-“আমাকে যখন বিয়ে করবেনই না।তাহলে কি কারণে আমাকে এই পর্যন্ত টেনে আনলেন?আপনি না হয় বিয়ে করবেন না বলে কবুল না বলে উঠে আসলেন!আমি এখন কি করবো?সব মানুষ তো আমাকেই কথা শোনাবে।”
মাহিদ বাড়ি থেকে বের হতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।পিছনে তাকিয়ে দেখলো তার থেকে কয়েক কদম দূরে সুরভি দাঁড়িয়ে আছে।মাহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুরভির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
-“মানুষ কি বললো না বললো সেটা নিয়ে ভাবলে কি তোমার দিন চলবে?”
সুরভি চোখ রাঙিয়ে বললো,
-“দেখুন মিস্টার মাহিদ,আমি এখানে আপনার লেকচার শুনতে আসিনি।আমি শুধু এটাই জানতে চাই আপনি কেনো আমাকে এই বিয়ের অনুষ্ঠান পর্যন্ত টেনে আনলেন যখন আপনি বিয়েটা করবেন না!”
-“এটা আমার ইচ্ছা।আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই তোমাকে আমি এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছি।তবে তোমার তো আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।কারণ আমি তো তোমাকে আর বিয়ে করে ছেড়ে দেয়নি।”
সুরভি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।ঠাস করে মাহিদের গালে একটা চ*ড় বসিয়ে দিল।মাহিদ গালে হাত দিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
-“বাহ্ তোমার হাতে তো ভালোই জোর আছে।তবে কি জানো তোমার এই একটা চ*ড়ে আমার কিছুই হবে না।”
সুরভি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মাহিদের দিকে তাকিয়ে আছে।সে কিছুতেই মাহিদকে বুঝতে পারছে না।মাহিদ সুরভির কিছুটা কাছে এগিয়ে এসে বললো,
-“সত্যি করে বলো তো;তুমি কি মন থেকে চাও এতো তাড়াতাড়ি বিয়েটা করতে?তুমি আমাকে চিনোই বা কতদিন?দশ বছরেও যেখানে একজন মানুষকে ভালোভাবে চেনা যায় না,সেখানে তো দশদিন।তুমি কি চাও দশদিনের পরিচিত একজন ব্যক্তি তোমার সারাজীবনের সঙ্গী হোক?”
সুরভি চুপ হয়ে গেলো।
-“আসলেই তো।এতো তাড়াতাড়ি তো আমি বিয়ে করতে রাজি ছিলাম না।বাবা-মা’র কথায় বিয়েটা করতে রাজি হয়েছি।”
সুরভিকে চুপ থাকতে দেখে মুচকি হাসলো মাহিদ।
-“মিস.সুরভি আমি তোমাকে ঠিকই চিনতে পেরেছি।তোমার চোখই বলে দিচ্ছে তুমি এতো তাড়াতাড়ি বিয়েটা করতে চাওনি।আর আমিও চাইনা তোমার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করতে।তাই আমাদের বিয়েটা আজ না হলেই ভালো হবে।”
মাহিদের কথাগুলো সুরভি মন দিয়ে শুনলো।তারপরে মৃদু হেসে বললো,
-“আপনি ঠিক যতটা আমার ভালো চেয়েছেন,ঠিক ততটাই আমার খারাপ করেছেন।এতোকিছু যখন আগেই বুঝে গিয়েছেন তাহলে কেনো এই বিয়ের আয়োজন করতে বাঁধা দিলেন না?আজ বিয়ের দিন এসে আপনার এইসব বলার কথা মনে পড়লো?আপনাকে তো পুরস্কৃত করা উচিত মি.মাহিদ।”
মাহিদ কিছু বলতে যাবে এমন সময় সেখানে মনোয়ার সাহেব আসলেন।মনোয়ার সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
-“মাহিদ তোমাদের দুজনের কথা হয়েছে নিশ্চয়ই।এখন চলো সবাই অপেক্ষা করছে।”
-“বাবা আমি তো বলেই আসলাম আমি এই বিয়ে করবো না।”
মনোয়ার সাহেব চোয়াল শক্ত করে বললেন,
-“মাহিদ মজা করা বন্ধ করো।”
-“বাবা আমি কোনো মজা করছি না।”
মনোয়ার সাহেব ঠাস করে মাহিদের গালে একটা চ*ড় দিলেন।তারপরে সুরভির দিকে তাকিয়ে বললেন,
-“মা তুমি ওর কথায় কিছু মনে করো না।ভিতরে চলো কাজী সাহেব বসে আছেন।”
সুরভি তার চোখের কোণায় জমে থাকা পানি মুছে বললেন,
-“সরি আঙ্কেল।আমি আপনার ছেলেকে বিয়ে করতে পারবো না।”
সুরভি’ মনোয়ার সাহবকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে আসলো।বাড়ির ভিতরে আসতেই সাহেরা বেগম এসে তাকে জিজ্ঞেস করলেন,
-“কি হয়েছে মা?মাহিদ কোথায়?”
