#ল্যাম্পপোস্ট (১০)
জ্ঞান ফিরেছে বিভার। শরীরের প্রতিটা অংশ যেন ব্যথায় লেপ্টে আছে। নোলান খাবার নিয়ে ফিরে এসে দেখে চোখ খুলছে বিভা। অ্যাডের বাহু তে স্পর্শ করতেই চমকে উঠে। নোলান বলে,
“ব্রিভার জ্ঞান ফিরেছে। হালাল স্যুপ নিয়ে এসেছি , তুই ও খেয়ে নিস। আমি বাইরের দিক টা সামলাই।”
নোলান পথ আগাতেই বাঁধা দিয়ে অ্যাড বলল,”কোনো খবর পেয়েছিস?”
“ব্রিভার জ্ঞান ফিরেছে ওকে দেখ তুই। পরে কথা হচ্ছে এ বিষয়ে।”
কথার সমাপ্তি দিয়ে নোলান চলে যায়। অ্যাড ও কথা বাড়ায় না আর। বিভা হালকা পিট পিট করে তাকাচ্ছে। এই বি ষ সম্পর্কে বহু আগেই অবগত অ্যাড। বছর খানেক আগে এই ভয়াবহ বি ষা ক্ত বি ষ পান করেছিল সে। বেঁচে ফিরলে ও পুরো শরীর শক্তি হীন থাকে কয়েক দিন। বিভা কোনো মতে চোখ খুললে ও কথা বলতে পারে না। বাক শক্তি হারিয়েছে সে। কথা বলতে না পেরে চোখ মুখ অদ্ভুত হয়ে যায়।
“শান্ত হও তুমি। কয়েক দিন কথা বলতে পারবে না। এটাকে শর্ট টাইম বাক শক্তি হারানো বলে। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
অ্যাড এর কথায় দম ফেলে বিভা। দু চোখের কার্নিশে পানি জমেছে। খুব যত্ন নিয়ে সেই পানি টুকু মুছে দেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
“তোমার উডবি কে খুঁজে দিব আমি। জাস্ট সাত দিন সময় দাও আমায়। তবে কথা দিতে হবে তুমি একদম টেনশন করবে না। তোমাকে রেস্ট নিতে হবে তাই রেস্ট নিবে।”
দু দিকে মাথা কাত করে বিভা। অ্যাড উঠে দাঁড়ায়। প্যাকেট থেকে স্যুপ বের করে নিয়ে বাটি তে নামিয়ে নেয়। বিভা কে আধ শোয়া করে বসিয়ে নিজ হাতে স্যুপ খাইয়ে দেয়। নড়াচড়া অবধি করতে পারছে না বিভা। ক্ষণিকেই যেন শরীর মরীচিকা হয়ে গেছে।
নোলান এর পাশে বসে আছে রবার্ট। সামান্য চিন্তাগ্রস্ত সে। তার ফ্যাকাশে মুখ দেখে নোলান প্রশ্ন করল?
“তোমার কি মনে হয় ডেভিড নামের লোকটি ই সে?”
“আমার তেমনি মনে হচ্ছে। চুলের স্টাইল আর সার্জারি করলে ও চেহারার আদল কিন্তু এখনো স্পষ্ট। ইস্টন স্যার কে দেখালে কেমন হয়?”
“তোমার কি মনে হয় আমি ইস্টন কে দেখাই নি?”
“স্যরি স্যার।”
মাথা নিচু করে আছে রবার্ট। ছবিটির দিকে বার বার তাকাচ্ছে নোলান। নানান ভাবে দেখার চেষ্টা করছে। মনে হচ্ছে এই লোকটি আরাজ। কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে অ্যাড। রবার্ট হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে। ছবিটির দিকে বাঁকা চোখে তাকায় সে। নোলান বলে,
“আমি , রবার্ট এমনকি ইস্টন ওহ বলেছে এটাই এরাজ।”
“না এটা এরাজ নয়।”
“হোয়াট! আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এটা এরাজ। আর তুই দ্বিমত পোষন করছিস কোন হিসেবে!”
অদ্ভুত হাসে অ্যাড। কটাক্ষ করে বলে
“তিন বছর যাবত ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট এ আছিস ছয় বছর ধরে আমার সাথে কাজ করে যাচ্ছিস। এত বড় ভুল কি করে করিস?”
“অ্যাড কি বলছিস তুই?”
