#বিপরীতে_তুমি_আমি
#পর্বঃ১৮
#লেখনি_সুমাইয়া_ইসলাম
অব্যক্ত অনুভূতিগুলো নিজেদের মাঝে রেখেই সময়ের দিকে প্রবাহিত হয়ে গেল দুটো মানব। দুজনেই একই দিশায় চললো তবে রাস্তা হলো ভিন্ন। তাদের পথ সরলরেখায়। তবে একই সরলরেখা নয়। পাশাপাশি দুটো। সমান্তরালে তারা দুটো পথিক। নিমেষেই যেন পার হয়ে গেল প্রায় দুটো বছর। অর্ণবের দ্বিতীয় বর্ষ শেষ হলো। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাটাও শেষ হলো। ঢাকার সনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও স্থান হলো তার। পছন্দের বিষয় আইন বিভাগের প্রথম বর্ষে।
অপর দিকে কিরণও তখন দশম শ্রেণির ছাত্রী। অর্ণবের ছোট বলা মেয়েটি তখন শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরোপুরি যুবতী। কিন্তু কিশোরী বয়সের যে অনুভূতি কেবল চারাগাছ ছিল তা এখন পরিপক্ব বৃক্ষ।
কিরণের উর্বর মনে অর্ণব শিকর গেড়ে বসে যায়। কিন্তু অর্ণবের মনে কি কিরণ ততটায় জায়গা জুড়ে আছে?
বছরের মাঝামাঝি সময়। হুট করেই হৃদের কথায় কিরণের শান্ত নিবিড় জীবনে অশান্ত হাওয়া বয়ে যায়। অর্ণব এ পর্যন্ত বলে নি ভালোবাসার কথা। কিন্তু ইতিহাস থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রতি যুগেই বিখ্যাত মনীষীগণ বলে গেছেন নারীদের ষষ্ঠইন্দ্রীয় খুবই তুখোড়। পাশে কেউ তাকিয়ে থাকলেই বুঝতে পারে, সেখানে পছন্দের মানুষটা তাকে পছন্দ করে কিনা এইটা বুঝবে না তা কি হয়! অর্ণব সর্বদা যেমন স্থির থেকেছে তেমনি নিরবে কিরণের প্রতি খেয়াল করেছে।
অর্ণব যখন কলেজে ছিল, তখন কিরণ কোনো বড় ভাইয়ের সাথে কথা বললে ছলাকলায় সরিয়ে নিয়েছে। তিক্ত কথায় কিরণের মনে জেদ তৈরী করেছে নানা বিষয়ে।
কলেজ থেকে বের হয়ে গেলেও কিরণের পিছনে ছিল তার গোপন চেলা। কিরণের সর্বদা মনে হতো সে যেন কোনো বলয়ে ভেতরে আছে। সুস্থ ও নিরাপদ বলয়। অর্ণব নামক বলয়ের ভেতরে।
কিন্তু হঠাৎ কিরণের মনে জাগলো সেই বলয় হারিয়ে যাওয়ার ভয়। হৃদের কাছে সে শুনেছে অর্ণবের আশেপাশে এখন অনেক ধরনের মেয়েরা থাকে। যদি কিরণের মতো সাধারণ মেয়েকে ভুলে অন্য কাউকে ভালোবাসে? কিন্তু অর্ণবের চোখে কিরণ নিজের জন্য প্রেম দেখেছে। লালসহীন প্রেম। এমন প্রেম মনে রেখে কি অন্য কাউকে আবার ভালোবাসা যায়? যদি ভালোবাসা বদলে যায়! কিরণ নরম মন ভয়ে কুঁকড়ে যায়। অর্ণব হারিয়ে গেলে শেকর উপরে যাবে। ফাটল ধরবে তার উর্বর মনে। সেই যন্ত্রণা সহ্য করার মতো বয়স যে তার নয়। নিজের অনেকটায় সে অর্ণবের মাঝে জমা করে দিয়েছে। অর্ণব ছাড়া দ্বিতীয় পুরুষ যার মস্তিষ্কের দূর দুরান্তে থাকে না সে কি করে সহ্য করবে সেই পুরুষের মনে অন্য নারীর বাস?
