#চুপিচুপি_ভালোবাসি (পর্ব ০৬)
#আয়েশা_আক্তার
·
·
·
নির্ভীক ভাইদের বাসায় গিয়ে সোজা রান্নাঘরে চলে গেলাম আমি। গিয়ে দেখলাম আন্টি রান্না করছেন। আমি পেছন থেকে আন্টিকে জরিয়ে ধরে বললাম,,
–“আন্টি তুমি ঠিক আছো তো? হঠাৎ আমাকে নিয়ে আসালে যে?”
আন্টি মুচকি হেসে বললেন,,
–“আমি একদম ঠিক আছি আম্মু! সেই যে নিহালের বিয়ের সময় এসেছিলি তারপর তো তোকে পাওয়াই দায়। তাই আজ নির্ভীক কে বললাম তোকে যেন নিয়ে আসে। তোকে দেখতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু তুই রান্না ঘরে কেন এসেছিস। যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। আর ভুলেও রান্নাঘরে ঢুকবি না এখানে প্রচুর গরম। তোর কষ্ট হবে মা।”
এতটুকু বলেই আন্টি আবার রান্নার কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেল। আন্টি আমার এতো বেশি কেয়ার করে যে মাঝে মাঝে এনাকেই আমার নিজের মা মনে হয়। একটুখানি রান্নাঘরে ঢুকছি কি ঢুকিনি তাতেই রান্নাঘর থেকে বেড় করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। কেন? নাকি গরমে আমার কষ্ট হবে তাই। আর আমার আম্মু! সারাদিন কানের কাছে এটাই বলতে থাকে আমি নাকি রান্না ঘরে ঢুকি না। একটা কাজ ও পারি না। আমার শাশুড়ি মা নাকি আমায় এর জন্য কথা শোনাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আল্লাহ তুমি আমার আম্মুকে কেন আন্টির মতো বানালে না। আমাকে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আন্টি বললেন,,
–“কিরে তুই এখনো এখানেই দাঁড়িয়ে আছিস? যা বাইরে যা। কেন বুঝতে পারছিস না এখানে প্রচুর গরম। আগুনের তাপে তোর অনেক কষ্ট হবে।”
আমি আন্টির কাছে গিয়ে বললাম,,
–“ওফহো আমার সুইট আন্টি! এইটুকু গরমে আমার কিছু হবে না। আর তুমি এখন যাই বলোনা কেন আমি এখান থেকে এক পা ও নড়ছি না। তার থেকে বলো কি রান্না করছিলে আমি তোমাকে সাহায্য করে দিচ্ছি।”
কিন্তু কে শোনে কার কথা! আন্টি বারবার আমাকে বোঝাচ্ছেন। এখান থেকে যেতে বলছেন। কিন্তু আমিও নাছোড়বান্দা। কিছুতেই যাচ্ছি না। শেষে আমার সাথে না পেরে চুপ করে গেলেন। আমিও নিজের মতো করে আন্টিকে সাহায্য করতে লাগলাম। আন্টি যে আমার দিকে বিস্ময় মাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেটা আমি ওনার দিকে না তাকিয়েও বুঝতে পারছি। এক পর্যায়ে আন্টিকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম,,
–“কি হলো আন্টি আমি কি সব কাজ উল্টাপাল্টা করে ফেলেছি! নাহলে তুমি আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন? দেখ আমার কিন্তু ভয় লাগছে।”
–“একদম না। তুই সব একদম ঠিক ঠাক ভাবে করছিস। আমি তো অবাক হচ্ছি! তুই এতো সুন্দর করে সব কাজ করছিস কি করে? আমি তো ভেবেছিলাম তোর মা তোকে কিছুই করতে দেয় না।”
–“কি যে বলোনা আন্টি! আম্মু সবসময় আমাকে ধমকের উপর রাখে।আর এই সবকিছু আম্মু হাতে ধরে আমাকে শিখিয়েছে। বলে কিনা এইসব না শিখলে নাকি আমার শশুর বাড়ির লোকজন আমাকে বিয়ের পরের দিনই বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিবে। কি যে রাগ লাগতো তখন বলে বোঝাতে পারবো না তোমায়। রাগে দুঃখে এইসব শিখতে হয়েছে আমায়।”
আন্টি হেসে বললেন,,
–“হয়েছে হয়েছে! এখন এখান থেকে যা বাকিটা আমি করে নিবো।”
আমিও চলে এলাম। ফ্রেস হয়ে বসার ঘরে আসতেই দেখি আয়াত ভাইয়া মুখ কালো করে বসে আছেন। কি ব্যাপার এনার আবার কি হলো? নির্ভীক ভাইয়া আয়াত ভাইয়ার সামনে এসে বললেন,,
–“ঐ তুই কি বলবি তোর হয়েছে টা কি? সেই কখন থেকে বাংলার পাঁচের মতো মুখ বানিয়ে বসে আছিস, কিছু বলতাছিস না ক্যান? হুয়াই??
