#বিপরীতে_তুমি_আমি
#পর্বঃ২০
#লেখনি_সুমাইয়া_ইসলাম
রোদের জ্বলমলে আলোয় পুরো দমে জানালা ভেদ করে ঘরে প্রবেশ করেছে। গরমের ভাব কেবল শুরু হচ্ছে। কিন্তু এরই মাঝেই জান্নাত ঘেমে নেয়ে একাকার। এসির মাত্রাও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশিই দেওয়া আছে। তবুও কপালে ও নাকের মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গিয়েছে। গলার নিচটাও হালকা ঘাম জমছে। বিছানার উপর পা তুলে জোড়া শিং দিয়ে বসে থাকলেও জান্নাতের মনে হচ্ছে যেকোনো মুহুর্তে সে অজ্ঞান হয়ে যাবে। ঘুমের রেশটাও ভালো মতো কাটে নি তার। বেলা দশটা পার হওয়ার পর পরই তার ঘুম ভেঙ্গেছে। আড়মোড়া ভেঙ্গে বসতেই ঘরে মেহরাবের উপস্থিতি পেয়ে ভুত দেখার মতো চমকে গিয়েছিল। তার সাথে মাথাটার ঝিমঝিম ভাবটার কারণ নিজেও বুঝতে পারছিল না। দু হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে। মেহরাব সোফায় পায়ের উপর পা রেখে জান্নাতকে দেখে যাচ্ছিলো। গতকাল রাতের মাতলামির ঝাঁঝ আজ ওঠানোর পুরো পরিকল্পনা করে এসে বসে আছে সে। জান্নাকে মাথা চেপে ধরতে দেখে শান্ত কন্ঠে বলে,
বিছানার পাশের টেবিলটায় লেবুর শরবত আছে। খেয়ে নে।
জান্নাত মাথা থেকে হাত নামিয়ে মেহরাবের দিকে তাকায়। তারপর টেবিলের উপর ঢেকে রাখা গ্লাসটার দিকে তাকায়। লেবুর শরবত রাখার কারণটা বুঝতে না পেরে মেহরাবের দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,
পাগল পেয়েছেন আমায়? ঘুম থেকে ওঠেই লেবুর শরবত খেতে যাবো কোন দুঃখে?
মেহরাব তখনও স্থির। স্থির তার দৃষ্টি। চোখে মুখে গম্ভীরতা বজায় রেখেই বললো,
দুঃখে খাবি কেন? খাব তো সুখে। যেই সুখে গতকাল রাতে নেশা করে মাতলামি করেছিস সেই সুখে।
নেশার কথা শুনে জান্নাতের চোখ ছানাবড়া। নেশা করবে তাও আবার জান্নাত! এর থেকে অসম্ভব ঘটনা এই মুহুর্তে জান্নাতের কাছে এটাই মনে হচ্ছে। উত্তেজনায় মেহরাবের নিকট এগিয়ে যেতে চাইলেও মাথা ভার হয়ে থাকার কারণে তা পারলো না। ধপ করে আবারো বিছানায় বসে পড়লো। কিন্তু তাতেও তার তেজ কমলো না। বরং বিছানায় আরো ভালো মতো বসে অর্ণবের দিকে আঙ্গুল তাক করে চিল্লিয়ে বললো,
এই এই একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবেন না। আমি আর নেশা? দুই প্রান্তের দুটো জিনিস। আমি ভুলেও কখনো নেশা করবো না আর নেশা করে মাতলামি তো দূর।
তবে আমি মিথ্যা বলছি?
আলবাত মিথ্যা বলছেন। এছাড়া ওসব জিনিস আমি পাবোই বা কোথায়? ছিহ্! এতো জঘন্য আরোপ দিতে আপনার লজ্জা করলো না? অভদ্র হয়ে যাচ্ছেন আপনি। আমি মামিকে আপনার নামে বিচার লাগাবো বলে দিলাম।
আচ্ছা! বিচার লাগাবি তাও আমার নামে? ঠিক আছে। তুইও বিচার দিবি আর আমিও ফুপার কাছে তোর ভিডিও পাঠিয়ে দিবো। দেখ তো ভিডিও টা!
