#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে_২
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-৮
শেহরোজ শেহনাজের হাত ধরে বলে,তোমরা মেয়েরা এতো বেশি বুঝো কি করে! কি বললাম আর তুমি কি বুঝলা!
-ছাড়ুন আমাকে আপনি আপনার কল্পনাকে নিয়ে থাকেন।
– সিরিয়াসলি নাজ তুমি এই সামান্য কথা বুঝতে পারোনি!
– আমি অত শতো বুঝিনা। ছাড়ুন আমাকে।
– নাজ তুমি কি মিসেস মাহমুদ হবে?
– কিহহহ বললেন আবার বলুন।
– বলবো তার আগে ভদ্র মেয়ের মত আমার পাশে এসে দাঁড়াও।
নাজ এসে শেহরোজের পাশে দাঁড়ালো শেহরোজ নিজের মোবাইল বের করে কয়েকটা সেলফি তুলে নিলো।
– আপনি আমাকে সেলফি তোলার জন্য ডেকে এনেছেন!
– প্রথম বার নিজের হবু বউয়ের সাথে মিট করছি সেলফি তো বান্তা হ্যা।
– তাহলে কল্পনা!
– আরে বোকা মেয়ে কল্পনা মানে যেরকমটা আমরা মনে মনে ভাবি।
– ওহহ আগে বলবেন তো এই কল্পনা মানে সেই কল্পনা।
– আগে শুনতে চাইলে তো বলবো।আজ থেকে সব রকমের বাঁদরামো বন্ধ। আমি যে ভাবে বলবো সেভাবে চলবে। একদম আমার লক্ষী বউ হবে।
শেহনাজ শেহরোজকে জড়িয়ে ধরে বলে সব ঠিক আছে।
-এখন ছাড়ো রেস্টুরেন্টে আরো মানুষ আছে তো!
______________________________________________
ভালো দিন কাটছিলো।সব মিলিয়ে একটা শান্তি পূর্ণ জীবন চলছিলো বলতে গেলে। আজ শেহনাজের বাবা আসবে শেহরোজদের বাসায়। উৎসবমুখর পরিবেশ। কিন্তু মূহুর্তেই সেই পরিবেশ কেমন গম্ভীর থমথমে অবস্থায় পরিনত হলো।
শেনহাজ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ থেকে অশ্রুকণা গুলো গড়িয়ে পরার আগেই হাতের উল্টো পিঠে তা মুছে নিচ্ছে।
ইমন চৌধুরী আর শাফিন মুখোমুখি বসে আছে,ইমন চৌধুরী বলল,তোকে মা’রা’র জন্য বেঁচে আছি! আর আমার মেয়ে কিনা তোর ছেলেকেই ভালোবাসে!
– দেখুন অতীতে সবাই সবার করা কর্ম ভোগ করেছে। আর বর্তমানেও তাই হবে। তবে শাফিন মাহমুদ এতোটাও নিষ্ঠুর না যে বাড়িতে আসা মেহমানকে গ্রেফতার করবে।
– তারমানে আমার সব তথ্য সংগ্রহ করা শেষ। তা এসব প্রমাণ করতে পারবেন তো মিস্টার মাহমুদ!
– সব প্রমাণ আছে মিস্টার চৌধুরী। আর ইকবাল আহসানের খু’নের দায়ও তো আপনার।
– দ্যা গ্রেট শাফিন মাহমুদ, আমি তো ম’রে যাবো তবে তোকেও বাঁচিয়ে রাখবো না। বলেই নিজের পকেট থেকে পি’স্ত’ল বের করে তাক করে শাফিনের দিকে।
শেহনাজ নিজের বাবার এই রুপ দেখে বেশ ঘাবড়ে যায়। অস্ফুটে স্বরে বলে, বাবা!
