#চিত্তবৃত্তি
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_২০
মধ্যরাত। কপালে হাত ঠেকিয়ে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে শুয়ে আছে ইমন৷ চোখজোড়া বদ্ধ। মাঝে মাঝে দু-চোখের পাতা কেঁপে ওঠছে। নিঃশ্বাস হচ্ছে ঘন। অতিরিক্ত দুঃশ্চিতায় কিঞ্চিৎ অস্থির লাগছে। মাথার ওপর ফ্যান ঘুরছে ঠিকি। কিন্তু সেই ফ্যানের বাতাস গায়ে লাগছে না৷ মুসকানের মামাত ভাইয়ের রুমে শোবার ব্যবস্থা করা হয়েছে তার। নাম রক্তিম৷ অল্প বয়স। অথচ নাক ডাকছে বয়স্ক ভুড়িওয়ালাদের মতো। দীর্ঘশ্বাস ফেলল ইমন৷ কপাল থেকে হাত সরিয়ে নিল। ডান কাত হয়ে তাকাল হালকা গোলাপি রঙের দেয়ালে। যে দেয়ালের ওপারে নানুর সাথে মুসকান শুয়ে আছে। তার মতোই ওই নারী দ্বয়ের চোখেও আজ ঘুম নেই। নানু টুকটুক করে গল্প করছে। খুব মনোযোগী শ্রোতা হয়ে সে গল্প শুনছে মুসকান। তার মেয়ের গল্প, মুসকানের মায়ের গল্প। ইমনের ধারণা এই গল্প সারারাত চলবে। একটু পর পর দীর্ঘশ্বাস ফেলবে মুসকান। কখনো ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকাবে৷ ভার হয়ে ওঠবে বুক। হাহাকার করবে মন। যে সত্যিটা আড়ালে ছিল। হুট করে তা সামনে আসায় অভিমান করবে। কিছুক্ষণ পর আবার হাঁপ নিঃশ্বাস ছেড়ে মনকে স্বান্তনা দেবে। আজকের পর আর সে পরিচয়হীনতায় ভুগবে না৷ কাল থেকে ঐ বাড়িতে আর মাথা নিচু করে থাকতে হবে না। বাবা হিসেবে মহিউদ্দিনকে হয়তো কোনোদিন মন থেকে সম্মান দিতে পারবে না৷ তার পরিচয় বয়ে বেড়াতেও ঘৃণায় মন বিষিয়ে ওঠবে৷ তবু দিনশেষে পৃথিবীর বুকে একটু নির্ভার হয়ে থাকবে। অন্তত নিজের জন্ম রহস্য নিয়ে অস্বস্তিতে ভুগবে না৷ সবার চোখে চোখ রেখে বলতে পারবে। তার জন্মটাও আর পাঁচটা স্বাভাবিক শিশুর মতো হয়েছে। সে চৌধুরী বাড়ির বংশধর। সে কারো পাপের ফল না। তার বাবা পাপী, অন্যায়কারী হলেও। তার জন্মে কোনো পাপের স্পর্শ নেই। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল ইমন। ওপাশ থেকে এবার নানুর কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। মেয়ের গল্প করতে করতে আবারো আবেগি হয়ে পড়েছে বৃদ্ধা। মুসকানও নিশ্চয়ই নিরব কান্নায় ভেঙে পড়েছে? যে মা’কে সে দু-চোখে দেখেনি। করতে পারেনি একটিবার স্পর্শ। যার বুকে মাথা রাখার সৌভাগ্য হয়নি। যার স্নেহময় পরশ কপালে অনুভব করেনি৷ এই পৃথিবীটা যাকে এক টুকরো সুখও ভোগ করতে দেয়নি। তার জীবনী শুনে অশ্রুপাত হওয়াটাই স্বাভাবিক। বুক চিরে ঘন ঘন রুদ্ধশ্বাস বেরোলো ইমনের।
