কাজললতা পর্ব ১৩

0
612

#কাজললতা
পর্ব:১৩
লেখিকা : ইভা আক্তার

🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
সকালের কিঞ্চিৎ সূর্যের আলো জানালার ফাঁক দিয়ে রুমে প্রবেশ করতেই সারা রুম আলোকিত হয়ে গেলো। ঘুমন্ত চোখের উপর সূর্যের আলো পড়তেই ঘুমের রেশ কেটে গেলো। চোখের সামনে ভেসে উঠলো কালকের রাতের ঘটনা। সাথে সাথে নিজের হাতের রাঙানো মেহেদীর দিকে তাকালাম যেখানে ছোট্ট করে লেখা ছিলো “ভালোবাসি পাগলিটাকে”। লেখাটা দেখেই সারা মুখমন্ডলে এসে ভর করলো এক রাশ লজ্জা। এখোনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে লেখাটা আসলেই ইফতি ভাইয়া লিখে দিয়েছে। এক রাশ লজ্জা নিয়ে কালকের রাতে ইফতি ভাইয়ার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসেই হাত ধুয়ে শুয়ে পড়েছিলাম । বাইরে থেকে লোকজনের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। সবাই তাহলে উঠে গেছে? কিছুক্ষণ পর আম্মু রুমের ভেতর এসেই তাড়াহুড়ো করে আমাকে আর ইলমাকে বলতে লাগলো,
– বাড়িতে যে একটা বিয়ের অনুষ্ঠান আছে এদের দেখে বোঝার কোনো উপায়ই নেই। তারাতাড়ি উঠে পর নাহলে সকালের নাস্তা না দিয়েই কাজে লাগিয়ে দেব তোদের (আম্মু)
বিছানা গোছাতে গোছাতে কথাগুলো আম্মু আমাদের শুনিয়ে শুনিয়ে বলছিলো। আম্মুর কথায় ইলমা ধীরে ধীরে চোখ মেললো।
– কি হয়েছে মেঝো কাকি? (ইলমা)
– বাড়ির সকলে উঠে কাজে লেগে পড়েছে আর তুই এখন বলছিস কি হয়েছে? আমাদের ইফতি কে দেখ। তোর ভাই তো সেই ফজরের নামাজ পরে এসেই সকলের কাজে সাহায্য করতে লাগলো। তোদের উচিত ইফতির পা ধোঁয়া পানি খাওয়া। (আম্মু)
আম্মু কথাটা বলেই ইলমা আর আমার মাথার বালিশ টান দিয়ে নিয়ে গেলো। প্রচন্ড বিরক্ত নিয়ে আমি আর ইলমা উঠে পড়লাম। আম্মুর এই ইফতি ভাইয়াকে নিয়ে গুণগান শুনতে শুনতে আমার অর্ধেক কান পঁচে গেছে। বাথরুমে গিয়ে আমি আর ইলমা ব্রাশ করছিলাম তখনই ইলমা আমার দিকে অবাক চোখে তাকালো। ইলমার দিকে তাকাতেই সাথে সাথে ইলমা আমার হাত ওর হাতে নিয়ে বললো,
– তুই মেহেদী কখন দিলি রে ইভা? রাতে ঘুমানোর আগেও তো তোর হাত ব্যান্ডেজ দিয়ে বাঁধা ছিলো। তাহলে এখন তোর দুই হাত মেহেদীতে ভরে উঠলো কিভাবে? (ইলমা)
ইলমার কথায় ওকে একটা বানোয়াট কাহিনী শুনালাম,
– কালকে রাতে তুই ঘুমানোর পর বারবার মাথায় আসছিলো সবাই হাতে মেহেদী দিয়ে ঘুরবে আর আমি ব্যান্ডেজ দিয়ে ঘুরবো? নো নেভার। এটা কখনোই পসিবল না। তাই রাত দুইটা বাজে উঠেই হাতে মেহেদী দিলাম (আমি)
আমার কথায় ইলমা সন্দেহজনক চাহনিতে আমার দিকে তাকালো। আমি না দেখার ভান করে মুখ ধুয়ে এসে নাস্তার জন্য টেবিলে চলে এলাম। আমি আর ইলাম টেবিলে বসে নাস্তা খাচ্ছি। কিন্তু আমার দুচোখ যে শুধুমাত্র ইফতি ভাইয়াকে খুঁজে চলছে। কিন্তুু তার দেখা কি এতো সহজেই পাবো? এতোটা নির্লজ্জ কবে থেকে হলাম আমি? আগে তো ইফতি ভাইয়াকে দু চোখেও সহ্য করতে পারতাম না। আর এখন? সত্যিই কি তাহলে প্রেম মানুষকে এতোটা পরিবর্তন করে ফেলে?
