প্রেমের উষ্ণ ধোঁয়াতে পর্ব ৪১

1
3705

#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___৪১

কনকনে, হাড়কাঁপানো অগভীর এক রজনীতে তনুজা ফোন করল প্রহরকে। স্পষ্টভাষী মানুষ সে। সুতরাং কোনোরকম ভনিতা ছাড়াই উৎসুক হয়ে জানতে চাইল,

” নেতাসাহেব, মন ভালো আছে নিশ্চয়ই? আমাদের বাড়ির ভাঙচুরের তীব্র শব্দ এসে জানিয়ে গেল আপনি বিয়ে করেছেন। অভিনন্দন আপনাকে। ”

প্রহর দুই ঠোঁটের মাঝে সিগারেট চেপে বারান্দায় বসে ছিল। দাঁড়িয়ে শীতলতাকে খান খান করে দিয়ে প্রশ্ন করল,

” আপনার ভাইয়ার হাত ঠিক আছে? ”

” ঠিক রেখেছেন আপনি? হাতে ব্যান্ডেজ দেখলাম। ভালো হাতে বাবার হা–রাম উপায়ে উপার্জিত অর্থে কেনা অনেক কিছুই ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। আপনাকে খু**ন করবে এমন হুমকিও দিচ্ছে থেকে থেকে। আপনাকে সাবধান করব না। বরং বলব সুযোগ পেলে সমীরণকে ছাড়বেন না। ”

প্রহর সিগারেটটা বারান্দার মেঝেতেই ফেলে দিল। উচ্ছিষ্টাংশটুকু পা দিয়ে পিষে বলল,

” আপনার রক্তের ভাই সে। মায়াদয়াহীন কেন আপনি? শুরু থেকেই তার বিরুদ্ধে আড়ালে থেকে বিরোধিতা করে যাচ্ছেন। ”

তনুজার প্রলম্বিত নিঃশ্বাসের শব্দে কান আরও খাড়া হয়ে গেল প্রহরের। সে কিছু বলতে নিলে তনুজা থামিয়ে দিয়ে বিজ্ঞ গলায় বলল,

” কারণ ব্যতীত আমি কারো সাথে অন্যায় করি না প্রহর সাহেব। যেই আমি অন্যায় সহ্য করতে পারি না,সেই আমি অন্যের সাথে অবিচার করব? আমার ক্ষুদ্র জীবনে সীমাহীন আফসোস কেন আমি নিকৃ**ষ্ট মানুষের ভীড়ে জন্ম নিলাম। ”

” আপনি আজও বলেন নি কেন আপনি আপনার ভাইয়ের গোপন শ—ত্রু। ”

” আমি তার শ–ত্রু না, বোনই। ভাইয়ার ও আমার মাঝে পার্থক্য হলো একজন অন্যায় করতে ভালোবাসে,আরেকজন সেই ভালোবাসাকেই ঘৃ***ণা করি। আমি বহুদিন থেকে,বছর ধরে ভাইয়ার একজন শ**ত্রুর অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু ঠিক খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তারপর একদিন জানলাম আপনার ক্ষতি করতে চায় সমীরণ ভাইয়া। এবং আপনি তার ভয়ে দমিয়ে যাওয়া লোক না। আপনি তো রাজনৈতিক জগতে সিংহের মতোন পদক্ষেপ ফেলে রাজত্ব করা ব্যক্তি। এটা নিয়েই ভাইয়ার প্রবল ঈর্ষা। সকল ক্ষমতা আপনার দখলে চলে যাবে, সবাই আপনাকেই মান্য করে, আপনি এমপি হয়ে যাবেন খুব সহজেই সততা, কর্ম দিয়ে, মন জয় করে। এসব বেশ ভালো জানত। তাই আপনাকে সরিয়ে ক্ষমতা দখলের জন্য সর্বদা তক্কে তক্কে থাকে। এ জরাজীর্ণ পৃথিবীতে ক্ষমতার লোভে তো মানুষ হিং***স্র হয়ে যায়। ভাইয়াও পূর্ব থেকেই হিং–স্র। বার কয়েক আপনার ওপর হামলার বিষয়টা কোনো এক মাধ্যমে আমি জানলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম আপনার মাধ্যমেই ভাইয়াকে ক্ষমতাচ্যুত করে আমি এই মর্ত্যলোকের সবচেয়ে অসহায় ব্যক্তি বানিয়ে ছাড়ব। আমি চাই সে বুঝুক ভালো থাকা কেউ কেঁড়ে নিলে প্রতিনিয়ত ধুঁকে ধুঁকে মর**তে কেমন অনুভব হয়। সেজন্যই আমেরিকা বসেই আপনার সাথে যোগাযোগ করলাম। বাবা মায়ের বড় আদরের আমি, তাঁরা আমার প্রতি ভীষণ দুর্বল। সেটাই আমি কাজে লাগালাম। মূল উদ্দেশ্য ছিল ভাইয়াকে নির্বাচনেই দাঁড়াতে দেবো না। এটাই হবে তাকে নিঃস্ব করার প্রথম ধাপ। আমেরিকা বসে বাবাকে ব্ল্যাকমেইল করি যদি আপনার সাথে বিয়ে না-হয় তবে আমি কোনোদিনও বাংলাদেশে পা রাখব না। বাবা রাজি হলেন। বললেন, ভাইয়া না দাঁড়ালেও আপনাকে অন্যভাবে হারাবে। নিজেদের মধ্যেই অন্য কাউকে খেলার গুটি হিসেবে ব্যবহার করবেন। করলেনও তা। আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী আমার মামাতো ভাই হয় সেটা অজানা নয় আপনার। ”