ফজরের পর পরই ইমন ওঠে পড়ল। দাদুভাই আর মেজো কাকা ফিরে যাওয়ার জন্য তৈরি। মুসকানকে তার নানু এত তাড়াতাড়ি ছাড়তে নারাজ৷ তাই ইমন সহ মুসকানকে আরো একদিন রেখে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা। মুসকানের জীবনসঙ্গী হিসেবে ইমনকে খুব পছন্দ করেছে নানু৷ তার বৃত্তান্ত শুনে অপছন্দ করার হেতু নেই। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো ইমন মহিউদ্দিনের আপন ভাতিজা৷ এ কথা বিশ্বাসই হচ্ছিল না৷ কিন্তু মোতালেব চৌধুরী সহ তার বাকি ছেলেদের ব্যক্তিত্বের সাথে মহিউদ্দিন একেবারেই বেমানান। সে হিসেবে আবার সহজেই ইমনকে গ্রহণ করতে পারলেন। তাই নাতনি আর হবু নাতজামাইকে আরো একদিন রেখে দিলেন নিজের কাছে। দাদুভাই আর মেজো কাকাকে গাড়িতে ওঠিয়ে দেয়ার সময় ইমন বলল,
‘ভালোই হলো তোমরা আগে বাড়ি ফিরছ। আশা করি, যেই সত্যিটা মুসকান জানতে পারল। তা এবার সবাই জানতে পারবে। মুসকান সসম্মানে, নিজের পূর্ণ অধিকার নিয়ে চৌধুরী বাড়ি ফিরবে।’
তার কথা শুনে দাদুভাই মাথা নাড়লেন। মেজো কাকা নত মাথায় রুদ্ধশ্বাস ছাড়ল। আজকের পর তার জীবনের গতি বদলে যাবে। পারভিন তার সাথে যাই ঘটাক সে মেনে নিতে পারবে৷ কিন্তু দুই ছেলের সামনে কী করে দাঁড়াবে? বড়ো ছেলের বউ আর তার শশুর ঘরের লোককে মুখ দেখাবে কী করে? আর কলিজার টুকরা ইয়াশফা! মেজো কাকার মুখো ভঙ্গি দেখে ইমন বাঁকা হাসল। বলল,
‘মেজোকাকা, এবার অন্তত শুধু বড়ো ভাই আর ইয়াশফার কথা চিন্তা করে তোমার অন্য সন্তানের থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখো না। প্লিজ, শেষবেলায় তোমাকে যেন আমি একটু সম্মান করতে পারি। মুসকান যেন শেষবেলায় বলতে পারে তার জন্মদাতা পুরোপুরি অমানুষ নয়৷’
এ পর্যন্ত বলে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল, দাদুভাইয়ের বিষণ্ণ মুখপানে। ঈষৎ হেসে বলল,
‘ আর এই বুড়োটাও যেন শেষ নিঃশ্বাস ছাড়বার আগে তার অমানুষ মেজো ছেলেকে মানুষ রূপে দেখে যেতে পারে। সাবধানে যেও। ‘
মেজো কাকার থমথমে মুখাবয়ব আর দেখতে চাইল না ইমন। লাগিয়ে দিল গাড়ির দরজা৷ দাদুভাই ডোর লক করে কাঁচ নামিয়ে বলল,
‘ গিন্নির খেয়াল রেখো। সাবধানে এসো। ‘
মৃদু হাসি উপহার দিয়ে হালকা ভাবে মাথা নাড়ল ইমন। কিঞ্চিৎ দূরে বিমূঢ় দৃষ্টিতে মুসকান তার নানুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে। ইমন ওদের দিকে ফিরেও ঈষৎ হাসল৷
***
মায়ের কবরের সামনে রোরুদ্যমান মুসকান। তার ডানপাশে ইমন। বাম পাশে নানু। নানুর পাশে মামাত ভাইবোন আর মামি দাঁড়িয়ে। মামা পেছনে অপেক্ষায়। ভাগ্নিকে বিদায় দিতে মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছে। একসময় নীরব কান্না ভেঙে ফুপিয়ে ওঠল মুসকান৷ মুহুর্তেই সকল জড়তাকে তোয়াক্কা না করে মুসকানের একটি হাত শক্ত করে চেপে ধরল ইমন। বলল,
‘আমাদের ফিরতে হবে।’
কান্নার বেগ বাড়ল মেয়েটার। ইমন স্বান্তনার সুরে বলল,
‘আমরা আবার আসব।’
