এই বয়সে এসে শাফিন আমাকে ডিভোর্স দেবে সেটা কখনো ভাবতে পারিনি।মিহির কথা শুনে ইশান বলে, আপনি শিওর শাফিন আপনাকে ডিভোর্স দেবে? নিজের সাইট ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বেড় করে দিয়ে বলে,আলরেডি কাগজ পাঠিয়ে দিয়েছে।
ঈশান মুখার্জির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে মিহি। ঈশান হতাশ হয়ে বললো, আপনাদের মধ্যে সমস্যাটা কি?
মিহি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,বুঝতে পারছিনা। আমার নিজের জন্য আমি ভাবছি না কিন্তু ছেলে,মেয়ে দু’টোকে নিয়েই যত চিন্তা।
-মিহি আপনি টেনশন করবেন না আমি শাফিনের সাথে কথা বলে দেখছি। ঈশান মিহির দিকে একটা টিস্যু বাড়িয়ে দিয়ে বলে, আমি যেই মিহিকে চিনি সে এতো দূর্বল না। সেতো পরিস্থিতি সামলে এগিয়ে যেতে পারে।
মিহি উঠে বলে,যার সাথে জীবনের ২৭ বছর কাটালাম সে যখন হাত ছেড়ে দিতে চায় তখন আর কোন শক্তি অবশিষ্ট থাকে না। মিহি চলে গেলো।
ঈশান মিহির চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।
কে বলবে এই মেয়ের বয়স পয়তাল্লিশ পার হয়েছে!ঈশানের তো মনে হচ্ছে সেই মিহিই তার সামনে বসেছিলো। নিজের চোখ দু’টো বন্ধ করে নিলো। ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না কেন? যুগের পর যুগ পার হয়ে গেলেও তা সতেজ নির্মল থাকে। তাইতো গুণিজন বলতেন, ভালোবাসা হলো চির সবুজ।
______________________________________________
শাফিন সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে।মিহি দরজা ঠেলে ঢুকতেই শাফিন বলে,পুরোনো আশিকের সাথে দেখা করে আসলে বুঝি?
ঘৃণ্যয় মিহির গা গুলিয়ে উঠলো,নিজেকে শান্ত রেখে বলল,তুমি কি ভেবে বলছো? এতো বছর একসাথে থাকার পর যদি তোমার মুখ থেকে এমন বাজে কথা শুনতে হয় তাহলে ম/রে যাওয়া ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না।
– শাফিন মাহমুদ না ভেবে কোন কথা বলে না। এখন তো আমার ডাউট হচ্ছে শেহরোজকে নিয়ে।
– তাহলে ডিএনএ টেস্ট করিয়ে নাও।
– সেটাই ভাবছি।
শাফিন মিহির কথার মাঝেই মিহা বাসায় ফিরলো।
মিহা এবার ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পরে। মিহাকে দেখে দু’জনেই চুপ হয়ে গেলো। মিহা কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে রাখতে, রাখতে বলে,খাবার দাও তো আম্মু।
– ফ্রেশ হয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।
মিহা ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
মিহি খবার রেডি করছে। শাফিন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে
আছে মিহির দিকে ক্রমশ তার রাগ বেড়ে চলেছে।মনের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে।নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। এই
বয়সে এসে এমন একটা পরিস্থিতির স্বীকার হবে কল্পনাতীত ছিলো শাফিন।নিজেকে ব্যার্থ মনে হচ্ছে।
নিজের মোবাইল উঠিয়ে কল করলো ইশরাক আহসানকে। তার কেসটা বর্তমানে সলভ করছে শাফিন।
ইশরাক বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে পড়ছিলো। মোবাইলের৷ রিংটোনের আওয়াজে তার ধ্যান ভাঙ্গে। শাফিন মাহমুদ নামটা জ্বলজ্বল করছে স্কিনে। দ্রুত রিসিভ করে বলে,আঙ্কেল কতদূর এগিয়েছে তদন্ত?
তোমার বাবা ইকবাল আহসানের কি অন্য কোন ব্যবসা ছিলো?