ইমন ঘাড় ঘুরিয়ে একবার মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,এটা আমাকে করতেই হবে! আমার বাবা, মা কে যে কষ্ট দিয়েছে তাকে আমি ছেড়ে দিতে পারিনা।
শেহনাজ ইমনের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,তাহলে তুমি আমাকেও শেষ করে দাও বাবা।কোন অপরাধী মেয়ে হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে ম’রে যাওয়া ভালো।
শাফিন ইমনকে উদ্দেশ্য করে বলল,অন্যায় যে করবে তাকে শাস্তি পেতেই হবে।সে যেই হোক না কেন।
ইমন উঠে চলে গেলো। বাহিরের পুলিশ ফোর্স ছিলো ইমনকে গ্রেফতার করে নিলো।
শেহনাজ সবার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে বের হয়ে আসতে চাইলে, মিহি বলে তুমি কোথায় যাবে মেয়ে!এই পরিবারের দ্বায়িত্ব তোমাকেই তো নিতে হবে।
শেহনাজ মিহিকে জাপ্টে ধরে কান্না করে দিলো।মিহিও শেহনাজকে নিজের বুকে আগলে নিয়ে সান্ত্বনা দিলো।
সেদিনের পর প্রায় কেটে গেছে চার মাস। আজ ইশরাক, মিহা,শেহরোজ আর শেহনাজের বিয়ে উপলক্ষে নতুন রুপে সেজেছে মাহমুদ ভিলা।
শেহনাজ আজ গ্রীন আর রেডের কম্বিনেশনে একটা লেহেঙ্গা পরেছে। ভারী গহনা আর ব্রাইডাল মেকওভার। শেহনাজের দিক থেকে চোক সরানো দায়।
অপর দিকে মিহা পরেছে রেড আর ক্রিম কালারের কম্বিনেশনে একটা গর্জিয়াস লেহেঙ্গা। সাথে ভারী গহনা আর ব্রাইডাল মেকওভার। মিহা আর শেহনাজ পাশাপাশি বসে আছে। তাদের পাসে আছে ফারিণ। ফারিণ মিহাকে বলল,তোরা তো বিয়ে করে নিচ্ছিস আমার বিয়েটা কবে হবে?
শেহনাজ হেসে বলে,আরে ননদী অপেক্ষা করো আমার বন্ধু খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে বউ করে নেবে।
-ওরেহহহ গিরগিটি বিয়ে না হতেই বোনকে ননদী বানিয়ে দিয়েছে।
– তুই তো আজ থেকে আমার ননদী।
– সর আমি তোর ননদী,মনদী না আমি হলাম তোর বোন আর ভবিষ্যতে তোর ভাবি। তোর ননদী হলো মিহা মাহমুদ। ওপসস সরি মিহা আহসান দ্যা গ্রেট ইশরাক আহসানের ওয়াইফ।
মিহি এসে বলে,মনে হচ্ছে আমার মেয়েরা বেশ খুশি! কিন্তু তাই বলে,তো এভাবে হাসাহাসি করা যাবে না। এখানে কতশত মানুষ এসেছে তারা বলবে, আজকালের মেয়েদের লজ্জা শরম নাই। তাই একটু সংযাত হও।বাসায় যেয়ে যত পারো হেসো।
নীল বলল আন্টি মেয়েগুলো বিয়ে পাগল তাই এই অবস্থা।
শেহনাজ নীলের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো। নীল হেসে বলে সত্যি কথা তিতা লাগে।
কিছু সময়ের মধ্যেই বিয়ে পরানো শুরু হলো। বিবাহ সম্পন্ন হতেই সবাই মিহাকে বিদায় জানাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
এতোক্ষণ ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দ থাকলেও এবার কান্না করছে নিজের কাছের মানুষদের ছেড়ে চলে যাওয়ার কষ্টে। মিহি মিহার কপালে চুমু দিয়ে বলে, বোকা কাঁদিস কেন!মেয়ে হয়ে জন্মালে একদিন না একদিন পরের ঘরে যেতে হবেই। কত মেয়ে তো বিয়েতে সব পায় নিজের ভালোবাসার মানুষ ছাড়া। আর তুই তো নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পেয়েছিস।ভালো থাক মা। একে একে সবার থেকে বিদায় নিয়ে। মিহা গাড়ীতে এসে বসলো। ইশরাক মিহাকে নিজের কাছে টেনে বসালো।আদুরে কন্ঠে বললো,আমি চাই আমার বাসন্তী পরি হাসি মুখে তার নতুন জীবনের যাত্রা শুরু করুক।সে কি জানেনা তার লেখক তার মুখের হাসির প্রেমে মজতে চায় জনম জনম।