আমরা শব্দটি শুনে চট করে ঘাড় ফেরাল মুসকান। ইমনের দৃঢ় চোয়াল, বিমর্ষ দৃষ্টি আর প্রবল আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে নির্ভরতা খুঁজে পেল। দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে চোখে ইশারা করে কাঁদতে বারণ করল ইমন। এতে আরো বিগলিত হলো মেয়েটা। ছোট্ট বাচ্চাদের মতো ঠোঁট কাঁপিয়ে কাঁদল আবারো। ইমন তৎক্ষনাৎ ওর কম্পিত নরম হাতের আঙুলের ফাঁকে নিজের সবল হাতের আঙুল গুঁজে শক্ত করে ধরে রইল। যেন এক মুহুর্তের জন্যও কোনো কিছুর বিনিময়েই এই হাত সে ছাড়বে না। মুসকানেরও ওই হাত থেকে ছাড় পাবার স্পৃহা দেখা গেল না। ওভাবেই দীর্ঘক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল দু’জন। বিদায় নিল নয়নতারার থেকে।
চৌধুরী বাড়িতে এতগুলো বছর মুসকানের পরিচয় স্রেফ গৃহপরিচারিকা ছিল। এই তিক্ত সত্যিটুকু মুসকানের নানু, মামার থেকে গোপন রাখা হলো। মুসকানও এ বিষয়ে তাদের কিছু বলেনি৷ বিদায়বেলায় মামা বারবার করে বলেছেন, সে মাঝেমধ্যে তাকে দেখতে যাবে। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গেও তারা পরিচিতি। সব সময় তাদের মধ্যে যোগাযোগ থাকবে। তার ছোটো খালামুনিও তাকে খুব ভালোবাসে৷ পরিস্থিতির চাপে হয়তো সেদিন দায়িত্ব নিতে পারেনি। সেজন্য যেন তাকে ভুল না বোঝা হয়। মামার কথায় আপ্লুত হয় মুসকান। এতদিন মনে হতো এই পুরো পৃথিবীতে সে একা। আজ মনে হচ্ছে তার সব আছে সব। শুধু মা, বাবা ছাড়া। একজন পুরোপুরি নেই। আরেকজন থেকেও নেই। হ্যাঁ মহিউদ্দিন তার জীবনে নেই। যদি কোনোদিন আসার চেষ্টাও করে তবু মেনে নিতে পারবে না৷ কারণ সে তার জীবনের একুশটা বছর ভুলতে পারবে না৷ যদি কখনো সম্ভব হয় একুশটা বছর ভুলে যাবার। তাহলে গ্রহণ করবে তাকে বাবা হিসেবে। নতুনা সম্ভব নয় কোনোভাবেই নয়।
***
চৌধুরী বাড়িতে থমথমে অবস্থা। গতকাল পারভিন বাপের বাড়ি চলে গেছে৷ নিজের জীবনের এতবড়ো সর্বনাশ মেনে নিতে পারছে না সে। যাকে কিনা কাজের মেয়ে বলে এতগুলো বছর দূরদূর করেছে। অবহেলা, অবজ্ঞা, অপমানের কমতি রাখেনি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভাইয়ের সঙ্গেও বিয়ের বন্দোবস্ত করেছিল। সেই মেয়ে কিনা তারই স্বামীর অংশ! এবার সে বুঝতে পারছে, মুসকানকে যখন সে জারজ বলে গালাগাল করত। মহিউদ্দিন ঠিক সে সময়ই কেন প্রতিবাদ করে ফেলত। তার ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টাও যখন জেনে গেল৷ তখন কত কথা-কাটাকাটি হলো তাদের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত গায়ে হাত তুলতেও এসেছিল। তলে তলে এত কেচ্ছা! কাঁদতে কাঁদতে চৌধুরি বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বেরিয়ে গেছে পারভিন৷ ইয়াশফাও বাবার এই দ্বিতীয় রূপ মেনে নিতে পারেনি। গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে এরপর সন্তান। মুসকানই কিনা সেই দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল ওর। মা এক কাপড়ে বেরিয়ে গেল। সে যেতে চাইলে বলল,