– আঙ্কেল আসুন আমরা বাগান বাড়িতে দেখা করি সামনাসামনি সব কথা ক্লিয়ার করে বলতে পারবোে।
– আচ্ছা তুমি আসো আমি ও আসছি।
ইশরাক আহসান নাম করা বিজনেস ম্যান ইকবাল আহসানের একমাত্র ছেলে। কিছুদিন আগেই ইকবাল আহসান খু’ন হয়েছে। সেই ইনভেস্টিগেশনের দ্বায়ীত্ব নিয়েছে সিআইডি বিভাগের প্রধান শাফিন মাহমুদ। ইকবাল আহসান নামটা শহরের পরিচিত নাম। কিন্তু হুট করেই কেউ তাকে অপহরণ করে। তার সপ্তাহ খানেক পরেই লেকে তার ম’রা দেহ পাওয়া যায়। কিন্তু কে বা কারা এই হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত সেটা জানা যায় নি। নিক্ষুত হত্যা যাকে বলে।তবে খু’নি যেই হোক না কেন সে যে এ বিষয় পারদর্শী তাতে কোন সন্দেহ নেই। কোন ধরনের প্রমান নেই।
______________________________________________
মিহা খাবার শেষ করে দ্রুত এসে নিজের মোবাইল হাতে নিলো ঠিক সে যা ভেবেছিল তাও তার লেখক মহাশয় তাকে টেক্সট করেছে। “বাসন্তী পরি আপনি কি ফিরেছেন কলেজ থেকে? তার লেখক মহাশয়ের এইটুকু টেক্সট যেনো মিহাকে পৃথিবীর সমস্ত সুখ এনে দিলো। ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো মিষ্টি হাসি।
মিহা রিপ্লাই করলে হুম বাসায় ফিরে খাবার খেয়ে রেস্ট নিচ্ছে আপনার বাসন্তী পরি। আপনি কি করছেন?
লেখক সেই কখন থেকে এই রিপ্লাইয়ের অপেক্ষায় চাতক পাখির মত মোবাইলের দিকে তাকিয়ে ছিলো।
মেসেজ টোন বাজতেই দ্রুত টাইপ করলো,বাসন্তী পরির লেখক বাসন্তী পরির অপেক্ষায় ছিলো।
– হাসির ইমোজি সেন্ট করে মিহা বলে,আহা।
– আপনি এতো সুন্দর করে আহা বলবেন না তো?
-কেন?
– ইচ্ছে করে আপনার মুখ থেকে আহা শব্দটা শ্রবণ করতে।
– আসুন দেখা করি?
– হবে কোন একদিন।
– সেই দিনটা কবে আসবে?
– দেখা হবেরে হবে দেখা হবেই হবে।আচ্ছা বাসন্তী পরি আপনি রেস্ট নিন আমার একটু কাজ আছে। ফিরছি খুব তাড়াতাড়ি।
মিহা কিছু জিজ্ঞেস করতে যেয়েও বললনা। শুধু মেসেজে লাভ রিয়েক্ট দিয়ে। লেখের লেখা গল্প পড়া শুরু করলো।
______________________________________________
ভার্সিটির দোতলা থেকে নিচে নেমে আসছেন ইয়াং প্রেফেসার শেহরোজ মাহমুদ।
ঠিক সেই সময় উপরে আসছিলো শেহনাজ। নতুন প্রফেসরের এটিটিউডে প্রথম দিন থেকেই মুগ্ধ শেহনাজ। শেহরোজ নিজের মত নামছে। শেহনাজের দৃষ্টি শেহরোজে নিবদ্ধ। অফওয়েট কালালের শার্ট ব্লাক ব্লেজার, ব্লাক শু,ব্লাক ঘড়ি আর ব্লাক প্যান্ট কি মারাত্নক সুদর্শন লাগছে। শেহনাজ লামিছাকে বললো, হয় মে মারজাওয়া। দেখ স্যারের চুল গুলো কি সুন্দর দুলছে।ওইযে গানটার মত ছেলে তোর কোঁকড়া কোঁকড়া চুলে যেন সমুদ্র ঢেউ খেলে সেই ঢেউ খেলা দেখিতে আমার ভাল্লাগে। শেহনাজ বেখেয়ালি ভাবে শব্দ করেই গেয়ে উঠলো ছেলে তোর গোলাপ গোলাপ ঠোঁটে যখন বিড়ির ধোঁয়া ওঠে। সেই ধোঁয়া দেখিতে আমার ভাল্লাগে।
গানের শব্দ শুনে শেহরোজ রেগে যেয়ে বলে,ক্লাস নেই তোমাদের?
