#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে_২
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -৪
ঈশানকে এয়ারপোর্টে এগিয়ে দিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছে শেহরোজ। শেহরোজ একটা কথা স্পষ্ট বুঝতে পারছে। ঈশান তার মা’কে ভালোবাসে। শেহরোজ ঈশানকে জিজ্ঞেস করলো,’আঙ্কেল আপনি বিয়ে করেনননি কেন?
ইশান হেসে বলে,কিছু জিনিস একাই সুন্দর।
শেহরোজ গাড়ী ড্রাইভিং করছে। আজকে যেতে হবে মেঘনা। সেখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।
মেঘনা ব্রিজ ক্রস করার সময় শেহরোজ খেয়াল করলো একটা মেয়ে ব্রিজের রেলিংয়ের উপর ওঠার চেষ্টা করছে।
গাড়ি থামিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালো ঘড়ির কা’টা বারোটা ছুঁই ছুঁই। শেহরোজ গাড়ী থেকে নেমে আসলো মেয়েটার হাত ধরে টান দিতেই মেয়েটা শেহরোজের বাহুতে এসে পরলো।
মেয়েটা শেহরোজের ছেড়ে দিয়ে বলে,সাহস তো কম না মিস্টার।
শেহরোজ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে,ফারিন তুই!
ফারিন নিচের দিকে তাকিয়ে জিহ্বা কামড়ে মনে মনে বলে,এই রে সেড়েছে এবার কি হবে?
ফারিনের ভাবনার মাঝেই ঠাসসসসস করে একটা শব্দ হলো। ফারিন নিজের হাত তার বা’ গালে ধরে বলে,ভাইয়া তুমি আমাকে মারলে!
-তোর সাহস কি করে হয় সু’ই’সা’ই’ড করার!
– আমি কি সত্যি সু’ই’সা’ই’ড করতাম নাকি? শুধু ভিডিও করে ওই নীল, ঝীলকে দেখাতাম। শা’লা আমার না করছে কল রিসিভ আর না করছে টেক্সটের রিপ্লাই।
– তুই এখন কোন ক্লাসে পড়িস?
– এইতো ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে।
– আর ওই ছেলে?
-অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে।
– চুপচাপ গাড়িতে ওঠ এখনো,দুধের দাঁত পড়েনি সে করছে প্রেম!
ফারিন মৃদু স্বরে বলল,আমার সাথে আরো একজন আছে, তাকে ফেলে যেতে পারবো না।
– তাকেও এসে বসতে বল।
– নাজ আপি চলে এসো।
শেহনাজ আসলো শেহরোজের সামনে।
শেহরোজ কিছু বলতে যেয়েও থেমে গেলো এখন কিছু বললে উল্টো নিজেই ফেঁসে যাবে।
নিজের ফোন নিয়ে কল করলো ফাহিন আঙ্কেল লেখা নাম্বারে।
সুমু কল রিসিভ করে বলে,আরে শেহরোজ বাবা যে, তা এতো রাতে কি মনে করে?
– আন্টি ফারিন কোথায়?
– ওতো আমাদের কিছু না বলেই ঢাকায় চলে গেছে।
– ঢাকা তে কোথায় উঠেছে?
– ওর চাচ্চুর বাসায়।
ফারিন বারবার ইশারা করে না করছে এসব বলতে। শেহরোজ কল কেটে দিয়ে বলে, এটা তোমার কোন চাচ্চুর মেয়ে আমার জানামতে তোমার বাবার তো কোন ভাই নেই।
– ইমন চাচ্চু। চাচ্চু বাহিরে থাকে। আর আমি ওরজন্যই এসেছি। আজকে। জানো নাজ আজকে সু’ই’সা’ই’ড করতে নিয়েছিলো। আমি ঠিক সময় না আসলে এতোক্ষণে নদীর তলদেশে থাকতো। নীল আমাকে বলাতে আমি এই নাটক করে ওকে আটকাই।
শেহনাজ একদম চুপচাপ বসে আছে মন মরা হয়ে।
শেহরোজ লুকিং গ্লাসে একবার শেহনাজের চেহারাটা দেখলো। মনে মনে ভাবছে এই মেয়ে চুপচাপ ও থাকতে পারে!