এবার আয়াত ভাইয়া করুন চোখে তাকালেন। তারপর আবার নিচের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। নির্ভীক ভাইয়াকে পাশে বসিয়ে হতাশ কন্ঠে বললেন,,
–“মেয়েরা যে এতো ঝগড়া করে সেটা আগে জানতাম না। আমার কান ঝালাপালা কইরা দিছে রে! এতোক্ষণ ধইরা এতো কিছু সহ্য করলাম অথচ কাজের কাজ কিছুই হইলো না।”
আয়াত ভাইয়ার জন্যে কেমন কষ্ট কষ্ট ফিলিংস আসছে। বেচারা আমার বেস্টুর জন্যে কিনা করছে অথচ ওর দিকে আমার বান্ধবীটা নজর ই দিচ্ছে না। নির্ভীক ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বললেন,,
–“এই তুই না আমার ভাই! তাহলে এতো অল্পতেই এরকম হতাশ হচ্ছিস কেন? আরে ভাই লেগে থাক হয়ে যাবে!”
উনার কথা শুনে আয়াত ভাই রাগে ফোঁস করে উঠলো।গরম চোখে উনার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,
–“তুই আমার ভাই সেটাই তো প্রবলেম। তুই যেখানেই যাস সবগুলো মেয়ে তোর দিকেই তাকিয়ে থাকে। দুনিয়ায় যে আমরাও আছি তা তাগোরে নজরেই পরে না। আর মারুফার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। তুই আজ ওর সামনে না আসলেও পাততিস।”
নির্ভীক ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। কিছু বলতে চাইছিলেন কিন্তু বললেন না। শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আর আমি তো আবুলের মতো দাঁড়িয়ে আছি। কিই বা করবো একদিকে আয়াত ভাইয়া তো আরেকদিকে বান্ধবী কোন দিকে যাবো ভেবে পাচ্ছি না।আর মারুফাকেও বলি হারি আজাইরা যত্তসব!!
🍁
ক্লাসে ঢুকতেই সকলের একের পর এক প্রশ্নের ভিরে প্রায় হাড়িয়েই গিয়েছি আমি। বাপরে এতো এতো প্রশ্ন মনে হয় কোন পরীক্ষায় ও আসে না। আর সবার ফেস রিয়্যাকশন গুলো এমন যেন তাদের কোন মহামূল্যবান সম্পদ আমার কাছে আটকা পড়ে আছে। আর এদের প্রশ্নগুলো সবই নির্ভীক ভাইয়া কে কেন্দ্র করে। নির্ভীক ভাইয়া আমার কে হয়? তাকে চিনি কিভাবে? কোথায় দেখা হয়েছিল? আমার হাত ধরেছিল কেন? আমি উনার বাইকে উঠলাম আর উনি হাসলেন কেন? এইরকম অনেক প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে ছোটখাটো কোমায় চলে গিয়েছি মনে হচ্ছে। কোনদিকে যাব বুঝতে পারছি না। এতগুলো শাকচুন্নীর প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আদোও কি সম্ভব! এই মুহূর্তে আমার অবস্থাটা ঠিক ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ টাইপ হয়ে গিয়েছে। আল্লাহ আমার এইটুকু তেই এই অবস্থা তাহলে সেলিব্রিটি দের কি অবস্থা হয়! এই মুহূর্তে ওদের কষ্টটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছি আমি। ক্লাসের মেয়েরা যখন আমার ইন্টারভিউ নিতে ব্যাস্ত ক্লাসের ছেলেরা গালে হাত দিয়ে বিনা পয়সায় সিনেমা দেখতে ব্যাস্ত। আমি তো এদিক ওদিক তাকাচ্ছি যদি কোন ভাবে এখান থেকে বেরুনো যায় এই আশায়। পেছন থেকে মেয়েলী কন্ঠে কেউ বলল,,
–“এখানে কি হচ্ছে?”
