লুকানো অনুভূতি পর্ব ১৮

0
377

#লুকানো_অনুভূতি
#পর্বঃ১৮
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর

একটু আগেই এসে শুলাম শরীর তেমন ভালো লাগছে না।

রোয়েন হুরকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে হুর পরী?

না বেশি না একটু খারাপ লাগছে আরকি, একটু রেস্ট করলে ঠিক হয়ে যাবে।

তখন আম্মু এসে ডাক দিয়ে গেলো নিচে ডাকছে সবাইকে। আম্মুর কথা শুনে অবাক হলাম এই টাইমে নিচে কেনো ডাকছে?

নিচে গেলেই দেখতে পারবো চলো এই বলে হুরকে নিয়ে উঠে বসলো রোয়েন।

আস্তে ধীরে নিচে নেমে গেলাম সেখানে সবাই উপস্থিত। যেয়ে দেখলাম রিহু আর ইয়াদ ভাইয়া পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। রিহু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আর সবাই গম্ভীর দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি গিয়ে রিহুর পাশে দাঁড়ালাম আর রোয়েন যেয়ে আব্বুদের পাশে ছোফায় বসে পরলো। বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম আসলে হয়েছে টা কি কিন্তু বুঝতে সক্ষম হলাম না।

তখন বড় আব্বু গম্ভীর কন্ঠে রিহু আর ইয়াদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো তোমাদের ভিতরে কিসের সম্পর্ক চলছে?

এতোখনে সব কিছুর মানে বুঝলাম। বুকের ভিতরে ধক করে উঠলো তাহলে কি রিহুরা ধরা পরে গেছে?

ইয়াদ আস্তে ধীরে বললো আব্বু আমি ওকে ভালোবাসি।

ইয়াদ ভাইয়ার কথা শুনে সবাই আরো মুখ গম্ভীর করে ফেললো। তখন ফুপা রিহুর উদ্দেশ্যে বললো বুঝলাম ইয়াদ তোমাকে ভালোবাসে আর তুমি?

রিহু কি করবে বুঝতে পারলো না ওর গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না।

রিহুর অবস্থা বুঝতে পেরে ওর হাত চেপে ধরে ওকে সাহস দিলাম, বুঝালাম যে এখন সাহস রাখাটা দরকার।

রিহু একটু সময় নিয়ে বললো আমরা দু’জন দুজনকে ভালোবাসি আব্বু।

রেগে বললো অনেক বড় হয়ে গেছো তুমি তাইনা? এতো বড় কবে হলে?

কেঁপে উঠলো রিহু ভয়ে, মাথা নিচু করে ফেললো।

রোয়েন আর হুরের ঘটনাটি এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে তাই আমরা মেনে নিলাম কিন্তু তোমরা এটা কিভাবে করলে? মানুষ কি বলবে এভাবে আত্মীয়তার ভিতর সম্পর্ক করলে?

রিহুর চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। তাহলে কি ওদের সম্পর্কটা তারা মেনে নিবে না? কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে ওর।

ইয়াদ রোয়েনের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে কারণ এখন রোয়েন ছাড়া এই পরিস্থিতি কেউ ঠিক করতে পরবে না।

কিছুখন নিরবতা চললো, এবার রোয়েন মুখ খুললো। আব্বু কে কি ভাবলো তা দেখে আমাদের কি হবে? মানুষের কাজেইতো অন্য কে কথা শুনানো তাই বলে তাদের কথায় ভয় পেয়ে চলতে হবে আমাদের? যে যার সাথে সুখী হবে এখন কি মানুষের কথা ভেবে আমরা তাদের আলাদা করবো? সংসার টাতো মানুষেরা করবে না সংসার টা করবো ওরা তাহলে মানুষের কথায় আমরা কেনো পিছপা হবো? ওরা একে অপরের ভালোবাসে সেখানে আমাদের মানুষের কথা শুনে বাধা দেওয়ার কোনো মানেই হয় না।

রোয়েনের কথা শুনে ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো। লোকটা কি সুন্দর বুঝিয়ে কথা বলছে। সব পরিস্থিতি কি সুন্দর করে বুঝে যায় উনি।

রিহু অশ্রুসিক্ত নয়নে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। আজ ভাই না থাকলে যে কি হতো তবুও ভায় লাগছে এখন আব্বুরা কি বলবে এ ভেবে।

রোয়েনের কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেলো। রোয়েন যা বলেছে ঠিক এইতো বলেছে, মিথ্যা কিছু তো বলে নি।

ইফাজ চৌধুরী বলে উঠলো ইয়াদ ছেলে হিসেবে খুবেই ভালো কিন্তু রিহুর বয়স অল্প এতো তারাতাড়ি ওকে বিয়ে দেওয়ার কথা আমি এখনো ভাবি নি।