কিরণের মনে যখন ভয়ের বীজ কেবল অঙ্কুরিত হচ্ছে তখনই সে সামনাসামনি হয় আশঙ্কাজনক দৃশ্যের। বিকেলে হৃদ, তিন্নি ও কিরণ প্রাইভেট সেরে বাসার দিকেই যাচ্ছে। তাদের প্রাইভেট কেন্দ্রটা স্কুল পার হয়ে। প্রাইভেট ও বাসার মাঝেই স্কুলের রাস্তাটা। স্কুলের সামনে আসতেই চোখে পরলো ঝালমুড়ি। ঝাল ঝাল মাখানো মুড়ির লোভ উপেক্ষা করার সাধ্য ওদের কারোরই নেই। দেখা মাত্রই দৌড়ে হাজির তারা। কে কার আগে যেতে পারে। এ যেনো প্রতিযোগিতায় নেমেছে তারা। কে আগে নেবে, কে আগে শেষ করে অপরেরটায় হামলা করবে। এতটুকুতেই কি আনন্দ! ছোট ছোট সাধারণ ঘটনায় কত বড় বড় আনন্দ নিহিত থাকে! কিরণরা সেখানে দাঁড়িয়ে খাচ্ছে। হঠাৎই কিরণের চোখ যায় সামনে থাকা এক রেস্টুরেন্টে। থমকে যায় কিরণ। ঠোঙ্গায় অর্ধেক ঝালমুড়ি রেখেই তিন্নির হাতে দিয়ে বলে যায়,
এইটা রাখ তো তিন্নি। তোরা খা আমি একটু আসছি। যাবো আর আসবো। আমার বিলটা কেউ দিয়ে রাখ।
একটা সেকেন্ডও দেড়ি না করে ছুটে যায় রেস্টুরেন্টের দিকে। কাছাকাছি যেতেই পায়ের গতি ধীর করে ফেলে। মাথায় দেওয়া সাদা রঙ্গের ওড়নাটা টেনে ঠিক করে নেয়। চোখের সামনে একটু দূরেই অর্ণব। একটা মেয়ের সাথে রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে সে। মুখে তার সেই অমায়িক হাসি। বেগুনি রঙ্গের একটা টিশার্ট গায়ের সাথে ল্যপ্টে আছে। ফর্সা শরীরে রঙ্গটা খুব ভালো মানিয়েছে। হাতের ঘড়িটাও হাতের সৌন্দর্যটা দ্বিগুণ করেছে। সাধারণ একটা বাদামি রঙ্গের প্যন্ট ও চমড়ার জুতোতেই কি অসাধারণ লাগছে মানুষটাকে! কি হতো এতোটা সুন্দর না হলে? কোথাও কোনোকিছু অশুদ্ধ হতো না। অন্তত কিরণ শান্তিতে থাকতো। হারানোর ভয় থাকতো না। কিন্তু এতো শান্তি হলে তো!
অর্ণবের একদম পেছনে এসে পা থাকালো। মেয়েটাও হুট করে অর্ণবের হাতের বাহু ছুঁয়ে বিদায় নিল। মেয়েটার কাজে কিরণের দাঁত লেগে এলো। ছুঁয়ে দিয়ে চলে যেতে হবে কেন? এমনি বিদায় নেওয়া যায় না? কিন্তু মেয়েটা কে? কিরণের মন ধুক করে ওঠলো। বিশেষ কেউ না তো! এতো হাসি হাসি করে কথা বললো কেন অর্ণব?