নাস্তা শেষে ভাবলাম একবার নওশিন আপুর সাথে দেখা করে আসি। আমাদের পিচ্চি তানিয়া তো পুরো বাড়ি টইটই করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে তো খুশিতে আত্মহারা। তানিয়ার হাত আর মাথা ফুলের পাপড়ি দিয়ে ভরপুর। ফুলগুলো ইফতি ভাইয়া তানিয়াকে দিয়েছে। তানিয়াকে নিয়ে আমি আর ইলমা নওশিন আপুর রুমে ঢুকতেই ভেতরে কাজিন গুষ্টির সব ছেলেরা আর নওশিন আপু এবং নাহিল ভাইয়ার কিছু বন্ধুদের দেখতে পেলাম। ইফতি ভাইয়া আর ইমন ভাইয়াও সেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। রুমে ঢুকেই আমি আর ইলমা গিয়ে বসলাম নওশিন আপুর পাশে। নওশিন আপুর পাশে বসতেই তাদেরও একই চাহনি আর প্রশ্ন যে হাতে থাকা মেহেদী কখন দিলাম? কি আর করার। সবাইকে ইলমার মতো সেই একই বানোয়াট কাহিনী শুনালাম। কিন্তু বিপদে পড়লাম মেহেদীর মাঝে থাকা “ভালোবাসি পাগলিটাকে” লেখাটার জন্য। এতো ছোটো লেখাও যে তাদের চোখে কিভাবে পড়লো আল্লাহ ছাড়া কেউই জানে না।
– তা তো বুঝলাম কিন্তু তোর হাতে এই “ভালোবাসি পাগলিটাকে ” লেখাটা লেখার কি খুব বেশি প্রয়োজন ছিলো? (নাহিল ভাইয়া)
নাহিল ভাইয়ার কথায় ঘাবড়ে গেলাম। ইফতি ভাইয়ার দিকে একবার তাকিয়ে দেখি ইফতি ভাইয়ারও আমার মতোনই অবস্থা। আমতা আমতা করে বললাম,
-এটা নিউ মেহেদী ভার্সন। এই লেখাটার মাধ্যমে মেহেদী আরো উজ্জ্বল আর সতেজ রং এবং আধুনিক ডিজাইন ধারণ করে। তোমরা এসব বুঝবে না (আমি)
আমার কথায় সকলের চেহারা হা হয়ে গেলো। হয়তো তারা ভাবতে পারে নি আমার হাতে মেহেদী দিয়ে এই লেখাটার আসল কারণ এতো অদ্ভুত হবে।
– বাহ। কাল কাউকে দেখলাম না তোর মতো এতো অদ্ভুত ডিজাইনের মেহেদী দিতে। আর তুই এরকম ডিজাইনের মেহেদী দিয়ে বলছিস যে এটা নিউ ভার্সন মেহেদী ডিজাইনের? আসলে নওশিন আপু? আমার মনে হয় কি এই অকালপক্বটাকে ধরে বিয়ে দিয়ে দেওয়া উচিত। কেননা আমাদের ইভার প্রেমিক না থাকায় সেই ইচ্ছেটা পূরণ করতে নিজেই নিজের হাতের লিখে রেখেছে “ভালোবাসি পাগলিটাকে” (ইফতি ভাইয়া)
কথাটা বলেই একেক জনে অট্ট হাসিতে ফেটে গেলো। কি বদমাইশ একটা। নিজেই আমার হাতে লেখাটা লিখে দিয়ে এখন নিজেই খোঁটা দিচ্ছে? দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা।
– ইসস কি যে বলো না ইফতি ভাইয়া। তুমি আমার থেকে কত বড়। তোমার আগে যদি আমার বিয়ে হয়ে যায় তাহলে কি সেটা মানাবে বলো? (আমি)
আমার কথায় সকলের মুখ থেকে “ঠিক ঠিক ” কথাটা বের হলো। সকলেই আমার কথায় সিরিয়াসভাবে সম্মতি জানালো। ইভতি ভাইয়ার মুখের অবস্থা তো দেখার মতো। ইফতি ভাইয়া গলা খাঁকারি দিয়ে বলতে লাগলো,
– তার মানে তোমরা সকলে চাইছো আমার পর যেনো ইভার বিয়ে হয় তাই তো? (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার প্রশ্নে সকলে হ্যা সম্মতি জানালাম।
– তাহলে আমি আর ইভা একসাথে বিয়ে করে ফেলি । বুদ্ধিটা কেমন? (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথায় সকলের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। ইফতি ভাইয়ার কথায় আমার অবস্থাও বেহাল।
– কি বলছিস ইফতি? তারমানে তুই ইভাকে বিয়ে করতে চাইছিস? (নওশিন আপু)
নওশিন আপুর কথায় ইফতি ভাইয়া হকচকিয়ে গেলো।