” আমি লড়তে ভয় পাই না। আপনাকে বিয়ে করার ব্যাপারটা পুরোই আমাদের দু’জনের সাজানো একটা ঘটনা। আমি সৎ হলে, জনগণ আমাকে ভালোবাসলে আমি হারব না, সেটা নিশ্চিত। আমি যদি না-ও জিতি,তাতেও আমাকে কষ্টের ছিটেফোঁটা স্পর্শ করতে পারবে না। ক্ষমতা নামে হয়, আসল জোর মনেই থাকে। আমি নেতা হওয়া ছাড়াও চাইলে প্রতিটা মানুষের উন্নতি করে যেতে পারব। আমার উদ্দেশ্য ক্ষমতা নই, আমার লক্ষ্য প্রতিটা মানুষের উন্নতির তরে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া। চাইলে আপনি নিজ স্থান থেকেও কারো ভালো থাকার কারণ হতে পারেন। মানুষের ভালো করতে গিয়ে প্রিয়জনকে হারিয়ে আমি নিজে ম—রে যাব তা হবে না। নিজেকে সবথেকে বেশি আনসেফ মনে করি সমীরণের কাছেই। সে নীরবে,নিভৃতে আমার আপনজনকে আঘাত করতে পারে। সেকারণেই আপনার উদ্দেশ্যে সায় জানিয়েছি। এনগেজমেন্টের দিন শর্তনামার কাগজে সমীরণ এবং আপনার বাবার সাইন নিয়েছি। আমার একটাই শর্ত ছিল যদি কখনো আমার আপনজনের কিছু হয় তাহলে সরাসরি দোষী হবে সমীরণ ও আপনার বাবা। এনগেজমেন্টের দিন আমি আপনাকে রিং পড়াব না, আমার মা পড়াবে সেটাও পূর্ব নির্ধারিত ছিল। ”

” হ্যাঁ। কারণ আপনি একজন ভাগ্যবতীকে ভালোবাসেন। সেই লাকি মেয়েটা যে আপনার কাজিন নিশাত,আমি একটুও টের পেলাম না। মেয়েটা খুব ছোট। যখন জানলাম নিজের থেকে ১১ বছরের ছোট একটা মেয়েকে ভাইয়া বিয়ে করতে যাচ্ছে আমি জোর গলায় জানিয়ে দিলাম কখনোই মানব না আমি। সেজন্যই বাবা-মার সাথে মেয়ের বাড়িতে যাই নি,পাত্রীটা কে সেটাও জানতে পারি নি। বাড়িতে ফিরে সমীরণ ভাইয়ার হট্টগোলে জানলাম। ”

প্রহর নিশ্চুপ। কথার আওয়াজ না শুনতে পেয়ে তনুজা চমৎকার মধুময় স্বরে অনুরোধ করে,

” আপনাকে একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি হবু নেতাসাহেব? ”

” আপনি এই মুহূর্তে ব্যক্তিগত, পাবলিকগত সকল প্রশ্নই নির্বিঘ্নে করতে পারেন তনুজা। ”

তনুজা বিগলিত হাসল। ভেতরটা কেমন করে উঠল তার। বিরহিণী মনটা চিৎকার করে বলছে অপরের ক্ষতি করতে এসে,অসহায় বানাতে এসে, তুই নিজেই প্রেমের ফাঁদে আটকা পড়ে নিজেরই ক্ষতি করলি তনুজা। ফিরিস এখন ভীনদেশে নিজের ভাঙাচোরা, খন্ড খন্ড মনটাকে কুড়িয়ে। সে অনুভূতিতে ধমকে, শাসিয়ে, বুকের অভ্যন্তরে ঘুম পাড়িয়ে বলল,

” নিশাত আপনারও অনেক ছোট। দশ,এগারো বছরের ছোট হবেই। এত পিচ্চি একটা মেয়েকে আপনি কবে থেকে ভালোবাসেন?

” সেটা জানিনা৷ তবে হৃদয় চুরি করেছে আঁখ খেয়ে দাঁত ভেঙে। ”

তনুজা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। থমকালো। দাঁত ভাঙলে ভালোবাসা হয়ে যায়? অদ্ভুত!

” একটু বুঝিয়ে বলবেন?”

