#কাজললতা
#লেখিকা_ইভা_আক্তার
#পর্ব_২৪
———————————————————————————–
২ বছর পর
বাড়ি ভর্তি রয়েছে প্রচুর মানুষ। সকলেই যার যার সাজগোছ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। আর ইলমার খুশি কে দেখে? আজ ইলমার বিয়ে। ইফতি তার একমাত্র ছোটো বোনের জন্য ধুমধাম করে বিয়ের ব্যবস্থা করেছে।ইফতি ভাইয়ার জোড়াজুড়িতেই আজ সম্পূর্ণভাবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি ওর নামের শেষে ভাইয়াটা বাদ দিয়ে শুধু ইফতি নামে ডাকার। ইলমাকে সাজগোছ করার জন্য পার্লারের মেয়েরাই বাড়িতে এসেছে। ইলমাকে খুব সুন্দর একটা লাল রঙের লেহেঙ্গা পড়ানো হয়েছে। ওকে দেখে চোখ ফেরানোই যাচ্ছিল না। জানি না বরের অবস্থা কেমন হবে। পার্লারের মেয়েরা ইলমাকে সাজিয়ে বাইরে যেতেই আমি ইলমার কাছে গিয়ে বললাম,
– তোকে অনেক সুন্দর লাগছে রে আমার ননদিনী। তোকে দেখে চোখই ফেরানো যাচ্ছে না। অবশেষে আজ তোর বিয়ের দিন। এই দিনেরই তো অপেক্ষা করছিলি তাই না?
আমার কথায় ইলমা বেশ খানিকটা লজ্জা পেয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখলো।
– আচ্ছা ইভা। ওও কি আমাকে দেখে নজর ফিরাতে পারবে না? কে জানে? হয়তো বা।
——————————————————————————-
ইলমাকে নিয়ে সেন্টারে চলে এসেছি। ইলমাকে স্টেজে বসিয়ে গেটের সামনে এলাম কারণ আমার বিয়েতে যেমন করে ইলমা বর পক্ষের কাছ থেকে টাকা খেয়েছে ঠিক তেমনি আমিও আজ ওর বিয়েতে বর পক্ষের কাছ থেকে টাকা খাবো। হুট করে মোবাইলে ইফতি কল করতেই কলটা রিসিভ করে বললাম,
-হুম বলো
– তোমরা কি সেন্টারে এসে পড়েছো?
– হ্যা মাত্রই এসেছি। তোমরা কোথায়?
– আমরাও গাড়িতে। প্রায় এসে পড়েছি। নাহিল তো মহা খুশি। অবশেষে সে তার দুই বছরের ভালোবাসাকে পেয়েছে।
– হুম সেটা তো জানিই। ওদেরকেও তো বাবা-মাকে মানানোর জন্য অনেক চেষ্টা করতে হয়েছে। কম কষ্ট করে নি ওরা।
– আমরাও কি কম কষ্ট করেছি? যতই আমরা ফেমিলির প্রবলেম ফেস না করি কিন্তু আমাদের লাইফে তো অনেক এক্সিডেন ঘটেছে। আর অবশেষে আমি আমার কাজললতাকে পেয়েছিলাম। ভালোবাসি কাজললতা।
– আমিও তোমাকে ভালোবাসি ইফতি।
হ্যা আজ ইলমার সাথে নাহিল ভাইয়ার বিয়ে। ইলমাই মূলত নাহিল ভাইয়াকে তার ভালোবাসার কথা জানিয়েছিলো। আর সেদিন তো নাহিল ভাইয়া লজ্জায় পুরো শেষ। কিন্তু তবুও নাহিল ভাইয়া ইলমার ভালোবাসা গ্রহণ করে নি কারণ ওর ভয় ছিলো ফেমিলির কেউই কাজিনদের মধ্যে সম্পর্ক আর মানবে না। কিন্তু ইলমার পাগলামি যেমন দুই দিন নিখোঁজ হওয়া, প্রতিদিন রাতে নাহিল ভাইয়াকে কল করে ভালোবাসি বলা আর মেডিকেল বাদ দিয়ে দেওয়ার জন্য অবশেষে নাহিল ভাইয়া ইলমার ভালোবাসার প্রস্তাব গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলো। ইলমা এক মাস মেডিকেলে না গেলেও পরবর্তীতে নাহিল ভাইয়ার জোড়াজুড়িতে যেতে বাধ্য হয়েছে। মেডিকেল শেষ করতে আমার আর ইলমার আরও খানিকটা বছর আছে। ইলমা আর নাহিল ভাইয়ার সম্পর্ক বাবা-মা কিছুতেই মেনে নিতে চাইছিলো না। এমনকি দাদুভাই আর দাদুমনি বোঝালেও নাহিল ভাইয়ার মা আর বাবা এবং ইলমার বাবা মা মানতে চায় নি। কিন্তু ইলমার পাগলামিতে শেষে মানতে বাধ্য হয়। কিছুক্ষণ পর দেখি বর যাত্রী চলে এসেছে। বর যাত্রী চলে আসতেই এক এক করে নাহিল ভাইয়া, ইফতি