-“উনি এই বিয়ে করবেন না আম্মু।আর আমিও এই বিয়ে করতে চাই না।”
সাহেরা বেগম কিছু বলতে চাইলে সুরভি উনাকে থামিয়ে বললেন,
-“আম্মু আমি তোমাদের কথাতেই এই বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম।প্লিজ আর কিছু জিজ্ঞেস করো না আমাকে।”
সুরভি দৌড়ে তার রুমে চলে গেলো।সুরভি সব গয়না খুলে রেখে দিয়েছে।
-“হ্যাঁ আমি চাইনি এতো তাড়াতাড়ি বিয়েটা করতে।উনি যখন সেটা বুঝতেই পারলেন তাহলে বিয়েটা আগে ভাঙ্গতে পারতেন।এতোগুলো মানুষের সামনে থেকে বিয়ে না করে চলে গিয়ে উনি আমার কোন উপকার করলেন?আমি আপনাকে কখনোই ক্ষমা করবো না মি.মাহিদ।”
________
-“তোমার জন্য বশিরের কাছে লজ্জায় মুখ দেখানোর উপায় নেই আমার।”
-“দেখো বাবা বিয়েটা আমি সুরভির জন্যই ভেঙেছি।কারণ এতো কম দিনের পরিচয়ে ও আমাকে হাসব্যান্ড হিসেবে কিভাবে মেনে নিতো!আরও কিছু সমস্যা আছে যা আমি তোমাদের এখন বলতে পারবো না।”
-“এইসব সমস্যার কথা তোমার আগে জানানো উচিত ছিল।তা না করে তুমি এই বিয়ের দিন বিয়ে না করে চলে আসবে?”
-“মা আমার সিদ্ধান্ত নিতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছে আমি মানতেছি।তবে এতে আমাদের দুজনের’ই ভালো হয়েছে।”
মাহিদের কথায় রাবেয়া বেগম কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললেন,
-“এই ছেলেকে বোঝানোর সাধ্য আমার নেই।”
মাহিদ পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললো,
-“আমাকে কিছু না বোঝানোই ভালো।”
……………………………………………………………….
সাহেরা বেগম খাবার নিয়ে সুরভির রুমে এসে দেখলো সে বেলকনির গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।সাহেরা বেগম খাবারের প্লেট টেবিলের উপর রেখে সুরভির কাছে গিয়ে তার কাঁধে হাত রাখলো।
সুরভি এক ধ্যানে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল।কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ টের পেয়ে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো সাহেরা বেগম দাঁড়িয়ে আছে।
-“আম্মু তুমি এখানে কি করছো?”
-“কিছু খেয়ে নে মা।সারাদিন তো কিছু খাওয়া হয়নি তোর।”
-“আম্মু আমার খেতে ইচ্ছা করছে না।”
সুরভির রুমের দরজার আড়াল থেকে সবকিছু দেখছিলেন বশির সাহেব।তিনি রুমে প্রবেশ করে বললেন,
-“খাবারের উপর রাগ করতে নেই সুভি মা।”
বশির সাহেবের কণ্ঠ কানে আসতেই দরজার দিকে তাকালো সুরভি।সে দেখলো বশির সাহেব মনমরা হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছেন।সুরভি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
-“প্লিজ তোমরা আমাকে জোর করো না।আমার একটুও খিদে নেই।”
বশির সাহেব ধীর পায়ে এগিয়ে এসে সুরভির মাথায় হাত দিয়ে বললেন,
-“মা দোষটা তো আমাদেরই।আমরা তোকে এই বিয়েতে জোর করে রাজি করিয়ে ছিলাম।পারলে আমাদের মাফ করে দিস সুভি মা।”
সুরভি ছলছল চোখে বশির সাহেবকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“তোমাদের কোনো দোষ নেই।হয়তো এটাই আমার কপালে লেখা ছিল।”
_________
সকালে ঘুম ভাঙতেই ফ্রেশ হয়ে বাহিরে যাওয়ার জন্য রেডি হলো মাহিদ।রুম থেকে বের হয়ে নিচে নেমে দেখলো বাড়ির সবাই আনমনে বসে আছে।মাহিদ কিছুটা উচ্চস্বরে বললো,
-“সবার কি কবি হওয়ার ইচ্ছা জাগলো নাকি আবার!”