” নিশাত জন্ম নেওয়ার পর থেকেই ওকে আমার কেন যেন ভালো লাগত না। মামার প্রতি ক্ষোভ জমে আছে আমাদের। নিশাতের মধ্যে আমি মামুজানের ছায়া দেখতাম। পুরো শরীর রাগে রি রি করে উঠত ওকে দেখলেই। ইচ্ছে করত ওর বাবা যেমন আমাদের নানার বাড়ির আদর যত্ন, সবকিছু থেকে বঞ্চিত করেছে, তেমনভাবেই ওর থেকে সব ছিনিয়ে নিতে। জেদ থেকেই আমি ওর ওপর খুব অত্যা**চার করে বেড়াতাম। কারণে অকারণে শাসন করতাম, মা–রতাম, অপমান করতাম। আমার রক্তে মিশে গিয়েছে ওকে শাসন করার,ধমকানোর, সহজভাবে কথা না বলার অভ্যাসটুকু। নিশুকে এত এত শাসন করতাম যে সে ভয়ে আমার সামনে আসত না। আমাদের বাড়িতে আসলেও মার পেছন পেছন লুকিয়ে থাকত। আমি সামনে দাঁড়ালে মায়ের পেছন থেকে অল্প করে মাথা বের করে ভয়ার্ত চোখে দুটো মেলে দেখত আমাকে। ভীষণ মায়া হতো, তবুও আমি ইচ্ছেমতো ভয় দেখিয়ে যেতাম। অশান্তিতে রাখতাম। একদিন আঁখ খেতে দিয়ে মুখ থেকে রক্ত ঝরে। রক্ত দেখে কাঁপতে কাঁপতে ঢলে পড়ে আমার বুকে। সেদিনই মারাত্মক সর্বনাশ হয়ে গেল আমার। তুলতুলে হাতের স্পর্শে ভিতরে ধপ করে প্রেমপ্রদীপ জ্বলে ওঠে, মায়া জোরালো হয়। আগুনের বহ্নিশিখায় জ্বলতে জ্বলতে ওই মুহূর্তে অনুভব করি যাকে আমি ভয় দেখিয়ে নেতিয়ে রাখি সে সবথেকে ভরসাযোগ্য আমাকেই মরে করে। এক মুহূর্তে ভালোবাসা হয় নি, তবে নিজের শাসন, কথার ধাতে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করি। এগুলোর সাথে নতুন করে যা যুক্ত হলো তা হলো, তাকে প্রাণ দিয়েও আগলে রাখব আমি। প্রাণেশ্বরী বানিয়ে দূর থেকে চোখের তারায় রাখতে রাখতে বছর বাদে মায়া ধীরে ধীরে রূপ নিল ভালোবাসায়। ”

” এক পলকে ভালোবাসেন নি?”

” এক পলকে ভালোবাসা হয় না, বড়জোর আকর্ষণ হয়। সেই আকর্ষণে মানুষটাকে দেখার আগ্রহ বাড়ে। দেখতে দেখতে মায়া বসে যায়। যেই মায়ার সমাপ্তি নেই, মৃ**ত্যু পর্যন্ত মনের ঘরে বসবাস করে,সেই মায়ার নাম হলো ভালোবাসা।”

” আপনি এত সুন্দর করে কেন কথা বলেন নেতাসাহেব? জানেন, আপনার কথার প্রেমে পড়ে গিয়েছি। নিশাতও নিশ্চয়ই কথার জালেই ফেঁসে ম–রেছে। ”

প্রহর বেকায়দায় হেসে বলল,

” নিশু ওর জীবনের সতেরো বছরের হিসেব নিকাশ করলে দেখবে তার প্রহর ভাই তাকে জীবনেও মিষ্টি করে কথা বলে নি। ”

” এত ভালোবাসেন অথচ প্রকাশ কেন করেন না?”

” সবটুকু ভালোবাসা একসাথে প্রকাশ করতে হয় না। ভালোবাসা একটু একটু করে দিতে হয়, যেন অল্পটুুকু ভালোবাসা নিয়ে আমরা দীর্ঘতম সুখের মুহূর্ত কাটাতে পারি। একসাথে দিয়ে দিলে, ভালোবাসা পাবার জন্য কেউ তৃষ্ণার্ত হয় না। ”

তনুজার চোখ জলে ভেসে যাচ্ছে। ঠোঁট কামড়ে প্রাণপণে অশ্রু শব্দকে আটকাচ্ছে ও। সে চায় না প্রহর জানুক,বুঝুক ওর অনুভূতি। পিপাসা পেলে পানির কদর যেমন বেড়ে যায়,সে-ও একবিন্দু ভালোবাসা পাবার আশায় তৃষ্ণার্ত,ব্যকুল। একটুখানি ভালোবাসা পেলেই সে মৃ–ত্যু অব্দি ভালো থাকতে পারবে। কিন্তু যার ভালোবাসা চায় তার ভালোবাসা যে সে এই জীবনে পাবে না। একতরফা অনুভূতি নিয়ে অসুখে নিঃশেষ হতে হবে আমৃত্যু। তার তৃষ্ণা মিটবে না,কেউ মেটাতে পারবে না। খুশির জোয়ারে ভেসে যেতে পারবে না কখনো,কোনোদিন। ওপাশ থেকে প্রহর একটু গাঢ় স্বরে বলল,

