চুপিচুপি ভালোবাসি পর্ব ১১

0
886

#চুপিচুপি_ভালোবাসি (পর্ব ১১)
#আয়েশা_আক্তার
·
·
·
ক্লাসে ঢুকতেই তাশা এসে সামনে দাঁড়ালো। সকাল সকাল এই মেয়ে কেন সামনে পরলো কে জানে? কিছু ঘটাবে সেটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছি। নাহলে এমনি এমনি আমার সামনে এসে দাড়ানোর মেয়ে তো এ নয়। কোন কুক্ষণে যে এই চুরেলের সাথে পরিচয় হয়েছিলো কে জানে? সেই ক্লাস নাইন থেকে আমার পেছনে পরে আছে। আচ্ছা! দুনিয়াতে কি আর কোন মেডিকেল কলেজ ছিলো না যে ওকে এখানেই ভর্তি হতে হলো! আমি আর নিলা তাশাকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের জায়গায় গিয়ে বসলাম। ঐ তাশা নামক শয়তান মেয়ের সাথে কথা বলে নিজের মুড নষ্ট করার কোন মানেই হয় না। তাই ওর দিক থেকে নজর সরিয়ে ব‌ইয়ের দিকে মনোযোগ দিলাম। কিন্তু কেউ একজন আমার হাত থেকে ব‌ইটা নিয়ে নিলো। এইভাবে কে আমার ব‌ই নিয়ে নিলো দেখার জন্য উপর দিকে তাকাতেই দেখলাম তাশা ব‌ই হাতে নিয়ে হেলে-দুলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর এমন আজব ব্যাবহার কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না আমার। আমি বোঝার চেষ্টা করছি একচুয়ালি কি করতে চাইছে ছি মেয়ে? নিলার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেও রাগী চোখে তাশার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাশার হাত থেকে ব‌ইটা কেড়ে নিয়ে বললাম,,

–“কি সমস্যা তোর?”

–“কোন সমস্যা নেই বেইব! একচুয়ালি আমি আজ ব্যাপক খুশি তাই ভাবলাম তোদের সাথে একটু আমার খুশির কারণ টা শেয়ার করি। জানতে চাইবি না আমার খুশির কারণ!!”

ওর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে এলো আমার। এই মেয়েটা হঠাৎ নিজের খুশি আমাদের সাথে কেন শেয়ার করছে? কিছু তো ব্যাপার নিশ্চয়ই আছে! নিলা বলল,,

–“আজ সূর্য উঠেছে তো? না মানে তুই আমাদের সাথে নিজের খুশি শেয়ার করতে চাইছিস ব্যাপার টা একটু উইয়ার্ড! তা আমাদের সাথে নিজের কোন খুশি শেয়ার করতে চাস তুই?”

–“এমনভাবে বলছিস কেন?”(ইনোসেন্ট লুক নিয়ে)

ওর এমন চেহারা কিছুটা ভাবালো আমায়। যে মেয়েটা সবসময় আমার সাথে ঝগড়া করে, সামান্য সামান্য কারণেই আমার সাথে ঝামেলা তৈরি করে সেই মেয়েটা আজ এতো ভনিতা করে নিজের খুশি আমাদের সাথে শেয়ার করতে চাইছে ব্যাপারটা কেমন না? ইন্টারেস্টিং! ভেরি ইন্টারেস্টিং! (Eshq Mai Marjavan 2 এর Vansh এর ডাইলগ 😜) আমি নিলার দিকে তাকিয়ে বললাম,,

–“নিলা! ও আমাদের সাথে নিজের খুশি ওয়ালা ফিলিংস শেয়ার করতে আসছে আর তুই ওকে এসব বলছিস! আর তাশায়ায়া..!! ওপস আই মিন তানিশা! তুই ওকে ছাড় তো! এখন কোন রকম ভনিতা না করে বলে ফেল তো তুই কি বলতে এসেছিস?”

তাশা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,,
–“বলব তো! কিন্তু তোর শুনতে খারাপ লাগবে না তো?”