মেহরাব চোখের ইশারায় জান্নাতের ফোনের দিক নির্দেশ করলো। জান্নাত ভিডিও কথা শুনে বিচলিত হয়ে ফোন খুঁজে হাতে নিল। হোয়াটসঅ্যাপ খুলে মেহরাবের দেওয়া মেসেজটা ওপেন করে দেখতেই মন হলো যেন বৈদ্যুতিক ঝাটকা খেলো। আট সেকেন্ডের একটা ভিডিও। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে জান্নাত মেহরাবের কলার টেনে খারুশ, রাক্ষস সহ দারুণসব বকাগুলো দিয়ে যাচ্ছে। সেই থেকে জান্নাত ভয়ে ঘামতে শুরু করে। কি বলবে সে এখন? সত্যি তো সে মাতলামি করেছে। করেছে তো করেছে একেবারে সিংহের কাছে এসে। জান্নাতের দুঃখে মনে চাচ্ছে কপাল চাপড়ে সমতল করে দিতে।
গতকালের কথা মনে করার চেষ্টা করছে। কিন্তু যতবারই চেষ্টা করছে ততবারই কিরনের থেকে শরবত খেয়ে সোফায় সে বসা পর্যন্তই মনে করতে পারছে। তারপর সব শূন্য স্থানের মতো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। তবে সোফায় এসে বসার পর তার সবকিছু খানিকটা এলোমেলো লেগেছিল। তবে কি কিরণের দেওয়া শরবতে কিছু ছিল? সে কি সত্যি গতকাল রাতে নেশা করেছিল!
জান্নাতের ভয় মেহরাব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। মেয়েটা কেন যেন তাকে খুব ভয় পায়। কিন্তু ও তো সেইটা চায় না। তবে আজকে জান্নাতের ভয় পাওয়াটায় বেশ মজা লুফে নিচ্ছে মেহরাব। তবে ও কে দেখে কেউ বুঝতে পারবে না সে মনে মনে এতোটা মজা পাচ্ছে। উপরে গম্ভীরতার শক্ত খোলশে ঢেকে রেখেছে। জান্নাত ভয়ে মাথা নিচু করে আছে। মোবাইলটা শক্ত করে দু হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে। মেহরাব নিজের হাসিটা ঠোঁট দিয়ে চেপে সোফা থেকে ওঠে দাঁড়ায়। বিছানার সামনে টেবিল থেকে শরবতের গ্লাসটা নিয়ে জান্নাতের দিকে এগিয়ে দেয়। জান্নাত শুরুতেই ভয়ে বিছানার কোনায় দেয়াল ঘেষে বসে আছে। মেহরাবের কাছে যেতে তার মনে মোটেও শায় দিচ্ছে না। গেলেই যদি চেপে ধরে। গতকাল রাতে।এরকম হয়তো আরো কত কিছু বলেছে। সেই ভয়েই আরো গুটিশুটি মেরে বসে। মেহরাব এবার ধমকে ওঠে। কন্ঠে তার মিথ্যা গম্ভীরতা,
জান্নাত! তিন সেকেন্ডের মধ্যে শরবতটা না খেলে ধরে নিয়ে বারান্দায় ঝুলিয়ে রাখবো তোকে বলে রাখলাম। আর ভিডিও নিজে টিভিতে সকলকে দেখিয়ে দেবো।
