#মধুরেণ_সমাপয়েৎ
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_১১
_________________
সকালবেলা সকলে একসাথে ব্রেকফাস্ট করছে।মাহিদ রাবেয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“আজকে আমার একটা জরুরি মিটিং আছে।আমি তোমাদের নিয়ে যাওয়ার সময় পাবো না।তাই আকিব বলেছে ও এসে নিয়ে যাবে।
রাবেয়া বেগম মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালেন।মাহিদ ব্রেকফাস্ট করে অফিসে চলে গেলো।অফিসে যেতে ম্যানেজার রবিনকে দেখে সে বেশ অবাক হলো।কারণ ছেলেটাকে দেখতে বেশ অদ্ভুত লাগছে।তার চোখ-মুখ লাল হয়ে আছে,চুলগুলো এলোমেলো।
-“কি হয়েছে তোমার রবিন?”
-“স্যার কিছু হয়নি তো!”
-“রবিন তুমি জানো আমি মিথ্যা বলা পছন্দ করি না।”
রবিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“স্যার আমি তানিমা ম্যাডামকে ভালোবাসি।উনার এমন একটা খবর শোনার পরে আমি তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।”
মাহিদ অবাক হয়ে রবিনের দিকে তাকিয়ে আছে।
-“এই কথা কি তানিমা জানে?”
-“না স্যার।আমি কখনো উনাকে বলার সাহস পাইনি।কারণ উনি তো আপনাকে ভালোবাসেন।”
-“ভালোবাসার কথা কখনো লুকিয়ে রাখা উচিত না রবিন।তবে চিন্তা করো না।তানিমার আবার সব টেস্ট করা হবে।আশা করা যায় হয়তো এবার ভালো কোনো খবর পাবে।আর হ্যাঁ তাহলে কিন্তু তানিমাকে সবটা জানিয়ে দিও!”
বরিনের মুখে হাসি ফুটলো।মাহিদ রবিনকে নিয়ে মিটিংয়ে গেল।
__________/\___________
-“মিস.তানিমার রিপোর্ট একদম ঠিক আছে।আমাদের গাফিলতির কারণে উনার রিপোর্ট পাল্টে গিয়েছিল।সরি!”
কথাগুলো বলে হসপিটাল কতৃপক্ষ চলে গেল।রাবেয়া বেগম হাসি দিয়ে তানিমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আমি বলেছিলাম না এমন কিছুই হবে না।”
–
–
–
-“কিছুদিন পরে ফাইনাল এক্সাম।আর এখন এতো ঝামেলা পোহাতে হলো!”
সুরভি বই নিয়ে পড়তে বসতে বসতে কথাগুলো বলছে এমন সময় নিশা এসে বললো,
-“তারপরে আমাদের ছুটি।অনার্স শেষ হয়ে যাবে।”
নিশাকে দেখে সুরভি ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“তুই এখানে কি করছিস?তোর তো এখন মাহিদের সাথে থাকার কথা।”
-“তোর কি হিংসা হচ্ছে নাকি সুভি?”
-“মোটেও না।আমার এইসব নিয়ে ভাবার টাইমই নাই আর তো হিংসা!”
-“চল দুজনে গিয়ে ঘুরে আসি।”
-“কিছুদিন পরে এক্সাম আর তুই এখন ঘুরতে যাবি!”
-“আরে এখনো সময় আছে।চল তো!”
নিশা সুরভিকে জোর করে ঘুরতে নিয়ে গেল।নিশা আর সুরভি একটা বইয়ের দোকানে গিয়ে বই দেখছে।এমন সময় সেখানে মাহিদ আসলো।মাহিদকে দেখে সুরভি বললো,
-“নিশা তোর হবু বর চলে এসেছে।”
-“আমার না তোর!”
নিশা কথাটা বলে এক প্রকার দৌড়ে অন্য দোকানের দিকে চলে গেল।সুরভি অবাক হয়ে বললো,
-“পাগল হয়ে গেলো নাকি!”
-“ও একদমই সুস্থ আছে।শুধু তোমার মাথার বুদ্ধি কমে গেছে।”
-“মানে?কি বলতে চাচ্ছেন আপনি?”
মাহিদ সুরভির কিছুটা কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
-“তুমি ভাবলে কি করে যে তোমাকে রেখে আমি অন্য কাউকে বিয়ে করবো!”
-“আমার ভাবার কি আছে!আপনি তো এটাই করছেন।”
-“কখনোই না।আমার শুধু তোমাকে লাগবে।আর আমি যদি বিয়ে করি তোমাকেই করবো।”
-“মজা করছেন আমার সাথে?তাহলে নিশার সাথে কি ছিল?”
