ফিলোফোবিয়া পর্ব ২১

0
715

ফিলোফোবিয়া

ঊর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনির )

২১.

( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ)

অন্ধকারে ঘনিয়ে এসেছে চারিপাশ। নভোমণ্ডল নিকষ কালো রূপ নিয়েছে। বিকালের আলো মাড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে। শহরের রাস্তাঘাট কৃত্রিম আলোয় সেজে। মেঘ ডাকছে গুরুম গুরুম। বোধহয় ঝুম বৃষ্টি নামবে রাতে। গাড়ি বাড়ির রাস্তায় ঢুকতেই ব্যাগপত্র নিয়ে তৈরি হয়ে বসলো প্রিয়। বাড়ি থেকে সামান্য দূরে গাড়ি থামালো শতাব্দ। গাড়ি থেকে নামতে নিলে হাত চেপে আটকালো শতাব্দ। চোখ নাচিয়ে বলল,
‘ বাড়ি যাওয়ার এত তাড়া?’
আশেপাশে ব্যস্ত দৃষ্টিতে চোখ ঘুরালো প্রিয়। চোখেমুখে স্পষ্ট ভয়। কন্ঠে তাড়া জুড়ে বলল,
‘ অনেক দেরি হয়ে গেছে। আশেপাশের অনেকেই পরিচীত। কেউ দেখলে…..
‘ দেখবেনা কেউ। ঝড়ো হাওয়া ছেড়েছে, দোকানপাট গুছিয়ে বাড়ি যেতে ব্যস্ত সবাই।’
পেছনের সিট থেকে ব্যাগ এনে প্রিয়’র দিক এগিয়ে দিলো। বলল,
‘ তোমার আর প্রভার গিফট।’
হতভম্ব প্রিয়। ব্যাগের ভেতর বেশ দামি ব্যান্ডের পারফিউম আর কয়েকটা চকলেট বক্স। বিমূঢ় কন্ঠে বলল,
‘ এসবের প্রয়োজন ছিল না কোন। এগুলো বেশ দামি। আমি নিতে পারবো না বাসায়।’
বলতে বলে শতাব্দের দিক এগিয়ে দিলো ব্যাগ।সুক্ষ্ম দৃষ্টি মেলে তাকালো শতাব্দ। আড়ষ্ট কন্ঠে বলল,
‘ গিফট ফেরত নিবোনা আমি। এখন তুমি বাড়ি নিয়ে যাবে নাকি রাস্তায় ফেলে দিবে এটা তোমার ব্যপার।’
অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো প্রিয়। মলিন কন্ঠে বলল,
‘ কিন্তু…
‘ আমার কথা ঘুরবেনা প্রিয়।’
কথা কেটে বলল শতাব্দ। প্রিয় বাধ্য হয়ে ব্যাগটা নিতে হলো। প্রিয়’র কপালে আসা অবাধ্য কেশ আদুরে হাতে কানের পেছনে গুজে দিলো শতাব্দ। চোখে তার অন্তহীন, নিদারুণ প্রেম। বিবশ কন্ঠে জিজ্ঞেস করল প্রিয়,
‘ আবার কবে দেখা হবে?’
‘ খুব দ্রুত। আগামী বুধবার ছোট মামা দেশে ফিরছে। এয়ারপোর্ট থেকে মামাকে পিক করে ইমান্দিপুরে আসছি।’
ভ্রু কুঁচকে নিলো প্রিয়, বলল,
‘ ছোট মামা? কোথায় থাকেন তিনি?’
‘ দুবাইতে ব্যবসা আছে। সেখানেই তার হেড অফিস। মাসের বেশির ভাগ সময়ই সেখানে কাটান। ব্যস্ততার কারণে অনেক বছর ইমান্দিপুরে আসা হয়না তার। এবার আসছে। লুবনার পা ভেঙেছে গতকাল। ফুপু ইমান্দিপুরে আছেন। তাই মামা এবার সরাসরি ইমান্দিপুরে আসছে।’
অবাক হলো প্রিয়। লুবনার পা ভেঙ্গেছে শতাব্দের মামা আসবে কেন? বিমূঢ় সুরে জিজ্ঞেস করল,
‘ মানে? লুবনার পা ভেঙ্গেছে উনি আসবেন কেন?’
‘ কারণ তিনি লুবনার বাবা। তাই।’
‘ লুবনার বাবা?’ অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল।
‘ হুম’
ফ্যামিলি পিকনিকে লুবনাকে দেখেছিল প্রিয়। ভীষণ অহংকারী মেয়ে। রাগ ভনিতা সবসময় নাকের আগায়। বাবার এমন অগাধ টাকা আছে বলেই বোধহয় এত অহংকারী মেয়ে। শতাব্দের দিকেও মেয়েটার অদ্ভুতরকম ঝোঁক।
প্রিয় আটকে আসা কন্ঠে বলল,
‘ আমি জানতাম না যে লুবনা আপনার ফুফাতো বোন মামাতো বোন দুইটাই।’
‘ তুমি ইমান্দিপুর কবে ফিরছ?’
‘ রবিবার।মা রেগে আছেন বোধহয়। আজ আসি?’
‘হু’
শতাব্দের নিমিষ চাহনির। নিষ্প্রাণ উত্তর।
গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল প্রিয়। রাস্তা পাড় হয়ে পেছন ফিরে শতাব্দের দিক তাকালো একবার। মিষ্টি হেসে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানিয়ে বাড়িতে ঢুকে গেল। পেছন থেকে নিমিষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো শতাব্দ। শুরু হলো, লম্বা এক অপেক্ষার প্রহর।

