১.
মাঝরাতে বেস্টফ্রেন্ডের ভাইয়ের সাথে বিয়ের কথাবার্তা চলছে শুনে জিরিশার ঘুম উধাও হয়ে গেলো।সে বিষ্মিত হলো সাথে ভড়কেও গেলো।যখন জানলো মাহাজও এই বিয়েতে রাজি তখন ভড়কে যাওয়া আর বিষ্মিতি রা’গে পরিণত হলো।সে ভাবতেই পারেনি মাহাজ ভাইয়া রাজি হবে কখনো এই বিয়েতে।জিরিশা নিজের মুঠোফোনের দিকে তাকিয়ে পরক্ষ করে নিলো।রাত তিনটা বাজে।এই সময় ফোন করে মজা করার মতো মেয়ে ফাহা না।
তাও সে সিরিয়াস কন্ঠে বলল,,,”তুই কি মজা করছিস আমার সাথে ফাহা দেখ এই রাতের এইসব ফালতু মজা ভালো লাগছে না”
ওপাশ থেকে ফাহা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,,,,”আশ্চর্য আমি এই মাঝ রাতে তোকে ফোন দিয়ে মজা করবো তোর তাই মনে হচ্ছে।আমি মোটেও মজা করছি না জিরিশা সত্যি বলছি আমি আম্মু আর বাবাকে তোদের বিয়ের ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে শুনেছি”
জিরিশা শোয়া থেকে উঠে বসে।তারপর তপ্তশ্বাস ফেলে বলে,,”মাহাজ ভাইয়া রাজি তোকে কে বলল”
ফাহা ক্লান্তিভরা কন্ঠে উত্তর দিলো,,”আমি আম্মুকে বলতে শুনেছি যে ভাইয়া নাকি রাজি!আমি নিজেও কিছু বুঝতে পারছি না বিশ্বাস কর”
জিরিশা চিন্তায় পরে গেলো।সে তো জীবনেও মাহাজের মতো ছেলেকে বিয়ে করবে না।আর মাহাজ ভাইয়া তো তাকে পছন্দ করে না তাহলে রাজি কেনো হলো তাই বুঝতে পারছে না জিরিশা।সে তো কখনো মাহাজ ভাইয়াকে তার দিকে তাকাতে পর্যন্ত দেখলো না কিন্তু সেই ছেলে তার সাথে বিয়েতে রাজি হলো।মাহাজের মতো ছেলের সাথে সারাজীবন থাকতে হবে ভেবেই জিরিশার হাত পা ছুড়ে কাঁদতে ইচ্ছা করছে।
“কিরে কই হারায় গেলি?কি করবি এখন”
জিরিশা ভাবনার জগৎ থেকে বের হয় ফাহার কথা শুনে।ও বলে,,,
“আমি কিছুতেই এই বিয়ে করবো না।মাহাজ ভাইয়ার মতো লোককে বিয়ে করা অসম্ভব”
ফাহার অবাক হওয়ার কথা থাকলেও সে অবাক হয় না কারন সে জানে তার ভাইয়া কেমন!সে জিরিশাকে বলে,,”এখন ঘুমা অনেক রাত আমারও ঘুম পাচ্ছিল কালকে পরীক্ষা বায়োলজি তাই পরছিলাম এতো সময়”
জিরিশা কল কেটে দিলো।তার আর আজকে ঘুম আসবে না চিন্তায়।মাহাজের কথা মনে আসতেই তার চোখের সামনে ভেসে উঠল এক সুদর্শন পুরুষের চেহারা,গম্ভীর ফর্সা লম্বা লোকটাকে প্রথমে সবাই দেখলে ভাববে অতন্ত্য ভদ্র একটা ছেলে কিন্তু সে তো জানে সব মাহাজের ব্যাপারে।এগুলো জেনে কোনো মেয়েই রাজি হবে না বিয়ে করতে।
জিরিশার মনে পরে কিছুদিন আগের কথা জিরিশা ফাহাকে না বলেই চলে গিয়েছিলো তাদের বাসায় কিন্তু যে দেখে বাসায় ফাহা নেই।দরজাটা মাহাজই খুলেছিলো,আর জিরিশা না দেখে ভেতরে ঢুকতে গিয়ে মাহাজের বুকের সাথে ধাক্কা খেয়েছিলো।ভীষণ লজ্জা পেয়েছিলো সে।আর সেদিনই প্রথম মাহাজ তার সাথে কথা বলেছিলো সাথে জিরিশাও।কথা না আসলে মাহাজ বলেছিলো আর জিরিশা কথার উত্তরে মাথা নাড়িয়ে ছিলো।
মাহাজ রাশভারি গম্ভীর কন্ঠে বলেছিলো,,,
-“ফাহা বাসায় নেই তুমি বসো।ও কিছু সময় পরই চলে আসবে।”
মাহাজের কথার উত্তরে জিরিশা মাহাজের দিকে না তাকিয়ে মাথা নেড়েছিলো শুধু।আর মাহাজ কথাটা বলেই নিজের রুমে চলে গিয়েছিলো।জিরিশা অস্বস্তি আর লজ্জায় ড্রইংরুমে জড়োসড়ো হয়ে বসেছিলো।ফাহা আসতেই জিরিশা ফাহা বেচারিকে শুধু শুধু বকেছিলো।
২.