ভ্রু কুঁচকে তাকায় অ্যাড। ছবি টা তে তীক্ষ দৃষ্টি দিয়ে তাকায়। ফোন হাতে নিয়ে ইস্টন কে কল করে। রিসিভ হতেই বলে
“পুলিশের কাজ ছেড়ে দাও ইস্টন। জীবনের এত গুলো বছর পর ভুল টা করেই ফেললে। তোমার শকুনি চোখের থেকে ও এমন ষড়যন্ত্র কি করে বেঁচে যায়?”
“আম স্যরি এড। আমি কানের দিক টা লক্ষ্য করি নি। এত নিখুঁত কাজ যে প্রথম দেখাতেই বলতে বাধ্য হই।”
“এখন এসব বাদ দাও। যে চাল দিয়েছে এরাজ,সে চালের বাজিমাত করব আমি। প্ল্যান টা এমন ভাবে আগাবে যাতে মনে হবে এরাজের প্ল্যান টাই চলছে।”
“ওকে অ্যাড। আমি সে ব্যবস্থাই করছি। বাই দ্যা ওয়ে ব্রিভার শরীর কেমন আছে?”
“ফাইন নাউ। রাখছি আমি , তুমি একটু লক্ষ্য রেখো। কয়েক জন অফিসার পাঠাও। আমি চাই না ব্রিভার কোনো ক্ষতি হোক। সব জল কিন্তু এক দিকেই নিশানা করছে।”
অস্ট্রিয়ার ফাস্ট রোডগুলিতে ভ্রমণের জন্য, পর্যটকের প্রয়োজন হয় ইউরোপের “সড়ক” দ্রুত রাস্তা। অস্ট্রিয়া তে পর্যটক হিসেবে এসেছে অ্যাড। তাদের যে কার্ড ছিল সে কার্ড ব্যবহার করা যাচ্ছিল না। কারণ কয়েক মাসের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
অস্ট্রিয়া একটি খুব আকর্ষণীয় সেন্ট্রাল ইউরোপ পর্যটন গন্তব্য। একটি পর্বতশৃঙ্গ, ল্যান্ডলকড দেশ, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০০ মিটার উচ্চতার নিচে।অস্ট্রিয়ার কিছু প্রধান পর্যটন এলাকা কেন্দ্রে অবস্থিত এটি জার্মানি , চেক প্রজাতন্ত্র এবং উত্তর, হাঙ্গেরি এবং স্লোভাকিয়া দ্বারা পূর্ব, স্লোভেনিয়া ও ইতালিতে দক্ষিণে অবস্থিত।
পাহাড়ী অস্ট্রিয়া দর্শনীয় ট্রেন রুটের জন্য বেশ কয়েকটি সুযোগ। অস্ট্রিয়াতে দর্শনীয় ট্রেন রুটের সর্বোত্তম সুন্দর ট্রেন রুটগুলি পর্যটন দের জন্য ম্যাপ করা হয়।
অস্ট্রিয়ান ফেডারেল রেলওয়ে (ওইবিবি) ৫৭০০ কিমি রেল লাইনের একটি নেটওয়ার্ক চালায়। ক্ষুদ্র কোম্পানিগুলি আলপাইন রুটে লাইন চালায়। গ্রীষ্মে কেবল পর্যটকদের জন্য লাইন চলে।
ভিয়েনা থেকে সালজবুর্গ: ৩-৪ ঘন্টা, ১৫৯ মাইল
সালজবুর্গ থেকে ইন্সব্রুক: ২ ঘন্টা ৮৬ মাইল
মিউজিয়াম থেকে সলজবুর্গ: ১-২ঘন্টা ৭০ মাইল
ভিয়েনা থেকে ভেনিস: ৮-১০ঘন্টা ২৭৩ মাইল
ভেনিস এর বিশাল সমাবেশে এসে পৌছায় অ্যাড। নিজের পুরো লুক টাই বদলে ফেলেছে সে। অস্ট্রিয়া তে যে ষড়যন্ত্র চলছে তার বিনাশ ঘটাবেই আজ। ইস্টন কে চোখের ইশারা করে সে। হাত উঁচিয়ে সে বলে
“সবাই রেডি আছে।”
“ওকে।”
অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্ট এর মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান আজ। কোনো এক ভিনদেশীর সাথে প্রেমে জড়িয়েছে সে। তার ই জন্য বিশাল আয়োজন করা হয়েছে। নোলানের শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছে। উত্তপ্ত স্থান থেকে ফিরেছে কি না। তাকে দেখে অ্যাড ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,
“ঠিক আছিস তুই?”