– ওয়াট? আমি কখন এই কথা বললাম?এই ময়দা মাখা সাদা মূলাকে কে বিয়ে করবে? আমি? ইম্পসিবল। কখনো কি টুইন মেরেজের কথা শুনো নি নাকি? একই অনুষ্ঠানে একসাথে দুইজন কাপলের বিয়ে। আমি সেই কথাটিই বলছি (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথায় সকলে একটা শান্তির নিশ্বাস ছাড়লো। এতোক্ষণ সকলের অবস্থা প্রায় যায় যায় ছিলো।
এভাবেই সকলে খানিকক্ষণ আড্ডা দিতে লাগলাম। আমাদের আড্ডার মাঝখানেই কোনো একজনের জঘন্যকর চাহনি আমার আপত্তিকর শরীরে পড়তেই হুট করে ইফতি ভাইয়া তার চেয়ারটা আমার সামনে এনে বসে পড়লো। ইফতি ভাইয়ার কান্ডে সকলেই তার দিকে তাকিয়ে রইলো। বেশ খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বললাম,
– কি সমস্যা ইফতি ভাইয়া? এভাবে চেয়ার নিয়ে আমার সামনে এসে বসলে কেনো? তোমার জন্য আমি কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না (আমি)
– কাকে দেখবি তুই? কাকে দেখার সখ জেগেছে তোর মনে? চুপচাপ এভাবেই বসে থাক নাহলে বাইরে গিয়ে কাজ কর (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়া রাগী কন্ঠে কথাগুলো বলায় পাল্টা আর কোনো প্রশ্নই করতে পারলাম না। সকলে আড্ডা দিলেও সেই তখন থেকে ইফতি ভাইয়া চুপ করে আছে। ইফতি ভাইয়ার দিকে উঁকি মেরে তাকাতেই দেখতে পেলাম তার চোখ রাগে লাল হয়ে গেছে। ইফতি ভাইয়ার এমন ভয়ঙ্কর চোখ দেখে আমি নিজেই ভয়ে কেঁপে উঠলাম। চুপচাপ শান্ত হয়ে বসতেই ইফতি ভাইয়া নিজের রাগ ধৈর্য সহকারে কন্ট্রোল করে বললো,
-ইমন চলো তো বাইরে গিয়ে ঘুরে আসি। দেখি আশেপাশে কতদূর কাজ চলছে (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথায় ইমন ভাই হ্যা সম্মতি জানাতেই সাথে সাথে ইফতি ভাইয়া ইমন ভাইকে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে আমি আর ইলমাও বাইরে চলে এলাম সকলের কাজ দেখতে। বাড়ির বাইরে এসে ইফতি ভাইয়া আর ইমন ভাইয়াকে না দেখতে পেয়ে উপরের দিকে তাকাতেই দেখলাম ছাদে ইফতি ভাইয়া আর ইমন ভাইয়া কি নিয়ে যেনো কথা বলছে। তবে তাদের কোনো কথাই আশেপাশের শব্দের জন্য শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল না। সেদিকটায় পাত্তা না দিয়ে বড় কাকির ডাকে আমি আর ইলমা চলে গেলাম তাদের কাজে সাহায্য করতে।
নওশিন আপুর সাথে বাড়ির সকল মেয়েদেরকে নিয়ে পার্লারে এসেছি সাজতে। নওশিন আপুকে খুব গর্জিয়াসভাবে সাজানোর জন্য তার দেড়ি হচ্ছিল। এরই মধ্যে আমাদের সকলের সাজগোজ শেষ হওয়ায় অপেক্ষা করছিলাম কখন নওশিন আপুর সাজঁ শেষ হবে আর আমরা কমিউনিটি সেন্টারে যাবো। দাদু বাড়ির উঠান বড় হওয়া সত্বেও সৌন্দর্যতা বজায় রাখার জন্যই বিয়ের অনুষ্ঠানটা সেন্টারে করা হচ্ছে। কথামতো ইফতি ভাইয়া আর নাহিল ভাইয়া গাড়ি নিয়ে আসবে আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য। নওশিন আপুর মেকাপ শেষ হতেই সকলেই পার্লার থেকে নেমে পড়লাম। পার্লারের সামনে তাকাতেই দেখলাম ইফতি ভাইয়া গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ব্ল্যাক প্যান্ট সাথে ব্ল্যাক শার্ট আর কোট তার সাথে ব্ল্যাক কালারের চেইনের ঘড়ি মেয়েদেরকে নেশা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ইফতি ভাইয়াকে দেখে আমি একশো বল্টেসের ক্রাশ খেয়ে গেলাম। ইফতি ভাইয়া গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে ছিল। আমাদের দেখেই সোজা হয়ে দাড়িয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিলো। একে একে সকলে নাহিল ভাইয়া আর ইমন ভাইদের গাড়িতে উঠে পড়লো। বাকি ছিলাম আমি। আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইমন ভাইয়া আমাকে বললো,
