#বিপরীতে_তুমি_আমি
#পর্বঃ০৩
#লেখনি_সুমাইয়া_ইসলাম
দরজার খট শব্দে ধ্যান ভাঙ্গলো কিরণের। অর্ণবের ইউনিফর্মটার দিকে তাকিয়ে কতটা সময় পার হয়ে গিয়েছে কিরণের অজানা। ইউনিফর্মটায় মানুষটাকে কেমন লাগবে? কাল্পনিক মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে করতে এতোটা সময় পার হয়ে গেল। নামের জায়গাটা থেকে হাত সরিয়ে পিছু ফিরলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অর্ণব তাওয়ালে চুলের পানি মুছতে ব্যস্ত। পড়নে তার সেই সাদা পাঞ্জাবি সাথে সাদা পাজামা। পাজামা পেলো কোথায়? ওয়াশরুমেই ছিল বুঝি? হঠাৎ কিরণের মনে হল অর্ণবকে মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর লাগছে। শরতের আকাশের পেজো তুলোর মেঘের মতো শুভ্র লাগছে। অবাধ্য মন চাইছে তাওয়ালটা কেঁড়ে নিয়ে সযত্নে স্বহস্তে চুল মুছে দিতে। ভেজা চুলগুলোর মাঝে আঙ্গুল ডুবিয়ে দিতে। তখনই কানে এলো অর্নবের কন্ঠ,
তোমারই স্বামী। এতো দূর থেকে না দেখে কাছে এসেই দেখতে পারো। আমি কিন্তু কিছু মনে করবো না।
তাওয়ালটা বারান্দায় রেখে গ্রিলে নিজের সম্পূর্ণ ভার দিয়ে দাঁড়ালে অর্ণব। মুখোমুখি দুজন অথচ মাঝখানে দূরত্ব। কিরণ নিজ কর্ম উপলব্দি করতেই দ্রুত দৃষ্টি সংযত করলো কিরণ। মনের জন্য বুঝি এবার মান সম্মান খোয়াতে হয়। বেহায়া! বেশরম! কিভাবে ব্যপারটাকে ঢেকে দেওয়া যায়? ডানপাশে চোখ পড়লো। ঠোঁটে খেলে গেল দুষ্টু হাসি। সেই হাসি বজায় রেখেই অর্ণবেরদিকে তাকিয়ে বললো,
আপনাকে দেখবো এতো বাজে সময়ও আমার নেই। আমি তো ভাবছিলাম…
কিরণ দুকদম হেঁটে ইউনিফর্মটার কাছে দাঁড়ালো। একহাত দিয়ে নামিয়ে নিজের সামনে ধরে বললো,
কেমন হয় যদি আপনার এতো সুন্দর পোষাকটায় আমার ভালোবাসার বিশেষ চিহ্ন বসে গেল? মানুষকেও তো জানতে দিন আপনার ঘরে কেমন ঘরোনি এসেছে।
অর্ণবের ভ্রু কুচকে এলো! কি করতে চাইছে কি মেয়েটা? অর্ণব ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো।
কিরণ অর্ণবের এগিয়ে আসা দেখেই ইউনিফর্মটার কাঁধ বরাবর ঠোঁট বসিয়ে দিলো।
অর্ণব স্থির হয়ে দাঁড়ালো। কিরণের নজর অর্ণবের ভাবমূর্তি পরখ করছে। খুব কি অবাক হলো? চোখ মুখ দেখে কেন যেনো কিছু বুঝতে পারে না কিরণ।
অর্ণব মুচকি হাসলো। কিরণের কাছাকাছি আসতে আসতে বললো,
যা খুশি করতেই পারো । পুরো মানুষটাই তোমার আর মানুষটার সকল জিনিস। ভালোবাসতে পারো আবার..
