মধুরেণ সমাপয়েৎ পর্ব ৫

0
420

#মধুরেণ_সমাপয়েৎ
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৫
_________________
মাহিদ উঠে বসে ভ্রু জোড়া কুঁচকে বললো,

-“দেখছো মা,তোমার মেয়ের কি পরিমাণ হিংসা!”

মাইশা গিয়ে রাবেয়া বেগমকে জড়িয়ে ধরে বললো,

-“মায়ের আদরের ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই।”

মাহিদ মাইশার কথা শুনে হাসলো।রাবেয়া বেগম দুই ছেলে-মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

-“আমি আমার দুই ছেলে-মেয়েকে সমান ভালোবাসি।তাই তোরা আর এই নিয়ে ঝগড়া করিস না।”

মাহিদ আর মাইশা দুজনেই হেসে দিলো।

______
-“কি রে সুভি!কোথায় ছিলি এতোক্ষণ?”

-“আচ্ছা নিশু তোর কখনো মনে হয়েছে যে তুষার আমাকে ভালোবাসে?”

-“সে তো আমার কতবারই মনে হয়েছে।হঠাৎ এই প্রশ্ন করছিস যে?”

-“ও আমাকে আজ প্রপোজ করেছে।”

তুষার সুরভিকে প্রপোজ করেছে শুনে নিশার কিছুটা খারাপ লাগলো।তাও সে নিজেকে সামলে মৃদু হেসে বললো,

-“তা রাজি হয়ে যা।তোর তো কাজিনই হয়।কাজিনের সাথে বিয়ে হলে তো ভালোই হবে।”

-“এমন কিছু কখনোই সম্ভব না।আমি ও-কে শুধু আমার ভাই ভেবে এসেছি।তবে এটা কাজে লাগানো যাবে এক বিষয়ে।”

-“কোন বিষয়ে?”

-“আমাকে বিয়ে করলো না কিন্তু আমার পিছনে ঘুরে বেড়ান মি.মাহিদ।আর আমার আশেপাশে তুষারকে সহ্য করতে পারেন না।তাই আমি ভাবলাম উনার সামনে বলবো যে তুষার আমার বয়ফ্রেন্ড।তাহলে হয়তো উনি আমার পিছু ছাড়বেন!

-“বিয়ে করলো না।তাহলে পিছনে ঘুরে কেনো তোর?”

-“জানি না আমি।উনার মাথায় কি চলে কে জানে!”

-“তোর উনার সাথে কথা বলা উচিত সুভি।হয়তো এমন কিছু আছে যার কারণে উনি সেদিন তোকে বিয়ে না করে চলে গিয়েছিলেন।”

-“উনার সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই আমার।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে।রেগে যাস না।চল না রে বাইরে গিয়ে ঘুরে আসি।চারিপাশে কতো সুন্দর পরিবেশ!”

-“আচ্ছা চল।”

সুরভি আর নিশা বাইরে ঘুরতে বের হলো।দুজনে হাঁটছে আর গল্প করছে।

-“আচ্ছা নিশা একটা সত্যি কথা বল তো!”

-“আমি তোকে আবার কবে মিথ্যা বললাম?”

-“বলিস না।তবে আমার থেকে তো কিছু একটা লুকাচ্ছিস!”

-“কি লুকাচ্ছি?”

-“তুই কি তুষারকে ভালোবাসিস?”

সুরভির কথা চমকে গেল নিশা।আমতা আমতা করে বললো,

-“কি কি স সব বল বলছিস তুই?”

-“দেখ আমাকে সত্যি কথাটা বলে দে।আমি যখন বললাম তুষার আমাকে প্রপোজ করেছে তখন তোর মুখ দেখেই বুঝা গেছে যে তুই কষ্ট পেয়েছিস!”

নিশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“জানি না রে।হয়তো ভালোবাসি আবার না!ও আমার সাথে বাজে ব্যবহার করলে আমার খারাপ লাগে।ওর প্রতি রাগের কারণে হয়তো ভালোবাসি কিনা সেটা বুঝতে পারি না।তবে হ্যাঁ তোকে প্রপোজ করার কথাটা শুনে সত্যিই আমার খারাপ লেগেছে।”

-“বুঝেছি।আচ্ছা এখন চল দেখি গিয়ে রান্না কতদূর।ভালোই রাত হয়ে গিয়েছে।”

______________
বাবুর্চিরা রান্না করছে।মাহিদ আর আকিব বসে বসে গল্প করছে তবে তার চোখ সুরভিকে খুঁজছে।

-“কি রে মাহিদ,তুই কাকে খুঁজছিস?”

