#চুপিচুপি_ভালোবাসি💞
Writer:#আয়েশা_আক্তার
#Extra_Part
🍁
মারুফার বিয়ের সব কাজ শেষ। এখন বিদায়ের পালা। মারুফা তো সেই কখন থেকে কেঁদেই চলেছে। কাকি ওর সামনে না কাঁদলেও আড়ালে গিয়ে ঠিকই কান্না করছেন। ওদের কান্না দেখে এখন আমার ই কান্না পেয়ে যাচ্ছে। আয়াত ভাইয়া অসহায় ভাবে মারুফার দিকে তাকিয়ে আছেন। বিদায়ের সব কাজ শেষ করে ওকে গাড়িতে তোলা হলো। নির্ভীকদের বাড়িতে পৌঁছাতেই বড় কাকিমনি (আয়াত ভাইয়ার মা) নিজে আয়াত ভাইয়াদে বরণ করে ঘরে তুললেন। আয়াত ভাইয়ার রুমটা রজনীগন্ধা আর গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। মারুফাকে ভেতরে আনার পরই সবাই মিলে ঘিরে বসলো। আয়াত ভাইয়া মনে হয় ওনার বন্ধুদের সাথে আড্ডায় ব্যাস্ত। এই রুমে মারুফার সাথে হাসি তামাশা করছে নূপুর আর দিশা। ওদের এই কাজ কারবার ভালো নাগছে না আমার। তাই আমি রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। সবাই নিজেদের কাজে ব্যাস্ত। ঠিক তখনই মাথায় এলো আমি কোন রুমে থাকবো? বাড়ি ভর্তি মেহমান। সব রুমে নিশ্চয়ই গাদাগাদি করে থাকবে সবাই কিন্তু আমি তো এতো লোকজনের মধ্যে থাকতে পারি না। কেমন জানি দমবন্ধ দমবন্ধ লাগে। ধুর এসব ভাবার থেকে ভালো মামনিকে কাজে হেল্প করি। এই ভেবে রান্নাঘরের দিকে যেতেই কিছু কথা কানে এলো। একটু কাছে গিয়ে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখলাম ওখানে মামনি, কাকিমনি সহ আরো কয়েকজন মহিলা রয়েছেন। একজন বলছে,,
–“বড় ভাবী! আয়াতের বিয়ে তো হয়ে গেল এবার তোমার নির্ভীকের বিয়ে কবে দিবে? ওরা দুইজন তো সমবয়সী তাহলে আর দেরি করে কি লাভ বলো! এবার নির্ভীকের জন্য পাত্রী দেখো।”
ওনার কথার রেশ ধরে আরেকজন বললেন,,
–“নির্ভীক বড়ই ভালো ছেলে। দেখতে শুনতে তো বেশ ভালো ওর জন্য তো সুন্দরী মেয়ে ঘরে আনতে হবে তাইনা। আমি বলি কি আমার বোনের একটা মেয়ে আছে। বড় ভালো মেয়ে বুঝলে, একদম ফর্সা গায়ের রং। নির্ভীকের সাথে মানাবে ভালো।”
কাকিমনি বললেন,,
–“নির্ভীকের বিয়ে নিয়ে আপনাদের ভাবতে হবে না ভাবী। আমাদের ছেলে আমরা বুঝে নিবো।”
উনাদের কথা আর শুনতে ইচ্ছা করছেনা। মন খারাপ হয়ে গিয়েছে। ধুর! কেন যে আসতে গেলাম। না আসলেই ভালো হতো। আচ্ছা এনারা নির্ভীকের পাশে আমাকে দেখে কেমন রিয়্যাক্ট করবে? তার হাসি মুখে মানবে নাকি কি কটুক্তি করবে? এসব ভেবে ঘুরতেই দেখি নির্ভীক দাঁড়িয়ে আছেন। আজব মানুষ পেছনে এসে এমন খাম্বার মতোন দাঁড়িয়ে থাকার কোন মানে হয়? আবার কেমন রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে? এমন রেগে যাওয়ার কারণ কি? আমি উনাকে কিছু বলবো তার আগেই উনি আমার ডানহাত টেনে আমার সামনে ধরে জোর গলায় বললেন,,,
–“এটা কি করে হলো? আর কাটা হাত নিয়ে এরকম এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? তোমার কি কোন বুদ্ধি শুদ্ধি নেই নাকি?”
উনার কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। কাটা হাত মানে? হঠাৎ হাতের দিকে চোখ পড়তেই মুখ হাঁ হয়ে গেল আমার। আমার হাত কেটে রক্ত বের হচ্ছে। আরে হাত কখন কাটলো? আর কিভাবেই বা কাটলো? এতোক্ষণ তো বুঝতেই পারিনি কিন্তু এখন হাত জ্বালা করছে। আমি অসহায় মুখ করে উনার দিকে তাকালাম। উনি এখনো রাগী চোখেই তাকিয়ে আছেন।
–“কি হলো বলো!”