-ইভা ভেতরে এসো। সামনের সিট এখনো খালি আছে (ইমন ভাই)
ইমন ভাইয়ার গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতেই ইফতি ভাইয়া এসে আমার হাত ধরে বললো,
-এতক্ষণ কি তাহলে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম খালি গাড়ি নিয়ে সেন্টারে যাওয়ার জন্য নাকি? তাড়াতাড়ি গিয়ে উঠে বস (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার ধমক আর ইশারায় সাথে সাথে ইফতি ভাইয়ার গাড়িতে গিয়ে উঠে পড়লাম।
সকলের গাড়ি আমাদের পাস করে সামনে চলে গেলো। আর ইফতি ভাইয়ার গাড়ি যেনো নড়ছেই না। এতো আস্তে আস্তে তো রাস্তার ভ্যানও চলে না। জানালার পাশ ফিরে এক সাইকেলওয়ালাকে ডাক দিয়ে বললাম,
– মামা আপনার সাইকেলের পেছনে কি একটু জায়গা হবে? আসলে আমাকে তাড়তাড়ি একটা সেন্টারে যেতে হবে তো তাই (আমি)
আমার কথা শুনে সাইকেলের লোকটি টাষ্কি খেয়ে গেলো।
– এইটা কি বলতাছেন আপা? গাড়ি ছাইরা সাইকেলে উঠতে চাইতাছেন?
– হুম চাইবোই তো। দেখেন না আমার পাশে বসা ড্রাইভ করা লোকটি গাড়িতো নয় যেনো ঠেলা গাড়ি ঠেলছে। ঠেলা গাড়িও এর থেকে জোড়ে চলে (আমি)
আমার কথায় ইফতি ভাইয়ার হাবভাবের কোনে পরিবর্তনই দেখা গেলো না। হালকা একটু স্পিড বাড়ালো ঠিকই কিন্তু সেই আগের মতোই ঠেলা গাড়ি মনে হচ্ছিল। রাগ কন্ট্রোল করতে না পড়ে এক প্রকার চিৎকার করেই বললাম,
-কি প্রবলেম তোমার? এতো আস্তে আস্তে ড্রাইভ কেনো করছো তুমি? এভাবে চললে তো সেন্টারে পৌছানোর আগেই নওশিন আপুর বিয়ে শেষ হয়ে যাবে। ড্রাইভ করতে না পাড়লে ড্রাইভ কেনো করো?
ইফতি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি সে সামনে থাকা মিরোর গ্লাস দিয়ে আমাকে একটু পর পর দেখছে। হ্যা,গাড়িতে উঠার পর থেকেই ইফতি ভাইয়া মিরোর গ্লাস দিয়ে একটু পর পরই আমাকে দেখছিলো। প্রথমে তেমন গুরুত্ব না দিলেও এখন খুব ভালো করেই ইফতি ভাইয়ার চাহনি বুঝতে পারছি। গাড়ি চালানোর ফাঁকে ফাঁকেই ইফতি ভাইয়া আমাকে দেখেই চলছে যার ফলে সে ধীরে ধীরে সেফটির জন্য ড্রাইভ করছে। আমাকে চুপ থাকতে দেখে হুট করো ইফতি ভাইয়া আমার কার্ল করা খোপা চুলগুলো ছেড়ে দিলো। ইফতি ভাইয়ার এমন কাজে আমি প্রচুর অবাক হয়ে গেলাম। ইফতি ভাইয়া একদম আমার মুখের কাছে চলে আসলো। তার নেশালো চোখ যেনো আমায় আরও অবাক করে দিচ্ছিল। ইফতি ভাইয়া আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলতে লাগলো,
– এতো অবুঝ কেনো তুই?তোর নেশালো চোখদুটো দেখার জন্য যে আমার মন ছটফট করছে সেটা বুঝতে পারছিস না? খোলা চুলে তোকে দেখার জন্য যে আমি অস্থির হয়ে পড়ছি সেটা বুঝতে পারিস না? তোর সাথে খানিকটা সময় একাকিত্বভাবে কাটানোর জন্য সবার শেষে এতো আস্তে আস্তে গাড়ি চালিয়ে চলছি সেটাও কি ধারণা করতে পারছিস না,? এতোটাই অবুঝ তুই?