ওর কথা শুনে কপাল কুঁচকে এলো আমার। আমার কেন খারাপ লাগতে যাবে? আজিব! আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,,
–“এতো ভনিতা না করে কি বলবি বলে ফেল! আর তা না হলে আসতে পারিস? কজ আমার ভনিতা একদম ই পছন্দ নয়।”

তাশা আমার দিকে তাকিয়ে একটা বেয়াক্কেল মার্কা হাসি দিলো। তারপর বলল যা বলল তা শুনে আমি হতবাক! ও বলছে,,,

–“ওকে বলছি শোন.! কাল রাতে নির্ভীকের ফ্যামিলির সাথে আমার ফ্যামিলির কথা হয়েছে। আমাদের বিয়ের ব্যাপারে। জানিস ই তো আমরা আর ওরা ফ্যামিলি ফ্রেন্ডস! তাই আমাদের বাবা মাও চান যে আমাদের বিয়ে হোক। আর আমরাও তো রিলেশনশিপে আছি তাই আমরাও আর মানা করি নি। আব্বু আম্মু যখন বলল নির্ভীকের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছেন তারপর থেকেই এতো খুশি লাগছে আমার তোকে কি বলবো?তাই ভাবলাম এই দারুন খবরটা তোর সাথে শেয়ার করি।”

আমি গোল গোল চোখ করে তাশার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার এখন ব্যাপক হাসি পাচ্ছে।পারছি না এখনি হুহা করে ঘর কাঁপিয়ে হেসে দি। কিন্তু এখন ওর সামনে এভাবে হাসা যাবে না। কিন্তু হাসিটা কোন মতেই কন্ট্রোল হচ্ছে না আমার। বাপরে! কেউ এতো কনফিডেন্স এর সাথে এতো সুন্দর গুছিয়ে এতগুলো মিথ্যা কথা কি করে বলতে পারে? নির্ভীক পর্যন্ত সব ঠিক ছিলো কিন্তু মামনি আর পাপা নাকি ওর সাথে নির্ভীকের বিয়ে ঠিক করেছে!! আল্লাহ দড়ি ফালাও আমি উইঠা যাই। আগে তাশা প্রায়ই সবাইকে বলে বেড়াতো নির্ভীকের সাথে ওর রিলেশন আছে। রেগুলার নাকি ওর সাথে এখানে ওখানে ঘুরতে যায়। প্রথম প্রথম বিশ্বাস হতো না আমার। কিন্তু ওর এতো এতো গল্প শুনে একটা সময় বিশ্বাস করেও নিয়েছিলাম ওর কথা। যেহেতু আদভিক আঙ্কেল আর তাশার বাবা বিজনেস পার্টনার তাই ওর কথাগুলো সত্যি হতেও পারে! এমনটাই ভাবতাম আমি। কিন্তু কেন জানি না কিছুতেই মানতে পারতাম না যে নির্ভীক আর ওর মধ্যে কিছু আছে? আর আজ সব ক্লিয়ার যে এই মেয়ে এতো দিন ধরে খুব নিখুঁত ভাবে মিথ্যা বলে চলেছে। কিন্তু ওর এসব বলে কি লাভ? তারমানে ও সবার কাছে প্রা,,, আর কিছু ভাবতে পারলাম না আমি। তাশার কথায় ধ্যান ভাঙলো আমার! ও বলছে,,

–“কি হলো বেইব তুই খুশি না! বলেছিলাম তোর হয়তো ভালো লাগবে না!”

এই মুহূর্তে মন চাইছে এই শাকচুন্নী নামক মামদো ভুত কে রাজশাহীর সবচেয়ে নিকৃষ্টতম নর্দমায় ফেলে দি। এই মেয়ে জীবনে শোধরাবে না। আচ্ছা এই হাদীস কি জানে না যে নির্ভীক আর আমার পরিবারের বন্ডিং অনেক বেশি স্ট্রং! আর নির্ভীক তো কলেজেও আসতেন! তাহলে! ওহ হ্যা তাশা কলেজেই আসতো না! বছরে গুনে গুনে ১২ দিন ক্লাস করতো এই মেয়ে। কিন্তু রেজাল্ট যে ক্যামনে ভালো হতো সেটাই মাঝে মাঝে গভীর ভাবনায় ফেলে দেয় আমায়। বেয়াদব মেয়ে আমার বরের দিকে নজর দেয়। মন তো চাইছে ঠাটায় কয়েকটা চর লাগাতে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার এই মহৎ ইচ্ছে টাকে সাইডে রেখে তাশার দিকে তাকিয়ে একটা ক্লোজআপ হাসি দিলাম। এখন রাগ করে কিছু করা যাবে না। উল্টো ভাবে ভাবতে হবে। কিছু একটা মাথায় আসতেই বললাম,,

–“কনগ্রাচুলেশনস ভাবি জি! অনেকগুলা শুভকামনা আপনার ফিউচারের জন্য।”

–“ভাবি জি মানে?”