আমি এখন কি বলবো? আমি নিজেই তো জানিনা এটা কি করে হলো? কখন হলো তাহলে উনাকে কি বলবো? উনি বললেন,,
–“এখন এটা বলো না যে তুমি জানোই না যে তোমার হাত কেটে গিয়েছে।”
আমি উপর নিচে মাথা নাড়ালাম। অর্থ আমি সত্যিই জানি না। উনি মাথায় হাত দিয়ে বিড়বিড়িয়ে বললেন,,
–“এ কাকে বিয়ে করেছি আমি?”
–“কি!”
–“চুপ! ঐ কোন খেয়ালে থাকো তুমি।”
তারপর উনি চিৎকার করে মামনি কে ডাকলেন।মামনি এসে আমার হাতের দিকে তাকাতেই আতকে উঠলেন। তাড়াতাড়ি করে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এলেন। নির্ভীক মামনির হাত থেকে বক্সটা নিয়ে এ্যান্টিসেপ্টিক লাগিয়ে দিলেন। মামনি জিজ্ঞেস করছে,,
–” এসব হলো কি করে?”
নির্ভীক বললেন,,
–“উনি জানলে তো বোলবে। ওকে খুঁজতে খুঁজতে দেখি রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছে। হঠাৎ ওর হাতের দিকে নজর যেতেই দেখি রক্ত! ওকে জিজ্ঞেস করতেই কি বলল জানো? বললো ও নাকি জানেই না কখন ওর হাত কেটে গিয়েছে? তাহলে বলো কত বড় কেয়ারলেস এই মেয়ে! নিজের একফোঁটাও খেয়াল রাখে না। সারাদিন এখানে ওখানে ছুটে বেড়ায় আর হাত পা কেটে বসে থাকে। খাওয়া-দাওয়ার ও ঠিক ঠিকানা নেই। এক বেলা খায় কি তিন বেলা খায় না। কলেজে গেলেও ওকে জোর করে ক্যান্টিনে নিয়ে গিয়ে খাওয়াতে হয় আর যেদিন একটু পেশেন্ট দের নিয়ে ব্যাস্ত থাকি সেদিন তো কথাই নেই! আল্লাহর নামে সেদিন দুপুরে না খেয়েই থেকে যাবে। তুমিই বলো ও কি বাচ্চা নাকি? ওকে সব কাজ বলে বলে করাতে হবে? নিজের যত্ন ও কি ঠিকঠাক মতো করতে পারে না? বেয়াদব মেয়ে! সবসময় আমাকেই বলে দিতে হবে শর্মি এটা করো না, এখন খেয়ে নাও, নিজের খেয়াল রাখো? তাতে নাকি আবার ডক্টর হবে। নিজের খেয়াল রাখতে পারে না সে নাকি অন্যের চিকিৎসা করবে! আচ্ছা মা তুমিই বলো আমি সব কাজ ফেলে ওর পেছনে ছুটবো নাকি?
উনার এতো এতো কথার ঝারে নিজেকে এখন সত্যি সত্যি বাচ্চা মেয়ে মনে হচ্ছে। এতো কথা শুনানোর কি আছে? নাহয় একটু হাত ই কেটেছে কিসের কি মলম লাগাবে তা না ঝাড়ি মেরে চলেছে? আমি মামনির দিকে কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকালাম। উনি মুখ টিপে হাসছেন।
–“মামনিইই!!”
–“এই ছেলে থাম তো! আমার মেয়েটাকে এভাবে বকছিস কেন? একদম বকবি না বলে দিলাম। বাচ্চা মেয়ে তো!”
উনি বললেন,,
–“এ্যহ্ বাচ্চা মেয়ে দুদিন পর বাচ্চার মা হবে আর এখন ও উনি বাচ্চাই আছেন। মা আমার কথাও তো একটু ভাবো! আমি আমার বাচ্চাদের পেলে বড় করবো নাকি তাদের মাকে! বাচ্চার মা ই যদি বাচ্চাদের মতো বিহ্যাভ করে তাহলে,,,”
মাঝখান থেকে কাকিমা বললেন,,
–“আরে থাম নির্ভীক থাম! অনেক হয়েছে। ওকে নিয়ে ঘরে যা আমি তোদের খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
নির্ভীক ও আর কিছু বললেন না কিন্তু পাশে থাকা মহিলাদের কথা কানে এলো। উনারা একে অপরকে বলছেন,,
–“কে এই মেয়ে? আর নির্ভীক এসব বলছে কেন? ছেলে কি তবে ভূল রাস্তায় চলে গেল।”
আরেকজন বললেন,,
–“আর মেয়েটাও বা কেমন?”