কিরণের প্রশ্ন ভর্তি চিন্তার মাঝেই অর্ণব পিছন ফিরে একদফা চমকে উঠলো। এভাবে কিরণকে সে মোটেও আশা করে নি। তবে খোঁজ সে কিরণেরই করছিল। বিশেষ একটা দিন আজ। তার আরো একটা অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলছে। কিন্তু খেয়াল করলো কিরণ মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কাঁধে ঝুলানো লম্বা পাশ ব্যাগটার ফিতে ধরে অবিরাম খুচিয়ে যাচ্ছে। গভীর চিন্তায় মগ্ন সে। অর্ণব কিরণকে ভালোমতো দেখকেই ঠোঁটের কোনে ফুটে ওঠে একরাশ হাসি। আজ কিরণকে তার জীবন্ত কাঠগোলাপ লাগছে। সাদার মাঝে হলুদ জামায় সদ্য মাটিতে ঝড়ে পড়া কোনো কাঠগোলাপ। পকেটে দু হাত ঢুকিয়ে হালকা কেশে ইঙ্গিত দিতেই কিরণ চোখ তুলে তাকায় তার দিকে। দ্বিধায় ছোট্ট একটা হাসি দেয়। কৌতুহলে সে চলে তো এসেছে তো ঠিকই কিন্তু এখন কি বলবে অর্ণবকে?
কিছু বলতে চাচ্ছে?
অর্ণবের প্রশ্নে মুচকি হেসে মাথা নেড়ে না বুঝিয়ে বললো,
প্রাইভেট পড়ে বাসায় যাচ্ছিলাম। আপনাকে হঠাৎ দেখলাম তাই ভাবলাম খোঁজ খবর নিয়ে যাই।
আচ্ছা! তাই নাকি? তো বলো কি ধরণের খবর চাচ্ছো? মন ভালো করার নাকি খারাপ করার?
কিরণ অর্ণবের কথার মানে বুঝতে না পেরে ভ্রু কুচকে তাকালো। অর্ণব কিরণের চাহনি বুঝতে পেরে মুচকে হেঁসে পুনরায় বললো,
আচ্ছা আজ নয়! কালকে বলবো।
কালকে? কি বলবেন?
অর্ণব একটু ঝুঁকে ধীর গলায় বলে,
আমার প্রিয় একটা জিনিসের গ্র্যন্টেট ওয়ারেন্ট।
আপনি সবসমসয় এতো হেয়ালি করে কথা বলেন কেন?
তুমি যেন না বুঝতে পারো তার জন্য। আচ্ছা চল! তোমার বাসায় যাওয়া দেরি হয়ে যাচ্ছে।
কিরণ অর্ণবের কথায় অবাক হয়ে গেল। যে ছেলে তার সাথে আজ পর্যন্ত এক মিনিট হাঁটে নি সে আজ বাসায় এগিয়ে দিতে চাচ্ছে? কিরণ অবাকের সাথে অর্ণবের দিকে তাকালে অর্ণব আবারো মুচকি হেঁসে এগিয়ে গেল। কিরণ এখনো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। অর্ণবকে যেতে দেখছে। অর্ণব এগিয়ে গিয়েে বোধ হতেই কিরণ হুশ ফিরে পায়। দ্রুত। এগিয়ে অর্ণবের একটু পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করে। অদ্ভুদ ভালো লাগায় মর্মদেশ শীতল হয়ে ওঠছে। এ প্রথম অর্ণবের এতো কাছে সে। হঠাৎ অর্ণব তার দিক পরিবর্তন করে কিরণের একপাশ থেকে আরেকপাশে এসে হাঁটতে শুরু করে। কিরণের বিষয়টা বুঝতে সময় লাগলো। লোকটা কি সুন্দর তাকে গাড়ি থেকে বাঁচাতে রাস্তার পাশে আসলো। তার মস্তিষ্কে কিরণের জন্য চিন্তা ঠিক আছে অথচ দেখাচ্ছে সে ফোনে মনোযোগী। কাউকে মেসেজ করছে। অর্ণবের এ নীরব যত্নগুলোর প্রতিই কিরণ আরো বেশি দুর্বল। কিরণ খেয়াল করলো ওদের সামনে তিন্নি ও হৃদ দাঁড়িযে আছে এখনো। কিরণের মনে আবার উদয় হলো মেয়েটির পরিচয় সংক্রান্ত প্রশ্ন। উশখুশ করছে ভিষণ। কিভাবে জিজ্ঞাসা করবে? জিজ্ঞেসা করলেও অর্ণব বিষয়টা কিভাবে নেবে ভেবেই দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছে। কিন্তু না জানতে পারলে যে সে এক বিন্দুও শান্তি পাবে না। তাই আর না ভেবে কিরণ প্রশ্ন করেই ফেললো,
মেয়েটা কে ছিল অর্ণব ভাই? এর আগেও আপনার সাথে বেশ কয়েকবার দেখেছি। আপনার বিশেষ কেউ?
