আমার বিয়েটা যে এরকম ভাবে সয়ে যাবে সেটা ভাবতেই পারিনি আমি। যদি বুঝতাম পরিবারের সাথে ঢাকায় বেড়াতে এসে আমার জীবনটাই পাল্টে যাবে তাহলে কোনোদিনই এখানে আসতাম না আমি। এই মুহূর্তে আমি ড্রয়িং রুমে বসে আছি। আমার সামনেই বসে আছে নির্ভীক ভাইয়া মানে যার সাথে আমার কিছুক্ষণ আগেই বিয়ে হয়েছে। উনি ঠোঁটে বিশ্বজয় করা হাসি নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। উনার এই হাসি দেখে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে। আমি উনার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালাম। কিন্তু এবার যা দেখলাম তাতে আমার মেজাজ আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল। আব্বু আর আঙ্কেল মানে নির্ভীক ভাইয়ার বাব কোলাকুলি করছেন। আমার আব্বু হাসিমুখে বলে উঠলো,,
–“আজ আমাদের বন্ধুত্ব সার্থক। এতো বছরের বন্ধুত্ব আজ আত্মীয়তার সম্পর্কে পরিণত হলো। আর সব আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য।”
আঙ্কেল বাবর কথায় তাল মেলালেন। আর এদিকে রাগে আমার শরীর কাঁপছে। এদের দুই বন্ধুর আনন্দ মাখা কথাগুলো আগুনের মতো জ্বালা ধরাচ্ছে। এদিকে নির্ভীক ভাইয়ার হাঁসি একদম ই সহ্য হচ্ছে না আমার। এবার উনি আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন,,
— “দেখলি তো আমাকে চ্যালেঞ্জ করার ফল! অ্যাজ ইউজুয়াল আমি জিতলাম।”
আমি কোন কথা না বলে রুমের দিকে পা বাড়ালাম। সোজা গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালাম আমি। ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজে ছিঁড়ে ফেলি। কি দরকার ছিল ঐ হিটলারের সাথে লাগার। বারান্দার রেলিং ঘেসে বসে পড়লাম আমি। আমি শর্মি। মেডিকেল এর ২য় বর্ষের স্টুডেন্ট। অনেক দিন পর লম্বা ছুটি পাওয়ায় পরিবারের সবাই মিলে বেড়াতে এসেছিলাম। সাথে যোগ হয়েছিল নির্ভীক ভাইয়া এবং উনার পরিবার। নির্ভীক ভাইয়ার বাবা আর আমার আব্বু বেশ ভালো বন্ধু বলতে গেলে দুই ভাই। আজ সকাল বেলা ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি। সকালের ফ্রেশ হাওয়া খাচ্ছিলাম আর নানারকম চিন্তা ভাবনা করছিলাম আমি। ঠিক তখনই কোথা থেকে উদয় হলো এই নির্ভীক ভাইয়া নামক প্যারা। এই ছেলেটা যেদিন থেকে আমার লাইফে এন্ট্রি নিয়েছে সেদিন থেকেই লাইফটা তেজপাতা হয়ে গিয়েছে আমার। সে যাই হোক উনি এসেই আমাকে বললেন,,
–“এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস শুনি? বয়ফ্রেন্ডের কথা ভাবছিস নাকি? যতোই এসব নিয়ে ভাবিস না কেন কোন লাভ নেই। বউ তো তুই আমার ই হবি।”
উনার এই কথাটা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আমার। ওনার দিকে তাকাতে উনি হুহা করে হেসে উঠলেন। বুঝলাম উনি মজাকরে এইসব বলেছেন। কিন্তু এই মজাটাই চরম বিরক্ত করলো আমাকে। কোন মানে হয়? উনি খুব ভালো করেই জানেন যে আমার কোন বি এফ নেই আর এই ধরনের মজা একদম ই পছন্দ নয় আমার। তাপরেও এই ধরণের কথা বলে আমাকে রাগিয়ে দিলো আমায়। তাই রাগের চোটে বলছিলাম,
–“আমি কোনোদিন ও আপনার বউ হবো না। দরকার পড়লে সারাজীবন কুমারী থাকবো তবুও আপনাকে বিয়ে করবো না।”
এই একটা কথাই যে আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে সেটা কে জানতো! উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। তারপর বললেন,,
–“ভেবে বলছিস তো?”
আমিও বোকার মত বলে দিলাম হ্যাঁ।তারপরেই উনি বললেন,
–“চ্যালেঞ্জ?”