আব্বু বলে উঠলো যেহেতু ওরা একে অপরকে ভালোবাসে সেহেতু আমাদের এখানে বাঁধা না দেওয়াই ভালো মনে করি আমি। মানুষ যা খুশি বলুক তাতে আমাদের কি? রিহুদের পরিক্ষা তো ৬ মাস পরেই তাহলে ওর পরিক্ষা শেষ হলেই নাহয় আমরা বিয়ের ব্যবস্থা করি।

ইয়াদ শস্তির নিশ্বাস ফেললো। অবশেষে আর কোনো বাধা রইলো না।

আব্বুর কথায় সবাই সম্মতি দিলো। রিহুর খুশি দেখে কে ঝাপটে ধরলো হুরকে। হুরও রিহুকে ধরলো।

ওদের খুশি দেখে বড়রা আর গম্ভীর হয়ে থাকলো না তারাও খুশি হয়ে গেলো।

বড় আব্বু বললো এতো খুশির খবর মিষ্টি মুখ না করলে হয় নাকি চলেন ভাই আমরা মিষ্টি নিয়ে আসি। তারপর আব্বু, বড় আব্বু আর ফুপা চলে গেলো মিষ্টি আনতে।

রোয়েন উরে চলে গেলো আর ওর পিছে পিছে ইয়াদ ও গেলো। ইয়াদ রোয়েনের কাছে যেয়ে মাথা নিচু করে বললো সরি দোস।

রোয়েন ভ্রু কুচকে বললো সরি কেনো?

তোকে কিছু বলি নি এই জন্য। আমার উপরে রাগ করে থাকিস না প্লিজ।

আমি রাগ করার কে?

ইয়াদ রোয়েনকে যেয়ে জড়িয়ে ধরলো রাগ করিস না দোস আর কখনো এরকম করবো না।

আমার কি আরো ৫,১০ টা বোন আছে নাকি যে তুই আবার এরকম করবি?

রোয়েনের কথায় ইয়াদ হেসে দিলো।
——————————
শুরু হয়ে গেলো আবার সেই ব্যস্ত জীবন। রিহুর আর হুরের সামনে পরিক্ষা তাই সারা দিন ওদের পড়ালেখার মাঋে ডুবে খাকা লাগে। সব মিলিয়ে অনেক চাপের ভিতরে আছে ওরা।

এর এই ভিতরে একটা খুশির সংবাদ আসলো সেটা হলো ইমা আপু প্রেগন্যান্ট। এই প্রথম খালামনি হতে যাচ্ছি আমার খুশি দেখে কে। ইমা আপুরা আজকে আমাদের বাসায় যাবে তাই আমিও রোয়েনের কাছে বায়না ধরলাম আমরাও যাবো। রোয়েন প্রথমে যেতে চাইলো না পড়ার ক্ষতি হবে দেখে কিন্তু অনেক কষ্টে রাজি করালাম তাকে।

রিহুর কেও সাথে নিতে চাইলাম কিন্তু ও যাবে না। ওর একটাই কথা যে ও বিয়ের আগে যাবে না ওই বাসায়। কি আর করার তাই রুমে চলে আসলাম রেডি হওয়ার জন্য। আজকে অনেক শাড়ি পরতে ইচ্ছে করলো তাই রুমে যেয়ে একটা ব্লু কালার শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমের চলে গেলাম।

শাড়ি পরে এসে সমস্যা বাজলো একা একা কুচি ঠিক করতে পরছি না। রিহুকে কখন ডেকে আসলাম এখনো আসার নামগন্ধ নেই ওর। রোয়েন ল্যাপটপ খেকে মাথা তুলে তাকালো হুরের দিকে। চোখ থমকে গেলো ওর হুর পরীর দিকে। ব্লু কালার শাড়ি তে কোনো আকাশের থেকে নামা হুর পরীর থেকে কোনো অংশে কম লাগছে না। রোয়েন আস্তে ধীরে হুরের কাছে যেয়ে দাঁড়ালো তারপর হাঁটু গেড়ে বসে হুরের শাড়ির কুচি ঠিক করে দিলো।

কুচি ঠিক করে উঠে এসে হুরকে পিছ থেকে জড়িয়ে ধরে ঘারে মুখ গুজলো। কেঁপে উঠলো হুর, এই লোকটা কাছে আসলেই হুরের কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে যায়।

রোয়েন নেশালো কন্ঠে বলে উঠলো হুর পরী তুমি এখনো আমার স্পর্শে কেঁপে উঠো। তোমার এই কেঁপে উঠাতে আমি যে আরো বেশি পাগল হয়ে যাই এই বলে ঘারে গভীর ভাবে চুমু খেলো।

হুর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো কি করছেন ছাড়েন আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।

ছাড়তে ইচ্ছে করছে না হুর পরী। ইচ্ছে করছে আদরে ভরিয়ে দেই, নেশালো কন্ঠে বললো রোয়েন।

হুর লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেললো। আস্ত করে বললো দরজা খোলা কেউ এসে পরবে ছাড়ুন প্লিজ।

ছাড়বো যদি নিজ থেকে আমাকে কিস করো তাহলে, দুষ্ট হাসি দিয়ে বললো রোয়েন।

আমি চোখ বড়ো বড়ো করে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার ভিতর দিয়ে তার দিকে তাকালাম। বলে কি এই লোক?

