কুড়িয়ে পাওয়া ধন পর্ব ১৯

0
547

#কুড়িয়ে_পাওয়া_ধন
#পার্ট_১৯
জাওয়াদ জামী

” আমার যতটুকু দ্বায়িত্ব আমি পালন করেছি। এবার তোমার পালা। ফটাফট সব গুছিয়ে ফেল। এরপর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের লিষ্ট কর। রান্নাঘরের কোন কিছু যেন বাদ না যায়।” আরমান নতুন ফ্ল্যাটে এসে সব ফার্নিচার জায়গামত রাখার পর বলে।
ততক্ষণে সাহায্যকারী লোকেরা বিদায় নিয়েছে।

কান্তা আরমানের কথার উত্তর না দিয়ে গোছগাছ শুরু করে।

” দরজা লাগিয়ে দিয়ে যাও। আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। ” আরমান ওয়ালেট প্যান্টের পকেটে রেখে বলল।

” এখন কোথায় যাচ্ছেন! এই নতুন জায়গায় আমার একা থাকতে ভয় করবে। ”

” এখন দুপুর বারোটা দশ। সকাল থেকে কারও খাওয়া হয়নি এটা মাথায় আছে? নাকি না খেয়ে স্বামীর অর্থ সাশ্রয়ের চিন্তা করছ? বালিকা এটাই যদি ভেবে থাক, তবে তোমার ধারনা ভুল। না খেয়ে যতটুকু সাশ্রয় করবে, অসুখে পরে তার থেকে বেশি খরচ হবে, বুঝলে? আর এখন থেকে একা থাকার অভ্যেস করে নাও। তোমাকে পাহারা দেয়ার জন্য সব সময় আমাকে পাবেনা। ”
কান্তার ভয়কে আরও বাড়িয়ে দিয়ে আরমান বেরিয়ে যায়।

বিকেলের মধ্যেই গোছগাছ শেষ করে দু’জন মিলে। এরপর সন্ধ্যায় কান্তাকে নিয়ে বাইরে আসে। উদ্দেশ্য ফ্রিজ আর রান্নাঘরের টুকটাক জিনিসপত্র কেনা।
কান্তার পছন্দমত ফ্রিজ, ডিনার সেট, হাঁড়ি পাতিল কিনে আরমান। দুইজনের সংসারের জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবই কিনেছে।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আরমান বাজারে যায়। রাতেই কান্তা লিষ্ট করে রেখেছিল। আরমান আগামী সাতদিনের কাঁচা বাজার করে।

নতুন বাসা সাজাতে সাজাতে সাতদিন কেটে গেছে। দুই রুমের বাসাটা আজ ফার্নিচারে পরিপূর্ণ। ওরা যেদিন এখানে আসে সেদিন এতকিছু ছিলনা। এই সাতদিনে আরমান কান্তাকে সাথে নিয়ে একে একে সব কিনেছে।

” আর দশদিন পর থেকে তোমার পরীক্ষা শুরু হচ্ছে, সেটা মনে আছে? তোমার পরীক্ষার কেন্দ্র কোথায়? কোথায় থেকে পরীক্ষা দিবে, সেটা ভেবেছ? ”

” পরীক্ষা কেন্দ্র নাটোরেই। কিন্তু কোথায় থাকব সেটা এখনও জানিনা। আচ্ছা এখান থেকে যেয়ে পরীক্ষা দিলে হবেনা? ”

” মাথায় স্ক্রু আছে না রাস্তায় ফেলে এসেছ? তুমি ঢাকা থেকে নাটোর যাবে পরীক্ষা দিতে! গাড়িতে বসেই কি পরীক্ষা দেয়ার প্ল্যান করছ? নাটোর তোমার পরিচিত কেউ আছে, যেখানে থেকে পরীক্ষা দিতে পারবে? যদি না থাকে তবে একমাসের জন্য একটা বাসা ঠিক করতে হবে। ”

” আমার ফুপুর বাসা নাটোর। এছাড়া নানার বাড়িও সেখানে। আবার কয়েকটা কাজিন সেখানেই থাকে। ”