– আর ক্লাস এতো হ্যান্ডসাম স্যাররা ক্লাস নিলে কি ক্লাসে মনোযোগ আসে। লেকচার শুনবো নাকি স্যারকে দেখবো।
– হোয়াট!
– শেহরোজের ধমকে আশেপাশে অনেকই দৃষ্টি দিলো এদিকে।
শেহনাজ তো নিজের একদম অনেকটা কাছে শেহরোজকে দেখতে পেয়ে ভয়ে দু’কদম পিছিয়ে যায়।
– ভার্সিটিতে পড়তে এসেছো নাকি স্যারদের সাথে ফ্লার্ট করতে এসেছো?
– সরি স্যার।
– ভার্সিটিতে এসব লো ক্লাস বখাটে মেয়েদের মত গান গাইতে লজ্জা করেনা। আর কখন যদি এমন উদ্ভট কাজ করতে দেখেছি তাহলে পানিশমেন্ট দেবো।এবারের মত মাফ। যাও ক্লাসে যাও।
শেহনাজ উপরে এসে বলে, আমার এই বাজে স্বাভাব কোনদিন যাবে না।নীল এসে শেহনাজের মাথায় টোকা দিয়ে বলে, আবার কি খিচুড়ি পাকিয়েছিস?
– প্রেমের খিচুড়ি।
– তুই আর প্রেম বাউণ্ডুলে মেয়ে।তোকে দেখলে সিনিয়রাও ভয় পায় তোর কপালে প্রেম নেই।
লামিছা অট্র হাসি দিয়ে বলে,প্রেমের খিঁচুড়ি না প্রেমের লাড্ডু বল। নতুন প্রফেসারের প্রেমের লাড্ডু।
সাফা এসে বলে ওই চিকনা শুধু আমার।
এহহ সখ কতো। সে যেহেতু চিকনা না তাই ওই এটিটিউড বয় শুধু আমার। সাকিব লামিছাকে বলে,তুই শুধু আমার।
– তোর হতে যাবো কোন দুঃখে!আই লাভ সিনিয়র বফ।
শেহনাজ বলে,চল আজ তোদের ট্রিট দেবো।স্যারের প্রথম ঝাড় খেয়েছি সেই উপলক্ষে তোদের জমপেশ খাওয়াবো।
বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে শেহনাজ। প্রচন্ড ছটফটে আর দুষ্ট। তবে দেখতে কিন্তু মাশাল্লাহ।
শেহনাজ আর তার বন্ধুরা মিলে একটা রেস্টুরেন্টে বসলো। যেখানে এই ডেভিল গ্রুপ যাবে সেখানেই হৈচৈ।
খাবার অর্ডার করে, মিলি গান ধরলো বাবা তোমার দরবারে সব পাগলের মেলা। সাথে সাথে সাথে টেবিলে আওয়াজ করে সবাই গাইছে, হরেক রকম পাগল দিয়া মিলাইছে মেলা। বাবা তোমার দরবারে সব পাগলের মেলা। এরপর নীল গান ধরলো, টিকাটুলির মোড়ে একটা হল রয়েছে, হলে নাকি এয়ারকন্ডিশনার রয়েছে।আরেহহহ হলে নাকি এয়ারকন্ডিশনার রয়েছে।
কর্নারে এক টেবিলে গভীর মনোযোগ দিয়ে নিউজ পড়ছিলো শেহরোজ। ক্লাসে শেষ করে এক কাপ কফি খেতে বসেছিল। সাথে পার্সোনাল কিছু কাজও আছে। কিন্তু হঠাৎ এতো আওয়াজ কানে আসতে সেদিকে লক্ষ্য করে রাগে চোয়াল শক্ত করে নিলো।
#চলবে
#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে_২
#নুসাইবা_ইভানা
সূচনা পর্ব।
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