বুধবার বিকালে জুবাইদা এলো প্রিয়দের বাড়িতে। সবসময়ের মত নিজের ঘরে শুয়ে উপন্যাসের বই পড়ছিল প্রিয়। জুবাইদা মুখ বাঁকাল। হাঁকডাক দিয়ে বলল,
‘ শুয়ে থাকা ছাড়া আর কোন কাজ নেই তোর? কি বইটই নিয়ে পড়ে থাকিস সারাদিন।’
জুবাইদাকে দেখে বই বন্ধ করে উঠে বসলো প্রিয়। চুল হাত খোপা করতে করতে বলল,
‘ এই সময় এখানে যে?’
‘ বড়মা ডেকেছে তোকে।’
প্রিয় নড়েচড়ে বসলো। কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
‘ আমাকে? কেন?’
‘ ছোট ফুফা এসেছে। বাড়িতে ছোটখাটো গেটটুগেদারের আয়োজন করেছে।’
‘ সেখানে আমি যেতে কি করবো?’
‘ ভনিতা না করে চল। নয়তো, ভাই এসে কান টেনে নিয়ে যাবে।’
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো প্রিয়। চাপা উত্তেজনা চোখমুখে। কৌতূহলী কন্ঠে বলল,
‘ সে এসেছে?’
‘ হ্যাঁ, ভাইতো ফুফাকে নিয়ে দুপুরের আগেই চলে এসেছে।’
বেশ স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দিলো জুবাইদা। বিছানা ছেড়ে তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালো প্রিয়। ঝটপট করে তৈরি হয়ে জুবাইদার সাথে বেরিয়ে গেল।

ছাদে ছোট ছোট তোষক বিছানো। ধবধবে সাদা চাদর, কুশন বিছিয়ে। বেশ সুন্দর করে সাজানো। গ্রুপ বেঁধে জায়গায় জায়গায় চায়ের আড্ডা চলছে। চায়ের সাথে ভাজাপোড়া, বিভিন্ন রকম ফাস্টফুড সহ নাস্তার বিশাল আয়োজন। এখানে এমন আয়োজন দেখে বেশ বিস্মিত প্রিয়। ইংলিশ সিনেমা গুলোতে দেখেছে, লাঞ্চ ও ডিনারের মাঝে এমন চা নাস্তার ব্যবস্থাকে ‘হাইটি’ বলে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে উচ্চবিত্ত বৃটিশদের মধ্যে বেশ প্রচলন ছিল।
জুবাইদার পাশে যেয়ে বসলো প্রিয়। শতাব্দের সাথে একবার চোখাচোখি হলো। ভীষণ ব্যস্ত সে। ছাদের অন্য পাশে ডিনারের জন্য মাটির চুলায় রান্না হচ্ছে। মোটামুটি বেশ বড়সড় আয়োজন। সেসব দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করতে ব্যস্ত এখন।