” আপনার এবং আমার কাজ এখানেই সমাপ্ত, মিস তনুজা। এখন আপনাকে শুধু আমার বিয়ে হওয়াতে কষ্ট পেয়েছেন এমন অভিনয় করতে হবে। নয়ত,,,

” নয়তো যদি কেউ ঘুণাক্ষরে টের পায় আমি বিখ্যাত মডেল,রাজনীতিবিদ সমীরণের লুকায়িত শ**ত্রু,তাহলে সেই জা—নোয়ার রক্তের সম্পর্ক ভোলে যাবে। আমাকে ধ্বংস করতে হয়তো বাবা-মার দিক চেয়ে এক সেকেন্ড ভাববে, কিন্তু আমার মৃতযই থাকবে তার একমাত্র অভিসন্ধি। ”

” হ্যাঁ। আপনি ফিরে যাচ্ছেন কবে?”

” শীঘ্রই। তবে আমি আপনার ঘাড়ে একটা দায়িত্ব দিয়ে যেতে চাই প্রহর সাহেব। ”

প্রহর বিচলিত হলো না। কোনো ভাবাবেগ হলো না তার মাঝে। শান্ত কণ্ঠে প্রশ্ন সাজালো,

” কেমন দায়িত্ব? ”

তনুজা বুক ফুলিয়ে গরম গরম নিঃশ্বাস প্রকৃতির মাঝে মিশিয়ে দিল। শীতকে চরম উপেক্ষা উপহার দিয়ে গায়ের চাদরটা ছাদের দোলনায় ফেলে রাখল এলোমেলো করে। নিজেকে প্রস্তুত করতে মগ্ন ও। কথাগুলো বলার সময়টায় একদম কাঁদা যাবে না। দুর্বল চিত্তের মেয়ে নই সে।

” সমীরণ ভাইয়া একা নয়, তার একজন যমজ ভাই ছিল সেটা জানেন?”

” জানি। আপনার সেই ভাই ড্রা—গস নিতেন। অতিরিক্ত মাদকা**সক্ত হয়ে মা**রা গিয়েছিলেন। ”

” ভুল জানেন। ভাইয়া নিজের মৃ**ত্যু ডেকে আনবে এমন বোকা সে ছিল না। ”

তনুজার প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কড়া ঠান্ডার মধ্যেও দরদর করে ঘামছে। প্রহর আঁচ পেয়ে সন্দিহান মুখে বলল,

” আপনি ঠিক আছেন?”

