#মধুরেণ_সমাপয়েৎ
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_১২ (অন্তিম পর্ব)
_________________
-“তুই আবার কি কান্ড ঘটালি আকিব?”
মাহিদের কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকিব বললো,
-“আমি মাইশাকে ভালোবাসি।”
বাড়ির সবাই অবাক।মাইশা এক কোণায় মাথা নিচু করে বসে আছে।তার দিকে তাকিয়ে মনোয়ার সাহেব হালকা কেশে বললেন,
-“কতদিন ধরে এইসব চলছে?”
মাইশা কিছু বলার আগেই আকিব বললো,
-“ফুফা বিশ্বাস করো আমরা দুজনে একসাথে আজ পর্যন্ত ঘুরতেও যাইনি।আর ঘুরতে যাওয়া তো দূরের কথা আমি তো মাইশাকে ‘ভালোবাসি’ এটাই আজ পর্যন্ত বলতে পারলাম না।”
সবাই নিশ্চুপ।কিছুক্ষণ পরে সবাই একসাথে হেসে দিলো। আকিব আর মাইশা অবাক হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে আছে।মাহিদ গিয়ে আকিবের কাঁধে হাত রেখে বললো,
-“তোর আর মাইশার বিয়ে বাবা-মা আর মামা-মামী অনেক আগেই ঠিক করে রেখেছে।কিন্তু তোরা দুজন তা জানতি না।”
-“মানে?”
মনোয়ার সাহেব আকিবের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
-“হ্যাঁ বাবা।তোকে আমি আর রাবেয়া সবসময়ই পছন্দ করি।তাই বিয়েটা ঠিক করেই রেখেছি।”
আকিবের মুখে হাসি ফুটলো।সে আড়চোখে মাইশার দিকে তাকিয়ে দেখলো সেও মুচকি হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
-“আমি বিয়েটা তাড়াতাড়ি করে ফেলতে চাচ্ছি।আসলে আমি ভাবছি আবার অস্ট্রেলিয়াতে চলে যাবো।তাই বিয়েটা করেই যেতে চাই মাইশাকে নিয়ে।সমস্যা নেই ও ওখানে গিয়ে পড়াশোনা কন্টিনিউ করবে!”
মাহিদ ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“তুই না বললি আর যাবি না?”
-“জানিস তো আমার ব্যবসা করা ভালো লাগে না।”
-“তোর ইচ্ছা।এখন তো আর কিছু বলার নেই।”
মাইশা হঠাৎ করে বললো,
-“আমি সবাইকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।”
সবাই অবাক হয়ে মাইশার দিকে তাকালো।মাইশা আবার বললো,
-“অবাক হওয়ার কিছু নেই।মামার বয়স হয়েছে উনার কি এখন এতোকিছু একা সামলাতে পারেন!এটা তো বোঝা উচিত।সে তো আর বাচ্চা নয়।”
আকিবের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো মাইশা।রুহুল সাহেব হাসি দিয়ে বললেন,
-“এই তো আমার ভাগ্নি আমার কষ্টটা বুঝেছে।”
আকিব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“আচ্ছা আমি কোথাও যাবো না।আমি বাবার অফিসেই জয়েন করবো।”
আকিবের কথায় সবার মুখে হাসি ফুটলো।
_________________
-“মাহিদ বললো তুমি নাকি আমাকে কি বলবে রবিন।”
কফিশপে তানিমা আর রবিন মুখোমুখি বসে আছে।তানিমার কথায় হকচকিয়ে উঠলো রবিন।তানিমা বেশ বুঝতে পারছে রবিন কিছু বলতে চেয়েও পারছে না।তানিমা ফের প্রশ্ন করবো,
-“তুমি কি আমাকে কিছু বলবে রবিন?”
-“ম্যাডাম আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
এক দমে কথাগুলো বললো রবিন।তানিমা চোখ বড় বড় করে রবিনের দিকে তাকিয়ে আছে।রবিন মাথা নিচু করে বসে আছে।রবিনের এমন কান্ড দেখে তানিমা মুচকি হেসে বললো,
-“আমার কিন্তু এতো লজ্জাবতী ছেলে পছন্দ না।”
তানিমার কথায় রবিন মাথা তুলে বললো,
-“আমি লজ্জাবতী না তো!কিন্তু আপনার সামনে এমন হয়ে যাই।”
রবিনের কথায় তানিমা হেসে দিলো।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
-“এভাবে কেউ প্রপোজ করে?”