আর ছোটো চাচ্চু গাড়ি থেকে নেমে আসে। ইফতি আর ছোটো চাচ্চু দুজনেই ছিলো বর পক্ষে। আর সাথে সাথে শুরু হয়ে গেলো আমাদের টাকা আদায়ের তর্কাতর্কি। এক পর্যায়ে আমি ২০ লাক্ষ টাকা দাবি করতেই সকলের চোখ মুখে ভয়ঙ্কর ছাপ দেখা দিলো। তর্কাতর্কির মাঝে এক পর্যায়ে সবার অগোচরে ইফতি আমার কপালে চুমু বসিয়ে দেয়। ইফতির এমন কাজে আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম কেউ দেখেছে কিনা। কিন্তু সকলে নানান কাজে ব্যস্ত থাকায় কেউ খেয়াল করলো না। ইফতির দিকে তাকাতেই বললো,
– আমার কাজললতাকে রাগলে কিন্তু খুব মিষ্টি লাগে। চোখ ফেরানোই যায় না।
ইফতির কথায় লজ্জা পেয়ে স্টেজের সামনে ছুটে যেতেই ইলমা ডেকে বললো,
– কেউ না দেখলেও আমি কিন্তু দেখেছি। ভাইয়াকে একটু সাবধান করে দিস কিন্তু।
লজ্জায় নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে। এই মেয়েটাও যেমন তেমনি তার ভাইটা। দুজনেই অসভ্য।
ইলমা আর নাহিল ভাইয়া দুজনেই বিভিন্ন পোজে ছবি তুলছে। আর মাঝেমধ্যে তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিচ্ছে। তাদের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি আমি আর ইফতি।
– আমার না ইচ্ছে করছে আবারো বিয়ে করতে।
– তো করো না কে বাঁধা দিয়েছে। আশেপাশে অনেক সুন্দরী মেয়ে আছে। একটা না একটা কপলে জুটবে চিন্তা করো না।
– রাগ করছো কেনো কাজললতা। আমি তো আবারো তোমাকে বিয়ে করতে চাই। চলো না আজকে আবার বিয়ে করে ফেলি। আবারো নতুন করে সংসার শুরু করি।
ইফতির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলাম। ছেলেটা আর শোধরালো না।
খাওয়ার সময় ইলমা নিজে থেকেই ওয়েটারকে বললো,
– আমাদের একটা প্লেটই দিন। নাহিল আমাকে খাইয়ে দিবে।
ইলমার এক ধাপ আগানো কথায় সকলে মুচকি হাসতে শুরু করলো আর নাহিল ভাইয়া লজ্জায় কথাই বলতে পারছিলো না। ওয়েটার প্লেটটা নাহিল ভাইয়ার সামনে ধরতেই নাহিল ভাইয়া প্লেট থেকে এক লোকমা ইলমার মুখে দিলো আর এক লোকমা নাহিল ভাইয়া নিতে যাবে তখনই ইলমা হাতটা ধুয়ে এক লোকমা নাহিল ভাইয়াকে খাইয়ে দিলো। সকলে এমন কাজে তালি দিতে শুরু করলো। ইলমা বোধহয় সত্যি কথাই বলেছিলো। প্রেমে পড়লে মানুষ একেবারেই বদলে যায়। যেমনটা ইফতি বদলে গিয়েছিল।
—————————————————————————-
বারান্দার গ্রিলের সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছি। বাড়িটা কেমন জানি ইলমা ব্যতীত ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ইলমা বাড়িতে থাকলে সারাটাদিন শুধু ভাবি ভাবি বলে খেপাতো। পেছন থেকে ইফতি কাঁধে হাত রেখে বললো,
– মন খারাপ?
ইফতির কথায় ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– একা লাগছে খুব। বাড়িটা সম্পূর্ণ নীরব হয়ে গেছে।
– জানি তো। ইলমা ব্যতীত বাড়িটা যে সম্পূর্ণ ফাঁকা হয়ে যাবে তা জানতাম। আর দেখো এতো মন খারাপের কোনো দরকার নেই। যখন ইচ্ছে ফুপুর বাড়িতে গিয়ে ইলমাকে দেখে আসবো। এবার একটু হাসো তো কাজললতা। নাহলে কাজললতার কাজলগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।
ইফতির কথায় মুচকি হেসে ওকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– ভালোবাসি তোমাকে
– আমিও আমার কাজললতাকে খুব ভালোভাসি।
চলবে,,,,,,,,,💜