” অন্তিম ভাইয়া ভীষণ অগোছালো ধাঁচের ছেলে ছিল। তাই বলে খারাপ, উচ্ছৃঙ্খল ছিল এমন নয় কিন্তু। ভাইয়া ট্রাভেলিং এর ব্যাপারে অত্যন্ত শৌখিন ছিলেন। কিশোরগঞ্জ বেড়াতে যায় বছর পাঁচেক আগে। সেখানে সদ্য কলেজে উঠা এক বাড়ন্ত কিশোরীকে দেখে মনপ্রাণ সব আটকে যায়। জায়গা দিয়ে বসে হৃদয়ের কদম্বকাননে। আমাকে ছবি পাঠায়। চাপা নাক, বড় বড় চোখ, ধারালো চেহারার সাধারণ মেয়েটা আমারও মনে গেঁথে যায়। আমি দুষ্টমি করে বলি ভাইয়া বিয়ে করে নিয়ে আয়। তার তিনদিন বাদে শুনতে পাই ভাইয়া সত্যিই সত্যিই বিয়ে করে ফেলেছে। বাবা-মাকে খবর পাঠায় সে বউ নিয়ে আসতে চায়। বাবা বেঁকে বসলে মায়ের জোরাজুরিতে বাধ্য হলো বিয়েটা মানতে। মেয়ের পরিবারের সাথে কথা পাকাপাকি হলো কয়েক মাস পর ঘটা করে উঠিয়ে আনবে মেয়েকে। ভাইয়াকে নিয়ে ফিরলেন বাবা সবকিছু পাকাপোক্ত করে। এখানে এসে বাবা জানালেন সামনের এমপি ইলেকশনে অন্তিম ভাইয়া লড়বে। সমীরণ ভাইয়া কোনো প্রকার অনুভূতি প্রকাশ করল না এতে। বাবার মুখের ওপর কথা তার কোনো সন্তানই বলত না। এরই মধ্যে আমার আমেরিকায় পড়তে যাবার সকল কাজ কমপ্লিট। ভিসা হয়ে গেল,টিকিট কেটে ফেললাম তাড়াহুড়ো করে। কারণ একটা সেমিস্টার মিস মানেই ক্যারিয়ার গড়ার পথে পিছিয়ে যাওয়া। ইচ্ছে ছিল যাবার আগে ভাবীর সাথে একটাবার দেখা করে যাব,তবে ভাগ্যেই ছিল না। সেখানে যাবার চার মাসের মাথায় এক ভোরে মা আমাকে ফোন করে প্রচন্ড কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। আমি কারণ জানতে চাইলে বলে অন্তিম ভাইয়ার অবস্থা দুর্বিষহ। সারাক্ষণ ড্রাগ–স নেয়, অন্ধকার রুমে পড়ে থাকে। কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলে না। ড্রাগ–স না নিতে পারলে পাগল হয়ে যায়। আমার ভিতর কেঁপে ওঠে তখন। একটা সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হুট করে এতটা আসক্ত কেমন করে হলো! আমি ভাবীর সাথে যোগাযোগ করতে চাইলাম। কিন্তু হলো না। একটা জলজ্যান্ত মানুষ যেন হঠাৎ করে হারিয়ে গেল। ওদিকে আমি বাংলাদেশে ব্যাক করার যথাসম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার শত শত প্রয়াসের মাঝেই হুট করে একটা ইমেইল এলো। ওপেন করতেই দিশেহারা হয়ে পড়লাম আমি। অন্তিম ভাইয়া লিখেছিল, ‘ জানিস তনু, আমার দেহে ডা**গ্রস প্রবেশ করছিল অথচ আমি বুঝতেই পারি নি। কোনো অনুভূতিই হয় নি আমার। যতদিনে অনুভূতি আমার শরীরে বাসা বেঁধেছিল ততদিনে আমি সম্পূর্ণভাবে আসক্ত। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে ড্রাগ–স নিতে না পারলে। কাউকে সহ্য হয় না। সবথেকে ভয়ংকর ব্যাপার কি জানিস? আমি আমার স্ত্রীকে সহ্য করতে পারি না। বিষাক্ত, অসহ্য লাগে সবাইকে। আমার মন মস্তিষ্ক আমি কাবু করতে পারছি না। আমাকে বাঁচাবি তনু? না-কি তুই সমীরণের পথেই হাঁটবি? সে ভাই রূপে দ্রোহী তনু। আমার এই অবস্থার জন্য সে দায়ী। যেই ক্ষমতা রক্তের,আত্মার সম্পর্ক ভুলিয়ে দেয় সেই ক্ষমতাকে আমি ঘৃ–ণা করি। ‘

” ড্রা–গস কীভাবে দিতেন? আপনি সম্পূর্ণ বিষয়টা জানতেন? আর আপনার ভাবী কোথায়?”

” আমি ঠিক সাতদিন পর আপনার সাথে মিট করতে চাই। কিছু কথা সামনাসামনি বলে যেতে চাই। আপনার সময় হবে?”

” হবে। ”
এটা উচ্চারণ করেই প্রহর ফোনটা নামিয়ে রাখল। শিরা উপশিরা টনটন করছে তার। ভুল করে ফেলেছে। অনেক বড় ভুল। মামুজানের কথার সম্মান রাখতে গিয়ে শুধু হাতটা না ভেঙে বুক বরাবর গু**লি করে একটা দেশদ্রোহী, বেইমান, প্রাণ নাশকারীকে উচ্ছেদ করার দরকার ছিল।

আলতার সাথে কথা সেড়ে রুমে আসে ঊষা৷ পেছন পেছন প্রত্যয়ও ঘরে ঢুকে দরজার সিটকিনি আটকে দেয়। ঊষা চুল হাত খোঁপা করতে করতে নির্দ্বিধায় বলে,

” বেরিয়ে যাও ভাইয়া। তোমার ঘরে যাও। ”

কথাটা বলেই রুমে না থেকে বারান্দায় চলে গেল ঊষা। আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে রইল। প্রত্যয় নিরবে, নিশ্চুপে পাশে এসে নৈঃশব্দ্যের সমাপ্তি টেনে দিল।

” তুই আমার সাথে এমন করছিস কেন? তোর সাথে দুটো কথা বলতে এসেছি, গিলতে আসি নি তোকে। ”

” কি বলবে বলো। ”

” আকাশের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আমার দিকে তাকা। ”

” তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে না। ”

ঊষার গুমোট কণ্ঠ শুনে প্রত্যয়ের মেজাজ তুঙ্গে উঠল। বাহু ধরে হ্যাঁচকা টানে নিজের দিকে ঊষাকে টেনে আনল সে। হুঙ্কার ছেড়ে বলল,

” কি সমস্যা তোর? দেখ,ঊষা জোরজবরদস্তিতে আমি নেই। আমার মনে হয়েছে তোকে বিয়ে করাটা দরকার, করেছি। বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন যেমন প্রয়োজন, আমার ভালো থাকার জন্যও তোকে ভীষণ প্রয়োজন। হ্যাঁ, আমি আবেগবশীভূত হয়ে ভুল করেছি। ভালোবাসার পথে না হেঁটে ভুল পথের পথিক হয়েছি। কিন্তু এখন তো সঠিক রাস্তায় এসেছি। ”