অর্ণব কিরণের প্রশ্নে কিছুটা থমকে গেল। কিরণ আজ বড় অদ্ভুদ ব্যবহার করছে। নিজে থেকে রাস্তায়ই কথা বলতে এসেছে, তার সাথে হাঁটছে আবার প্রশ্ন করছে। প্রশ্ন থেকে অর্ণব কিরণের মাঝে থাকা অনিরাপত্তাহীনতার সুর পাচ্ছে। কিরণের কৌতুহলে অর্ণব মনে মনে প্রশান্তি অনুভব করছে। বড় হচ্ছে মেয়েটা। একটা অনুভূতির সাথে থাকা আরো অনুভুতিগুলোও অনুভব করতে পারছে সে। হাতে থাকা ফোনটা পকেটে রেখে দিল। হেঁটে যেতে যেতে হৃদ ও তিন্নির প্রায় কাছে চলে আসতেই গলার সরবর নিচু করে বলে,
ইউ হ্যাভ আর সারপ্রাইজ। কাল ছুটির পর কলেজের পাশের বট গাছের নিচে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।
হৃদ ও তিন্নির সাথে সৌজন্যমূলক কথা বলে অর্ণব স্থান ত্যাগ করলো। কিরণ কেবল তাকিয়ে রইলো আর মাথায় ঘুরতে লাগলো সময়ের অপেক্ষা। আগামীকালের অপেক্ষা।
—-
অত্যাধিক চিন্তায়, কৌতুহলে কিরণের রাত পার হলো। সকাল হতেই দ্রুত বেড়িয়ে যেতে চাইলো স্কুলের উদ্দেশ্যে। জুতা পড়তে পড়তে হঠাৎ শুনতে পেলো বাবার কন্ঠ,
কিরণ ধীরে চলাচল কর। সময় আছে এখনো। তাড়াহুড়ো করবে না কিছুতে আগেই বলেছি।
কিরণ সোজা হয়ে দাঁড়ালো বাবার সামনে। শাফিউদ্দিন সাহেবের হাতে খবরের কাগজ। সকাল সকাল হেঁটে এসেছেন। ঘামে ভিজে আছে ধূসর রঙ্গের শরীরের ঢিলে টিশার্টটা। মেয়ের কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে খুবই নরম স্বরে বলেন,
শোন! সবকিছুরই একটা নিদির্ষ্ট সময় থাকে। সময়ের আগে কিছু পাওয়ার আকাঙ্খা থাকালে জিনিসটা তোমার জন্য ভালো হয় না। তাই অপেক্ষা কর। আর ধীরে ধীরে সাবধানে স্কুলে যাবে। তাড়াহুড়ো করবে না।
শাফিউদ্দিন মেয়েকে বুঝিয়ে উপরের সিঁড়ি বেয়ে ওঠে গেলেন। আর কিরণ বাবার কথার ভিত্তি না বুঝে ঘন ঘন দুটো পলক ফেলে এগিয়ে গেলো স্কুলের উদ্দেশ্যে।
পনেরো মিনিট যাবৎ কিরণ দাঁড়িয়ে আছে বট গাছের নিচে। স্কুল খাল হয়ে যাচ্ছে। আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো অর্ণব আসছে না। চিন্তায় দু ভ্রুর মাঝে ভাজ সৃষ্টি হলো। আরো পাঁচ মিনিট নাগাদ অপেক্ষা করতেই দেখা মিললো অর্ণবের। পড়নে তার কালো একটা শার্ট। কালো ঘড়ি। ধূসর রঙ্গের প্যন্ট। কিরণের মর্ম