কুড়িয়ে পাওয়া ধন পর্ব ২

0
750

#কুড়িয়ে_পাওয়া_ধন
#পার্ট_২
জাওয়াদ জামী

কান্তা প্রতিদিনের ন্যায় ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করে, বই নিয়ে বসেছে। আধাঘন্টা পড়ার পর রান্নাঘরে যায়। সকাল এবং দুপুরের রান্না শেষ করে, কয়েক মুঠো ভাত কোনরকম নাকেমুখে দিয়ে উঠে যায়। এরপর তৈরি হয়ে সোজা কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়৷ বাড়িতেই সাড়ে আটটা বেজে গেছে। কলেজে পৌঁছাতে একঘন্টা লাগবে। আজ নয়টা পঁয়তাল্লিশে প্রথম ক্লাস।

আরমান ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রুম থেকে বের হতেই, গতকালের ন্যায় আজও তার বাবা তাকে পিছু ডাকে। আরমান বাবার সামনে এসে দাঁড়ায়।

” কিছু বলবেন? ”

” কেন, আজও তোমার জরুরি ক্লাস আছে নাকি? আমি ডাকলেই শুধু তোমার জরুরি কাজ পরে বুঝি? ” বাবার গলায় স্পষ্ট ব্যঙ্গ।

” আপনার কিছু বলার থাকলে বলুন। নয়ত আমি এখনই বের হব। অযথা প্যাচাল আমার ভালো লাগেনা। ” আরমানও ত্যাড়াভাবে উত্তর দেয়।

” আরমান, ভুলে যেওনা তুমি তোমার বাবার সাথে কথা বলছ। আমাদের সম্মান দিতে না পার, তাতে অসুবিধা নেই। নিজের বাবাকে অন্তত একটু সম্মান কর। ” আরমানের মা আকলিমা খানম বাবা-ছেলের মাঝে কথা বলে।

” আপনাদের সম্মান না দেয়ার জন্য সরি। আসলে আমি হাজারবার চেষ্টা করলেও সম্মান জিনিসটা ঠিক আসেনা। বিশেষকরে আপনাদের প্রতি। অবশ্য ব্যাড লাক আমারই। আপনাদের মত গুনি মানুষদের সম্মান দিতে পারিনা। ”

” আরমান, আমি তোমাকে ডেকেছি একটা কথা বলার জন্য। কিন্তু তুমি আমার কথা না শুনে নিজের ত্যাড়ামোকে প্রাধান্য দিচ্ছ। ” শহিদ আহমেদের গলায় রা’গ স্পষ্ট।

” কি করব বলুন, সময় আমাকে ত্যাড়া বানিয়েছে। অথচ এমনটা হওয়ার ছিলনা। যাগগে, এবার আপনার জরুরি কথাটা বলে ফেলুন। অলরেডি অনেক দেরি হয়ে গেছে। তারাতারি বেরোতে না পারলে, ক্লাসে লেইট হবে। ”

” এই চেয়ারটায় বস। ”

বাবার নির্দেশ অমান্য করেনা আরমান। চেয়ার টেনে বসে যায়।

” শোন আরমান, তোমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। লেখাপড়া শেষ করেছ, ভালো জব করছ। এবার বিয়েটাও সেড়ে ফেল। আর তাছাড়া তোমার দুইটা ছোট ভাই-বোন আছে। তোমাকে রেখে আমি তাদের আগে বিয়ে দিতে পারিনা। এবং বিষয়টা ভালোও দেখায়না। আমার খালাত বোনের মেয়েকে তোমার জন্য পছন্দ করেছি। তুমিও তাকে চিনবে। মেয়েটা ভিষন লক্ষ্মী। সে-ও ভার্সিটিতে পড়ছে। তুমি রাজি থাকলে আমি ওদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে পারি। ” একনাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলেন শহিদ আহমেদ।

” বাহ্ আমার জন্য আপনার এত চিন্তা দেখে ভালো লাগল। আপনি চাইলে শুভ আর শ্রীজার বিয়ে দিতে পারেন, এতে আমার কোন আপত্তি থাকবেনা। বয়স যখন হয়েছে আমাকেও একদিন বিয়ে করতে হবে। তবে যে দিনই বিয়ে করিনা কেন, আপনার বোনের মেয়েকে বিয়ে আমি করবনা। ”