” তুমি এক কাজ কর, তোমার যাকে ভালো মনে হয় তার কাছে ফোন করে একটা বাসা দেখতে বল। আমি তো তাদের চিনিনা। তোমাকে কে সাহায্য করতে পারবে, তা তুমিই ভালো যান। ”

” যাকে বলব সে-ই সাহায্য করবে। অন্য কাউকে বলার আগে আমি বরং ফুপুকে জানাই। দেখি সে কি বলে। ”

” তাহলে তাকেই ফোন কর। এই-যে নাও আমার ফোন। এটা দিয়েই কথা বল। ”

কান্তা আরমানের কাছ থেকে ফোন নিয়ে ওর ফুপুকে ফোন করে। তিনি সবটা শুনে কান্তার উপর রা’গ করেন। তিনি কোনভাবেই চাননা তার ভাইঝি অন্য কোথাও থেকে পরীক্ষা দিক। তিনি আরমানের সাথে কথা বলতে চান।
আরমান ফোন নিলে তিনি আরমানকে জানান, কান্তাকে তিনি তার বাসাতেই রাখবেন। তিনি অনেকক্ষণ কথা বলেন আরমানের সাথে। আরমান যখন জানল, ফুপুর বাসায় তারা স্বামী-স্ত্রী ছাড়া কেউ থাকেনা, তখন সে কান্তাকে সেখানে থাকতে দিতে রাজি হয়। সে ফুপুকে জানায় , পরীক্ষার দুইদিন আগেই কান্তাকে নাটোর পাঠাবে। কিন্তু ফুপু চান আরমান নিজেই কান্তাকে নিয়ে আসুক। ওদের বিয়েতে দাওয়াত পায়নি, তাই এখন পর্যন্ত আরমানকে তিনি দেখেননি। তাই তিনি আরমানকে দাওয়াত করলেন। ফুপাও আরমানের সাথে কথা বললেন। ওকে দাওয়াত করলেন। তারা তাদের মেয়ে জামাইকে আপ্যায়নের সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়না।
তাদের দাওয়াত আরমান অগ্রাহ্য করতে পারেনা।

সকালে আরমান ভার্সিটিতে বেরিয়ে গেলে কান্তা কোমড় বেঁধে রান্নার জোগাড় করে। ও পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে আরমানের জন্য রান্না করে রেখে যাবে। সে অনুযায়ী ও রুটি, কয়েকরকম ভাজি, মাংসের তরকারি, মাছের ভুনা, বিরিয়ানি রান্না করে। এগুলো ঠান্ডা করে ফ্রিজে রাখবে। আরমান শুধু প্রয়োজনমত বের করে গরম করবে।

কান্তার এহেন কর্মকান্ডে আরমানের মাথায় হাত।
এই মেয়ে করেছেটা কি!

” তুমি পা’গ’ল হয়ে গেছ! এতসব খাবার আমি খেয়ে শেষ করতে পারব? শুধু শুধু কষ্ট করে এত খাবার রান্না করেছ। ”

” আপনি তো এগুলো একদিনে খাবেননা। হাতে একমাস সময় পাবেন এগুলো শেষ করতে। শুনুন আমি রুটিগুলো হালকা সেঁকে রেখেছি। আপনি খাওয়ার পনের মিনিট আগে বের রাখবেন, এরপর সেগুলো নরমাল হলে ভেজে নিবেন। আর আলু ভাজি ওভেনে গরম করে নিবেন। তরকারিগুলো আলাদা আলাদা বাটিতে রেখেছি। একটা করে বাটি বের করে ওভেনে গরম করবেন। এই যে এখানে বিরিয়ানি রেখেছি। যখন খাবেন, তখন একটু কষ্ট করে গরম করে নিবেন। ”

” তুমি নিজে পা’গ’ল, সেই সাথে আমাকেও পা’গ’ল করেই ছাড়বে। ” আরমান কপট রা’গে’র সাথে বলে।

নির্দিষ্ট দিনে আরমান কান্তাকে নিয়ে বেরিয়ে পরে নাটোরের উদ্দেশ্যে।
দীর্ঘ ছয় ঘন্টা জার্নির পর ওরা নাটোর পৌঁছায়। আরমান ঢাকা থেকেই কয়েকরকম মিষ্টি ও ফলমূল কিনেছে।
বাস থেকে নেমে ওরা অটোরিকশায় উঠে।