–“মানে নির্ভীকেরা আমাদের আত্নীয় তো সেই সূত্রে তুই আমার ভাবিই তো হবি তাই না? কিন্তু আমি একটা কথা বুঝতে পারছি না আজ সকালেও তো নীড়া আন্টির (মামনি) সাথে কথা হলো উনি তো এই ব্যাপারে কিছু বলল না। হয়তো ভূলে গিয়েছিলেন তাইনা?”

তাশার মুখ দেখে যতটুকু বুঝলাম তাতে আমার কথা শুনে তাশা হকচকিয়ে গিয়েছে। ও হয়তো বা এমন কিছু আশা করেনি। আমি সচেতন চোখে নিলার দিকে তাকালাম। সেও কিছুটা অবাক হয়েছে। কিন্তু আমার চোখ দেখে কিছু একটা আন্দাজ করে নিয়েছে তাই চুপ আছে নাহলে এখনেই আমার ইন্টারোগেশন নিতে শুরু করতো। তাশা আমার দিকে সন্দেহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি একদম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বেচারি যে মারাত্মক রকমের ভয় পেয়েছে সেটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছি। কিন্তু ও যে আমার কথাগুলো সম্পূর্ণ রুপে বিশ্বাস করতে পারছে না সেটা ওর মুখ দেখেই বুঝলাম। হয়তো ওকে ভালোভাবে বিশ্বাস করানোর জন্যই তখন সেইখানে নির্ভীক চলে এসেছিলে। এসেই আমার উপর চোটপাট শুরু করে দিয়েছিলেন। উনি এসেই আমাকে বললেন,,

–“সমস্যা কি তোর? আমাকে না বলে চলে এসেছিস কেন তুই? একটা থাপ্পরে তোর সবগুলো দাঁত ফেলে দিবো বেয়াদব মেয়ে! কতোটা টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম সে খেয়াল আছে তোর! আর আঙ্কেল কেও বলেছিস যে আমাকে বলেই তুই রাজশাহীতে এসেছিস এটা কি ঠিক? তোর এই ভুলের শাস্তি হিসেবে আজ সারাদিন আমার সব কথা শুনতে হবে তোকে। আমি যা বলবো আজ সারাদিন তাই করবি তুই। এখন চল আজ ক্লাস করতে হবে না। কাল এসে সব নোট করে নিস। আর আজকের টপিক আমি তোকে বুঝিয়ে দিবো।”

এক নিঃশ্বাসে এতো কিছু বলে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন উনি। আমি পেছন ফিরে দেখি তাশার মুখের বারোটা বেজে রয়েছে। বেচারি এই ভাবে ফেসে যাবে সেটা হয়তো ভাবে নি। আজ নির্ভীকের বকাগুলোও বেশ লাগছে। হাজার হোক উনার এই রাইট টাইমছ রাইট এন্ট্রি+রাইট বকার জন্য তাশার এমন রাগে, দুঃখে, হিংসায় লাল হয়ে যাওয়া মুখটা দেখতে পাচ্ছি। কেন জানি না ব্যাপক ভালো লাগছে আমার। ক্লাসরুম থেকে বেড়ুনোর আগে তাশাকে চোখ টিপ মেরে কিছু ঈশারা করলাম, যার অর্থ এই আহারে! এইভাবে ফেঁসে যাবি ভাবিস নি তাইনা! বেটার লাক নেক্সট টাইম! আমি খুশি মনে যাচ্ছি দেখে ভ্রু কুঁচকালেন নির্ভীক। তারপর বললেন,,

–“কি ব্যাপার এতো খুশি হচ্ছিস কেন? আমি কি তোকে সিনেমা দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি নাকি ফানি কিছু বলেছি যার কারণে তুই এতো খুশি! ব্যাপারটা কি?”

–“আপনি বুঝবেন না মহাশয়! তবে হ্যাঁ ঠিক সময়ে এসে ঠিক ভাবে রিয়্যাক্ট করার জন্য অনেক গুলো ধ‌নেপাতা! ইউ আর টু মাচ কিউট! থ্যাংক ইউ!!”

উনি বোকার মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝেন নি। তাতে আমার কি? আমি তো ব্যাপক খুশি! খুব অদ্ভুত ভাবেই প্রচন্ড হ্যাপি লাগছে। আমি তো এমন ন‌ই! তাহলে! কিসের এতো মুগ্ধতা আমার উনার উপর! কেন এমন ফিল করি আমি!!
·
·
·
চলবে…………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here