রবিন তানিমার দিকে ফুলের তোড়া এগিয়ে দিয়ে বললো,
-“আপাতত এটা নেন।কারণ আজকে এটাই নিয়ে এসেছি।”
তানিমা ফুলের তোড়াটা নিয়ে বললো,
-“এটা পেয়েই আমি খুশি হয়েছি।মেয়েরা ফুল পেলেই সবচেয়ে বেশি খুশি হয়।”
___________________
এক মাস পর,
-“ফাইনাল এক্সাম তো শেষ।এখন বলো কি সিদ্ধান্ত নিলে?”
-“এক্সাম শেষ হতে না হতেই আপনি এসে হাজির হয়েছেন মাহিদ?”
-“অবশ্যই।আমি তো এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম।”
সুরভি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“আমি বিয়েটায় রাজি।”
মাহিদের মুখে হাসি ফুটলো।সুরভি মুচকি হেসে বললো,
-“এতো ভালো পাত্র হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।এটা আমি না নিশা বলেছিল।”
সুরভির কথা শুনে মাহিদ উচ্চস্বরে হেসে দিল।সুরভিও তার সাথে হাসছে।
-“তোমাকে একবার হাগ করতে পারি সুরভি?”
মাহিদের এহেন কথায় সুরভি কিছুটা অপ্রস্তুত হলো।সে কিছু বলার আগেই মাহিদ বললো,
-“বিশ্বাস করো শুধু হাগ করবো আর কিছু না!”
সুরভি নিজে গিয়েই মাহিদকে জড়িয়ে ধরলো।মাহিদ কিছুটা অবাক হলো।তারপরে মুচকি হেসে সুরভি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আজকে আমার জীবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিন।”
সুরভি ভ্রু কুঁচকে মাহিদের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“কেনো?”
-“কারণ আমার সুন্দরীতমা আমাকে স্বইচ্ছায় জড়িয়ে ধরেছে।”
মাহিদ কথাগুলো বলে সুরভির কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিল।
_____________________
সুরভি তার বাড়িতে গিয়ে দেখলো তুষারের বাবা বাশার সাহেব সোফায় বসে আছেন।সুরভি হাসি দিয়ে বাশার সাহেবের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
-“কাকামনি তুমি কখন এসেছো?”
-“এইতো একটু আগে এসেছি মামুনি।তবে এসে যা খবর পেলাম!”
সুরভি অবাক হয়ে বললো,
-“কি হয়েছে কাকামনি?”
-“তুষার তোর বান্ধবী নিশাকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে।”
সুরভি থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চারিপাশে তাকিয়ে দেখলো তুষার আর নিশাকে কোথাও দেখতে পায় নাকি!তবে তাদের সেখানে দেখা যাচ্ছে না।সাহেরা বেগম এসে সুরভির সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
-“ওরা এখানে নেই।তুষারদের বাড়িতে আছে।
সুরভি আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে তুষারদের বাড়িতে গেল।গিয়ে দেখলো তুষার আর নিশা বসে আছে।
-“বাহ্!তোদের তো পুরস্কার দেওয়া উচিত।আজই এক্সাম শেষ আর তোরা আজই বিয়ে করে ফেললি!”
নিশা মুখ গোমড়া করে বললো,
-“আরে এই বেয়া*দপটার জন্য আজকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি।জোর করে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে আমাকে!”
তুষার পাশে থেকে বললো,
-“মোটেও না।নিশার ইচ্ছা ছিল এমনভাবে বিয়ে করার।আমি শুধু সেই ইচ্ছাটাই পূরণ করেছি।”
-“নিশা’ আঙ্কেল-আন্টি কি মেনে নিয়েছেন সবটা?”
-“বাবা-মা তো জানেই আমার মাথায় এমন উদ্ভট চিন্তা ঘোরে।আর বাবা-মা তো জানে আমাদের রিলেশনের কথা।তাই আর সমস্যা হয়নি কোনো।মেনে নিয়েছে তারা।এখন এইসব বাদ দিয়ে তুই কবে মাহিদ জিজুকে বিয়ে করবি তা বল!”
-“শীঘ্রই করবো।”
-“তার মানে রাজি হয়ে গেছিস?”
-“হ্যাঁ।বেচারাকে আর কতদিনই বা কষ্ট দিবো!”
সুরভির কথায় সবাই হেসে দিল।সাহেরা বেগম এসে বললেন,
-“যা হওয়ার হয়ে গেছে।এখন গিয়ে সবাই রেডি হয়ে নে।আজকে রাতে যে তানিমার বিয়ে ভুলে গেলি নাকি?”