নির্ভীকও হয়তো শুনেছেন। উনি বললেন,,
–“আরে আন্টি! আপনাদের তো দেখছি আমাকে নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল। তো আপনাদের কৌতুহল টা দূর করে দিচ্ছি। এইযে এই মেয়েটাকে দেখছেন (আমাকে দেখিয়ে)
এ হচ্ছে আমার বউ! বিয়ে করা বউ। আর আমাদের বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়েছে।”
এতটুকু বলেই উনি আমাকে টেনে নিয়ে এলেন ওখান থেকে। আসার আগে মামনির হাসি মুখটা চোখে পড়লো আমার। উনার হাসি দেখে আমিও একটা হাসি উপহার দিলাম।
_________________________
রাত ২ টো।
নির্ভীকের রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি আমি। রুম খালি না থাকায় আমাকে এখানেই থাকতে বলেছেন মামনি। হাতে ফোন নিয়ে বারবার মারুফার ফোনে কল করছি। এ পর্যন্ত ৭ বার দিয়েছি আরো ৩ বার দিবো। প্রত্যক বার ফোন ধরে ঝাড়ি মারছে আমায়। আমিও উল্টো ঝাড়ি মেরে ফোন কেটে দিচ্ছ। ওকে বলেছিলাম ওর বাসর রাতে গুনে গুনে ১০ বার কল করবো। আহা এখন ওকে জ্বালানোর মজাই আলাদা। সেই কাজটিই করে চলেছি আমি। কারোর পায়ের আওয়াজ এ সচকিত হলাম। কেউ একজন এদিকেই এগিয়ে আসছে। ডানদিকে তাকাতেই দেখলাম নির্ভীক। উনার চোখের দিকে তাকিয়ে গলা শুকিয়ে গেল আমার। ভয়ে রীতিমত কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছে। কেমন নেশাক্ত চাহুনী উনার! আমি কয়েক কদম পিছিয়ে গেলাম। উনি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছেন আমার দিকে। হঠাৎ কিছু একটা লক্ষ্য করে থেমে গেলাম আমি। চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম উনার দিকে। দুহাত সামনে এনে ভাঁজ করে দাঁড়ালাম । উনি কিছুটা এগিয়ে এসে আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে থেমে গেলেন। আমি চোখে মুখে ঘোর লাগা ভাব এনে উনার দিকে এগোতে লাগলাম। উনি হয়ত এমন কিছু আশা করেননি। এবার আমি এগোচ্ছি আর উনি পেছাচ্ছেন। আমি বললাম,,
–“কি হলো! পিছিয়ে যাচ্ছেন কেন?”
–“তুমি এগোচ্ছো কে,কেন?”
–“একটু আগে তো আপনি এগোচ্ছিলেন তাই না?”
উনি রেলিং এর সাথে আটকে গিয়েছেন। আমি ওনার একদম কাছে গিয়ে দাড়াতেই উনি স্টিল দাঁড়িয়ে গেলেন।
একটু উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন।
–“আপনি মেয়েদের মতো বিহ্যাভ করছেন কেন?”
–“কারণ তুমি ছেলেদের মতো বিহ্যাব করছো?” (চোখ মুখ খিচে ধরে)
উনার এমন কান্ড দেখে শব্দ করে হেসে ফেললাম আমি। আসছিলো আমাকে ভয় দেখাতে হুহ। আমিও কি কম নাকি। ওনার ট্রিকস উনার উপরই অ্যাপ্লাই করলাম। আমার হাসির শব্দে নিচতলা থেকে নিহাল চাচ্চু বলে উঠলেন,,
–“কি ব্যাপার আম্মু? এতো হাসছো কেন?”
নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম,,
–“কেউ একজন আমাকে ভয় দেখাতে এসেছিলো এখন সে নিজেই টাস্কি খেয়ে আছে। তাই এতো হাসছি।”
–“এটা কিভাবে করলে?”
–“সেটা বলা যাবে না চাচাজান! সিক্রেট!”
বলে পেছনে ঘুরতেই পুরো জমে গেলাম আমি। উনি আমার দুপাশে রেলিং এ হাত দিয়ে আমার দিকে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছেন। নড়াচড়ার জন্য এক ইঞ্চি জায়গাও খালি নেই। আমি ভয়ে ভয়ে উনার দিকে তাকালাম। উনি ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,,
–“আমার সাথে মজা করার শাস্তি তো তোমাকে পেতে হবে বউ। তখন না হয় ভয় দেখানোর জন্য আসছিলাম। কিন্তু এখন কি করবে তুমি? কিভাবে বাঁচাবে নিজেকেই?”
আমি কয়েকটা শুকনো ঢোঁক গিলে উনার দিকে তাকালাম। এবার কি করবো আমি!
চলবে..!!😜