#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে_২
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-৫
মিহি রুমে এসে দেখে শাফিন ঘুমিয়ে পরেছে। মিহিও ঘুমিয়ে পরলো। কিন্তু মনের মধ্যে একটা বিষয় খচখচ করছে নাজ মেয়েটার সাথে শাফিনের সাথে কোন সম্পর্ক নেই তো!
শেহরোজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নিজের বারান্দায় ব্যায়াম করছে।
শেহনাজ সেই ভোরে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় বসে আকাশ দেখছে। মন খারাপ শেহনাজের। তার মা কেন নেই মা থাকলে তো সব কিছু ভিন্ন রকম হতো। এসব ভাবনার মাঝেই কারো গুনগুন শব্দ কানে আসতে লাগলো। আমারও পরাণ ও যাহা চায়,তুমি তাই তাই গো…. আমার ও পরাণও যাহা চায়।
শেহনাজ সামনের বারান্দায় তাকিয়ে অবাক। শেহরোজ খালি গায়ে ব্যায়াম করছে আর গুনগুন করছে। শেহনাজ আর একটু কাছে এসে বলে,তা আপনার পরাণ কি চায় শুনি?
শেহরোজ ভ্রু কোঁচকালো।
– আপনার পরাণ কি বডি দেখিয়ে এই কিশোরী হার্টে ভালোবাসা সৃষ্টি করতে চায়?
– তা তোমার পরাণ কি এক প্রাপ্ত বয়স্ক যুবকের সামনে মেদ হীন পেট দেখিয়ে তাকে আকৃষ্ট করতে চায়?
– একদম মিথ্যে কথা বলবেন না।
শেহরোজ এক চোখ টিপে বলে ইউ নো বেবি ইউ লুকিং সো হট। তোমার নাভির উপরের কালো তিলটা মারাত্মক।
শেহরোজ কথা শুনে শেহনাজ নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় ম’রি ম’রি অবস্থা। দ্রুত রুমে চলে আসে। মনে মনে ভাবে এই এটিটিউড বস্তা তো আস্ত লুচুর বস্তা।
তাড়াতাড়ি টি-শার্ট টেনে ঠিক করো নিলো।
শেহরোজ হেসে বলে,আমার কাজটা তোমাকে দিয়ে করাবো মিস নাজ।
মিহার সাথে নাজের ভাব হতে সময় লাগেনি। মিহা নিজের একটা অলিভ কালারের ড্রেস দিয়েছে নাজকে। মিহা সুন্দর করে শেহনাজের চুল ঠিক করে দিলো।
ফারিন বলে,কিরে মিহা তোর লেখকের খবর কি? প্রেম ট্রেম হলো নাকি!
‘আর প্রেম সে বড্ড অদ্ভুত। দেখাই করলো না আজ অব্দি।
তাহলে এক বছরে কি কথা বললি! সামান্য দেখা করাতে রাজি করতে পারলি না!
-জানিস-ই তে লেখক মানেই কথার জাদুকর তার সাথে আমি কথা বলে পারিনা।
– তা পারিসটা কি শুনি!শোন ছেলে মানুষ নিজেই তোর সাথে দেখা করার জন্য পাগল হয়ে যাব!আর তুই বলিস রাজি হয় না। তোর ফোনটা কই দে-তো।
– প্লিজ তুই কিছু করিস না। যদি রাগ করে কথা না বলে?
– না বললে বলবে না আমরা কি বানের জলে ভেসে এসেছি! ফারিন মিহার মোবাইল নিয়ে সুইচ অফ করে দিলো।
– কি করছিস এটা তুই! দে আমার ফোন দে।
– আজকে সারাদিন তুই বাড়ির বাহিরে যাবিনা, অনলাইনে আসবি না। দেখ তোর জন্য তার কতটুকু ভালোবাসা আছে?
শেহনাজ ফারিনের কাছে এসে বলে,তুই কি লাভ গুরু? তাহলে আমার সেটিং করিয়ে দে।
– ওই ছেলে বাদ। তোকে অন্যজনের জন্য পছন্দ হয়েছে।তোকে তার সাথে মানাবে ভালো।
– যা সর আমার অন্য কাউকে চাইনা। আমি ওই এটিটিউডের বস্তাকে চাই মানে চাই।
মিহা বলল,কাহিনী কি গো আপি?