জান্নাত বিড়ালের মতো অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো মেহরাবের দিকে। বদ লোকটা ওর দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে। মনে মনে ভাবছে কালকে মাতাল হয়ে গলাটা টিপে দিলেও বোধ হয় ভালো হতো। কিন্তু যা হয় নি তা নিয়ে ভেবে কি হবে! সামনের ঘটা ঘটনা আটকানো নিয়ে ভাবতে হবে। উপায়হীন হয়ে দু হাটুর উপর ভর করে এগিয়ে যেতেই খেয়াল হলো ওর শরীরে ওড়না নেই। শরীরে গতকাল রাতের সেই বেগুনি রঙ্গের কুর্তিটাই। দ্রুত কাথাটা টেনে শরীরে মুড়িয়ে মেহরাবের কাছে এগিয়ে গিয়ে শরবতের গ্লাসটা হাতে নিল। একদমে গ্লাসটা শেষ করে টেবিলে রেখে দেয়। আশেপাশে তাকিয়ে ওড়না খুঁজতেই সোফার কোণায় তার অস্তিত্ব খুঁজে পেলো। মেহরাবের সামনে এইভাবে থাকতে ভীষণ অস্বস্তি লাগছে । তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে নেমে সোফার দিকে এগোতেই কাথা পায়ে জড়িয়ে যায়।
দু হাত দিয়ে সোফার সামনের টেবিলটা ধরতেই মেহরাব বুঝতে পারলো তার পিঠ পিছনে কি হয়ে গেল। পিছু ঘুরে দ্রুত জান্নাতের কাছে গিয়ে সোজা করে দাঁড় করায়। জান্নাত বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছে। শরীর কেঁপে ওঠেছে। এরই মাঝে মেহরাবের বাজখাঁই ধমক,
কি সমস্যা তোর? এতো দৌড়াদৌড়ি করিস কেন সব সময়? পড়ে হাত পা ভাঙ্গার এতো শখ থাকলে আমাকে বল। ছাদ থেকে ফেলে ভালো মতো ভেঙ্গে দিচ্ছি সব।
জান্নাত গোল গোল করে মেহরাবের দিকে তাকিয়ে আছে। মেহরাবের চোখে দুঃচিন্তা স্পষ্ট। এতটুকুতেই মেহরাবের এমন উদ্বেগেও অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। জান্নাতের ছোট কোমল মনটা বার বার বলছে মেহরাবের চোখে অন্য কিছু আছে। এই যে দুঃচিন্তা এ কেবল সাধারণ দুঃচিন্তা নয়। আরো কিছু। কিন্তু কি? মেহরাবের কন্ঠস্বরে জান্নাতের ঘোর কাটলো। ঘোর কাটতেই নিজেও অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। চট করে মেহবরাবের থেকে দূরে সরে দাঁড়ায়। পাশ থেকে সোফায় থাকা ওড়নাটা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে কাঁথাটা গোছাতে শুরু করে। মেহরাবের দিকে অজান্তেই তাকিয়ে থেকে হঠাৎই নিজের মাঝে অদ্ভুত অস্থিরতা কাজ করছে। মূলত সেই অস্থিরতা কাটাতেই কাথা গোছানো শুরু করছে। কিন্তু মাঝ পথেই মেহরাবের কথায় কান লাল হয়ে এলো।
কালকে রাতে এই অবস্থাতেই যখন আমার রুমে গিযে মাতলামি করে এসেছিলি তখন এ লজ্জার কথা মনে ছিল না?