আরমানের সোজাসাপটা জবাব শুনে শহিদ আহমেদ বিরক্তিতে মুখ বাঁকায়।

” তাহলে, আকলিমার বোনের মেয়েকে বিয়ে কর। সে মেয়েও দেখতে চমৎকার। কিংবা আমার ফ্রেন্ডের মেয়ে আছে, সে-ও তোমার যোগ্য। ”

” দুঃখিত, আমি এদের কাউকেই বিয়ে করবনা। চমৎকার, যোগ্য, সুন্দরী কিংবা মর্ডান মেয়েকে আমার প্রয়োজন নেই। আমি চাই নম্র, সুশীলা, প্রতিবাদি একটা মেয়ে। যে সম্পর্কের মূল্যায়ন করতে জানবে। যে কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দিবেনা। আপনি যাদের কথা বলছেন, তারা একজনও এইসব ক্যাটাগরিতে পরেনা। ”

আরমানের কথা শুনে আকলিমা খানম ফুঁ’সে ওঠে। রাজিয়া খানম দাঁত কিড়মিড়িয়ে তাকিয়ে আছে আরমানের দিকে।

” তুমি বিয়ে করবেনা ভালো কথা। কিন্তু তাই বলে আমার বোনের মেয়েকে অপমান করতে পারনা। সে শিক্ষিতা মেয়ে, চালচলন ভালো। তুমি কোন হিসেবে তাকে তোমার যোগ্য মনে করছনা? ” আকলিমা খানম তেজ দেখিয়ে বলে।

” আপনিই তো সবটা বলে দিলেন। এখন তো আমার মনে হচ্ছে, আপনার শিক্ষিতা, ভালো চালচলনওয়ালা মেয়ের জন্য আমিই পারফেক্ট নই। ”

আরমানের ভাবলেশহীন উত্তর শুনে শহিদ আহমেদের শরীরে রা’গ বাঁসা বাঁধতে শুরু করে।

” তুমি যা-ই বলনা কেন, যতই এক্সকিউজ দাও, তোমার বিয়ে আমি দিয়েই ছাড়ব। এবং আগামী দুই মাসের মধ্যেই। যদি আমাদের পছন্দ তোমার ভালো না লাগে তবে নিজের পছন্দেই তোমাকে বিয়ে করতে হবে। আমি দুই মাসের মধ্যে তোমার বউ দেখতে চাই। ”

” আমার পেছনে এভাবে লাগলেন কেন! বউ দেখবার ইচ্ছে হলে শুভকে বিয়ে করান। আপনার আদরের ছেলের জন্য মনেরমত বউ নিয়ে আসেন। তবুও আমাকে নিয়ে এভাবে টানাটানি করবেননা। আমার আবার এত ভালোবাসা সয়না। ” কথাটা বলেই আরমান দৃঢ় পায়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।

” শহিদ, তোর ছেলেকে মানুষ করতে পারিসনি। এমন বেয়ারা ছেলে আমি জন্মেও দেখিনি। এখনতো মনে হচ্ছে এই গোঁ’য়া’র ছেলের জন্য মেয়ে দিবে কে? যে ছেলে পরিবারের সবার সাথে এমন আচরণ করে, সে বউয়ের সাথে কেমন আচরণ করবে ভাবতেই ভয় হয়। ” রাজিয়া খানম কৌশলে ছেলেকে উস্কে দেয় আরমানের বিরুদ্ধে।

” আমিও দেখব তার গোঁয়ার্তুমির সীমা কতদূর। বিয়ে তাকে করতেই হবে। ” শহিদ আহমেদেরও জি’দ চেপে গেছে।

ক্লাস শেষে বাড়িতে আসতে কান্তার বিকেল হয়ে যায়। ঘর্মাক্ত শরীরে বাড়িতে ঢুকতেই শিখার মুখোমুখি হয়। শিখা ওকে দেখে মুখ ঝামটা দিয়ে রান্নাঘরে যায়। কান্তা এসবে নজর না দিয়ে নিজের ঘরে যায়।

