#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে_২
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-৩
ডিভোর্স পেপারটা টু’ক’রো টু’ক’রো করে ছিড়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে মিহিকে জড়িয়ে ধরে বলে,আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মিহি খুব বেশি কষ্ট।
– প্লিজ তুমি শান্ত হও। বলো আমাকে কি হয়ছে?
-তুমি শুধু আমার ছিলে,আমার আছো,আমার মৃত্যুর পরেও আমার থাকবে। কথা দাও বোকা ফুল। এই কথাটুকু শুনে নিজের মনকে স্বান্তনা দেয়। চোখের দেখাকে না হয় নজর আন্দাজ করে দেই বলো।
শাফিনের অবস্থা বেগতিক দেখে মিহি চিৎকার করে শেহরোজকে ডাকলো।
শেহরোজ জেগেই ছিলো। তার একটা কাজ করছিলো।
মায়ের আকূতি ভরা ডাক শুনে ছুটে আসে। এসেই হতভম্ব।
শাফিনের মুখ থেকে সাদা ফেনা বেড় হচ্ছে, চোখগুলো কেমন করছে। দ্রুত হসপিটালে নেয়ার ব্যবস্থা করলো।
শেহরোজ নিজের মাকে আগলে নিয়ে বলে,চিন্তা করোনা।বাবার কিছু হবে না। ডাক্তার দেখছেন বাবা কে। একটু শান্ত হও আম্মু। মিহাও নিরবে চোখের অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।
শাফিন একহাতে মিহা কেও আগলে নিলো।
বড় ছেলে মানেই যেনো পরিবারের ছায়া। নিজে শত কষ্ট সহ্য করে ও নিজের পরিবারকে রক্ষা করবে।
কিছুক্ষণ পর ডাক্টার বেরিয়ে আসলো,শেহরোজ ডাক্টারকে জিজ্ঞেস করলো কি অবস্থা বাবার?
-হার্ট এটাক করেছেন আপাতত ওনাকে কোন ধরনের টেনশন দেওয়া যাবে না। এই বয়সে এখনো উনি কেন কেস সলভ করেন!এখন উনাকে অবসর নিতে বলুন।
শাফিন অসুস্থ থাকায় শাফিনের সেল ফোনটা শেহরোজের হাতে। শাফিনকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে।শেহরোজ মা, বোনকে কেবিনে রেখে হসপিটালের ফার্সিতে গেলো প্রেসক্রাইব করা মেডিসিন আনতে।
হুট করেই শেহরোজ খেয়াল করলো তার পকেটে থাকা তার বাবার ফোনে টুংটাং মেসেজের আওয়াজ আসছে। শেহরোজ ফোনটা বের করে দেখতে পেলো বেশ কয়েকটা মেসেজ কিন্তু মোবাইল তো লক করা। পুরোপুরি দেখা যাচ্ছে না মেসেজগুলো। তবে যতটুকু দেখেছে অতটুকু দেখেই নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। মেডিসিন নিয়ে কেবিনে এসে নার্স কে দিয়ে। মিহিকে বলে,আম্মু তুমি আর মিহা হসপিটালে থাকো আমি বাসায় চলে যাই।
-এই রাতে তোর যেতে হবে না বাবা। তুই থেকে যা।
গাড়ী তো আছেই সাথে। আর বেশি তো দূরের পথ নয় আমি ঠিক চলে যেতে পারবো।আর চিন্তা করার কিছু নেই সকালে এসে তোমাদের নিয়ে যাবো।
শেহরোজ সোজা চলে আসলো তার গোপন ডেরায়। এখন একটাই কাজ নিজের বাবার ফোন আনলক করা। প্লাস তার সমস্ত ডেটা সেভ করে নেয়া।
কাজ শেষ করতে,করতে রাত পার হয়ে ভোর হয়েছে। কিচেনে এসে এক কাপ কড়া কফি করে নিয়ে আসলো। কফি মগে চুমুক দিচ্ছে আর ভাবছে ওই আইডির মালিককে খুঁজে বের করবে কি ভাবে। কফি মগে শেষ চুমুক হয়তো,সুখকর নয়তো বিরক্তি কর। রোজ শেষ চুমুক দিয়ে বেরিয়ে পরলো। সোজা চলে আসলো হসপিটালে। তখন সবে সকাল সাতটা বাজে।