-“সুরভিকে।সবাই আছে তবে ও কে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।”

-“তোর ব্যাপারটা বলতো!বিয়েটা তুই নিজেই ভাঙ্গলি আবার এখন নিজেই সুরভিকে খুঁজছিস।”

-“কতটা কষ্ট নিয়ে যে বিয়েটা ভেঙেছি তা যদি তুই জানতি তাহলে তো হতোই।”

-“জানতেই তো চাচ্ছি।”

-“এইসব বাদ দে এখন।চল তো দেখে আসি সুরভি কোথায়!”

মাহিদ উঠে হাঁটা শুরু করলো।আকিবও তার পিছনে গেল।



-“সুভি আমাদের একা বের হওয়া ঠিক হয়নি।রাস্তাঘাট কেমন নিঝুম হয়ে গিয়েছে।”

-“ঠিকই বলেছিস নিশু।”

হঠাৎ করে কিছু ছেলে এসে সুরভি আর নিশাকে ঘিরে দাঁড়ালো।

-“কি গো সুন্দরীরা!এতো রাতে একা পথে এখানে কি করছো?”

নিশা ভয়ে সুরভির হাত চেপে ধরে বিড়বিড় করে বললো,

-“সুভি এখন কি করবো!”

সুরভি কিছুটা জোর গলায় বললো,

-“কারা আপনারা?আমাদের পথ ধরে দাঁড়িয়েছেন কেনো?আমাদের যেতে দেন।”

-“আমাদের খাঁচায় একবার আটকালে ছাড়া পাওয়া এতো সহজ না সুন্দরী।”

মাহিদ আর আকিব হাঁটতে হাঁটতে দেখতে পেলো সুরভি আর নিশাকে কিছু ছেলে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।

-“আকিব তাড়াতাড়ি চল নাহলে ওদের কোনো বিপদ হয়ে যাবে।”

ছেলেটা যেই সুরভির হাত ধরতে যাবে তার আগে গিয়ে মাহিদ ছেলেটার কলার টেনে ধরলো।ছেলেটা চোখ রাঙিয়ে বললো,

-“কে রে তুই!”

-“তোর আজরাইল।”

এই বলে ছেলেটার নাক বরাবর একটা ঘুষি মারলো।সবগুলো ছেলেকে মাহিদ আর আকিব মিলে ইচ্ছা মতো মারতো।ছেলেগুলো দৌড়ে পালিয়ে গিয়েছে।মাহিদ হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,

-“এতো রাতে এখানে এসেছো কেনো তোমরা?”

সুরভি গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

-“আমাদের বাঁচানোর জন্য আপনাদের থ্যাংকস।কিন্তু আমরা এখানে কেনো এসেছি সেটা আপনার না জানলেও চলবে।”

সুরভি চলে যেতে গেলে মাহিদ বললো,

-“সুরভি আমাকে এতোটাও খারাপ ভেবো না।সবকিছুর পিছনেই কোনো না কোনো কারণ থাকে।আগে সেই কারণের সন্ধান করা উচিত।”

মাহিদের কথাগুলো শুনে সুরভির কেমন যেন ফিল হলো।সে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নিশাকে নিয়ে চলে গেল।মাহিদ আর আকিবও তাদের পিছনে গেল।রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সবাই আড্ডা দিচ্ছে।মাহিদের চোখ সুরভির দিকে।মাহিদ এভাবে তাকিয়ে আছে দেখে সুরভির কিছুটা অস্বস্তি হচ্ছে।হঠাৎ করে তানিমা এসে মাহিদের পাশে বসে তার হাত ধরলো।মাহিদ তানিমার হাতটা এক ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো,

-“কি সমস্যা তোর?আমার পাশে এসে বসেছিস কেনো?”