‘তুই কেন যাবি? তুই ওর প্রথম পক্ষের সন্তান। তুই চলে গেলে তোর অধিকার ঐ মেয়ে কেড়ে নিবে। এই সুযোগ কোনোভাবেই আমি দিব না ওকে।’
কারো অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারে না৷ শিক্ষিতা ইয়াশফা জানে। তবু মায়ের কথায় থেকে গেল সে। নিজের ঘরে দোর লাগিয়ে পড়ে রইল ঘন্টার পর ঘন্টা। বাবা কয়েকবার ডেকে গেছে। সে দরজা খুলেনি। সারাজীবন বুক ফুলিয়ে সে বলে এসেছে,
‘আমার বাবা শ্রেষ্ঠ বাবা। এই পৃথিবীর সবচেয়ে বেস্ট বাবা আমার।’
তার সেই অহমিকা এভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে ভাবতেও পারেনি৷ নিজের মা’কে সে পছন্দ করত না। বেশি কথা বলে, অকারণে ঝগড়া বাঁধায়। বাবাকে যত্ন করে না, ভালোবাসে না। এসব ভেবে। আজ বুঝতে পারছে তার মা ঠিক। মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় প্রখর থাকে। নিজের স্বামীকে নিয়ে এই অনুভূতি আরো বেশি দৃঢ় হয়। পারভিন হয়তো এই সত্যি টা জানত না৷ তবু মনের খুঁতখুঁতানি থেকেই অনেক সময় অনেক ভাবে সন্দেহ করত৷ ছোটো থেকেই এসব নিয়ে বাবা, মায়ের ঝামেলা দেখেছে সে। আজ সে বুঝতে পারল, পুরুষ মানুষ কতটা বেইমান হতে পারে। কীভাবে স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে।
বাড়ির তপ্ত পরিবেশ মুসকানের উপস্থিতিতে আরো তপ্ত হয়ে ওঠল। ইয়াশফার ঘরের দরজা বন্ধ। আনিস মুসকানকে দেখেই বাড়ি থেকে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেছে। আজ রাতে নিশ্চিত বোতলে বোতলে মদ গিলে বাড়ি ফিরবে সে। মহিউদ্দিন নিজের ঘরে স্তব্ধ মুখে বসে। ইমন বিশ্রাম নিতে নিজের ঘরে চলে গেল। ছোটো কাকার মেয়ে ইমা ড্যাবড্যাব করে মুসকানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
‘ তুমি আমাদের বাড়িরই মেয়ে! ‘
ঠিক সে সময়ই ড্রয়িং রুমে উপস্থিত হলো ইভান৷ অন্যদিন তার চোখে, মুখে অশ্লীলতা উপচে পড়লেও আজ তার চোখের ভাষা অচেনা। তবু মুসকান তার উপস্থিতি সহ্য করতে পারল না। নিঃশব্দে ডাইনিং রুমে গিয়ে এক গ্লাস পানি খেল। এরপর নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াল। ইভান থম মেরে সোফায় বসে। গতকাল থেকে মাথায় ঢুকেছে পাহাড়সময় চিন্তা। মুসকান এ বাড়ির মেয়ে। মেজো কাকার মেয়ে। এতদিন স্বীকৃতি ছিল না। আজ মেজো কাকা নিজ মুখে স্বীকার করেছে। তাছাড়া তাদের বাড়ির মেয়ে মুসকান। নিজের সমস্ত পরিকল্পনা জলাঞ্জলিতে দিতে বাধ্য সে। কিন্তু মনের কোণে ছোট্ট একটি দানা বেজে রইল। যে দানা সারারাত ঘুমাতে দিল না তাকে। শেষরাতে হঠাৎ সে অনুভব করল সবকিছু ছাপিয়ে মুসকানের প্রতি তীব্র অনুভূতি আছে তার। থাকারই কথা। মেয়েটা যে সবার থেকে আলাদা। যে অনুভূতি সামান্য পরিচারিকার জন্য আর তার চারিত্রিক সমস্যার জন্য অশ্লীলতায় রূপ নিয়েছিল। কিন্তু