অনার্সের সাথে কথা বলে জানতে পারলো রাতে রিলিজ দেয়া হবে।
শাফিন মিহাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলো। হালকা নাস্তা করে দু’জনেই একসাথে বেরিয়ে পড়লো। মিহাকে কলেজে ড্রপ করে শেহরোজ চলে আসলো ভার্সিটিতে।
শেহনাজ সেই কখন থেকে অপেক্ষায় আছে শেহরোজের। শেহরোজ গাড়ী পার্কিং এরিয়ায় রেখে ক্লাসের দিকে যাচ্ছে।
শেনাজ সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে, ডার্লিং আখোছে আখে চার কারনে দো।
রুখনা রুখনা মুজকো পেয়ার করনে দো।
শেহরোজের ইচ্ছে করছে ঠাসসসস করে কয়েকটা চড় বসিয়ে দিতে। কিন্তু সে তো আর সত্যি সত্যি এখানকার লেকচারার না। যাস্ট কয়েকটা দিনের মেহমান। নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বলে, না আছে তোমার মধ্যে শিক্ষার ভদ্রতা আর না পারিবারিক ভদ্রতা। বেয়াদব মেয়ে সরে দাঁড়াও এখান থেকে।
– বড় আশা করে এসেছি ফিরিয়ে দিও না ওআমার রোজ। শেহনাজ নিজের জিন্সের পকেটে থেকে একটা কালো আর একটা লাল গোলাপ বেড় করে শেহরোজের সামনে ধরে বলে,আই লাভ ইউ রোজ। তুমি কি আমার ব্লাক জীবনকে রেড করে তুলবে তোমার ভালোবাসা দিয়ে?
শেহরোজ গোলাপ না নিয়েই চলে যায়।
মিলি,নীল, সাফা, সাকিব সবাই শেহনাজ কে ঘিরে দাঁড়িয়ে বলে,এসব তোর জন্য না বাদ দে। চল ক্লাস করি ক্লাস শেষে আজকে সবাই মিলে ওয়াটার কিংডমে যাই। দারুণ সময় কাটবে।
শেহনাজ ওদের সরিয়ে দিয়ে বলে,আমার ওই এটিটিউডের বস্তাকে চাই মানে চাই। কত সুন্দর দেখতে আবার আমাকে বকাঝকা ও করে। আর কেউতো আমাকে বকা দেয় না।
লামিছা শেহনাজের কাঁধে হাত রেখে বলে,স্যার তোর টাইপ না। স্যারকে দেখলেই বোঝা যায় ভদ্র পরিবারের।
– আমি কি ভদ্র পরিবারের না!আমার বাবার তো অনেক টাকা আছে। আমি যা চাই বাবা আমাকে তাই এনে দেয়। তাহলে সমস্যা কোথায় স্যারের।
আসল কথাটা শেহনাজকে কেউ বলতে চাইছে না। শেহনাজের মা নেই। বাবাও দেশে থাকেন না ঠিক মতো। পরিবারের আর কোন সদস্য ও নেই কাজের মানুষই শেহনাজের কাছের মানুষ। তাই ঠিক ভুল ভদ্রতা এতোসব কিছু শেহনাজের অজানা।
সবাইকে চুপ থাকতে দেখে শেহনাজ মন খারাপ করে বলে,ওহহ বুঝতে পেরেছি আমার মম নেই তাই আমি অভদ্র। এরজন্য স্যার আমাকে ভালোবাসবে না। বলেই শেহনাজ দৌঁড় চলে গেলো। নীল কাউকে শেহনাজের পিছনে যেতে দিলো না। তার অবশ্য কারন আছে। শেহনাজ কারো করুনা পছন্দ করে না।
শেহরোজ সিকিউরিটি রুমে যেয়ে পুরো সিসিটিভি ফুটেজ বের করে নিলো।এখানে আর দু’দিন সময় আছে। প্রফেসার সাইফ তারপর এসে পড়বে তার আগেই তার কাজ কম্পিলিট করতে হবে।
শেহরোজ ক্লাস শেষ করে বের হয়ে সোজা হসপিটালে গেলো।
হসপিটাল ঢুকতেই দেখা হল ঈশানের সাথে। শেহরোজ ঈশানকে দেখে বলে,আঙ্কেল তুমি!