বলতে বলতেই কিরণের হাত থেকে ইউনিফর্মটা নিয়ে নিলো। অর্ণবের ধীর পায়ে এগিয়ে আসায় কিরণ কিছুটা ভরকে গিয়েছিল। সেই সুযোগেই অর্ণব তা ছিনিয়ে নিল। সযত্নে সেটাকে আবার আগের জায়গায় রেখে দিলো। পিছন ঘুরেই দেখে নিলো কিরণের অবস্থান। বলিষ্ঠ হাত দিয়ে কিরণকে টেনে নিজের কাছে নিলো। একহাত কিরণের কোমরকে বেষ্টন করে আছে। অপর হাতটা রয়েছে কিরণের বাম হাতের কবজ্বি বরাবর। কিরণ এ ঘটনার জন্য সম্পূর্ণভাবে অপ্রস্তুত ছিল। অর্ণবের আচমকা এমন স্পর্শে কেঁপে ওঠলো কিরণের নিউরনসমূহ। খুব কি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে? দু জোড়া চোখ নিবন্ধন হল একসাথে। কিরণের বুকের ভেতরটা ঢিপ ঢিপ শব্দে আন্দোলিত হচ্ছে। ভয় নাকি অন্যকিছু তা জানা নেই। শুধু ভাবছে এই শব্দ কি অর্ণব উপলব্ধি করছে? সে কি বুঝতে পারছে তার স্পর্শে কিরণ কতটা প্রভাবিত হচ্ছে? হঠাই গলায় সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভব করলো কিরণ। মারাত্মক ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে। অর্ণবের বুক বরাবর ধাক্কা দিয়ে সরে এলো কিরণ। দ্রুত ছুটে গেলো আয়নার সামনে। গলাটা কিঞ্চিৎ উঁচু করতেই স্পষ্ট হলো অর্ণবের দাঁতের চিহ্ন গুলো।
লোকে আমার বউয়ের ভালোবাসা দেখবে অথচ তোমার স্বামীর ভালোবাসা দেখবে না তা কি হয়? পরে লোকে বলবে তোমার স্বামী তোমায় ভালোবাসে না। এতো বড় অপবাদ ঘাড়ে নিতে আমি মোটেও রাজি না। আমার একমাত্র বউকে কথা শুনাবে তা আমি কিছুতেই সহ্য করবো না।
অর্ণবের কথাগুলো বলে এ দেয়ালে এক কাঁধ ঠেকিয়ে দাঁড়ালো।
এ পুরুষ তো ভারি অসভ্য! একেই তো এভাবে কামরে দিয়েছে তারমাঝে আবার এমন লাগাম ছাড়া কথা। রাগি চোখে অর্ণবের দিকে তাকালো।
হাতদুটো পাঞ্জাবির পকেটে রেখে ঠোঁটে চির পরিচিত সেই হাসি। অর্ণবের এমন নির্লিপ্ততা কিরণকে আরো রাগিয়ে দিলো। তেড়ে গেলো অর্ণবের দিকে।
এই এই! আমাকে কি আপনার কোনো খাওয়ার জিনিস মনে হয়? এমন করে কামড়ে দিলেন কেন? বাচ্চা রয়েছেন আপনি যে খেলায় হেরে গেলে কামড়ে দেবেন।
অবশ্যই! তোমাকে তো আমার পুরো….
লম্বা লম্বা কয়েকটা পা ফেলে সেকেন্ডের মধ্যেই কিরণের কাছে এসে দু হাত দিয়ে দু গাল টেনে নিলো।
রসগোল্লার মতো লাগে। আমার রসগোল্লা!