কান্তার ফুপু রোকসানা আক্তার কান্তাকে দেখে ভিষণ খুশি হন৷ তিনি কান্তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন।

নতুন বাসায়, নতুন মানুষদের সামনে আরমান অপ্রস্তুত বোধ করছে। ও চুপটি করে সোফায় বসে রোকসানা আক্তারের কান্না দেখছে। তবে ওকে এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করলেন কান্তার ফুপা ওবায়দুর রহমান।

” রোকসানা, ওরা অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছে। এবার ওদেরকে ফ্রেশ হওয়ার সুযোগ দাও। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল। ওরা এতক্ষণ যাবৎ না খেয়ে আছে। ”

” দেখেছ, আমি কান্তাকে পেয়ে সব ভুলে বসে আছি। কান্তা তুই জামাইকে নিয়ে রুমে যা। তোর সেই দখিণ দুয়ারি রুমে তোরা থাকবি। ”

কান্তা আরমানকে নিয়ে রুমে যায়।

খাবার টেবিলে এসে আরমানের চোখ কপালে উঠে। টেবিল ভর্তি নানানরকম খাবার!
ওরা সবাই একসাথে খেতে বসে। রোকসানা আক্তার ওদের সাথে খেতে না চাইলেও আরমানের অনুরোধে খেতে বসেন।

আরমান বেশ তৃপ্তি নিয়ে খাবার খায়। ফুপুর হাতের রান্নার তুলনা নেই।

পরদিন দুপুরে আরমান ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। ফুপা-ফুপু চাইছিলেন আর একটা দিন আরমান তাদের সাথে থাকুক। কিন্তু ওর ভার্সিটিতে জরুরি কাজ থাকাঢ ওকে পরদিনই বের হতে হয়।

শহিদ আহমেদের শরীর কয়দিন থেকে ভালো যাচ্ছেনা। তিনি আরমানের চিন্তায় সব সময়ই অস্থির থাকেন। আরমান কোথায় থাকে আজ পর্যন্ত তিনি জানতে পারেননি।
একদিন তিনি সাহস করে আরমানের ভার্সিটিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু আরমানের কলিগরা কেউই ওর বাসা বদলের খবর জানেনা। আর সেদিন আরমান ভার্সিটির কাজে বাহিরে গিয়েছিল। তাই শহিদ আহমেদের সাথে তার দেখা হয়নি।
এরপর আরেকদিন শহিদ আহমেদ ছেলের সাথে দেখা করতে ভার্সিটিতে গেলে আরমানের সাথে দেখা হয়। আরমান সেদিন স্পষ্ট করে তাকে জানিয়ে দেয়, ভার্সিটিতে আর কখনও না আসতে। এবং সে ওর বাসার ঠিকানাও দেয়না।
শহিদ আহমেদ ব্যর্থ চিত্তে ফিরে আসেন।

শ্রীজা ওর বাবাকে নিয়ে ডক্টরের কাছে এসেছে। কয়েকদিন থেকেই তার প্রেশার বেড়েছে। সেই সাথে বেড়েছে নিদ্রাহীনতা।
ডক্টর তাকে চেক-আপ করে মেডিসিন দেন। এবং টেনশন করতে নিষেধ করেন।

কান্তার পরীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রথম তিনটা পরীক্ষা ওর খুব ভালো হয়েছে। আরমান নিয়মিত ওর খোঁজ রাখছে। যাওয়ার সময় কান্তার কাছে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছে।
আরমানকে ছাড়া একা থাকতে কান্তার মোটেও ভালো লাগছেনা। মানুষটা ঠিকমত খাচ্ছে কি না সেই চিন্তায় ওর নিজেরও ঠিকমত খাওয়া হচ্ছেনা।

চতুর্থ পরীক্ষা দিয়ে কান্তা বাসায় এসেছে। আজও ওর পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে।
বাসায় এসে গোসল সেরে কেবলই খেতে বসেছে।
তখনই বেজে ওঠে কলিং বেল।
ফুপু দরজা খুলে দিয়ে অবাক হয়ে গেছে।
আরমান এসেছে!

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here