জমি থেকে ধান কেটে কৃষাণরা বাহিরের উঠানে রাখছে। বাহিরের উঠান বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে হওয়ায় শিখা সেদিকে উঁকি দিয়েও দেখেনা। কৃষাণরা ধান রেখে যাওয়া থেকে শুরু করে, গোলায় উঠানো পর্যন্ত যাবতীয় কিছু কান্তাকেই সামলাতে হয়।
কান্তা গোসল সেড়ে, রান্নাঘরে রাখা ভাত খেয়ে বাহিরের উঠানে যায়। সেখানে অনেক ধান জমা হয়েছে। একের পর এক ধানের বোঝা কৃষাণরা আনছে। কান্তা তাদের দেখিয়ে দেয় ধানগুলো কোথায় রাখতে হবে। উঠানের একপাশে বোঝাগুলো স্তুপ করে রাখা হয়। এরপর সেগুলোতে মাড়াই করে গোলায় উঠানো হবে। রাতেই সব ধান মাড়াই করা হবে। এরপর তোলা হবে গোলায়।
মাগরিবের আজান দিলে কান্তা বাড়িতে আসে নামাজ আদায় করে রান্না করতে যায়। আজ কৃষাণসহ পঁচিশজনের খাবার রান্না করতে হবে।

কান্তার রান্না শেষ হয় রাত নয়টার দিকে। সারাদিনের পরিশ্রমে শরীর একবারে নুইয়ে পরেছে। রান্না শেষে গোসল দিয়ে নামাজ আদায় করে, বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয় কান্তা। এবং নিমেষেই ঘুমিয়ে পরে।

হঠা কারো ধাক্কায় হুড়মুড়িয়ে উঠে বসে কান্তা। ওর ভাইয়ের ছেলে আরাফ ডাকছে।

” ফুপি, তুমি এখন ঘুমাচ্ছ কেন? আম্মু ভিষন রা’গ করছে। তারাতারি বাহিরে চল। তুমি জাননা, আম্মু তোমার সাথে রা’গ করলে আমার ভিষণ কষ্ট হয়? ”
আরাফের কথা শুনে ওকে কোলে নিয়ে চুমু দেয় কান্তা। ছেলেটা আসলেই ওকে খুব ভালোবাসে।

কান্তা কলপাড়ে যেয়ে মুখহাত ধুয়ে, রান্নাঘরে এসে কৃষাণদের খাবার বাড়তে থাকে। একে একে বড় গামলায় ভাত, তরকারি বেড়ে বড় ভাইকে ডাক দেয়।

ধানের কাজ শেষ হতে পনের দিন লাগে। কান্তার ভাই একজন মহিলা রেখেছেন কাজ করার জন্য। অবশ্য প্রতিবছরই সে বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে একজন মহিলা রাখে। কারন ধান সেদ্ধ, শুকানো আবার ধান ভাঙ্গানোর কাজ একা একা করা যায়না।
এই পনের দিনে কান্তা সেই মহিলাকে নিয়ে ধান সেদ্ধ থেকে শুরু করে ভাঙ্গানোর পর সেগুলো ঝেড়ে পরিষ্কার করে। এরপর মাটির বড় বড় মটকায় চাল ভর্তি করে রাখে। এতসব কাজ
করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠে কান্তা। তবুও একটিবারও ওর ভাবি ওদের সাহায্য করা দূরের কথা, ওদের ছায়া মাড়ায়নি পর্যন্ত।

এই পনের দিন কান্তা কলেজে যেতে পারেনি, প্রাইভেট পড়তে যায়নি শুধু রাতের বেলায় তিনজনকে পড়িয়েছে, আর বাঁকি সাতজনকে পনের দিনের জন্য ছুটি দিয়েছে । কারন এই তিনজনকে না পড়ালে, এই মাসের বেতন পাবেনা। পনের দিন পর কলেজে গেলে টাকা লাগবে, তাই হাজার কষ্ট হলেও ওদের পড়িয়েছে।