রোয়েন আরেকটু গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দিয়ে বললো এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই রিহু পরী। আজকে আমি এটা না পেলে ছাড়ছি না।

দ..দেখুন আপনি দিন দিন কিরকম অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন। আমি এটা পারবো না ছাড়ুন না প্লিজ কেউ এসে পরবে।

অন্য কারো সাথে তো অসভ্যতামি করছি না বউয়ের সাথেই করছি, এবার তারাতাড়ি আমি যা চাচ্ছি দিয়ে ফেলো।

দেখুন…

হুম দেখাও। হুরের কথা শেষ করতে না দিয়ে রোয়েন বলে উঠলো।

তখনই রুমে ঢুকে গেলো রিহু, হুরকে ডাকতে ডাকতে। হুর কুচি ঠিক করতে ডেকেছিলি হয়েছে তোর…… আর কিছু বলতে পারলো না। সামনে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো তারাতাড়ি পিছে ঘুরে চোখ ঢেকে ফেললো আর বললো আমি কিন্তু কিছু দেখি নি।

রিহু রুমে আসতেই হুর রোয়েনের থেকে ছিটকে দূরে সরে গেলো। লজ্জায় কান কোন গরম হয়ে গেছে ওর। লজ্জায় হাসফাস করতে লাগলো।

রোয়েন রিহুর মাথা গাট্টা মেরে বললো আমার রোমান্সের বারোটা বাজাতে এসেছিস। কারো রুমে প্রবেশ করতে নক করতে হয় জানিস না?

আমি জানি নাকি তোমরা দরজা খোলা রেখে…..

আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই রোয়েন থামিয়ে দিলো। কাবাবের হাড্ডি না হলে তোর শান্তি নেই যা ভাগ এখান থেকে, হুরের কাজ হয়ে গেছে।

রিহু ভেংচি কেটে বললো ঠেকা পড়েছে নাকি আমার এখানে থাকতে। তোমাদের একটা উপদেশ দিয়ে যাই বুঝলে কিছু করলে দরজা টা আটকে নিও। আমি দেখে কিছু মনে করি নি, আামার জায়গায় অন্য কে…..

আবার ও রিহুকে থামিয়ে দিয়ে রোয়েন বললো তবে রে দাঁড়া আজকে মজা দেখাচ্ছি এই বলে রিহুকে ধরতে নিলে ওকে আর পায় কে, এক ছুটে চলে গেলো।

এইদিকে লজ্জায় আমার অবস্থা খারাপ দুই ভাইবোনের কথা শুনে। কি করবো খুজে পাচ্ছি না, গুটিশুটি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

গাড়িতে বসে আছি আর রোয়েন ড্রাইভ করছে। লজ্জায় এখনো চুপচাপ করে বসে আছি।

রোয়েন হুরের দিকে তাকিয়ে বললো কি হলো চুপ কেনো এতো?

ক…কিছুনা তুতলিয়ে বললো হুর।

রিলাক্স এতো লজ্জা পাওয়ার কি হলো, তোমার এতো লজ্জা কোথা থেকে আসে আমি বুঝি না। মেয়ে মানুষ মানেই লজ্জার এক একটা গোডাউন।

তার কথায় মুখ ভেঙচিয়ে বললাম সবাই মনে আপনার মতো নির্লজ্জ হবে।

আমি যদি নির্লজ্জ না হই তাহলে এ জন্মে আমার বাবা ডাক শুনা লাগবে না।

তার লাগাম ছাড়া কথা শুনে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। আর কোনো কথা না বলে বাহিরে তাকিয়ে রইলাম আর নাহলে এর সাথে কথা বললে দেখা যাবে লজ্জা দিয়ে আমাকে মে/রে/ই ফলবে।

গাড়ি এসে থামলো বাসার সামনে। আমি তারাতাড়ি নেমে গেলাম গাড়ি থেকে তারপর বাসার ভিতরে ঢুকে গেলাম। সবাই আমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলো, যেয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলাম তারপর চলে গেলাম ইমা আপুর কাছে। যেয়েই আপুকে জড়িয়ে ধরলাম।

আপু আমার যে কি ভালো লাগছে আমি খালামনি হবো। তারপর আপুর পেটে হাত রেখে বলে উঠলাম ছোট্ট শোনামনি তারাতাড়ি চলে আসো। তোমার জন্য তোমার খালামনি অপেক্ষা করে বসে আছে।

হেসে ফেললো সবাই আমার কান্ড দেখে। সবাই অনেক খুশি আজকে। খুশিতে ভোরে উঠলো পুরো ঘর।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here