ইফতি ভাইয়ার কথাগুলো তীরের মতো বুকে এসে লাগলো। আসলেই কি আমি ঠিক এতোটাই অবুঝ?
🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
নওশিন আপুর বিদায়ের সময় হয়ে গেছে। বড় ফুপ্পি তো কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। স্বাভাবিক নিজের একমাত্র বড় মেয়ে বলে কথা। দাদুমনি কিছুক্ষণ পর পর শাড়ির আচল দিয়ে চোখের পানি মুচছে আবার নওশিন আপুকে শশুরবাড়ি নিয়ে বিভিন্ন উপদেশ দিচ্ছে। নাহিল ভাইয়া তো মেঝে তে বসে কান্না করতে শুরু করেছে। ইলমাও কাঁদছে তবে নাহিল ভাইয়ার মতো না। নাহিল ভাইয়ার কান্না দেখে ইলমা তাচ্ছিল্য ভাব দেখালো। পাশেই ইফতি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। সেন্টারে আসার পর থেকে ইফতি ভাইয়া আমার সাথে কাজের কথা ছাড়া একটা কথাও বলে নি। নিজের উপরই প্রচন্ড রাগ উঠছে। এতোটা বোকা কেনো আমি? কেনো আমি এতোটা অবুঝ? নওশিন আপু আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদঁছে। আমিও কাঁদছি তবে চিৎকার করে না নিঃশব্দে। ঠিক করেছি ইফতি ভাইয়ার সামনে কোনোমতেই চিৎকার করে কাঁদব না নাহলে বাড়ি গিয়ে শুরু করে দিবে তার খোঁটা দেওয়া কথা। ইফতি ভাইয়ার খোঁটা দিয়ে কথা বলার জন্য যতই ঝড়ঝাপটা আসুক না কেনো আমি নিজের কান্নাকে দমিয়ে রাখি আর নিজেকে শক্ত করে রাখি। নিজেকে যে কারো সামনে দূর্বল প্রমাণ করলেও ইফতি ভাইয়ার কাছে কখনোই নিজেকে দূর্বল প্রমাণ করতে চাই না। নওশিন আপু চলে যেতেই সেন্টারের একটা অন্ধকার রুমে গেলাম নিজের কান্নাকে মুক্ত করে দিতে। নওশিন আপু আমার খুব কাছের একজন মানুষ ছিলো। সবসময় তাকে নিজের আপন বড় বোনের মতো দেখে এসেছি। নওশিন আপু তার বরের সাথে সর্বপ্রথম আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো যখন তারা রিলেশনে ছিলো। অন্ধকার রুমটায় ঢুকে এক এক করে নিজের চোখের সকল অশ্রু ঝড়াচ্ছিলাম। হুট করেই কোথা থেকে যেনো ইমন ভাইয়া এসে পড়লো আমার সামনে। ইমন ভাইয়াকে দেখে আরও জোড়ে জোড়ে কাঁদতে লাগলাম কেননা ইমন ভাইয়া ছিলো নওশিন আপুর চাচাতো ভাই। ইমন ভাইয়াকে দেখে নওশিন আপুর কথা আরও বেশি মনে পড়তে লাগলো। ইমন ভাইয়া অন্ধকার রুমটায় লাইট না জ্বালিয়ে আমার সামনে আসতে লাগলো। কিন্তু আমার সেদিকে যেনো কোনো খেয়ালই নেই। অন্য সময় হলে হয়তো উল্টা পাল্টা ভেবে ভয় পেয়ে যেতাম। ইমন ভাইয়া একদম আমার মুখোমুখি আসার পর আরো কাছে আসতেই হুট করে ইফতি ভাইয়া এসে আমার হাত ধরে টান দিয়ে তার বুকের সাথে মিশিয়ে মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। ইফতি ভাইয়া ইমন ভাইয়ার দিকে রাগী চোখে একবার তাকিয়েই আমাকে নিয়ে বাইরে চলে এলো। সেন্টার থেকে বেড়িয়ে বড় চাচ্চুর গাড়িতে করে আমি, ইফতি ভাইয়া, ইলমা,নাহিল ভাইয়া চলে এলাম। নাহিল ভাইয়া কাঁদছিলো আর ড্রাইভ করছিলো আর পাশেই ইলমা বসে ছিলো। পেছনের সিটে আমি আর ইফতি ভাইয়া বসে ছিলাম। সারা রাস্তা আমি ইফতি ভাইয়ার বুকে মাথা রেখে কেঁদেছিলাম আর ইফতি ভাইয়া আমার মাথায় পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিয়েছিলো।