রোজকার ন্যায় ফজরের নামাজ আদায় করে, একটু বইয়ে চোখ বুলিয়ে রান্নাঘরে যায় কান্তা। সকাল, দুপুরের রান্না সেড়ে, গোসল দিয়ে কোনরকম নাকেমুখে খাবার দিয়ে কলেজে ছোটে।
গ্রামের ছোট্ট বাজারের তিনমাথায় অটোরিকশার অপেক্ষা করছে কান্তা। পাঁচ কিলোমিটার পথ অটোরিকশায় যাওয়ার পর, পাশের গ্রামের আরেকটা বাজারে নেমে সেখান থেকে আরেকটা অটোরিকশা করে সতের কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। তারপর অটোরিকশা থেকে নেমে দশ মিনিট পথ হাঁটলেই ওর কলেজ। অবশ্য এই দশ মিনিট পথের জন্যও রিকশা আছে। কিন্তু এতে অনেক টাকা, খরচ হয়। এজন্য কান্তা এই পথটুকু হেঁটেই অতিক্রম করে।

শিখা আজ বাড়ির পোষা হাঁস-মুরগি জ’বা’ই করেছে। সেগুলোকে বেছে-কাটতে হবে কান্তাকে।
শিখার এত আয়োজন দেখে কান্তা বুঝে গেছে, নিশ্চয়ই ওর ভাবির বাবার বাড়ি থেকে কেউ আসবে।

কান্তা হাঁসের মাংসের ভুনা, মুরগির কোর্মা, ডিম ভুনা, রুই মাছের কালিয়া আর পোলাও রান্না করেছে। এসব রান্না ও মায়ের কাছ থেকে শিখেছে। ওর মা নানানরকম রান্না জানত। তিনি বেঁচে থাকতে মেয়েকে পাশে বসিয়ে নিজ হাতে অনেকরকম রান্না শিখিয়েছিলেন। তিনি চাইতেন তার মেয়ের যেন বিয়ের পর রান্না করা নিয়ে কটু কথা না শুনতে হয়। কিন্তু কে জানত, তার মেয়ে বিয়ের আগেই ভাইয়ের সংসারের দা’সী হিসেবে কাজ করবে!

শিখার বড় দুই বোন আর ছোট ভাই এসেছে বেড়াতে । তারা আসার পর থেকেই কান্তাকে এটাসেটা হুকুম করেই যাচ্ছে। কান্তাও মুখ বুজে তাদের সকল কাজ করে দিচ্ছে।

বিকেলে সব কাজ শেষ করে কান্তা ওর পাশের পাড়ায় যায়। ঐ পাড়ার এক মেয়ে কান্তার সাথে পড়ে। সেখানে যেয়ে কান্তা দেখল ওর বান্ধবীর খালা বেড়াতে এসেছে। ভদ্রমহিলাকে দেখে কান্তা সালাম জানায়। তিনিও সুন্দরভাবে উত্তর দেন। এরপর কান্তাকে পাশে বসিয়ে নানান কথা জিজ্ঞেস করলেন। কান্তাও নম্রভাবে তার সকল কথার উত্তর দেয়। কিছুক্ষণ কথা বলার পর কান্তা ভদ্রমহিলাকে নিজের বাড়িতে যাওয়ার জন্য দাওয়াত করে, ওর বান্ধবীর নিকট যায়। ও বান্ধবীর সাথে পড়াশোনার বিষয়ে আলোচনা করছে, এই ফাঁকে ভদ্রমহিলা নিজের ফোনে কান্তার কয়েকটা ছবি তুলে নেন।
কান্তাকে তার ভিষণ পছন্দ হয়েছে।

সন্ধ্যার পর কান্তা নিজের ঘরের বারান্দায় বসে আছে। সেই মাগরিবের আজানের আগে লোডশেডিং শুরু হয়েছে, এখনও বিদ্যুৎ আসার নামই নেই। কত রাতে যে বিদ্যুৎ সংযোগ দিবে তা কেউই বলতে পারেনা।

” বেয়ান, এখানে একা একা বসে আছেন যে? চলেন বাহিরে থেকে হেঁটে আসি। যে গরম পরেছে, এর ভেতর বাড়িতে বসে থেকে মজা নেই। ” শিখার ভাই রবিন এসে দাঁড়িয়েছে কান্তার পাশে।

” ধন্যবাদ আপনিই ঘুরে আসুন। বাড়িতে আমার কাজ আছে। ” কান্তা ইতস্ততভাবে জবাব দেয়। ও চাচ্ছে রবিন এখান থেকে চলে যাক। ভাবি দেখলে সমস্যা হবে।