“আমি ঠিক আছি। সমস্ত সিস্টেম আনলক করে দিয়েছি। প্রচন্ড পাওয়ার দ্বারা লক করা ছিল। যার কারণে তাপমাত্রা মাইনাস থেকে চল্লিশ হয়ে গিয়েছিল।”
“রিলাক্স কর তুই। সমাবেশ শেষ হওয়ার পূর্বেই ক্যামেরন এর মুখোশ খুলে যাবে। সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
“তবে কোনো ভাবে প্রিন্সেস হেনরি ক্যামেরন কে মেনে নিলে?”
অকস্মাৎ প্রশ্ন টি তাল গোল পাকিয়ে দেয়। সামান্য চিন্তাগ্রস্ত হয় অ্যাড। কিছুক্ষণ পর অতিশয় শীতল কণ্ঠে জবব দেয়।
“পিন্সেস হেনরির দ্য ডিকশনারির কথা ভুলে গেলি? সেখানে স্পষ্ট লেখা কারো মন নিয়ে খেলার এক মাত্র শাস্তি মৃ ত্যু। সেখানে নিজের মন কে নিয়ে খেললে শাস্তি টা নিশ্চয়ই কমে যাবে না। পিন্সেস হেনরি ডাফার টাকে শাস্তি দিবেন বলেই আমার বিশ্বাস।”
কথা টা বলেই থামে অ্যাড। খ্যাক করে কেশে আবারো বলে
“আমার ইচ্ছে হচ্ছে সোজা শু ট করে দিতে। এ ধরনের বিশ্রি মানসিক বিপর্যস্ত সম্পন্ন মানুষ কখনো ঠিক হবে না।”
ঝরা হাসে নোলান। ইস্টন ফাইল হাতে চলে আসে। নোলানের দিকে ইশারা করে বলে,
“আমি যা বলছি সবাই শুনো। সমাবেশ হয়ে গেলে অনেক এই আগ্রহ হারাবে। তাই আমি চাচ্ছি এখনি সমস্ত কিছু সামনে নিয়ে আসতে।”
“এখন কি কাজ টা করা উচিত হবে ইস্টন?”
“অতি চালাকের গলায় দড়ি নোলান। বিষয় টা যদি এমন হয় তাহলে নিশ্চয়ই চালাকির ফল পাবে ক্যামেরন ওরফে এরাজ।”
রবার্ট কথার ফাঁকে বলে
“স্যার এরাজ নয় আরাজ।”
কয়েক বার উচ্চারণ করে সে। তবে বার বার এরাজ ই বের হচ্ছে। এদের কান্ডে বিরক্ত হয় অ্যাড। খানিকটা দূরে সরে গিয়ে লক্ষ্য রাখে। কাঙ্খিত ব্যক্তিটির দেখা নেই। হাজার হোক পিন্সেস এর উডবি বলে কথা।
“নোলান এদিকে আয়। এই দেখ ডেভিড পর্দার পেছনে লুকিয়ে আছে। ছবি এডিট এর কারণে ডেভিড কে দেখতে এরাজের মতোই লাগছিল।”
“ইউ আর রাইট অ্যাড। তোর বুদ্ধি সত্যিই অসাধারণ।”
“আমি কাজে ফোকাস করব। কেউ বিরক্ত করবি না। সবাই লক্ষ্য রাখ কখন সমাবেশ শুরু হবে।”
“ওকে। বেস্ট অফ লাক অ্যাড। নিজের খেয়াল রাখিস।”
এক দুই তিন করে কাউন্ট করে অ্যাড। হঠাৎ করেই চোখ যায় লম্বাটে সিঁড়িতে। স্টাইল করে হেঁটে আসছে আরাজ যাকে ক্যামেরন নামে সবাই চিনে এখন। ব ন্দু ক তাক করে অ্যাড। তবে সরে যাওয়ার কারণে আর শু ট করা হয় না।ভারী নিশ্বাসে দম আটকে আসে ছেলেটার। বিভার মায়াবী মুখটা ভাসে দু চোখে।
চলবে…..
কলমে ~ ফাতেমা তুজ নৌশি