অনেক মেহমানরাই সেন্টার থেকে নিজ নিজ বাড়িতে চলে গিয়েছিলো। নওশিন আপুর সাথে তার শশুর বাড়ি গিয়েছে নওশিন আপুর ফুপাতো একটা ভাই আর বোন এবং আমাদের বাড়ি থেকে গিয়েছিলো ছোট চাচ্চু আর ছোটো কাকি । ইফতি ভাইয়াকে অনেকেই যাওয়ার জন্য বলেছিল যেহেতু সে ছিলো আমাদের বাড়ির বড় ছেলে। কিন্তু ইফতি ভাইয়া ডাইরেক্ট না বলে দেওয়ায় কেউ আর কিছুই বলে নি। বাড়িতে এসে আমি হাত মুখ না ধুয়ে না খেয়েই বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কিছুক্ষণ ঘুমাতেই হটাৎ করেই আমার ঘুম ভাঙলো ইফতি ভাইয়ার ডাকার শব্দে। পিটপিট করে চোখ মেলতেই সামনে ইফতি ভাইয়াকে দেখতে পেলাম। ইফতি ভাইয়াকে দেখেই তাড়াতাড়ি পাশে থাকা ওড়না গায়ে দিয়ে বসে উঠলাম। ঘুম ঘুম কন্ঠে বললাম,
– কি হয়েছে ইফতি ভাইয়া ডাকছো কেনো? (আমি)
ইফতি ভাইয়া আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বললো,
– নিজের জামার দিকে তাঁকা। এসে কি চেন্জ করেছিলি? এমনকি খাসও নি। যা তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গিয়ে চেন্জ করে আয় (ইফতি ভাইয়া)
– সকালে করে নেব এখন তুমি যাও (আমি)
কথাটা বলেই আবারও বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ইফতি ভাইয়া এবার আমার হাত ধরে উঠিয়ে ঠেলেঠুলে ওয়াশরুমে পাঠালো। কিছুক্ষণ পর একটা শর্ট টপস আর প্লাজু পড়ে বের হতেই দেখলাম ইফতি ভাইয়া হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে চেয়ারে বসে আছে। আমাকে দেখেই বললো,
– এদিকে এসে বস। খেয়েদেয়ে তারপর আবার ঘুমাস (ইফতি ভাইয়া)
-উহু না। আমার এখন একদমই খাওয়ার কোনো মুড নেই। আমি খাবো না (আমি)
আমার কথা শুনে ইফতি ভাইয়া জোড়ে একটা ধমক দিয়ে বললো,
-এদিকে আয় বলছি (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার ধমক শুনে দৌড়ে গিয়ে ইফতি ভাইয়ার সামনে বিছানায় বসলাম। ইফতি ভাইয়া খাবার মেখে মুখে তুলতেই আমি মুখে তুলে নিলাম। এতোটা পরম যত্নে ইফতি ভাইয়া কখনোই হয়তো আমায় খাইয়ে দেয় নি।
– আগে ছোটো থাকতে তোকে কত খাইয়ে দিয়েছি মনে আছে? (ইফতি ভাইয়া)
– কি? তুমি সত্যি আমাকে কখনো খাইয়ে দিয়েছিলে?বিশ্বাসই হচ্ছে না (আমি)
– হুম খাইয়ে দিয়েছি তো। তোদের বাসায় গেলে অথবা তুই যখন আমাদের বাসায় আসতি তখনই বাহানা ধরে বলতি “ইফতি ভাইয়া তুমি আমাকে খাইয়ে দাও তাহলে আমি খাবো” (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথা শুনে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে আসলেই আমি এসব কথা বলেছি। কিন্তু একটু আকটু হলেও মনে পড়ছে যে ইফতি ভাইয়াকে দেখলে কারো হাতে খাই বা না খাই ইফতি ভাইয়ার হাতে খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যেতাম। কিন্তু ক্লাস এইটে উঠতেই ইফতি ভাইয়া কেমন একটা শত্রু টাইপ রিয়েক্ট করতো। আগের ইফতি ভাইয়া আর তখনকার ইফতি ভাইয়ার মধ্যে যেনো কোনো মিলই ছিলো না। এরপর থেকেই শুরু হয়েছিলো আমাদের শত্রুতার কাহিনী।
– কি হলো আ কর।
ইফতি ভাইয়ার কথায় আমার ধ্যান ভাঙলো। আ করে খাবারটা মুখে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
-ইলমা কই?
-কাঁদার কারণে বড় ফুপ্পির গায়ে জ্বর এসেছে একারণে ইলমা আজ রাতটা বড় ফুপ্পির সাথেই থাকবে।
– ওহ আচ্ছা।
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ইফতি ভাইয়া আমার মুখে খাবারের লোকমা তুলে দিয়ে বললো,
-ইভা।
-হু
-আমার সামনে তোর কাঁদতে, তোর দূর্বলা প্রকাশ করতে এতো দ্বিধা তাহলে ইমনের সামনে এরকম কোনো কাজ করতে দ্বিধাবোধ লাগলো না কেনো?