জান্নাত পুনরায় নিজের রূপে ফিরে এলো। এতো বড় কথা শুনে ঠিক থাকা কি তার পক্ষে সম্ভব? কাথাটা বিছানায় ছুড়ে কোমরে একহাত রেখে আরেক হাের আঙ্গুল মেহরাবের দিকে তাক করে কন্ঠে ঝাঁঝ নিয়ে বলে,
একদম অসভ্যের মতো কথা বলবেন না বলে রাখলাম। আমি কি ইচ্ছে করে খেয়েছি ওসব? কে জানতো ভাবি শরবতে হাবিজাবি মিশাবে। জানলে কি খেতাম? না খেতাম আর না আমার রুমে এসে মাতলামি করতাম। তখন একটু হলেও স্বজ্ঞানে থাকলর আপনার রুমের ত্রিসীমানায়ও আসতাম না। আমার কাছে তো অজ্ঞান হয়েও যাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নাই কিন্তু আল্লাহ জানে কিভাবে কালকে এলাম।
জান্নাতের কথায় মেহরাব ধীর পায়ে ওর দিকে এগিয়ে যায়। হঠাৎ করে মেহরাবের আগানো দেখে জান্নাত ভরকে যায়। দু পা পিছোতেই বুঝতে পারলো পিছনে বিছানা। বিছানায় পড়ার আগেই মেহরাবের হাত স্পর্শ নিজের কোমরে পেয়ে বরফের মতো জমে গেলো। মেহরাব জান্নাতের দিকে ঝুঁকে গিয়েছে। মেহরাবের তপ্ত নিঃশ্বাস জান্নাতের মুখে আচড়ে পরছে। প্রথম কোনো পুরুষের এমন গভীর ছোঁয়ায় বাকহীন হয়ে গেল জান্নাত। রক্তকণিকাগুলো যেনঁ ছুটোছুটি শুরু করেছে। বুকের দামামা নৃত্য চলতে শুরু করেছে। কিন্তু জান্নাতের অভিব্যক্তির কোনো পরিবর্তন নেই। সে যেন স্থির কোনো বস্তু হয়ে গিয়েছে। জান্নাতকে হালকা ভড়কে দিতে মেহরাব ইচ্ছাকৃত এ কাজ করেছে। কিন্তু জান্নাত তো একটু বেশিই ভড়কে গেছে। জান্নাতের চোখ মুখ দেখে মেহরাবের আবারো ভিষণ হাসি পাচ্ছে। তাই আরেকটু ঘেটে দিতে নিজের মুখটা জান্নাতের কানের কাছে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
অজ্ঞানে হোক কিংবা সজ্ঞানে তুই কেবলমাত্র আমার কাছেই আসবি। তোর সকল সত্তাই আমার। একান্ত আমার।
কানের কাছ থেকে মুখ সরিয়ে আনলো। জান্নাতকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দু হাত দিয়ে গাল আলতো করে ছুঁয়ে কপালে ছোট্ট করে ঠোঁট ছোঁয়াতেই জান্নাতের শরীরের কাপনটাও অনুভব করতে পারে মেহরাব। দূরে সরে দাঁড়ায়। জান্নাত এখনো সেভাবেই ঠায় দাঁড়িয়ে। মুচকি হেসে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে গায়ে থাকা কালো রঙ্গের টি শার্ট ও নীল রঙ্গের ট্রাউজারটা টেনে ঠিক করে নেয়। চুলগুলোর মাঝে আঙ্গুল ঢুকিয়ে সেগুলো আঁচড়ে দরজার দিকে এগোয়। টেবিলর রাখা ফোনটা পকেটে ডুকিয়ে দরজার কাছে চলে আসতেই জান্নাতের কন্ঠে পেছন ফিরে তাকায়। জান্নাতের চোখে মেখে এখনো অবিশ্বাস্যের রেশ।
আপনি কি আমাকে বাই এনি চান্স ইনডিরেক্টলি প্রপোজ করে গেলেন মেহরাব ভাই?
এবার মেহরাব অবাক হলো। ঠোঁটে প্রশস্ত হাসির দেখা মেললো। চলে যেতে যেতে প্রতুত্তরে কেবল বললো,
এম সো মাচ ইমপ্রেসড টু সি ইউর সেন্স অব হিউমার।
—-
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গিয়েছে। কিরণ, তিন্নি ও রোহান এক জোটে পরীক্ষার ভবন থেকে সবে মাত্র বেড়িয়েছে। হৃদের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল হলের ভেতরে। কিন্তু আসে নি। ওকে ফোন করা প্রয়োজন। ফোনটা বের করতেই দেখে ইতিমধ্যে ফোন বাজছে । স্ক্রীনে অর্ণবের নামটা দেখে ভ্রু কুচকে এলো। অসময়ে অর্ণবের ফোন ভাবনায় ফেললো কিরণকে। সাত পাঁচ ভাবতেই ফোনটা কেটে গেল। তেইশটা’টা মিসড কল দেখে কিরণ অবাক হয়ে যায় । এতো গুলো কল! গত বিশ মিনিট যাবৎ লাগাতার কল করেছে। পরীক্ষার হলে থাকায় সাইলেন্ট মুডে রেখেছিল। হয়তো খুবই দরকারি কিছু। নতুবা এতো অধৈর্য হয়ে কল করার মতো মানুষ অর্ণব না। সবকিছু ঠিক আছে তো! দুঃচিন্তায় কিরণ দ্রুত কল ব্যাক করতেই দেখলো পুনরায় কল এসেছে। কিরণ বিলম্ব না করে সাথে সাথে ধরতেই অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এলো অর্ণবের বিচলিত কন্ঠস্বর,
কোথায় তুমি কিরণ? কতবার ফোন করছি ধরছো না কেন?