মিহা নিজের মাথাটা ইশরাকের কাঁধে রাখলো। ইশরাকের হাতে হাত রেখে বলল,জীবনে আর কিছু চাইনা শুধু চাই আমার মন খারাপের বিষন্ন বিকেলে এই বুকে আমার ঠাই হোক।
ইশরাক আলতো ভাবে মিহার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে,কখনো তোমার জীবনে মন খারাপের বিষন্ন বিকেল না আসুক। এই বুকে সযত্নে আগলে রাখবো তোমায়। আমাদের ভালোবাসা দেখে প্রকৃতি হিংসে করুক । আমার বাড়ির ইট পাথরেও গেঁথে থাকুক আমাদের ভালোবাসা।
______________________________________________
ফুলে ফুলে সজ্জিত বেডে এক হাত ঘোমটা টেনে বসে আছে শেহনাজ। বেশ খানিক্ষণ পরে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো শেহরোজ। দরজার লক বন্ধ করে, শেহরোজ শেহনাজের পাশে এসে বসলো। শেহনাজের অনূভুতি কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। নিজের মানুষটাকে আজ কাছে পেয়েছে কিন্তু এমন অদ্ভুত অনূভুতি কেন হচ্ছে। শেহরোজ শেহনাজের ঘোমটা তুলে দিলো। শেহনাজের চোখ বন্ধ। চোখের পাতাগুলো নড়ছে। শেহরোজ শেহনাজের চোখের পাপড়িতে ফুঁ দিয়ে বলে,তোমার লজ্জা রাঙা মুখ আমাকে পাগল করতে যথেষ্ট।শেহনাজকে আর একটু লজ্জা দিতে শেহনাজের আধরে হালকা করে নিজের অধর মিলিয়ে দিলো। নিজের পকেট থেকে এক জোড়া নুপুর আর আংটি বের করলো। শেহনাজের পা সামনে এগিয়ে এনে নুপুর পড়িয়া দিলো।
শেহরোজ শেহনাজকে বলল,আমি না বুঝতে পারছিনা তোমার মত একটা মেয়ে লজ্জায় এমন কুঁকড়ে আছে!এই আমার দিকে তাকাও তো।
না তাকালে কিন্তু সোজা রুমের বাহিরে চলে যাবো।প্রেম করে বিয়ে করেছি তাতেও যদি তোমার এতো জড়তা থাকে তাহলে কেমনে কি!
শেহনাজ পিটপিট করে তাকালো।চার চোখের মিলন হচ্ছে। কিছুক্ষণ এভাবে তাকিয়ে থেকে শেহনাজকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু দিয়ে বলে,#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে।
শেহনাজ লজ্জা পেয়ে শেহরোজের বুকে মুখ লুকিয়ে বলে,তুমি আমাকে পূর্ণ করেছো রোজ। তোমার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
– হুস একদম এসব বলবে না। আমাদের মধ্যে শুধু ভালোবাসা আর সম্মান থাকবে এসব কৃতজ্ঞতা কেন আসবে।
শেহনাজ শেহরোজেরকে আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরলো।দুজনেই আজ মিশে যাবে দু’জনাতে। মিলেমিশে যেন এক দেহ দুই প্রাণ।
এক সুন্দর রাতের পর ভোরের পাখির কিচিরমিচির শব্দ জানান দিচ্ছে নতুন দিনের। রাতের আধার কেটে পূর্ব দিগন্তে ছড়িয়ে পরছে ঊষার আলো।
সকালে নাস্তার টেবিল সবাই নাস্তা করতে বসেছে। শাফিন সবার সামনে মিহিকে বলে,তোমাকে পেয়ে আমি ধন্য এতো বাঁধার পরেও তুমি আমাকে করেছ পূর্ণ।যত ভুল যত ভ্রান্তি ক্ষমা করে আসো শেষ জীবনটা ভালোবাসায় কাটিয়ে দেই।
মিহি মৃদু হেসে বলে,আমার মা বলেছিলেন,মেয়েদের ধৈর্যশীল হতে হয়। পরিবারে দু’জনেই সমান তালে রাগ দেখালে সংসার টিকে না। সংসার ঠিক রাখতে হলে একজনকে একটু রয়ে সয়ে থাকতে হয়। আর জীবন মানেই তো সাদা, কালো রঙিনে মিশ্রিত এক অধ্যায়। হাসি থাকলে কান্না আসবেই। আবার সব ভুলে আমরা এক পরিবার। এভাবে হাসি আনন্দে কেটে যাচ্ছে মাহমুদ পরিবারের জীবন।
সমাপ্ত
আসসালামু আলাইকুম।দুঃখিত এভাবে শেষ করার জন্য। জানি তোমাদের মন খারাপ হবে এতো তাড়াতাড়ি শেষ করাতে।তবে আশাকরি তোমরা মন খারাপ করবেনা। আমি গল্পটা না টেনে সুন্দর একটা সমাপ্তি দিলাম।ভালো থেকো সবাই। আর আমাকে দোয়ায় রেখো।