রাগে গা পিত্তি জ্বলে ওঠে ঊষার। লোহার মতো কঠিন মুখ করে বলে,

” মৃন্ময়ীকে ছোঁয়া, বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো, দিন-রাত পাগলের মতো তার জন্য হন্য হয়ে ছুটে যাওয়া সব মিথ্যা হয়ে যাবে? ”

প্রত্যয় ঊষার মাথায় হাত রেখে অন্যদিকে মুখ করে বলে,

” তোর অজানা নয় বাড়ন্ত বয়স থেকেই মেয়েদের সাথে প্রেমালাপ জমানো আমার চরিত্রে মিশে গিয়েছিল। ভার্সিটিতে মৃন্ময়ীকে দেখেই পছন্দ হয়। তার সাথে কথা বলতে গেলেই প্রথমদিনেই আমাকে রাজনীবিদরা চরি***ত্রহীন এসব বলে অপমান করে। তখন মোহ থেকে আমার মনে জেদ ধরে একেই আমি দুর্বল করে সারাজীবন অসহায় বানিয়ে নিজের কাছে রাখব। কিন্তু কে জানত আমি নিজেই তোর ভালোবাসার কাছে অসহায় হয়ে যাব! ছোট থেকেই তোকে আমার ভালো লাগত, মজার ছলে বলতাম তুই আমার বউ। কিন্তু এই ভালো লাগা নিয়ে গভীরভাবে ভাবি নি কখনো। শুধু মনে হতো তুই কাছে থাকলেই শান্তি, সুখে থাকি। তোকে হারানোর কথা কল্পনা করতেই আমার শরীর শিউরে ওঠে। তোর বিয়ের কথা যেদিন কানে এলো সেদিন থেকেই আমি উদ্ভট অনুভূতি টের পাই। আগের আমিকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ধীরে ধীরে অনুভূতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে শুরু করল। যে হারিয়ে গেলে নিজের শ্বাসকে নিজের মনে হয় না, সুখশান্তি অনিষ্ট হয়ে যায়, মৃ***ত্যুকেই আপন মনে হয়, যার উপস্থিতে মনে হয় চারপাশে খুশির বাতাস বইছে সে-ই তো ভালোবাসার মানুষ। তুই আমার সেই মানুষ ঊষা, তুই আমার হৃদয়ের একচ্ছত্র অধিষ্ঠাত্রী। বহু মেয়েকে পছন্দ করেছি,বহুজন ভালো লাগা হয়েছে, কিন্তু বিশ্বাস কর কেউ ভালোবাসা হয় নি। ভালোবাসা বুঝতে আমার বিলম্ব হয়েছে, কিন্তু আমাদের ভালোবাসাকে আমি হেরে যেতে দিই নি। সবাই ভালো হয় না, আমি বোধহয় বাজে ছেলে। কিন্তু এই বাজে ছেলে তোকে প্রচন্ড ভালোবাসে, আজীবন ভালোবাসবে। ”

ঊষা ডান হাতটা প্রত্যয়ের হৃদয়স্থ বরাবর রেখে ধাক্কা দিয়ে বলিষ্ঠ শরীরটা সরিয়ে দিল নিজের থেকে। প্রত্যয় পিছিয়ে গেল দুই,তিন পা। বাকরুদ্ধ,হতভম্ব চক্ষুদ্বয় ঊষার অস্পষ্ট রক্তাভ চেহারায় নিবদ্ধ করল। কাঁদছে ও। বৃহৎ অশ্রু কণার শ্রাবণধারা কপোল বেয়ে নামছে বাঁধাহীন।

” কেন বাজে হলে তুমি? কেন জড়ালে মৃন্ময়ীকে নিজের পছন্দে? চরিত্র***হীন তুমি। তোমার ভালোবাসা আমি গ্রহণ করব না। ক্ষমা করব না কোনোদিন তোমাকে। কাকি-কাকা, বাবার পায়ে ধরে, আমার বিয়ের বরযাত্রী ফিরিয়ে দিয়ে নাটকীয় বিয়েতে কেন টেনে নিল আমাকে? তোমাকে সেই ছোট থেকে একতরফা ভালোবেসে যাওয়াই কি আমার জীবনের অভিশাপ ভাইয়া? ২৬ টা বছর লেগে গেল তোমার আমার প্রতি ভালোবাসা উপলব্ধি করতে? অথচ আমি যে বছর বছর ধরে নিজেকে হারিয়েছি প্রেমের উষ্ণ ধোঁয়ায়? আমি তোমাতেই আসক্ত ছিলাম, তুমি আমাতে বিভোর হতে বড্ড সময় নষ্ট করে ফেললে ভাইয়া। ”

প্রত্যয় হাত বাড়িয়ে ছুঁতে এলে ঊষা দৌড়ে গিয়ে বারান্দার দরজা আটকে দিল। ঠেস দিয়ে বসে পড়ল দরজায়। জামা খামচে ধরে বুকফাটা আর্তনাদে ভেঙে পড়ল। কেন চাওয়া অনুযায়ী কিছু হয় না? প্রত্যাশিত জিনিসটা পেতে এত এত বেগ পোহাতে হয় কেন? প্রত্যয়কে সে সবসময় ভালো রূপে চেয়ে এসেছে, মেয়েদের সাথের সব ধরনের ফ্লার্ট চোখ বুঝে,কষ্ট চেপে মেনে নিয়েছে। কিন্তু মৃন্ময়ী নামে ভালো মেয়েটা কেন এটার অংশীদার হলো?