পরীক্ষায় ফোনটা সাইলেন্ট ছিল। মাত্রই বের হলাম।
আচ্ছা শোন! এক্ষুনি সোজা বাসায় যাবে। ডানে বামে না তাকিয়ে না থেমে সোজা বাসায় যাবে। আজকে সারাদিনে বাসার গেইটের বাহিরে কেউ এক পা ফেলবে না। মনে থাকবে? আমার আসতে দেরি হবে। আমার অনুপস্থিতিতে নিজেকে দেখে রাখবে।
কিরণ কিছু বলতে যাবে তার আগেই টুট টুট শব্দে ফোনটা কেটে গেলো। কিরণকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন রাখায় কিরণের রাগ হলো। কথার মাঝে গাড়ির শব্দ শুনেছে কিরণ। তারমানে অর্ণব গাড়িতে। কোথায় যাচ্ছে, কেন তাকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরতে বললো না বলেই এভাবো হুট করে ফোন কাটার কোনো মানে হয়? কিন্তু বলেছে যেহেতু সেহেতু নিশ্চয় কোনো কারণ আছে। কিরণ ফোনটা রেখে রোহানকে বিদায় জানিয়ে তিন্নিকে নিয়ে এগিয়ে যেতেই হৃদ চলে আসে সামনে। মেয়েটা হাঁপাচ্ছে। কোমরে দু হাত রেখে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। হয়তো খুব দ্রুত ছুটে এসেছে। হৃদের হাঁপানো দেখে তিন্নি ও কিরণ দুজনেই উৎসুক হয়ে তাকায়। হৃদ ওদের দৃষ্টি বুঝতে পেরে নিজে ধাতস্ত হয়ে হাসিমুখে বলে,
দোস্ত! দারুণ অফার পেয়েছি। আজকে বিকেলে একটা জায়গায় অনেক বড় অনুষ্ঠান হবে। সেখানে রির্পোটার হিসেবে ডিপার্টমেন্ট থেকে তিনজনকে পাঠাবে। আমাদের এ সুযোগটা লুফে নেওয়া উচিৎ। জীবনের প্রথম ফিল্ডে কাজ করার সুযোগ। সে ইয়েস প্লিজ!
কিরণ হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এতো বড় সুযোগ এইভাবে পাবে তা কল্পনার অতীত। কিরণ খুশিতে ঝুমঝুমিয়ে ওঠে। উত্তেজনায় হৃদকে জড়িয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই মনে পড়ে অর্ণবের বলা কথা। তখনই খুশিটা বিলীন হয়ে আসে। অর্ণব গুরুতর কোনো কারণ ছাড়া কখনোই কিরণকে এভাবে বাসায় ফিরতে বলতো না। অর্ণবোর কন্ঠেও সে উদ্বেগের সুর পেয়েছে। হুট করে মনের ভেতরটা ছটফট করতে শুরু করলো। কেন কথা বললো ওভাবে অর্ণব? কেন নিজের অনুপস্থিতির কথা বললো ও? কিরণের এখন কি করা উচিৎ ভেবে কিরণ চিন্তিত হয়ে উঠল। অর্ণবের কথায় বাড়ি ফিরবে নাকি নিজের স্বপ্ন পূরণে এতো বড় সুযোগ কাজে লাগাবে?
চলবে ~~~~~