#প্রেমময়_প্রহরে_তুমি💖
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৪
জিরিশার হালকা ভয় হচ্ছে।তাই সে মাহাজের কিছুটা কাছে আসে।মাহাজ মুচকি হেসে ওর হাত ধরে।জিরিশাও লাজুক হাসে।ওরা বেশ কিছুসময় হাঁটার পর একটা ফুসকার দোকান দেখে।জিরিশা অবাক হয়।গ্রামে রাত দশটার সময় ফুসকার দোকান কোথা থেকে আসলো।সে মাহাজকে বলে,,
“শুনুন না আমার না ফুসকা খেতে ইচ্ছে করছে”
“তো খাবে।চলো চলো”
জিরিশা বেশ কয়েকটা ফুসকা খায়।মাহাজকেও খাইয়ে দেয়।জিরিশা ফুচকাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করে,,,
“মামা আপনি এতো রাতে আছেন যে”
ফুচকাওয়ালা হেসে বলে,,
“তুমি জানো না মা তোমার বর সে কি পাগলামি করলো বলল মামা আপনি থাইকেন আপনাকে আমি বেশি টাকা দেবো।তাও রাজি হয়নি আমি কিন্তু ও অনেক করে বলছিলো বলে আছি।যাই বলো না কেনো মা তোমার ভাগ্য ভীষণ ভালো।ও ছেলেটাও অনেক ভালো”
জিরিশা মুচকি হাসে।তারপর তার থেকে দূরে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলা মাহাজের দিকে তাকায়।লোকটা এতো পাগলামি করছে কেনো।সে হাসে,সে চাইতো তাকে কেউ ভীষণ ভালোবাসুক নিজের একটা মানুষ হোক তার।হ্যা তার হয়েছে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা একান্তই তার।মাহাজ ফোন রেখে ফুচকাওয়ালাকে টাকা দিয়ে জিরিশার হাত ধরে নিয়ে আসে।
ওরা হাঁটতে থাকে।জিরিশা মনে মনে ভাবে,এই পথ যদি শেষ না হতো তাহলে ভীষণ ভালো হতো।মাহাজের ইচ্ছে করছে এখানেই সময়কে থামিয়ে দিতে।তার পাশের রমনীকে দেখে সে এই ভাবেই সারাজীবন পার করতে পারবে।মাহাজ একটা বাইকেরও ব্যবস্হা করতে চেয়েছিলো কিন্তু এখানের কিছু না চেনায় করেনি।ওরা বাড়ি ফিরে আসে।
ফাহা জিরিশাকে ভীষণ লজ্জা দেয়।জিরিশা ফাহাকে মারে কয়েকটা।তারপর দু’জন গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পরে।
১৬.
আজকে মাহাজ জিরিশা ফাহা ফিরে আসবে।সবাইকে বিদায় দিয়ে চলে আসে ওরা।ওরা তিনজন একটা সিএনজি ভাড়া করে চলে আসে।আসতে ১:৩০ মিনিট লাগে।মাহাজ জিরিশা আর ফাহাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে আসে।ওরা দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়।
মাহাজ জিরিশাকে বাসায় পৌঁছে দেয়।জিরিশা বাসায় এসে ঘুম দেয়।জার্নি করার ফলে ভীষণ ক্লান্ত সে।অপরদিকে মাহাজ আর ফাহাও বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুম দেয়।
জিরিশা ঘুম থেকে উঠে পরে।মুখ ধুয়ে এসে ফোন করে ফাহাকে।ফাহা জিরিশার ফোন কলে ঘুম থেকে উঠে।ও ফোন রিসিভ করে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে,,
“কি হইছে কুত্তি এখন ফোন দিয়েছিস কেনো?”
জিরিশা দাঁত কেলিয়ে বলে,,
“তোকে জ্বালাতে ইচ্ছে করলো তাই”
ফাহা বিরক্ত হয়ে বলল,,,
“যা নিজের বরকে গিয়ে জ্বালা আমাকে কেনো জ্বলাইতে আইছিস”
জিরিশা বলে,,
“আগে বেস্টফ্রেন্ড পরে বর।কারণ আমার জীবনে তুই আগে।হ্যা সবার আগে তুই।”
“হইছে পাম মারা বাদ দে।আমি জানি সব।ভাইয়াকে পাইলে যে আমাকে ভুইলে যাইস তা আমি খুব ভালো করেই জানি”
জিরিশা হাসে।তারপর হুট করে কল কেটে দেয়।তারপর আপনমনে হেসে বলে,তুই প্রতিবার এমন করিস আজ আমি করলাম।ফাহা বিরক্ত হয়।মেয়েটা তার কাজ তারসাথেই করছে।
১৭.
