটা জামা নিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই ওয়াশরুমে চলে গেলো আয়াত৷

চলবে~

|ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত। আচ্ছা আপনাদের কাছে কি গল্পটা ভালো লাগছে না? সবাই শুধু নাইছ নেক্সট লিখেন, এত কষ্ট করে গল্প লিখি তবুও কেউ কোনো গঠনমূলক মন্তব্য করেন না। হতাশ হই এতে খুব। আশা রাখছি গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। আর গল্পটা ভালো না লাগলেও বলে দিবেন। শেষ করে দিবো আমি। ধন্যবাদ|

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here