-“আম্মু আমরা কিচ্ছু ভুলিনি।আর তুমি থাকতে কোনো কিছু ভুলে যাওয়া সম্ভব নাকি!”
—————————–
সুরভি আর মাহিদ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রবিন আর তানিমার বিয়ে দেখছে।মাহিদ সুরভির কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
-“কিছুদিন পরে আমাদেরও এভাবে বিয়ে হবে।”
মাহিদের কথায় সুরভি মুচকি হাসলো।
নিশা আর তুষার এসে পাশে দাঁড়াতে মাহিদ বললো,
-“তোমরা দুজনই ঠিক কাজ করেছো।একেবারে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলেছো!”
তুষার হাসি দিয়ে বললো,
-“যাক কেউ তো আমাদের এই কাজের প্রশংসা করলো।”
চারজন একসাথে হেসে দিলো।
______________________
দুই জোড়া বিয়ে হচ্ছে।একদিকে মাহিদ আর সুরভির,অন্যদিকে আকিব-মাইশার।বিয়ে পড়ানো শেষ হলে মাহিদ বললো,
-“দেখছো আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি।এবার আর বিয়ে না করে চলে যাইনি।”
-“এবার চলে গেলে তোমার খবর ছিল।তখন দেখাতাম সুরভি কি জিনিস!”
মাহিদ সুরভির হাতে চুমু দিয়ে বললো,
-“তোমাকে ছেড়ে আমি কখনোই যাবো না সুরভি।নিজের হৃদয়কে ছেড়ে গেলে তো আর বেঁচেই থাকবো না আমি!”
মাইশাকে আকিবদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো।রাবেয়া বেগম পরম যত্নে সুরভিকে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করালেন।
–
–
–
-“জীবনে প্রথম কোনো বউকে দেখলাম যে বাসর ঘরে না গিয়ে জামাইকে নিয়ে ফুচকা খেতে আসে।”
ফুচকা খেতে খেতে সুরভি মাহিদের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“এর জন্যই আমি আলাদা।”
-“হ্যাঁ একটু বেশিই।”
-“এতো কথা না বলে ফুচকা খাও।”
সুরভি কথাটা বলে মাহিদের মুখে একটা ফুচকা ঢুকিয়ে দিল।”
সুরভির পরনে লাল বেনারসি আর মাহিদের পরনে সাদা পাঞ্জাবি।দুজনে হাত ধরে নিরব রাস্তায় হেঁটে রাত উপভোগ করছে।সুরভি মাহিদের কাঁধে মাথা রাখলো।মাহিদ সুরভির দিকে তাকিয়ে দেখলো তার মুখখানা চাঁদের আলোয় জ্বলজ্বল করছে।বেশ সুন্দর লাগছে সুরভিকে।
-“মাশাআল্লাহ।”
মাহিদের কথায় সুরভি তার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“কি হয়েছে?”
-“আমার বউকে কি মিষ্টি দেখতে!একবার তাকালে আর চোখ ফেরাতে মন চায় না।”
মাহিদের কথায় বেশ লজ্জা পেল সুরভি।মাহিদের বুকে হালকা কিল দিয়ে বললো,
-“হয়েছে এতো প্রশংসা করা লাগবে না।”
-“ইশ!লজ্জা পেলে আরও বেশি সুন্দর লাগে।”
-“মাহিদ!”
সুরভি চোখ রাঙিয়ে মাহিদের দিকে তাকালো।মাহিদ মাথা হেলিয়ে বললো,
-“রাগলে তোমায় লাগে আরো ভালো!”
এবার সুরভি হেসে দিল।মাহিদও তার সাথে হাসলো।মাহিদ তার পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা হলুদ গোলাপ বের করে সুরভিকে দিয়ে বললো,
-“আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি সুরভি।”
“আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি মাহিদ।”
-“তবে আমার চেয়ে বেশি না।”.
সুরভি মুখ গোমড়া করে ফেললো।যা দেখে মাহিদ হেসে দিল।
-“মজা করেছি আমি।চলো দুজনে গিয়ে নদীর পাড়ে বসে চন্দ্রস্নান করি।”
মাহিদ সুরভিকে নিয়ে নদীর পাড়ে গিয়ে বসলো।সুরভি মাহিদের কাঁধে মাথা রাখলো।দুজনে মিলে চাঁদ দেখায় মনোনিবেশ করলো।
____________#সমাপ্ত_____________
[আল্লাহ হাফেজ।গল্পটা কেমন লেগেছে জানি না।নতুন লেখা শুরু করেছি ভুল- ত্রুটি থাকবেই।মানুষ তো ধীরে ধীরেই শিখে।তাই ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]