-“ওইসব তো তোমাকে রাগানোর জন্য করা।”
-“কিন্তু আমি মোটেও রেগে যাইনি।”
-“সেটা তো তোমার চোখেই দেখা গিয়েছে।এখন এইসব বাদ দেও।চলো এই পড়ন্ত বিকেলে দুজনে গিয়ে কোথাও বিকালবিলাস করে আসি!”
-“আমি এখানে নিশার সাথে এসেছি।ও-কে রেখে আমি কখনোই আপনার সাথে কোথাও যাবো না!”
-“আরে ও ওর কাজে চলে গেছে।আর ও-কে তো আমিই বলেছি তোমাকে এখানে নিয়ে আসতে।”
-“নিশুর বাচ্চা।তোকে একবার পাই তোর খবর আছে!”
-“ওর খবর পরে করবে এখন আমার সাথে চলো।”
মাহিদ সুরভির হাত ধরে নিয়ে গেল।
__________________
নিশা ড্রেস দেখছে এমন সময় কেউ এসে তার পিছনে দাঁড়ালো।কারো উপস্থিতি টের পেয়ে নিশা পিছনে ঘুরে দেখলো তুষার দাঁড়িয়ে আছে।
-“তুই এখানে কি করছিস তুষার?”
-“তোকে কোম্পানি দিতে আসলাম।”
-“আমার তোর সঙ্গের কোনো প্রয়োজন নেই।”
নিশা চলে যেতে নিলে তুষার তার হাত ধরে বললো,
-“এমন করছিস কেনো তুই?”
নিশার তুষারের হাতটা আস্তে করে ছাড়িয়ে বললো,
-“কারণ আমি তোর থেকে দূরে থাকতে চাচ্ছি।”
-“দেখ নিশা আমি আগে যা করেছি সব ভুলে যা।আমি নিজেকে শুধরে নিয়েছি।কারণ আমি জানি সুরভি কখনোই আমার হবে না।কারণ সুরভির চোখে মাহিদ ভাইয়ের জন্য ভালোবাসা আছে।”
-“সুভিকে পাবি না তাই এখন আমার কাছে এসেছিস?”
-“এমনটা নয়।আমি হয়তো তোকে আগে থেকেই পছন্দ করতাম।কিন্তু সুরভির প্রতি ইমোশন কাজ করায় সেটা বুঝতে পারিনি।কালকে যখন দেখলাম মাহিদ ভাইকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিস তখন যে কি রাগ হয়েছিল!কিন্তু কিছু বলতে পারিনি।কারণ সেই অধিকার তো আমার নেই।প্লিজ নিশা সবটা ভুলে গিয়ে চল আমরা নতুন করে শুরু করি।আমি তোকে কথা দিচ্ছি কখনো তোকে ছেড়ে যাবো না।”
নিশার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।তুষার পরম যত্নে নিশাকে জড়িয়ে ধরলো।নিশাও তুষারের বুকে নিশ্চিন্তে চোখের পানি ফেলছে।
________________
-“আমাকে এটা কোথায় নিয়ে এসেছেন আমাকে মাহিদ?”
-“জায়গাটা সুন্দর না?”
চারিপাশে ফুলের বাগান দিয়ে ঘেরা।উপরে গ্লাস দিয়ে ছাউনির মতো দেওয়া আছে।বসার জন্য কিছু বেঞ্চ রয়েছে।জায়গাটা একদম নিরিবিলি।মানুষজন নেই বললেই চলে!সুরভি চারিপাশে চোখ বুলিয়ে বললো,
-“হুম জায়গাটা সুন্দর।কিন্তু আপনি আমাকে এখানে কেনো এনেছেন?”
-“আমার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করতে!”
-“মানে?”
মাহিদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলতে শুরু করলো,
-“তুমি আমাকে নিয়ে কি ভাবো আমি তা জানি না সুরভি।কিন্তু তুমি আমার জীবনের প্রথম ও শেষ ভালোবাসা।যেদিন প্রথম তোমার ছবি দেখি সেদিনই তোমাকে ভালো লেগে যায়।তোমার আগে অনেককে দেখেছি কিন্তু বিশ্বাস করো কাউকে কখনো মন দিতে পারিনি।কিন্তু তোমাকে প্রথম দেখেই মন দিয়েছি।ভালোবেসেছি!তুমি আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ ভালোবাসা।তোমার আগে কেউ ছিল না আর তোমার পরেও কেউ আসবে না।তুমি আমার স্বভাব হয়ে গেছো।তোমাকে একদিন না দেখে আমি থাকতে পারিনা।তোমার এই কাজল চোখ জোড়ায় আমি আমার সর্বনাশ দেখতে পাই।তোমার এই মুখশ্রী আমাকে বাধ্য করে বার বার তার দিকে তাকাতে।আমি শুধু তোমাতেই সীমাবদ্ধ।ভালোবাসি!অনেক বেশি ভালোবাসি।এতোটা ভালো কবে বেসেছি আমি নিজেও জানি না।উপসংহারে আমি শুধু তোমাকে চাই।তুমি আমার সম্পূর্ণতা।”
কথাগুলো বলে মাহিদ সুরভির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে একটা আংটি এগিয়ে দেয় তার দিকে।
সুরভি আশ্চর্য হয়ে সবটা দেখছে।সে কি করবে বুঝতে পারছে না।তার কাছে সবটা স্বপ্নের মতো লাগছে।মাহিদ হালকা কেশে বললো,
-“ম্যাডাম আর কতক্ষণ বসিয়ে রাখবে আমাকে?”
-“আমি এই আংটি এখন নিতে পারবো না মাহিদ।”
মাহিদ নিশ্বাস ফেলে সুরভির হাতটা টেনে নিয়ে তার আঙ্গুলে আংটিটা পড়াতে গিয়ে দেখলো সুরভির হাতে এখনো তাদের এ্যাগ্রিমেন্টের আংটি।মাহিদ উঠে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে বললো,
-“তুমি এই আংটিটা এখনো রেখে দিয়েছো?”
-“হ্যাঁ।কারণ এটা আমার কাছে খুব স্পেশাল।আর আপনার হাতেও তো আমাদের এ্যাগ্রিমেন্টের আংটি রয়েছে!”
মাহিদ মুচকি হেসে সুরভির বা হাতের আঙ্গুলে আংটিটা পড়িয়ে দিয়ে বললো,
-“দুইবার আংটি পড়ালাম।এবার বিয়ে না করে কোথায় যাবে!”
মাহিদের কথায় সুরভি হেসে দিল।
-“এখন বলো বিয়েতে রাজি?”
মাহিদের কথায় সুরভি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“আমাকে একটু ভাবার সময় দিতে হবে।
-“আবার ভাবার সময় লাগবে কিসের জন্য?প্লিজ রাজি হয়ে যাও।এরপরে তো আমি বুড়ো হয়ে যাবে।”
সুরভি খিলখিল করে হেসে দিল।মাহিদ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তা দেখছে।মাহিদ মুচকি হেসে বললো,
-“অনেক হাসা হয়েছে এখন বলো?”
-“কি বলবো?”
-“বিয়েতে রাজি নাকি!”
-“আরে এক কথা এতোবার জিজ্ঞেস করছেন কেনো?”
-“আমার জানতে হবে তাই।”
-“ফাইনাল এক্সাম শেষ হলে জানাবো।”
মাহিদ মুখটা গোমড়া করে ফেললো।যা দেখে সুরভি মুচকি হাসলো।
____________________
সুরভির থেকে সবকিছু শোনার পরে নিশা বললো,
-“উফ!মাহিদ জিজু কি রোমান্টিক!”
-“হয়েছে এইসব বাদ দিয়ে এখন তোর আর তুষারের কথা বল।”
নিশা লজ্জামাখা কণ্ঠে বললো,
-“আমাদের সাদী পাকা হয়ে গিয়েছে।”
-“ওয়াও!”
সুরভি নিশাকে জড়িয়ে ধরলো।সুরভির রুমে নাস্তা নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে সাহেরা বেগম নিশার কথা শুনে বললেন,
-“যাক দুজোড়ার একসাথেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।
সাহেরা বেগমের কথায় সুরভি বললো,
-“কিন্তু আমি যে বিয়েটা করবো সেটা এখনো বলেনি।”
-“তা তোমার মুখ ফুটে বলার দরকার নেই।তোর মুখ দেখলেই বুঝা যায় যে তুই রাজি!”
সাহেরা বেগম আর নিশা হেসে দিলো।সুরভি থ হয়ে বসে রইলো।
_________________
-“আমি তোমাদের কিছু কথা বলতে চাই ফুফা-ফুফি।
আকিব’ রুহুল সাহেব এবং মিরা বেগমকে নিয়ে এসে হাজির।
-“আরে মামা-মামী বসো তোমরা।”
মাহিদের কথায় রুহুল সাহেব বললেন,
-“তোর ভাই কি কান্ড ঘটিয়েছে তা শোন।”
#চলবে____
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]