” আসার পর থেকে দেখছি আপনি কাজ করছেন। একটু বিশ্রাম মাঝেমধ্যে নিতে হয়। বেশি কাজ করলে চেহারার মাধুর্য নষ্ট হয়ে যায়। অবশ্য এত কাজ করার পরেও আপনি যথেষ্ট সুন্দরী। শুধু আপনার গায়ের রং একটু চাপা এই যা। আপনার মত ফিগার খুব কম মেয়েরই হয়। খুব আকর্ষনীয় ফিগার আপনার। আর চুলের কথা না-ই বলি। হাঁটু পর্যন্ত চুল যেন আটলান্টিকের ঢেউ। ” রবিনের কথায় এবং দৃষ্টিতে লোলুপ ভাব কান্তার নিকট পরিষ্কার।
সে ভালোভাবে গায়ে ওড়না পেঁচিয়ে দ্রুত পায়ে ঘরের ভেতর ঢুকে।

কান্তার বুকের ভিতর ধুকপুক করছে। এসব কি জঘন্য কথাবার্তা বলল রবিন! ভিষণ ভয় হচ্ছে ওর। রবিন আজ এভাবে বলল, পরে যদি এরচেয়েও বেশি কিছু করে?

তিনদিন পর শিখার ভাই-বোনেরা চলে গেলেই, শিখা কান্তার ঘরে আসে। কান্তা চেয়ারে বসে পড়ছিল।
শিখা সরাসরি ঘরে ঢুকে কান্তার চুলের মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে উঠানে নিয়ে আসে। ঘটনার আকস্মিকতায় কান্তা নিজের বোধবুদ্ধি হারিয়েছে। কি হয়েছে এ কথা জিজ্ঞেস করতেও ভুলে গেছে।

” হা’রা’ম’জা’দি মেয়ে আমার ভাইয়ের সাথে ফষ্টিনষ্টি করতে চাস? ন’ষ্টা মেয়ে কলেজে পড়তে যাস সেখানের না’গ’রে’রা চাহিদা মেটায়না বুঝি? তাই আমার ভাইয়ের পেছনে লেগেছিস? কয়টা লাগে তোর? ” আরো অনেক অশ্লীল গালি দিতে থাকে শিখা।

কান্তা যা বোঝার বুঝে নেয়।

” ভাবি, মুখ সামলে কথা বল। তোমার ভাইয়ের সাথে আমি আগে কথা বলতে যাইনি। সে-ই আমার সাথে যেচে কথা বলতে এসেছিল। আর আমি কলেজে পড়তে যাই, খারাপ কিছু করতে যাইনা। ” কান্তার গলায় রা’গে’র আভাস।

” তোর এতবড় সাহস! ফকিন্নির ঝি। আমার মুখেমুখে কথা বলিস? আজ তোর একদিন কি আমার একদিন। ” শিখা আর কিছু না বলে কান্তাকে উঠানে ফেলে এলোপাথাড়ি লা’থি দিতে থাকে। কান্তা যে শিখাতে আটকাবে সেই শক্তি ওর নেই।
মার খেতে খেতে যখন কান্তা নিস্তেজ হয়ে যায় তখন শিখা নিজের ঘরে যেয়ে কাঁ’চি নিয়ে আসে।
উঠানে পরে থাকা কান্তার চুলের মুঠি ধরে ঘাড় বরাবর চুল কে’টে দেয়।
এক গোছা চুল ছুঁড়ে মারে কান্তার মুখে৷ বিধ্বস্ত কান্তা কথা বলার শক্তি হারিয়েছে।
ধীরে ধীরে একটা হাত মাথার পেছনে দেয়। হাতড়ে খুঁজতে থাকে চুলের খোঁপা। হাঁটু পর্যন্ত চুলের বদলে ঘাড় অব্দি চুলের আভাস পেয়ে ঢুকরে কেঁদে উঠে। আশেপাশের তাকিয়ে দেখে তার হাঁটু পর্যন্ত কোঁকড়া, ঘনকালো চুল উঠানে লুটোপুটি খাচ্ছে।

হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে কান্তা। কি থেকে কি হয়ে গেল!

এতক্ষণের সবটা দৃশ্য বারান্দা থেকে দেখছিল আরাফ।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here