তখন আর কিইবা বলতাম। যোশ নিয়ে বলেছিলাম,,
–“হুহ চ্যালেঞ্জ!”
উনি বাঁকা হেসে বলেছিলেন,,
–“গেট রেডি শর্মি! আজ রাতেই তোর আর আমার বিয়ে। আর তাও পরিবারের সকলের অনুমতি নিয়েই।”
তখন এই কথাটার কোন গুরুত্ব দেই নি আমি। কিন্তু উনি কিভাবে যে আমার আব্বু আর আঙ্কেল কে বিয়ের জন্য রাজি করিয়েছিলেন সেটা শুধু উনিই জানেন। সন্ধ্যা বেলা যখন আব্বু এসে বলল,,”আজ তোর বিয়ে” মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল আমার। আমি বারণ করলাম কিন্তু আব্বুর ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল এর কাছে আমাকে হার মানতেই হলো। তার কিছুক্ষণ পর ই আমাদের বিয়েটাও হয়ে গেল। যেহেতু এখানে আমাদের দুই পরিবারের লোক ছাড়া আর কেউ ছিলো না তাই আমাদের বিয়ের ব্যপারটাও কেউ জানে না। এবার আমার প্রচুর কান্না পাচ্ছে। কেন যে ঐ সময়ে এ কথাটা বলেছিলাম! না বললে তো আমাকে এইভাবে কুরবানীর পশু হতে হতো না।
এসব আকাশ কুসুম ভাবনার মাঝেই দড়জা খোলার আওয়াজ পেলাম। মুখ তুলে সামনের দিকে তাকাতেই দেখলাম নির্ভীক ভাইয়া আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমার চোখটা ওনার দিকেই আটকে গিয়েছে। আকাশি রঙের শার্ট আর অ্যাশ কালার প্যান্ট ফর্সা চেহারায় এক অন্যরকম সৌন্দর্য তৈরি করেছে। উনার ঘন পল্লব বিশিষ্ট চোখ, বাচ্চাদের মত লাল গোলাপী ঠোঁট, সুন্দর খোঁচা খোঁচা দাড়ি, এলোমেলো চুল আর বাচ্চা বাচ্চা চেহারায় কি নিষ্পাপ লাগছে। কিন্তু এই নিষ্পাপ চেহারার আরালে যে কতবড় শয়তান লুকিয়ে আছে সেটা শুধু আমিই জানি। মুহূর্তেই রাগ উঠে গেল আমার। রাগে দুঃখে কাঁদো কাঁদো গলায় বলেই উঠলাম আমি,,
–“এমনটা কেন করলেন নির্ভীক ভাইয়া?”
আমার কথাটা মনে হয় উনার ঠিক পছন্দ হলো না। আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়েই ধমকে উঠলেন উনি। ধমক শুনে ভয়ে কেঁপে উঠলাম আমি। যত যাই বলি না কেন উনার এই রাগকে প্রচুর ভয় পাই আমি। উনি রাগী গলায় বললেন,,
–“ঐ আমি তোর কোন জন্মের ভাই হই? আজকের পর যদি আমাকে ভাই বলেছিস তো খুন করে ফেলবো বলে দিলাম।”
সত্যি ই তো উনি তো আমার ভাই নয়। কিন্তু অভ্যাস পরিবর্তন হতে তো সময় লাগবে। কিন্তু এইটা কোন বিয়ে হলো নাকি? উনি তো যখন খুশি আমাকে ছুড়ে ফেলে দিবেন। আর আমাদের বিয়ের কথা যেহেতু গোপন রাখতে বলেছে আমাদের দুই পরিবার সেহেতু,,,
ভাবনার মাঝেই উনি বলে উঠলেন,,
–“তো বিয়ে তো হয়ে গেল। নিয়ম অনুযায়ী আজ তো আমাদের বাসর তাইনা বউ? (বাঁকা হেসে)
উনার কথা শুনে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ। উনি ডেভিল স্মাইল দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। আর আমি ভয়ে ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছি। মনে মনে হাজারো দোয়া দরুদ পড়ছি। এবার আমি কি করবো। এবার আমার কান্না পেয়ে যাচ্ছে। শুধু কান্না নয় রীতিমতো হাত পা ছুড়ে কান্না।🥺😭
চলবে,,,??
#চুপিচুপি_ভালোবাসি💞
Writer: #আয়েশা_আক্তার
#পর্ব_১ (সূচনা পর্ব)
রিচেক করি নি তাই ভূল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।