-“তোমাকে ছাড়া দূরে থাকতে ভালো লাগে না আমার।”

-“এইসব অভিনয় বাদ দে।আজ সুরভি আর আমার মাঝে এতো দূরত্ব শুধুমাত্র তোর আর ওই লোক…..”

এটুকু বলে মাহিদ থেমে গেল।তানিমা ভাবান্নিত ভঙ্গিতে বললো,

-“কোন লোক?”

-“তা তোর না জানলেও চলবে।”

মাহিদ বসা থেকে উঠে চলে গেল।এতোক্ষণ ধরে সবটা লক্ষ্য করছিল সুরভি।তার কেনো জানি রাগ হচ্ছে খুব!

_______________
-“সুরভি…….”

করিডোর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে মাহিদের ডাকে দাঁড়িয়ে পড়লো সুরভি।পিছনে ফিরতেই মাহিদ দুই কদম এগিয়ে এসে সুরভির সামনাসামনি দাঁড়ালো।

-“ডেকেছেন কেনো আমায়?আপনি আপনার ওই বোনের কাছে যান।আজকে তো আমার কাছে পরিষ্কার হয়েই গেলো আপনি বিয়েটা কেনো ভেঙেছিলেন!”

মাহিদ কিছুক্ষণ সুরভির দিকে তাকিয়ে রইলো।সে বুঝতে পারলো তানিমা যখন তার পাশে এসে বসেছিল সেটা সুরভি দেখেছে।মাহিদ মুচকি হেসে বললো,

-“ভালোই তো নজর রাখো আমার দিকে দেখছি!”

-“আপনার দিকে নজর রাখতে আমার বয়েই গেছে।”

সুরভি চলে যেতে গেলে মাহিদ এক প্রকার দৌড়ে সুরভির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।সুরভি বিরক্ত হয়ে বললো,

-“আপনি আমার পথ আটকাচ্ছেন কেনো?”

-“তানিমার কারণে আমি কখনোই বিয়েটা ভাঙতাম না।এই বিয়েটা ভেঙেছি শুধুমাত্র তোমার ভালোর জন্য।আমি যদি সেদিন তোমাকে বিয়েটা করতাম আজ হয়তো তোমাকে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেতাম না।”

মাহিদের চোখের কোণে পানি এসে জমেছে।তাও সে মুচকি হেসে চলে গেল।সুরভি অবাক হয়ে মাহিদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

-“কি বলে গেলেন এইসব মি.মাহিদ?কি এমন কারণ আছে বিয়ে ভাঙার পিছনে!”

-“এই সুভি,তুই এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?”

নিশার কথায় ধ্যান ভাঙলো সুরভির।সে মাহিদের বলা কথাগুলো নিশাকে না বলে বললো,

-“এমনি ঘুম আসছিলো না তাই করিডোর দিয়ে হাঁটছিলাম।”

-“আচ্ছা বুঝেছি।চল রুমে যাই।”

-“হুম চল।”

বিছানায় শুয়ে মাহিদের বলা কথাগুলো ভাবছে সুরভি।এই কথার মাঝে যে কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে তা বেশ বুঝতে পারছে সে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করতেই ঘুম চলে আসলো তার।
______________________
সবাই যার যার বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

-“সুরভি কি সিদ্ধান্ত নিলি বিষয়টা নিয়ে।”

তুষারের কথায় সুরভি চুপ হয়ে গেল।কারণ এই বিষয় নিয়ে ভেবে দেখার তো প্রশ্নই আসে!সুরভিকে চুপ থাকতে দেখে তুষার বললো,

-“কি হলো?কিছু বলছিস না কেনো!”

-“আসলে তুষার…….”

সুরভিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তুষার তার দুই কাঁধে হাত রেখে তাকে কিছুটা ঝাঁকিয়ে উচ্চস্বরে বললো,

-“তুই এই বিষয় নিয়ে কিছু ভাবিস নি তাই-না!কেনো আমাকে নিয়ে কিসের এতো সমস্যা?আমাকে কি ভালোবাসা যায় না?”

সুরভি কিছু বলার আগেই মাহিদ এসে ঠা*স করে তুষারের গালে একটা থা*প্পড় মারলো।সে এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে সবটাই দেখছিল!

#চলবে____

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here