কেঁপে কেঁপে ওঠছে। কিরণের ধারণা অর্ণব আজ তাকে মনের অব্যক্ত কথাগুলো বলবে। এতো দিনের লুকিয়ে রাখা অনুভূতিগুলো বুঝি আজ নাম পাবে। আজ বুঝি কিরণের সকলের চিন্তা, ভয় দূর হবে। কিন্তু সত্যি হবে তো? যে দূরত্ব ঘুচবে বলে ভেবে রেখেছে কিরণ হয়তো জানেই না সেই দূরত্বের দূরত্ব আরো বাড়বে। অর্ণব কাছে আসতেই তার ফ্যাকাশে মুখটা দেখে কিরণের ভেতরে কোথাও একটু করে ভয়ের দানা বাঁধল। তবুও নিজেকে ঠিক মুচকি হেসে রেখে বললো,
আপনার আসতে এতো দেরি হলো যে?
অর্ণব কিরণের দিকে তাকালো। মেয়েটার চোখে মুখের উৎসাহ দেখে অর্ণবের ভেতরের ঝড় আরো তীব্র আকার ধারণ করছে। কিরণের যে আশায় আজ তার সামনে দাঁড়িয়ে সে আশা, সেই উচ্ছ্বাস এখনই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। কেমন করে দেখবে সেই মুখটা? এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। আজ তো অপেক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কেন তবে সেই অপেক্ষার পথ আরো দীর্ঘ হলো। কতটা দীর্ঘ সে হয়তো জানে কিন্তু মানতে পারছে না। ভেতরে দুমড়ে যাওয়া মানুষটা কি কিরণের সামনে ঠিক থাকতে পারবে? বোঝাতে পারবে কি যেভাবে বোঝাতে চাচ্ছে? কিরণ মেনে নেবে কি তাকে? বুক চিড়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো। ঠোঁটটা হালকা ভিজিয়ে কিরণকে ইশারা করে বট গাছের নিচে সান বাঁধানো জায়গায়টায় বসতে। কিরণও বাধ্য মেয়ের মতো বসে পড়ে। অর্ণব ধীরে ধীরে কিরণের পাশে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ায়। দু পকেটো হাত রেখে সিমেন্টের বসার জায়গায় হালকা করে বসে। পা দুটো লম্বা করে পায়ের পাতা আরেক পায়ের পাতার উপর ক্রস করে বসে। কিরণ অর্ণবের দিকে কৌতুহলে তাকিয়ে আছে। শান্ত ভাবে কিরণের মুখের দিকে মাথা ফিরিয়ে বলে,
আজকের পর থেকে আমাদের আর দেখা হচ্ছে না! কবে দেখা হবে সেটাও বলতে পারছি না। হয়তো দু বছর। তিন বছর আবার পাঁচ বছরও হতে পারে।
অর্ণবের কথা কানে পৌঁছাতেই কিরণ থমকে গেল। বরফের মতো যেন জমে গেল প্রতিটি রক্ত কণিকা। সারা দুনিয়া মুহুর্তেই কোলাহলমুক্ত লাগলো। বাতাসের শব্দও কানে আসছে না। শুধু বাজছে,
” আমাদের আর দেখা হবে না ”
চলবে ~~~~~