যেমন সেকেন্ডের ব্যবধানে এলো তেমনি সেকেন্ডের ব্যবধানে ঘরের দরজা খুলে চলেও গেলো। কিরণ শুধু তাকিয়ে রইলো অর্ণবের যাওয়ার দিকে। কি বলে গেল, কি করে গেল তা বুঝে উঠতেই কয়েক মুহুর্ত চলে গেলো। শরীর তার থরথর করে কাঁপছে। এ কেমন ভালোলাগার অনুভুতি ছেয়ে যাচ্ছে! সোফার হাতা ধরে ধপ করে বসে পরলো। কিছুতেই যেন কম্পন কমে না। অর্ণবের আসার পূর্বে যেভাবেই হোক নিজেকে শান্ত করতেই হবে। কিরণ এদিক ওদিক তাকিয়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে। ওয়াশরুমের আয়নায় পুনরায় গলার দাগ দেখে নিল। জ্বলজ্বল করছে যেন। রক্ত জমাট বেঁধে আছে। কি নিষ্ঠুর মানুষ! এভাবে কামড়ে দেবে তাই বলে? ওয়াশরুমের আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিতেই চোখে পড়লো স্ট্যন্ডে রাখা লাল টুকটুকে এক শাড়ি। আনমনেই হেঁসে ওঠলো কিরণ! ভালোবাসা বুঝি এমনই?
—
আবারো সেই বাড়ি ভর্তি মানুষ। বৌভাতের আয়োজনে অর্ণবের বাড়ি উৎসব মুখোর। নিচে সকলের হৈ চৈ কিরণের রুম অবধি আসছে। সব মেহমান চলে আসলেই কিরণ এখনো রাতের ওয়াশরুমে রাখা লাল সুতির শাড়ি পড়ে খাটে বসে আছে। তার সামনে বসে আছে হৃদ। হৃদের চোখে মুখে অসংখ প্রশ্ন খেলা করছে যার একমাত্র উত্তর রয়েছে কিরণের কাছে। হৃদকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে কিরণ এবার সোজা হয়ে বসে। শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,
তুই কি কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাইছিস? সেই কখন থেকে তাকিয়েই আছিস।
হৃদ বুঝতে পারছে না কিভাবে এবং কোথায় থেকে প্রশ্ন করবে। আদৌও প্রশ্ন করা ঠিক হবে কিনা! কিন্তু ওর মনে হঠাৎ করেই কিছু প্লশ্ন উদয় হলো যা একদমই অহেতুক নয়। তাই আর সময় নষ্ না করে বলেই ফেললো,
বিয়েতে তোর মত ছিল তাই না? তুই চাইলেই বিয়ে ভাঙ্গতে পারতি। তোর প্রত্যেকটা প্রচেষ্টায় ইচ্ছাকৃত সূক্ষ্ম ঘাটতি রেখেছিলি। সত্য কথা বলবি। এখন আর কোনো মিথ্যা বলবি না।
কিরণ বুঝতে পারলো হৃদের থেকে সে আর কিছু লুকাতে পারবে না। তাই সাবলীল ভাবে জবাব দিলো,
হ্যা!
তা কেন?
কিরণ হেসে বিছানা থেকে উঠে গেলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়িটায় হাত বুলিয়ে নিলো আলতো করে। ভিষণ পছন্দ হয়েছে শাড়িটা। মনে হচ্ছে যেন ভালোবাসা মুড়িয়ে আছে সারা দেহে। মুচকি হেসে আয়না ভেদ করে হৃদের দিকে তাকিয়ে বললো,
দোকানে থেকে বিরিয়ানি দেখে চলে আসা এরকম আর টেবিলে বসে সামনে বিরিয়ানি রেখে তা খেতে না পাওয়া আরেকরকম! বুঝিসনি ?
হৃদের সহজ নাকজ। মাথা ডানে বামে নেড়ে বোঝালো সে বুঝে নি। কিরণে ঘুরে কাউচে বসে বললো,
কাছে থেকে ওনাকে বোঝাবঁ কাঙ্ক্ষিত মানুষের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে কেমন বোধ হয়। কাছে থেকেও যোজন যোজন দূরুত্বের পিড়া কতটা হয়। আমার কষ্টের সুদসহ আসল তুলবো তবেই ছাড়বো।
হৃদ অবাক হয়ে বললো,
ছেড়ে দিবি?
কদাপি নহে! এতো তপস্যা করে ওই পুরুষ আমার হয়েছে। প্রাণ থাকতে ছাড়ছি না।
চলবে ~
বানান ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। চেক করার সময় পাই নি। আপনাদের এতো সার্পটের জন্য এত্তো গুলো ভালোবাসা। গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।