আজ পরিস্থিতি আলাদা। সে যতই আলাদা হোক অনুভূতি তো আর বদলাবে না। আর অনুভূতি যদি না বদলায়? সে যা সন্দেহ করছে তাই যদি ঠিক হয়? মুসকানের প্রতি যদি তার কঠিন অনুভূতি জন্মায়? তাহলে কী হবে? ইমনকে টেক্কা দেবে কী করে? ইমন কি সরে দাঁড়াবে? সে কি মেজো কাকার থেকে চেয়ে নিবে মুসকানকে? তাছাড়া মুসকান নিজেই ইমনকে বিয়ে করতে চায় না। এই তো সুযোগ। তড়াক করে ওঠে দাঁড়াল ইভান। কয়েকটা দিন যাক। বাড়ির পরিবেশ শান্ত হোক। তারপর মেজো কাকার সাথে কথা বলবে সে।
ছোটো বোন ইমা উপরে যাচ্ছিল। ইভান ডাকল তাকে। ইমা এগিয়ে এলে বলল,
‘ মুসকান আপুকে গিয়ে বল নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে। ‘
ভ্রু কুঁচকে ইমা বলল,
‘ কেন? তাকে কি বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবে? শোনো দাদাভাই এখন সে এই বাড়ির মেয়ে। তুমি আবার এক্সট্রা ঝামেলা পাকিয়ে দাদুভাইয়ের চক্ষুশূল হইয়ো না। এমনিতেই দাদুভাই তোমায় পছন্দ করে না। ‘
আচমকা হেসে ফেলল ইভান। হাসতে হাসতে মাথার চুলগুলো আঙুল দ্বারা পেছনে ব্রাশ করে নিল। বলল,
‘ আরে গাধি তাড়িয়ে দিব কেন? আমাদের বাড়ির মেয়ে ঐ মেডদের জন্য বরাদ্দ করা ঘরে থাকবে? তাকে নিচতলা থেকে উপরতলায় আমার পাশের ঘরটায় ট্রান্সফার হতে হবে না? ‘
বোনকে কথাগুলো বলেই কাজের মহিলাকে আদেশ করল উপরের ফাকা ঘরটা ঝাড়পুছ করে পরিষ্কার করে রাখতে। উপর থেকে ইভানের কার্যকলাপ দেখে ইমন স্তম্ভিত হয়ে গেল। বিশ্রাম করতে গিয়ে পানি পিপাসায় নিচে নামতে উদ্যত হয়েছিল। ইভান আর ইমার কথা শুনতে পেয়ে আর নিচে নামেনি সে৷ ত্বরিত নিজ রুমে গিয়ে কল করল মুসকানকে। মুসকান রিসিভ করতেই গমগমে স্বরে আদেশ করল,
‘তোমাকে উপরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা চলছে। কিন্তু আমি চাই না তুমি উপরে এসো। বিকজ প্ল্যানটা ইভানের। যেখানে আছো সেখানেই থাকবে। উপরে যদি আসতেই হয় এক আমার বউ হয়ে আসবে নয়তো না৷ যদি বাড়ির মেয়ে হিসেবে সবার দরদ বেশিই উতলে পড়ে। প্রয়োজনে নতুন করে রুম বানাব নিচে। তবু আমার বউ না হয়ে উপরে আসবে না। কিপ ইন মাইন্ড। ‘
উত্তেজনার বশে একদমে কথাগুলো বলল ইমন। মুসকান গভীর এক নিঃশ্বাস ছেড়ে জবাব দিল,
‘ হুম। ‘
শুধু ছোট্ট একটি হুমতে মন ভরল না ইমনের। আকস্মিক জিদ্দি কণ্ঠে বলল,
‘ঠিক একঘন্টা পর এক মগ কফি নিয়ে আমার ঘরে আসবে।’
কিয়ৎক্ষণ নীরবতা। মুসকানের থেকে সম্মতিসূচক বাণী এলো না৷ ইমনের কণ্ঠ আরো দৃঢ় হলো। বলল,
‘কফি আসবে কি না?’
কয়েক পল চুপ থেকে উত্তর দিল মুসকান,
‘আসবে।’
আটকে রাখা নিঃশ্বাসটা ছাড়ল ইমন। অধর কোণে ঈষৎ হাসি ফুটিয়ে কল কেটে দিল। এরপর ফোনের এক কোণা বা ভ্রুতে ঘষতে ঘষতে ভাবতে লাগল, ইভানের মতলব সম্পর্কে।
চলবে…
রিচেক করিনি। ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।