ফারিন বলল,ভাইয়া জানো ও কেন সু’ই’সা’ই’ড করতে চেয়েছে?
শেহরোজ ভেতরে ভেতরে প্রচুর বিরক্ত। এতো কষ্ট করে জ্যাম ঠেলে ঢাকা থেকে মেঘনা এসেছে যে কাজের জন্য সেটাই হলো না। তারপর উপর এই মেয়ের বকবক। বিরক্ত হয়ে বলল,যার জীবনের প্রতি মায়া নেই সেই সু’ই’সা’ই’ড করতে চায়। যারা ভাবে ম’রে গেলেই সব শেষ তারা এরকম বোকামি করে। জীবন এতো সহজ না। আর তার চেয়েও বড় কথা হলো জীবন একটাই তাই বেঁচে থাকতে হবে। সব পরিস্থিতি সামলে নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে।
ফারিন বলল,শুনলি ভাইয়া কি বললো,তুই কি না ওই এটিটিউডের বস্তার জন্য মরতে চাস! ওরকম কত আসবে কত যাবে। ওই বেয়াদব ছেলে তোকে অভদ্র বলেছে তার মানে ওই ছেলের চৌদ্দ গুষ্টি অভদ্র।
শেহরোজ গাড়ী ব্রেক করে বলে,কি শুরু করছিস তুই!
নিশ্চয়ই অসভ্যতা করছে তাই অভদ্র বলেছে। এরজন্য স্যারের চৌদ্দ গুষ্টিকে অভদ্র বলবি?
– তাতে তোমার কি তোমার এতো গায়ে লাগছে কেন।আর তুমি জানলে কি করে ওইটা স্যার বলছে?
– তুই নিজেই তো বললি।
– আমি কখন বললাম!
-একদম চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মত বসে থাক একটাও কথা বলবি না।
ফারিন শেহনাজের কানে মুখে বলল,কিছু মনে করিস না ভাইয়া একটু রাগী তবে মনটা খুব ভালো।
______________________________________________
মিহি শাফিনের কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে আছে। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেছে হসপিটাল থেকে। শাফিন বেশ চুপচাপ। মিহি বলল,তুমি আমাকে বল, কোন কথা তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে?
শাফিন চোখ বন্ধ করে বলে,তোমার আর ঈশানের মধ্যে কোন সম্পর্ক ছিলো !
– কি বলছো এসব। তোমার বাবা যখন আমাকে কলকাতায় আটকে রেখেছিল। আমি সেখানকার কাউকে চিনতাম না। একদিন খোঁজ করতে করতে ঈশান মুখার্জির ঠিকানা পাই। আর ঈশানকে তুমি বার কয়েক দেখিয়েছিলে ভিডিও কলে। আমি নিজে ঈশানের কাছে যাই। তখন শেহরোজের তিন মাস বয়স। ঈশান আমাকে সাহায্য করেছিল বলেই আজ আমরা একসাথে নয়তো জানিনা তোমার বাবা আমাদের জীবিত রাখতো নাকি!
-দেখো মিহি একজন আমাকে বেশ কিছু ছবি পাঠিয়েছে। যেখানে স্পষ্ট তোমার সিঁথিতে সিঁদুর। আর তুমি আর ঈশান অনেকটা কাছাকাছি এমন ছবিও।
– মিহি বিচলিত না হয়ে বলে,দেখো কলকাতা থেকে বাংলাদেশ ফেরার সময় আমি এরকম সেজেছিলাম। আবার চট্রগ্রাম থেকে ঢাকা আসার৷ সময়ও সেম ভাবেই সেজেছিলাম। এমনকি যতদিন সরকারি কোয়ার্টারে ছিলাম ওই ভাবেই ছিলাম। তার কারণ অবশ্য তোমার অজানা নয়। তারমানে এটা নয় আমাদের মাঝে কিছু ছিলো। যদি কিছু থাকতো তাহলে তোমার কাছে কেন আসতাম!