– এইতো তোমার বাবাকে দেখতে আসলাম। তুমি কোথা থেকে আসলে?
– ভার্সিটিতে ক্লাস ছিলো ক্লাস করে আসলাম।।আঙ্কেল যদি কিছু মনে না করো একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
– কেন নয় তুমি তো সব প্রশ্ন করতে পারো ডিয়ার। তার আগে যদি বলি, আজ আপনি বাবার সাথে দেখা করতে পারবেননা।
– অবশ্য তার পিছনে কোন কারণ থাকবে। তুমি না বললে করবো না ডিয়ার।
– আঙ্কেল আপনার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে চলুন পাশের কোন রেস্টুরেন্টে বসি।
______________________________________________
মিহি সব কিছু গুছিয়ে রেখে।ঘুমন্ত শাফিনের মুখের পানে চেয়ে বলে, কেন বারবার ঝড় তুলো তুমি!যাকে এতো ভালোবাসো তাকে কষ্ট কেন দাও? আমার চেয়ে বেশি কষ্ট তো তুমি নিজে পাও। আমি এসব মানতে পারবো না শাফিন। আমি শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমার সাথে থাকতে চাই। আমি বুঝতে পারছি তুমি কোন একটা বিষয় নিয়ে টেনশনে আছো।সেটা আমাকে বলবে তো! আমরা মিলে না হয় সব নেগেটিভিটি দূর করে দেবো। শাফিনের কপালে চুমু দিয়ে বলে,তুমি তো বলতে, মিহি আমরা শেষ বয়সেও ষোড়শীদের মত প্রেম করবো। তবে কেন দূরে ঠেলে দাও। এখন যে আর তোমাকে ছাড়া থাকা সম্ভব না। তুমি কেন বোঝ না। শাফিনের ঘুম সেই কখন উবে গেছে। কিন্তু তবুও ঘুমের ভান ধরে পরে আছে। হৃদয় কতশত প্রশ্ন যার কোনটার উত্তরি এই মূহুর্তে নেই।
______________________________________________
মিহা ক্লাস থেকে বের হলো আজকে মেজাজটা মোটেই ভালো না মিহার। একে তো কালকে রাত থেকে তার লেখক মহাশয়ের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। আবার আজকে কোন রিকশাও পাচ্ছে না।
প্রায় দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর একটা রিকশা এসে মিহার সামনে থামলো। রিকশা ওয়ালা মামা মিহার দিকে একটা বুকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,ম্যাম এটা আপনার।
মিহা আশ্চর্য হয়ে বলে,আমার!
– হুম
মিহা বুকেটা হাতে নিলো একগুচ্ছ হলুদ গোলাপের ভেতর একটা বাসন্তী রঙের চিরকুট।
মিহা চিরকুট খুলে হতভম্ব। সেখানে গোটাগোটা অক্ষরে লেখা, বাসন্তী পরি আপনার মুখে বিরক্তি নয় মিষ্টি হাসিটা বেশি মানায়। এবার সাবধানে চলে যান বাসায়।
মিহা মুচকি হেসে রিকশায় উঠে বসলো। ভালোবাসার অনূভুতি সবচেয়ে সুন্দর। এ অনূভুতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। ভালোবাসা সত্যি সুন্দর।
#চলবে