ইফতি ভাইয়ার কথায় জবাব দেওয়া মতো কিছুই খুঁজে পেলাম না। কি জবাব দেব আমি?
– তুই কাঁদলে আমি তোকে ক্ষেপাই বলে তুই আমার সামনে কেঁদে তোর দূর্বলতা প্রকাশ করতে চাস না তাই তো? (ইফতি ভাইয়া)
আমি ইফতি ভাইয়ার কথায় মাথা নিচু করলাম।
– আচ্ছা তুই কি কখনো দেখেছিস তোর সিরিয়াস কান্নার মুহূর্তে আমি তোকে ক্ষেপিয়েছি? উত্তর দে? (ইফতি ভাইয়া)
এবারো আমি চুপ করে রইলাম।
-এ বাড়ির সকলে ইমনকে একজন সহজ-সরল ইনোসেন্ট ছেলে হিসেবে চেনে ইনফেক্ট তুইও। কিন্তু তোরা কেউ কি আজ পর্যন্ত একবারও ভেবে দেখেছিস? বিশ-একুশ বছর বয়সের একজন ছেলে বাবা ব্যতীত কিভাবে লন্ডনে নিজের বাড়ি-গাড়ি তৈরি করলো । কখনো কি ভেবেছিস যেই বয়সে একজন ছেলে পড়ালেখায় টাইমপাস করবে সেই বয়সে একজন ছেলে কিভাবে একটা বিদেশি কোম্পানির মালিক হলো? (ইফতি ভাইয়া)
তাই তো। আসলেই ইফতি ভাইয়ার কথায় যুক্তি আছে। আমরা কেউই তো কখনো এটা নিয়ে ভেবে দেখে নি।
– ইভা ইমন কোনো সহজ-সরল ইনোসেন্ট ছেলে না। ও এমন একটা ছেলে যার কথা তুই চিন্তাও করতে পারবি না। এ বাড়িতে আসার পরই ওর সম্পর্কে আমার মনে প্রচন্ড পরিমানে সন্দেহ জেগে উঠেছিলো। লন্ডনে থাকা বিভিন্ন মেডিকেল টিচারের সাথে যোগাযোগ করে ইমনের সেই কোম্পানির ব্যাপারে আমি খোঁজ নেই। তারপর ওর ব্যাপারে ভয়ঙ্কর সব ডিটেইলস সম্পর্কে জানতে পারি (ইফতি ভাইয়া)
আমি মাথা তুলে ইফতি ভাইয়ার দিকে অবাক চোখে তাকাতেই ইফতি ভাইয়া বললো,
-আমার কাছে ইমনের ব্যাপারে কোনো প্রমাণ নেই তাই তোকে বা কাউকেই ইমনের ব্যাপারে কিছুই বলতে পাড়ছি না। কিন্তু খুব শিগ্রয়ই আমি সবাইকে জানিয়ে দিবো ইমনের জঘন্যতম কাজের ব্যাপারে। কিন্তু সেই পর্যন্ত আমি তোকে সেফটি দিয়ে রাখবো। তোর গায়ে একটা আঁচড়ও আমি পড়তে দেব না (ইফতি ভাইয়া)
– আমাকে সেফটি দিয়ে রাখবে? কিন্তু কেনো? (আমি)
ইফতি ভাইয়া প্লেটে হাত ধুয়ে আমার মুখ মুছে দিয়ে বললো,
-ইমনের এই জঘন্যতম কাজের টার্গেট এখন তুই। কিন্তু ইমন তোকে তার কাজের সম্পূর্ণ আলাদা টার্গেট হিসেবে বেঁছে নিয়েছে। একারণেই আমি তোকে নিজের সর্বোচ্চ সেফটি দিয়ে রাখবো। তোকে ইমনের থেকে দূরে দূরে থাকতে হবে ইভা। জানিস কেনো সবার এতো জোরাজোরিতেও আমি নওশিন আপুর শশুরবাড়িতে যাই নি? (ইফতি ভাইয়া)
আমার প্রশ্নোসূচক চাহনি দেখে ইফতি ভাইয়া বললো,
-তোর জন্য। তোর সেফটির জন্যই আমি তোকে ছেড়ে যেতে চাই নি। আমার অনুপস্থিতিতে যদি তোর সামান্য পরিমাণে কোনো ক্ষতি হয়ে যায় তাহলে আমি নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না ইভা। আমি নিজেকে শেষ করে দিব। জানিস? যেদিন থেকে জানতে পারলাম ইমনের টার্গেট তুই সেদিন থেকেই তোকে ইমনের কাছ থেকে দূরে রাখার আপ্রাণ চেস্টা করে চলেছি। তুই রুমে একা থাকলে বাইরে দাঁড়িয়ে তোকে গার্ড দিতাম। পার্লার থেকে যখন তুই বেড় হচ্ছিলি তখন তোকে এতটাই সুন্দর লাগছিলো যে আমার মনে ভয় হতে শুরু হয়েছিলো। যদি তোর এতো সুন্দর চেহারা দেখে ইমন আরও বেশি আকৃষ্ট