মিহি রুমে এসে বলে,তোদের কাহিনী শেষ হলে নাস্তা করতে আয়।
নাস্তার টেবিল আগে থেকেই শেহরোজ নাস্তা করছিলো।
শেহনাজ চেষ্টা করছে নিজেকে আড়াল করতে শেহরোজের দৃষ্টি থেকে।
শেহরোজ কফি মগে চুমুক দিয়ে বলে,মিহা তাড়াতাড়ি রেডি হ আমি পাঁচ মিনিট পর বের হবো।
ফারিন বলল,ভাইয়া তুমি এক কাজ করো নাজ কে নিয়ে যাও। মিহা আজকে কলেজে যাবেনা।
শেহরোজ বলল,আমি নিচে যাচ্ছি পাঁচ মিনিটে নিচে আসতে বল।
শেহনাজ বলল,আমি কারো সাথে যাবো না আমি একা যাবো।
‘সে-কি কথা তুমি একা কেন যাবে শেহরোজের সাথে চলে যাও। আর হ্যা আজকে কিন্তু আবার আমাদের বাসায় আসবে। আবার না বলে চলে যেও না।মিহির কথার উপর শেহনাজ আর কোন কথা বললনা।
শেহরোজ গাড়ীর ড্রাইভিং সিটে বসে আছে। শেহনাজ পিছনে বসতে চাইলে শেহরোজ বলে,আমি কারো ড্রাইভার না। যেতে চাইলে সামনে এসে বসতে হবে?
শেহনাজ শেহরোজের পাশে বসে বলে,কি ভাবলাম আর কি বের হলো।
শেহরোজ গাড়ী ড্রাইভ করছে আর গুনগুন করছে।
শেহনাজ নিজের ফোনে লাউডে গান ছাড়লো। লুঙ্গী ড্যান্স, লুঙ্গী ড্যান্স। গানের তালে নিজেই দুলছে।
শেহরোজ কিছুই বলছে না। সে নিজের মত ড্রাইভ করছে।
______________________________________________
এক আলিশান বাসার হল রুমে বসে আছে দু’জন মানুষ। একজন পঞ্চাশ উর্ধ বয়সের পুরুষ। অপরজন আশি উর্ধ বয়সি নারী।
বয়স্ক মহিলাটির হাতে হাত রেখে বলে,আমি প্রতিশোধ নেবো’ মা’ কঠিন প্রতিশোধ নেবো। তোমাকে আর বাবাকে যতটা কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তার চেয়ে দ্বিগুণ কষ্ট ফেরত দেবো।বয়স্ক মহিলাটি ঠোঁট নাড়ছেন। হয়তো কিছু বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কথা বলতে পারে না। প্যারালাইজড হয়ে আজ সাত বছর ধরে বিছানায় পরে আছে। মধ্য বয়স্ক লোকটি উঠে কল করলো কাউকে। ওপাশের কথা শোনা যাচ্ছে না। তবে বয়স্ক লোকটি বলছে,কত দূর এগিয়েছে কাজ? আমি এবার আসার আগেই ওর ব্যবস্থা করে রাখবে।আমি শুধু লা’শ দেখতে চাই ওদের।বলেই কল কেটে দিলো। তার চেহারায় ফুটে উঠেছে হিংস্রতা। যেনে ভস্ম করে দেবে সব কিছু।
_____________________________________________
শেহনাজের হাত বাঁ’ধা মুখ দিয়ে সমানে বকবক করেই যাচ্ছে। এই এটিটিউডের বস্তা আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন? ও আম্মু গো আমাকে বাঁচাও। কে কোথায় আছো আমাকে বাঁচাও এই লুচু স্যার আমাকে মেরে ফেলবে।আল্লাহ গো আমারে বাঁচাও।