” দরজা খোল ভোরের পাখি। ”

” আমাদের জীবনে আর কখনো ভোর আসবে না ভাইয়া। তোমার ভোরের পাখির প্রাণে তুমি ছু–রি বসিয়ে দিয়েছ। ”

” আমি ভুল করেছি,সামনে বসিয়ে শাস্তি দে। আর দূরে ঠেলে দিস না। আমার এত কষ্ট ভালো লাগছে না। দয়া করে আমার কথা শোন। আমি তোকে ভালোবাসি বউ। ”

ঊষা অধরে হাত চেপে রোদনের আওয়াজ আটকানোর প্রাণপণ প্রয়াসে ডুবল। তারই ভালোবাসার মানুষটা কেন এত নিকৃষ্ট হলো? কেন? ভাগ্য এমন কেন তার? ভাগ্যকে আজ খুব দোষারোপ করতে ইচ্ছে করছে। পরিস্থিতিকে মন চাইছে বলতে আমার জীবনের সময়গুলো সুন্দর হলেই পারত। প্রেমের প্রতি ঘৃ**ণা ধরে গেল। এই প্রেমই সব কষ্টের কারণ। না সে প্রত্যয়ের প্রেমে পড়ত, আর না এমন যন্ত্রণা পেতে হতো এখন। বিড়বিড় করল চাপা ক্লে*শে, ঘৃ***ণায়,দুঃখে,

” কেন এলে প্রেম
কেন এলে আমার দোরগোড়ায়?
কেড়ে নিলে তুমি সর্বস্ব।
বলো তো প্রেম
কেন মানুষ গুমরে ম**রে,হারায় তোমার উষ্ণ ধোঁয়ায়? ”
__________________________

ঝং ধরা নিঝুম মর্ত্যধামে রাত্তিরের গভীরে শীতের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। মজুমদার বাড়ির সর্বত্র নিরবতার বিস্তার। দীর্ঘ দীর্ঘ ক্লান্তির শেষে নিশাতের প্রিয় সঙ্গী ঘুম ফিরে এসেছে। আরামসে ঘুমের রাজ্যের ঘুমপরী হয়ে তন্দ্রাবিলাসে ব্যস্ত ও। ফোনের বিচ্ছিরি শব্দে দু একবার নড়েচড়ে ফের নিদ্রার দিকে ধাবিত হতে লাগল। বারংবার ঘুমের ব্যাঘাত করা মোবাইলটাকে আছাড় মা**রতে গিয়ে দেখে প্রহর কল করেছে। প্রহর ভাই! এত রাতে! ক’টা বাজে? রাত দেড়টা। কল রিসিভ করে হ্যালো বলার কষ্টটুকু করতে হলো না। আকাশে অকস্মাৎ চমকানো বজ্রপাতের ন্যায় বিদ্যুৎবেগে কথাগুলো ভেসে এলো শ্রবণ দুয়ারে,

” তোর বাপ শর্ত দিয়েছে তুই কলেজের গন্ডি না পার হওয়া পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে বউ সেজে যেতে পারবি না। আমি কি অবুঝ? ফিডার খাই? এত সহজে উনি বিয়ে মেনে নেবার লোক? আমাকে অশান্তিতে রাখার জন্যই মামুজানের অমন বন্দোবস্ত। রাগে তখন বেরিয়ে গেছি বলে যে শর্ত হজম করে নিয়েছি এমন না৷ ঠান্ডা গলায় উনি শর্ত দেবেন, আমি মেনে নেবো? দরজা খোল,এখুনি এসে দরজা খুলবি তুই। ”

হতচকিত কণ্ঠস্বর নিশাতের,” এখন?”

” এক্ষুনি। জলদি আসবি। তোদের বাড়িতে জামাই আপ্যায়ন হচ্ছে মশা দিয়ে। খুব তাড়াতাড়িই সব রক্ত শুষে নিয়ে তোর জামাইকে মা***রার কর্মযজ্ঞ চলছে। ”

নিশাত ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে সিঁড়িতে আসতেই স্তব্ধ হয়ে পড়ল। ছোট ফুপি মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে সবে সিঁড়িতে পা রেখেছে। ওকে দেখেই ভ্রুঁ কুঁচকে সবিস্ময়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন,

” তুই এত রাতে? কোথায় যাচ্ছিস?”