জিরিশা রাতে কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পরেছিলো।সূর্যমামা জানালা দিয়ে উকি মারতেই ঘুম ভেঙে গেলো জিরিশার।ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখে ফজরের নামাজের ওয়াক্ত শেষ।আজকে ভোররাতে উঠার জন্য তার নামাজটা মিস হয়ে গেলো।জারিশা ফ্রেশ হয়ে নেয়।নিজের রুম থেকে বের হতেই দেখে তার বাবাই আম্মু মিলে কথা বলছে কিছু একটা নিয়ে তাকে আসতে দেখে চুপ হয়ে যায়।
জিরিশার দেখে তার বাবা সাহিদ ইসলাম হেসে বললেন,,,
“মামুনি আয় খেতে বস,কলেজে যাবি তো নাকি”
জিরিশা জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে,,,,
“হ্যা বাবা চলো খেতে।কলেজে যাবো তো”
জিরিশা তার বাবার সাথে টেবিলে খেতে বসে।কিছু সময় পর তার ভাই আসফিও চলে আসে।আসফি আর জিরিশা দুই ভাই বোন,জিরিশা বড় আর আসফি ছোট।জিরিশা পরে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে, আসফি ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে উঠেছে এবার।প্রচুর দুষ্টু।জিরিশা কোনোমতে খেয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পরে কলেজের উদ্দেশ্যে।
কলেজে এসেই জিরিশা তার দুই বান্ধবীর কারো সাথেই কথা বলে না ঠিকমতো।সারাটা ক্লাস জিরিশা উদাস হয়ে ছিলো।মৌ আর হিরা তাকে হাসানোর আপ্রান চেষ্টা করলেও হাসাতে পারেনি জিরিশাকে। চঞ্চল জিরিশা আজ কেমন মনমরা,উদাস বিষন্নতায় ডুবে আছে।
প্রথম ক্লাস করেই সে হিরা আর মৌকে বলে,,,,
“আমি আর ক্লাস করবো না।তোরা করলে কর নাহলে চল”
মিহা বলে,,,”আজকে একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস আছে দোস্ত সেইটা করি তারপর যাই”
জিরিশা বলে,,,,”আচ্ছা তোরা থাক তাহলে আমি ফাহাকে নিয়ে গেলাম।”
জিরিশা ওদের কথা বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের ক্লাস থেকে বের হয়ে বিজ্ঞান বিভাগের সামনে আসে।সে মানবিকের ছাত্রী আর ফাহা বিজ্ঞান বিভাগের।জিরিশাকে দেখে ফাহা ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসে।ওরা দুজন চলে আসে ঘাটে।আজকে আবহাওয়াটা মেঘলা মেঘলা।বাতাস হচ্ছে অনেক।ওরা নদীর পাড়ে কিছু সময় হাটাহাটি করলো।চা ওর্ডার দিয়ে ওখানে একটা বেঞ্চে বসে পরলো দু’জন।
চা খাওয়ার মাঝেই সামনে তাকাতে জিরিশা একটা জিনিস দেখতে পেলো।সে বিষ্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।ফাহাকে খোঁচা দিয়ে সামনে তাকাতে বলল।ফাহা নিজেও অবাক।এটা বিয়ে কথাবার্তা হওয়ার আগে দেখলে ওদের দুজনের কেউই অবাক হতো না।কারণ জানে মাহাজ কেমন।গম্ভীর বদমেজাজি হলেও এক নাম্বারের মেয়েবাজ।এক কথায় প্লেবয়।কিন্তু তাকে দেখলো কেউই তা বিশ্বাস করবে না।
জিরিশা ফাহাকে ডেকে ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,,,
“দোস্ত আমি যা দেখছি তুইও কি তাই দেখছিস”
ফাহা ঘোরের মধ্যে আছে।সে ঘোরের মধ্যে উত্তর দিলো,,,
“আমিও তাই দেখছি মাহাজ ভাইয়া দাঁড়িয়ে কথা বলছে রাত আপুর সাথে”
ফাহা আর জিরিশা ভ্রু কুচকে ওদের কার্যকলাপ দেখতে লাগলো।মাহাজ আর রাত দু’জন একটা টেবিলে বসলো।রাত হলো মাহাজের এক্স। রাত মাহাজর হাত ধরলো।এটা দেখে জিরিশা আর ফাহা চোখ বড়বড় করে একে অপরের দিকে তাকালো।কিন্তু পর মুহুর্তে অবাকের শীর্ষ পর্যায়ে চলে গেলো দু’জন। কারণ মাহাজ রাতের থেকে জোড় করে হাত ছাড়িয়ে নিয়েছে।
হঠাৎ জিরিশার নিজের হাতের মুঠোফোনের দিকে চোখ পরে।হাতের মুঠেফোনটা দেখে তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।সে ফাহাকে বলে,,,
“দোস্ত আম্মু বাবা যদি মাহাজ ভাইয়াকে এই অবস্থায় দেখে তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের বিয়েটা ভেঙে দিবে।”
ফাহা জিরিশার দিকে ফিরে বলে,,,
“মনে তো তাই হয় কিন্তু এখন আঙ্কেল আন্টিকে কোথায় পাবো”
জিরিশার ফাহার মাথায় গাট্টি মেরে হাতের দিকে তাকাতে বলে।ফাহা হাতের দিকে তাকিয়ে জিরিশার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।অতঃপর ওরা যখনই ছবি তুলতে যাবে তখনই দেখে মাহাজ আর রাত নেই।জিরিশা তাড়াতাড়ি করে উঠতে যাবে তখনই একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলে।
.
.
#চলবে…!
#প্রেমময়_প্রহরে_তুমি💖
#ইশা_আহমেদ
#সূচনা_পর্ব
[আসসালামু আলাইকুম।নতুন গল্প নিয়ে হাজির হলাম কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]