#লুকানো_অনুভূতি
#পর্বঃ১১
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
আম্মু আমার কাছে একটা শাড়ি নিয়ে আসলো।
আম্মু শাড়ি কেনো?
দেখ মা আজ যা হয়ে গেছে তার সত্যি টা কিন্তু শুধু আমরা জানি। আর কেউ জানলেও তারা উলটা ঠেলবে। এ সমাজ তোকে শান্তিতে চলতে দিবে না মা। আমি মা হয়ে তা সহ্য করতে পরবো না। রোয়েন তোকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। রোয়েন ছেলে হিসেবে অনেক ভালো তা তুই ও জানিস। আমাদের ভুল বুঝিস না মা, তোর ভালোর জন্য এই বিয়েটা। তাহলে কেউ তোকে কথা শুনাতে পারবে না।
আম্মু আমি তোমাদের ছাড়া থাকবো কি করে। আমি তোমাকে ছাড়া কোথাও থাকতে পারবো মা আম্মু।
পাগলি মেয়ে আমার কান্না করে না। দূরে কোথাও যাচ্ছিস নাতো। কাছেই তো তোর ফুপি বাড়ি। যখন মন চাইবে তখন চলে আসবি।
আম্মু আমাকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে শাড়ি পরিয়ে দিলো তারপর নিজ হাতে সাজিয়ে দিলো। মেয়েটার মুখটা ফেকাসে হয়ে আছে।
কষ্টে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে, আদরের মেয়েটাকে আজ পরিস্থিতির চাপে পড়ে এতো তারাতাড়ি দূরে পাঠিয়ে দেওয়া লাগছে। কিভাবে থাকবো এই মেয়েকে ছাড়া আমি। নিজের মনের অবস্থাটা মেয়েকে বুঝতে দিলো না তাহলে মেয়েটা কান্না করতে করতে পাগল হয়ে যাবে। এমনি আজকে ওর উপর দিয়ে কতো কিছু বয়ে গেলো।
রাত বাজে এগারোটা, এখন রোয়েন আর হুরের বিয়ে পড়ানো হচ্ছে। রোয়েন কবুল বলে দিলো। হুর কান্না করছে, গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না।
সবাই মিলে হুরকে শান্ত করলো তারপর আস্তে ধিরে কবুল বললো।
বিদায়ের পালা এবার হুরকে কেউই শান্ত করতে পারলো না। আবারো জ্ঞান হারালো। সবাই কান্না করছে, বাড়ির দুই মেয়েকে একি দিনে বিদায় করতে তাদের কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে।
রোয়েন হুরকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।
মিনা বেগম অঝোরে কান্না করে যাচ্ছে, রোয়েন যেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। কান্না করো না মামি, আমি ওকে কখনো আর কষ্ট পেতে দিবো না। আগলে রাখবো নিজের সবটা দিয়ে।
মিনা বেগম ভরসা পেলেন। রোয়েনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেছেন। পাশ থেকে ইয়াসমিন বেগমকেও টেনে জড়িয়ে নিলো রোয়েন। তাদের কারো মন মানসিকতা এখন ভালো নেই । মেয়ে দুটোকে আজ পরের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো।
তাদের কান্না একটু কুমে আসতে রোয়েন হানিফ সিকদার আর হামিদ সিকদারের কাছে গেলো। তাদের আস্বস্ত করে তাদের থেকে দোয়া নিয়ে গাড়িতে উঠলো। ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো মন খারাপ করে থাকিস না আমি কালকে হুরকে নিয়ে আসবো। সবাইকে সামলিয়ে রাখিস।
সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো। আস্তে আস্তে তাদের ছাড়িয়ে গাড়ি চলে গেলো তার আপন গতিতে।
গাড়িতে বসে রোয়েন এক ধেনে তাকিয়ে আছে হুরের দিকে। মেয়েটার চোখ নাকমুখ ফুলে গেছে কান্না করতে করতে। বুকের ভিতর খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। মেয়েটার কষ্ট একদমি সহ্য করতে পারে না ও। একটু ঝুকে হুরের চোখে গভীর ভাবে চুমু খেলো। আর কখনো এক বিন্দু পরিমান কষ্ট পেতে দিবো না তোমাকে হুর পরী এই বলে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিলো।
বাসার সামনে গাড়ি আসতে রোয়েন হুরকে আবার কোলে তুলে নিলো। সোজা নিজের রুমে যেয়ে ওকে বেডে শুইয়ে দিলো। রোয়েনের পিছে পিছে সবাই আসলো।
আম্মু একটু পানি আনো ওর জ্ঞান ফিরাতে হবে আগে।
পানি নিয়ে আসার পরে ওর মুখে ছিটানো হলো। কিছুখন পরে আস্তে চোখ খুললো। চোখ খুলে নিজেকে নতুন জায়গায় আবিষ্কার করলাম।
আস্তে আস্তে আমাদের বিয়ের কথা মনে পরলো। আমাকে তাহলে এই বাসায় নিয়ে আসলো।
ফুপি আম্মু কোথায়?
মুচকি হেসে বললো পাগলি মেয়ে আমার। আম্মু বাসায় আছে কালকে যেও আম্মুর কাছে। আজকের দিনটা এই আম্মুর কাছে থাক। কি এই আম্মুকে কি পছন্দ হয় নি?
মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরলাম ফুপিকে।
চোখ গেলো সোফায়। রোয়েন ভাই বসে আছে চুপচাপ।
ফুপা বললো এখন চলো সবাই ওরা রেস্ট করুক। ওদের উপড় দিয়ে আজকে অনেক কিছু গেছে। এই বলে সবাই চুপচাপ চলে গেলো। আর বলে গেলো খাবার উপড়ে পাঠিয়ে দিবে ওদের জন্য।
কষ্ট ভুলে গিয়ে এখন একরাশ লজ্জা হানা দিলো আমার ভিতরে। ইসস রোয়েন ভাই এখন আমার হাসবেন্ড, আমরা এক সাথে ঘুমাবো। ভাবলেই গা কাটা দিয়ে যাচ্ছে। মাথা নিচু করে বসে রইলাম।
রোয়েন বেডের কাছে এগিয়ে আসলো। হুরের পাশে যেয়ে ওর গালে হাত রেখে বললো শরীর কেমন লাগছে এখন?
একটু ভালো লাগছে।
যাও ফ্রেশ হয়ে শাড়ি চেঞ্জ করে আসো।
উঠতে নিলে পড়ে যেতে নিলাম শরীরে এক ফোটাও শক্তি নেই।
রোয়েন তারাতাড়ি ধরে ফেললো হুরকে। তারপর ধরে নিয়ে ওয়াশরুমের দিয়ে আসলো। লাগেজ থেকে একটা টি শার্ট আর প্লাজু নিয়ে দিয়ে আসলো ফ্রেশ হয়ে পাড়ার জন্য।
হুর ফ্রেশ হয়ে বের হতে রোয়েন ওকে ধরে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিলো।
তু্মি একটু ওয়েট করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি, এ বলে যেয়ে তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে পাঞ্জাবি বদলে আসলো।
এর ভিতরেই দরজায় টোকা দিলো হিরা বেগম।
রোয়েন যেয়ে দেখে খাবার নিয়ে এসেছে। খাবার টা ভিতরে রেখে তিনি চলে গেলো। রোয়েন দরজা আটকিয়ে হুরের পাশে বসলো।
খাবার মেখে হুরের সামনে খাবারের লোকমা বাড়িয়ে দিলো। হুর চমকে তাকালো রোয়েনের দিকে, এক দিনে লোকটার কতটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। কতটা যত্নশীল লোকটা, এক ভালো লাগা ছেয়ে গেলো পুরো শরীরে।
হা করো।
হুর আস্তে করে হা করলো। রোয়েন একটু একটু করে খাইয়ে দিচ্ছে।
আর খাবো না পেট ভরে গেছে।
আরেকটু খেতে হবে শরীর তোমার দূর্বল, এতো কম খেলে সুস্থ হবে কি করে। সুস্থ না হলেতো কালকে তোমাদের বাসায় নিয়ে যাবো না।
বাসায় যাওয়ার কথা শুনে আবার খেতে লাগলাম। সুস্থ হতে হবে তারাতাড়ি। আর নাহলে কালকে যেতে পারবো না। আমিতো কাল এই যাবো।
রোয়েন হুরকে খাইয়ে দিয়ে নিজে খেয়ে নিলো। তারপর হাত ধুয়ে হুরের পাশে যেয়ে বসলো।
অনেক রাত হয়েছে এবার চুপচাপ ঘুমাবে। এই বলে লাইট বন্ধ করে ড্রিম লাইট জালিয়ে দিয়ে হুরকে বুকে টেনে নিয়ে শুয়ে পড়লো। তার এতো বছরের তৃষ্ণা মিটলো আজকে। বুকের ভিতর শান্তি লাগছে আজকে তার।
এইদিকে হুর খনে খনে কেঁপে উঠছে। মানুষ টা ওর এতো কাছে ভাবতে বুকের ভিতর ধুকপুক ধুকপুক করছে। এভাবেই রোয়েনের বুকের সাথে লেগে ঘুমিয়ে পড়লো।
শেষ রাতের দিকে রোয়েন তার শরীরে গরম কিছু অনুভব করলো। ঘুম ভাঙতেই দেখলো হুরের শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।
রোয়েন তড়িঘড়ি করে উঠতে নিলে দেখলো হুর ওকে ঝাপটে ধরে আছে। হুরের হাতটা আস্তে করে সরিয়ে উঠে যেয়ে পানি এনে একটা কাপড় ভিজিয়ে কপালে দিতে লাগলো। এভাবে অনেক সময় দেওয়ার পরে জ্বরের তাপ একটু কুমলো।
ফজরের আজান দিয়েছে। রোয়েন নামাজটা পড়ে আবার যেয়ে শুয়ে পড়লো। হুরকে কাছে টেনে নিতেই পাখির ছানার মতো চুপটি করে রোয়েনের বুকের সাথে লেপ্টে রইলো। রোয়েন মুচকি হেসে হুরের কপালে একটা চুমু খেয়ে আরো শক্ত করে হুরকে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।
চলবে?
আসসালামু আলাইকুম।
তারাতাড়ি দিয়ে দিলাম গল্প আপনাদের অনুরোধে। কেমন হয়েছে জানাবেন।