কেটে গিয়েছে মাঝে একটা মাস।এখন মাহাজ আর জিরিশার সম্পর্ক কিছুটা উন্নতি হয়েছে।আজ শুক্রবার তাই সবাই বাড়িতেই আছে।জিরিশা মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে।জিরিশা ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসে।দেখে তাশুরা আর সাহিদ কি নিয়ে কথা বলছে।তাকে দেখে সাহিদ ইসলাম নিজের কাছে ডাকে।জিরিশা বাবার পাশে গিয়ে বসে।সাহিদ চিন্তিত মুখে বলে,,
“জিরিশা মাহাজ চাইছে আজকে তোমাদের বিয়েটা হয়ে যাক।”
জিরিশা চমকে উঠে।কই কালকে রাতেও তো কথা হলো কিন্তু মাহাজ তো তাকে কিছু বললো না।জিরিশা বলে,,
“বাবা এখনই কেনো বিয়েটা তো এইচএসসি পর হওয়ার কথা ছিলো।”
সাহিদ বলেন,,
“হওয়ার কথা ছিলো তখনই হবে কিন্তু মাহাজ আকদটা এখন করে রাখতে চাইছে”
জিরিশা বলে,,
“তুমি যা ভালো মনে করো তাই করো বাবা”
জিরিশা রুমে চলে আসে।ফাহাকে ফোন করে।ফাহা রিসিভ করতেই ও বলে,,
“তোর ভাই কি পাগল হয়ে গিয়েছে।আজকেই বিয়ে কেনো?”
ফাহার কাছ থেকে মাহাজ ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলে,,
“আমি পাগল তো হয়েছিই তোমার জন্য এখন তোমাকে বানাবো”
জিরিশা কল কেটে দেয়।বিকালের দিকে সবাই আসে।জিরিশাকে তার আম্মু একটা শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে।জিরিশা বসে আছে নিজের রুমে ফাহা তার পাশে।কিছুক্ষণ পর কাজি আসে।জিরিশা ফাহার হাত চেপে ধরে।ফাহা চোখের ইশারায় শান্ত হতে বলে।কাজি কবুল বলতে বলে।
জিরিশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,,”কবুল”
জিরিশা মাহাজের হয়ে গেলো।কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে জিরিশা কারো অর্ধাঙ্গিনী।কারো বউমা কারো ভাবি হয়ে গেলো।কাজি চলে যেতেই ফাহা জিরিশাকে ঝাপটে ধরলো।তার যে ভীষণ আনন্দ হচ্ছে।মাহাজ আর জিরিশাকে একা একটা রুমে রেখে গিয়েছে ফাহা কথা বলার জন্য।
জিরিশা জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মাহাজ জিরিশার শাড়ির ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে কোমড়ে হাত দেয়।শীতল স্পর্শ পেয়ে জিরিশা চমকে ওঠে।জিরিশা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে মাহাজ জিরিশার কানে ফিসফিস করে বলে,,
“জিরিশাপাখি মাত্র তো একটু ছুঁয়েছি তাতেই এমন ফ্রিজ হয়ে যাচ্ছো যখন পুরোপুরি”
জিরিশা দু’হাত দিয়ে কান চেপে ধরে বলে,,
“চুপ করুন প্লিজ আপনি বাজে কথা বলতিছেন কেনো?”
মাহাজ জিরিশাকে ছেড়ে দিয়ে বাঁকা হেসে বলে,,
“বাজে কথা বলছি আমি!তোমার তাই মনে হয়।আচ্ছা এখন একটু বাজে কাজও করে দেখাই”
জিরিশা পেছনে সরে যায়।সে মাহাজকে বলে,,
“না না”
মাহাজ আলতো হেসে জিরিশাকে জড়িয়ে ধরে।তারপর বলে,,
“দেখো প্রহরটা প্রেমময় না!আমি তোমাকে এক প্রেমময় প্রহরে চাই নিজের করে চাই।সেই #প্রেমময়_প্রহরে_তুমি থাকবে। শুধু তুমি আমি।”
জিরিশাও মাহাজকে জড়িয়ে ধরে।মাহাজ জিরিশাকে ছাড়তেই জিরিশা বলে,,
“আচ্ছা শুনুন আমি না কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই আপনায়।সত্যি বলতে হবে”
মাহাজ বলে,,
“তোমার যা ইচ্ছা জিজ্ঞেস করতে পারো।আমি সত্যি বলবো বলো”
“আপনার কতো মেয়েদের সাথে রিলেশন ছিলো।আর আপনি এতো রিলেশন কেনো করতেন”
মাহাজ হাসে।জিরিশা তাকায় মাহাজের দিকে।হাসলে ভীষণ কিউট লাগে মাহাজকে।একটু অবাক ও হয়।মাহাজ বলে,,
“বলবো তোমায় সব কিন্তু আজ না।আমাদের ফার্স্ট নাইটে”
চলবে~