শেহরোজ শেহনাজের মুখ চেপে ধরে বলে আর একবার চেঁচামেচি করলে একদম মুখের মধ্যে মাটি পুড়ে দেবো। চুপচাপ থাকো। আর এই গোডাউনে তোমার চিৎকার শোনার মত কেউ নেই। তাই আমি যা যা বলবো চুপচাপ আমার কথা মত কাজ করবে।
শেহনাজের মুখ থেকে হাত সরাতেই শেহনাজ বলে,আমার ভুল হয়ে গেছে স্যার আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি ওই টাইপ মেয়ে না। আমি বাউণ্ডুলে, দুষ্ট হতে পারি কিন্তু চরিত্রহীন না। আমাকে ছেড়ে দিন।
শেহরোজ ধমক দিয়ে বলে,একদম চুপ! একটাও উল্টো পাল্টা কথা বলবা না।শুনো তোমাকে আমার প্রয়োজন আছে ছোট একটা কাজ করে দিতে হবে আমার।
– ওই সব কাজ ছাড়া সব করে দেবো স্যার।
প্রথমবার শেহরোজ শেহনাজের ভয়াতুর মুখশ্রীর দিকে নজর দিলো। কি ইনোসেন্ট আর কিউট লাগছে।
শেহরোজকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে, শেহনাজ আরো ভয় পেয়ে যায়। চোখ থেকে এবার অশ্রু ঝরতে শুরু করেছে।কাঁপা-কাঁপা কন্ঠে বলে,এভাবে আমার দিকে কেন তাকাচ্ছেন! আপনার মা কিন্তু বিশ্বাস করে আপনার সাথে পাঠিয়ে ছিলো আমাকে!
শেহরজো সামনে এসে শেহনাজের নাক টেনে বলে,চুপ থাকুন, কখন থেকে বাজে বকে যাচ্ছেন। আপনাকে যেই কাজটা করতে হবে সেটা শুনুন। শেহরোজ শেহনাজকে সবটা বুঝিয়ে বলল।শেহনাজ সব শুনে বলে, এরজন্য আমাকে বেঁ’ধে নিয়ে আসতে হয়!আমি কতটা ভয় পেয়েছি। বাজে লোক।
-আমি একটু বাজেই তবে তোমার চেয়ে ভালো।
– এবার আমাকে ছাড়ুন।
– ছাড়তে পারি তবে শর্ত আছে?
– বলে ফেলুন জাঁহাপনা।
– সিরিয়াসলি আমি সেদিন তোমাকে রিজেক্ট করেছি বলে তুমি সু’ই’সা’ই’ড করতে গিয়েছিলে!
-আসলে আপনি বলেছিলেন পারিবারিক ভদ্রতা নেই। এরজন্য। ভেবেছিলাম আমার মা নেই তাই এমন বলছেন। আরো অনেকেই বলে এসব তাই।
শেহরোজ হাত খুলে দিয়ে বলে,দেখো তুমি যথেষ্ট বড় ঠিক আছে মানছি তুমি পারিবারিক শিক্ষাটা পাওনি। কিন্তু এখন তুমি ম্যাচিউর ঊনিশ বছরের একটা মেয়ে হিসেবে এখন নিজেকে নিজে গড়ে তুলতে পারো।
– আমাকে তো কেউ কখনো বলেনি পরিবর্তন হতে হবে!সবাই বলেছে যেমন আছিস এমনি ভালো।
-তা সবাই যদি বলে ব্যাংক ডাকাতি করতে। সেটাই করবা নাকি?
– না অন্যায় কেন করবো!
– তারমানে ঠিক ভুল বোঝো? তাহলে নিজেকে পাল্টে নাও। আর হ্যা কাজটা ঠিক ভাবে করবে যাতে কেউ সন্দেহ না করতে পারে।
– ওকে স্যার।
______________________________________________
সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার পথে। তবুও তার বাসন্তী পরির কোন টেক্সট বা কল কিছু আসেনি।আজ লেখায় মন বসছে না। কি হলো? এতো চিন্তা হচ্ছে কিন্তু খোঁজ করবে কি ভাবে? এবার কি তবে বাসন্তী পরির কাছে ধরা দেয়ার সময় এসেছে?
#চলবে