সবাই পেছন দিকে ফিরে তাকালো। এই সুযোগে আমি ক্লাস রুম থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে এলাম। এসেই জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম। আল্লাহ এইগুলা কি হইতাসে আমার সাথে? আর এই সবকিছু ঐ নির্ভীক নামক রাক্ষস টার জন্য হচ্ছে হুহ। নাহ আজ আর আমার ক্লাস করা হবে না। এখানে দাঁড়িয়ে থাকার বদলে বাড়ি চলে যাই এটাই ভালো হবে।বাড়ি যাওয়ার জন্য সামনে পা বাড়াতেই দেখলাম নির্ভীক ভাইয়া বাইকের উপর বসে আছেন। আজ আবার কেন এসেছেন কে জানে? আমাকে দেখেই চোখ টিপলেন উনি। কত বড় অসভ্য এই ছেলে। এনার থেকে বড় অসভ্য দুনিয়ায় আর দুটো নাই। আমি মুখ ঘুরিয়ে উল্টো পথে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। কিন্তু যাওয়া আর হলো না। যা দেখলাম তাতে আমার পা ওখানেই আটকে গিয়েছে। সবগুলো মেয়ে আমার দিকে দৌড় আসছে। এদের হাতে পরলে নির্ঘাত বেঘোরে প্রাণ টা যাবে। এখন কি করি? আগে কুয়া পেছনে খাল এরকম কিছুতো শুনেছিলাম কিন্তু আজ দেখেও নিলাম। কোনদিকে যাব? কয়েক সেকেন্ড ভেবে দেখলাম এই শাকচুন্নী দের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে প্রণটা খোয়ানোর থেকে নির্ভীক ভাইয়ার ফাউল কথা শোনাটাও ঢের ভালো। তাই আর কি যে ভাবা সেই কাজ। এক দৌড়ে নির্ভীক ভাইয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সবাই আমার পেছন পেছন দৌড়ে আসছিল কিন্তু নির্ভীক ভাইয়াকে দেখে থেমে গেল। নির্ভীক ভাইয়া আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন।
–“কিরে কি গন্ডগোল পাকাইছিস? সবাই তোকে দৌড়ানী দিচ্ছে কেন?”
–“সব আপনার জন্য হচ্ছে বুঝলেন। এরা আপনার জন্যেই আমার পেছনে পরে আছে। আপনার কিউট কিউট বাচ্চাদের মতো ফেস টা সকলের মনের মধ্যে আটকে গিয়েছে। আচ্ছা আপনাকে এতো স্টাইলিশ হতে কে বলেছিল? ইন ফিউচার হবেন তো ডাক্তার তাহলে এতো বেশি স্টাইলিশ হওয়ার কি খুব দরকার ছিল। যেই আপনার কাছে ট্রিটমেন্ট এর জন্য আসবে আ’ম শিওর সবগুলাই আপনাকে দেখে বেশি করে অসুস্থ হওয়ার ড্রামা করবে। এখন এখান থেকে চলুন নাহলে এই চুরেলদের হাতে আপনি আমি দুজনেই মার্ডার হয়ে যাবো।
এক নিঃশ্বাসে সব বলে উনার দিকে তাকালাম। উনি হা করে তাকিয়ে আছেন। আচ্ছা এই সময়ে ওনার এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকার ইচ্ছা হচ্ছে। আমি ওনার সামনে তুড়ি বাজাতেই উনার হুঁশ ফিরলো। এদিকে মেয়েগুলো আমাদের দিকেই আসছে। আমি বললাম,,,
–“যা ভাবার পরে ভাববেন এখন এখান থেকে যাবেন নাকি ওদের হাতে শহীদ হওয়ার জন্য এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবেন?”
–“অবস্থা বেগতিক! নাহ এখানে আর থাকা যাবে না। তাড়াতাড়ি বাইকে ওঠ। এখানে আর এক সেকেন্ড ও থাকা যাবে না। আয়াত ভাই আমার! ব্যাপারটা সামলে নিস।”
আমি বাইকে উঠতেই উনি ফুল স্পীডে বাইক চালানো শুরু করলেন। যাওয়ার আগে শুধু আয়াত ভাইয়ার একটা কথাই কানে আসলো আর সেটা হলো,,
“ভাই তুই আমাকে এতো গুলো রাক্ষসির মাঝে ছেড়ে যেতে পারিস না। আমাকেও নিয়ে যাআআআআ…!!
·
·
·
চলবে……………………….