– তাহলে ঈশান মুখার্জি এখনো অবিবাহিত কেন?তার সব সম্পত্তি শেহরোজকে লিখে দিচ্ছে কেন?
– সে-সব তো আমি জানিনা। কাজের কথা ছাড়া তার সাথে আমার কখন অন্য কোন কথা হয়নি।
শাফিন মিহিকে জড়িয়ে ধরে বলে,দেখো বিশ্বাস খুব গভীর আর খুব নাজুক একটা জিনিস।আমি তোমাকে বিশ্বাস করি তাই তোমার সব কথা মেনে নিচ্ছি। আসলে হুট করে এতো বছর পর এমন কিছু দেখবো ভাবতে পারিনি। তাই সামলাতে না পেরে তোমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছিলাম। জানো শেষ বয়সে মানুষ সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পরে। তখন একমাত্র বউ ছাড়া কেউ ভরসা হতে পারেনা। তুমি আমার ভরসা তুমি আমাকে ঠকিয়ে দিও না।
মিহি শাফিনের কপালে চুমু দিয়ে বলে,চোখের দেখায়ও ভুল থাকে। সব সময় চোখের দেখা সত্যি হয় না। মিহির ফোনটা স্ব শব্দে বেজে উঠলো। শাফিন আড় চোখে মিহির ফোনের স্কিনে দৃষ্টি দিলো। শেহরোজ নামটা জ্বলজ্বল করছে।মিহি রিসিভ করতেই শেহরোজ বলে,আম্মু গেটটা খুলে দাও তো।
মিহি উঠে যাচ্ছে এমন সময় শাফিন বলে,এতো রাতে ছেলে বাহিরে কি করে এসেছে সেই জবাবটা নিয়ে আসবে।
মিহি আচ্ছা বলে চলে আসলো। দরজা খুলে দিতেই ফারিন কে দেখে বলে, তুই এতো রাতে শেহরোজে সাথে!
শেহরোজ বলে,সে লম্বা কাহিনি। পরে বলবো।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি খেতে দাও। বলেই নিজের রুমে চলে গেলো।
শেহনাজ ফারিনের পিছন থেকে বের হয়ে আস্তে করে বলে, আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
মিহি চশমা ঠিক করে শেহনাজের দিকে তাকিয়ে বলে,ওয়া আলাইকুমুস সালাম। তোমাকে তো চিনতে পারলাম না মা!
– আন্টি আমার কাজিন শেহনাজ তবে ছোট করে তুমি ওকে নাজ বলতে পারো। আমার সাথে নাজও কয়েকদিন এখানে থাকবে।
– আচ্ছা এবার ফ্রেশ হয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।
শেহনাজ আর ফারিন মিহার রুমে এসে মিহাকে ঘুম থেকে টেনে তুললো।মিহার টি-শার্ট আর প্লাজু নিয়ে দুজন চেঞ্জ করে আসলো।
শেহরোজ খেতে বসেছে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর শুধু তোয়ালেটা গলার উপর দিয়ে রেখেছে।
শেহনাজ আর ফারিন কে দেখেই শেহরোজ খাবার প্লেট নিয়ে দ্রুত নিজের রুমে চলে গেলো।
ফারিন হাসতে হাসতে বলে,ভাইয়ার এই লজ্জা আর গেলো না।
শেহনাজ চুপচাপ বসে আছে। মিহি বলে,এটা তোর কেমন কাজিন।
ওইযে একটা চাচ্চু আছে না যার ওয়াইফ আমেরিকান ছিলো। তার মেয়ে।
মিহি দু’জনকে খাবার বেরে দিলো। মিহি শেহনাজের দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হলো শেহনাজের নাকটা একদম শাফিনের মত চেহারার গঠন ও কিছুটা এক রকম। তবে চোখ গুলো বিড়ালের চোখের মত আর চুলগুলো সোনালি কালার। একদম হলদে ফর্সা গায়ের রং। মিহি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে শেহনাজকে।
ফারিন বলল,আন্টি এভাবে কি দেখছো! ছেলের বউ করার ইচ্ছে টিচ্ছে আছে নাকি?
#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