হয়ে যায়? যদি তোকে আমি হারিয়ে ফেলি? আর আমার সন্দেহই সঠিক হলো। ইমন সারাটা সময় তোর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। জানিস তখন ইচ্ছে করছিলো ইমনের চোখদুটো ধ্বংস করে দেই। তুই যখন অন্ধকার রুমটায় ঢুকেছিলি তখন দেখলাম ইমনও তোর পিছে পিছে যাচ্ছিল যেটা আমার মনে আরও ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। ইমনের পিছে পিছে আমিও গিয়েছিলাম তোর রক্ষাকবচ হয়ে। বারবার আল্লাহর নাম ডাকছিলাম। তুই ভেবেছিলি ইমন তোর কান্না দেখে তোকে শান্তনা দিতে তোর কাছে যাচ্ছিলো? কিন্তু না। ও যাচ্ছিল ওর সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে। ও যখনই তোর কাছে যাচ্ছিল তখনই আমি দৌড়ে সেখান থেকে তোকে নিয়ে আসি (ইফতি ভাইয়া)
আমি অপলক দৃষ্টিতে ইফতি ভাইয়ার কথা শুনছিলাম। আজ পর্যন্ত আমি শুধুমাত্রই ইফতি ভাইয়ার শত্রুতা আর বদমেজাজি রূপটাই দেখলাম কিন্তু ইফতি ভাইয়ার মধ্যে যে এতো সুন্দর একটা কেয়ারিং
ছেলের চরিত্র লুকিয়েছিলো তা দেখতেই পেলাম না। একটা ছেলে একটা মেয়ের জন্য এতো কিছু করতে পারে সেটা ভেবেই আমার গলায় কান্নার দলা পাকিয়ে আসছিলো।
– এ কারণেই তুমি ইমন ভাইয়ার কাছ থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে রাখতে? (আমি)
ইফতি ভাইয়া আমার কাছে এসে তার দুই হাত দিয়ে আমার গাল ধরে বললো,
-হ্যা। ইমনের জঘন্যকর দৃষ্টি ওর চাহনি দেখে আমার সারা শরীর জ্বলে উঠতো। প্রায়ই দেখতাম ও তোর দিকে খুব বাজে নজরে তাকিয়ে রইতো। সাথে সাথে সেখান থেকে তোকে নিয়ে আসতাম নাহলে ইমনকে সরিয়ে আনতাম। আমি যথাসম্ভব নিজের সর্বোচ্চ চেস্টায় তোকে ইমনের তেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। এবার আমার একটা রিকোয়েস্ট রাখ প্লিজ। যাই হয়ে যাক না কেনো ইমনের আশেপাশেও তুই যাবি না। ইমন কথা বলতে আসলে কোনো বাহানায় তুই সেখান থেকে চলে যাবি। আমি কখনোই তোকে হারাতে চাই না ইভা। কখনোই না। এই কষ্ট আমি কিভাবে সহ্য করবো বল? তোকে হারিয়ে ফেলার কষ্টের থেকে যে মৃত্যুর কষ্ট আমার কাছে শ্রেয় (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথা শুনে সাথে সাথে আমি ইফতি ভাইয়াকে জরিয়ে ধরলাম।
জীবনটা সত্যিই অদ্ভুত। কার জীবনে হঠাৎ করে কি হয়ে যায় তার কোনো ধারণা সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত কারো কাছেই নেই। বিয়ে বাড়িতে বিয়ে খেতে আসার মজায় যে দুই আত্মার জীবনে কান্না শিহরণ বইয়ে দিবে সেটা কি কেউ জানতো? আমি কাঁদছি। ইফতি ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলছি। আজ আর কোনো দ্বিধা আমার মধ্যে কাজ করছিলো না। নিজের কষ্ট, নিজের ভয়কে প্রিয় মানুষকে জড়িয়ে ধরে কেদেঁ বিসর্জন দিচ্ছি। ইফতি ভাইয়া না কাঁদলেও তার বুক কেঁপে উঠছিলো। জানি না কি হবে আমাদের জীবনে? ইমন ভাইয়ার আগমন কি আমাদের জীবনকে বদলে দিবে?

চলবে,,,,,,,,,,🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here