মাইশা(মাহিদের ছোট বোন) এসে মাহিদের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“তুই এখন রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছিস ভাইয়া?”
-“আমার একটা কাজ আছে।”
-“কিসের কাজ তোর?দেখ ভাইয়া কালকে বড়রা কথা বলছিলো তাই আমি কিছু বলিনি।তবে তুই কালকে যা করেছিস সেটা চরম অন্যায়।”
-“বাহ্!তুই আমার ছোট বোন হয়ে এখন আমাকে ন্যায়-অন্যায় শিখাবি?”
-“বড়দের জ্ঞানের অভাব থাকলে ছোটদের থেকেই ধার নেওয়া উচিত।”
মাইশা কথাগুলো বলে মাহিদের সামনে থেকে চলে গেল।মাহিদ আর কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।
————-
-“তোকে আমি কালকেই বলেছিলাম এই ছেলে তোর জন্য ভালো হবে না।”
তুষারের কথায় সুরভি তার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আমি এইসব বিষয়ে আর কোনো কথা শুনতে চাই না তুষার।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে।তবে তুই এমন মনমরা হয়ে থাকিস না।তোকে এভাবে দেখলে তো কাকা-কাকি কষ্ট পাবে।”
সুরভি আর কিছু বললো না।তুষার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বশির সাহেবের কাছে গেল।
সুরভিদের বাড়ির সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলো মাহিদ।সুরভির পাশে তুষারকে বসে থাকতে দেখে এক প্রকার রাগে কাঁপছে সে।
সুরভির কাছে আসতে গিয়ে হঠাৎ সদর দরজার দিকে চোখ পড়লো সাহেরা বেগমের।সেখানে মাহিদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি বললেন,
-“তুমি এখানে?”
সাহেরা বেগমের এহেন কথা শুনে সুরভি কিছুটা অবাক হলো।সে সাহেরা বেগমের দিকে তাকিয়ে দেখলো উনি সদর দরজার দিকে তাকিয়ে আছেন।সুরভিও সেদিকে তাকালো।দরজার দিকে তাকাতে সে দেখলো মাহিদ এক গাল হেসে দাঁড়িয়ে আছে।সুরভি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-“আপনি এখানে কি করছেন?”
মাহিদ সুরভিদের বাড়িতে ঢুকে বললো,
-“কি করছি মানে?এই বাড়ির সাথে তো আমার কানেকশন আছে।আমি তো এখানে আসবোই।তাই-না?”
-“কিসের কানেকশন এই বাড়ির সাথে আপনার?মজা করতে এসেছেন এখানে?এখনি বেরিয়ে যান আমাদের বাড়ি থেকে।”
মাহিদ কিছু বলতে যাবে এমন সময় বশির সাহেব সেখানে এসে বললেন,
-“মাহিদ আমাকে জানিয়েই এখানে এসেছে।ও সকাল বেলা আমাকে কল করেছিল।”
তুষার পাশে থেকে বললো,
-“কাকা উনি কেনো এখানে এসেছেন?তুমি তা এলাউ করলে কিভাবে?”
মাহিদ তুষারের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
“এটা তোমার বিজনেস না।নিজের কাজ করো গিয়ে।”
তুষার আর কিছু না বলে সুরভিদের বাড়ি থেকে চলে গেলো।বশির সাহেব মাহিদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
-“মাহিদ তুমি বসো।”
সুরভি আর এক মুহূর্ত ওখানে না দাঁড়িয়ে তার রুমের দিকে চলে গেল।সাহেরা বেগমও সুরভির পিছনে গেলেন।
-“আঙ্কেল কালকে ওমনটা করার পিছনে বড় একটা কারণ আছে।আমি এখনি আপনাকে তা বলতে পারবো না।আমি প্রমাণসহই আপনাদের সবটা জানাবো।তবে আপনার আমাকে একটা কথা দিতে হবে।”
-“কি কথা?”
-“সুরভিকে অন্য কোথাও বিয়ে দিবেন না।ও এখন পড়াশোনা করুক।সময় হলে আমি নিজেই আবার বরযাত্রী নিয়ে বিয়ে করতে আসবো।আর হ্যাঁ নিশ্চিন্ত থাকবেন সেদিন আর বর বিয়ে না করে চলে যাবে না।”
মাহিদ কথাগুলো বলে সুরভিদের বাড়ি থেকে চলে গেলো।
#চলবে____
#মধুরেণ_সমাপয়েৎ
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০১
[আমার লেখা প্রথম গল্প।ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]