ফুপি সজাগ মানে দরজার কপাট মেললেই বুঝে যাবে। কথা লুকানোও বৃথা। আমতা আমতা করলে তিনি মৃদু হেসে বললেন,

” প্রহর এসেছে? ”

নিশাত লজ্জিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল। এত রাতে উনি এসেছেন ফুপি কী ভাববেন? ইশ!

” দাঁড়িয়ে আছিস কেন? দরজা মেলে ঘরে নিয়ে যা। বিয়ে হবার পর কথাই হলো না তোদের। তার মধ্যে বড় ভাইয়া শর্তের দেয়াল তোলে দিলেন। বিয়ে করেও শান্তি নেই ছেলেটার। ”

মাথায় হাত বুলিয়ে ছোট ফুপি চলে গেলেন। নিশাত জড়োসড়োভাবে এসে দরজা মেলে দিল। হুট করে ধেয়ে আসা তুফানের মতোই নিশাতকে আলুথালু করে দিয়ে টুপ করে প্রহর ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল। টেনে সোজা রুমে নিয়ে আসল। এখানেও দরজা আটকে দিল। নিশাত ভূতগ্রস্থ হয়ে তাকিয়ে রইল নির্নিমেষ। চক্ষুদ্বয় ঘুমের আবেশে সেকেন্ড সেকেন্ড মুদে আসতে চাইছে। প্রহর ভাইকে দাপুটে ভঙ্গিমায় এক পা এক পা করে কাছে আসতে দেখে ছিটকে দূরে সরে গেল সে।

প্রহরের মনমেজাজ খুব বেশিই উত্তপ্ত। রোষের তোড়ে উচ্চারণ করল,
” নকড়া করবি না। দাঁড়া ওখানে। ”
নিশাত স্থির রইল। চোরা নজরে প্রহরকে দেখতে লাগল। কালো টিশার্ট, জিন্স পরনে। জ্যাকেট খুলে বিছানায় রেখেছে ইতোমধ্যে। ওর আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে আঙুল তালাবদ্ধ করে অন্য হাতটা নিয়ে হৃদযন্ত্রের ওপর রাখল। পুরন্ত ঠোঁট দুটি নড়ে উঠল সঙ্গে সঙ্গে,

” বিয়ের প্রথম রাত আজ। উপহার না-কি দিতে হয়? এই হৃদয়টাই তোকে উপহার দিলাম। এটা তোর। আমার হৃদয় ভূমিতে তোরই আধিপত্য রবে চিরকাল। ”

নিশাতের চাহনি প্রহরের বুকের বা পাশে অটল। ভালোবাসা এমনও হয়! একটা মানুষ তার মন,হৃদয় অন্যের তরে সঁপে দিচ্ছে নিশ্চিন্তে। অথচ ভালোবাসায় যে বেদনা আছে? নিশাত যদি কখনো অজান্তেই কষ্ট দিয়ে ফেলে?

প্রহর বুকের মধ্যিখানে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ওকে। ঘাড়ে সিক্ত ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে চলেছে ক্রমাগত। এক লহমায় প্রহরের পিঠ খামচে ধরল নিশাত। তরঙ্গ খেলে যাচ্ছে দেহে, রক্তে প্রবল উচ্ছ্বাস। প্রহর গলার কাছ থেকে মুখ তুলে ওর কপালে, গালে,নাকে অজস্র চুমু খেল। প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যে অনুভূতি দমিয়ে রাখা কঠিন। মন যাকে চায় তার প্রতি শারীরিক চাওয়ার অনুভূতি জন্মাবে না তা হাস্যকর। তবে সবকিছুরই একটা সময় আছে। মন দিয়ে পাওয়া নিশাতকে চাইলেই শারীরিকভাবে পেয়ে যেতে পারে কিন্তু এমনটা সে করবে না। আজ নয়, দৈহিক মিলন লগ্নটা আরো আরো অপেক্ষার প্রহর কাটিয়েই নাহয় আসুক। তবুও সুন্দর সময়ে আসুক। বুকের ভেতরের সামাল সামাল রবকে সম্মতি জানিয়ে অল্প করে হেসে বলল,

” কাল চলে যাব। ইলেকশনের ভেজালে ব্যস্ত থাকব। মন দিয়ে পড়িস। তোর মর্জি হলে আমাদের না হওয়া মিষ্টিমুখটা এখন হতে পারে। ”

নিশাত খিঁচে রইল। সে নিজ থেকে পারবে না। প্রহর ওর কম্পনরত ওষ্ঠযুগলের কাছাকাছি ঠোঁট এনে কেমন নেশা ধরানো গলায় অনুমতি চাইল,

” আপনি কি মিষ্টিমুখ করতে সায় দিচ্ছেন মিসেস মেহরিন মজুমদার নিশাত?”

নিশাত মন কেমন করা অনুভূতি নিয়ে চোখ বুঁজে ফেলে। এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে না সে কভু।

#চলবে~

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here