ল্যাপটপে বন্ধ করে আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে দাঁড়ালেন শোয়েব হক। এতদিন পর পরিবারের কাছে এসেছেন সাপ্তাহ দু’একের জন্য। এতেও ফুরসত নেই কোন। হাজারো কাজ জমে। যদিও এতে তার সমস্যা হচ্ছেনা কোন। ভালোই লাগছে। এতবছর পর ইমান্দিপুর এসেছে। মানসিক শান্তির জন্য নিজেকে ব্যস্ত রাখাটা বেশ প্রয়োজন। আচমকাই চোখ আটকালো সামনের বাড়িটায়। বাগানবিলাসে ডেকে থাকা সেই পুরানো বাড়িটা। আগের মতই এখনো। আচ্ছা, বাড়িটা কি রঙ করেছে? হুম, হয়তো। গেটের সামনে সেই ডাকবাক্স। পুরানো সেই স্মৃতি! কিছুই বদলায়নি। শুধু সময় আর সেই মানুষটা ছাড়া। ভেবেই ব্যথাতুর হাসলো শোয়েব হক।
হঠাৎ, অদ্ভুত এক যন্ত্রণা অনুভব হলো বুকে। অতীতের কিছু স্মৃতি মাথাটা ঝেঁকে ধরলো। চোখ সরিয়ে দ্রুত ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। ছাদের চারপাশের আলো গুলো জ্বালিয়ে দিয়েছে। আড্ডায় মশগুল সবাই। শোয়েব হক ছাদে উঠতেই হৈচৈ শুরু হলো। মামাকে সামনে নিয়ে বসেছে সমুদ্র। দুবাইয়ের শেখদের বিলাসী জীবন নিয়ে বেশ উৎসাহ তার। প্রশ্নের ঝুলি খুলে ঝেঁকে ধরেছে। ভাগিনার এমন কৌতূহল দেখে হেসে ফেলল শোয়েব হক। এক এক করে বলছে সব। কথার ফাঁকে রেলিং এর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রিয়’র দিক চোখ পড়তেই থমকে গেল সে। হতভম্ব চোখমুখ। বিমূঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। এটাও কি সম্ভব! সত্যিই কি সে? তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালো শোয়েব হক। প্রিয়’র সামনে যেয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ আয়শা?’
আচমকা শোয়েব হককে সামনে দেখে ঘাবড়ে গেল প্রিয়। ঠোঁটে কোনে হাসি টেনে সালাম জানালো। বলল,
‘ উহু, আমি জুবাইদার ফ্রেন্ড। প্রিয়। অশীতা জাফর প্রিয়।’
শোয়েব হকের চোখে মুখে স্পষ্ট হতভম্বের ছাপ এখনো। বিড়বিড় করে বলল,
‘ তুমি হুবহু তারমত দেখতে।’
মিষ্টি হাসলো প্রিয়। বলল,
‘ সবাই তাই-ই বলে। মাও বলে আমি হুবহু খালার মত দেখতে।’
‘ আয়শা তোমার খালা?’
‘ হুম।’
শোয়েব হক আচমকা বুকের ভেতর অদ্ভুত কিছু অনুভব করল। কি বলবে এটাকে যন্ত্রণা নাকি ভালোলাগা? আয়েশার মত দেখতে বলেই কি প্রিয়কে এত ভালো লাগছে তার।
দূর থেকে মামার সাথে প্রিয়কে কথা বলতে দেখে ভ্রু কুঁচকাল শতাব্দ। মামার অতীত নিয়ে অনেক কথা শুনেছে। কিছু ভালো কিছু ভীষণ নিকৃষ্ট।
তড়িঘড়ি করে এগিয়ে এলো এদিকে। প্রিয়’র পাশে এসে দাঁড়িয়ে এক হাত মেলে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ ও প্রিয়। আমার প্রিয়!’
হ্ঠাৎ শতাব্দকে এমন করে আসতে দেখে ঘাবড়ে গেল প্রিয়। সেই সাথে লজ্জাও পেল। মাথা তুলে আড়চোখে একবার শতাব্দের দিক তাকালো। কেমন জানো অদ্ভুত গম্ভীর চোখ। শতাব্দের চাহনী দেখে কথার ধাঁচ দেখে, শোয়েব হক এখনো বোধহয় ঘোরে। ভাগিনা এমন চাহনি আগে দেখেনি কখনো। ঘোর কাটিয়ে প্রিয়’র দিক চেয়ে বলল সে,
‘ তুমি অনেক সুন্দর। অনেক বেশি। ঠিক তোমার খালার মত।’
শোয়েব হক চলে যেতেই প্রিয়’র মনে পড়লো। উনাকে আগেও দেখেছে। শতাব্দের এপার্টমেন্টে। আর তার আগেও কোথায় যেন দেখেছে? কোথায় দেখেছে?

রাতে ডিনারের পর গানবাজনার আয়োজন করেছে। সবাই গোল করে বসে। বড়রা পেছনে বসেছে। প্রিয় জুবাইদার সাথে টুকটাক কথা বলছে। মাঝেমধ্যে আড়চোখে লাজুক দৃষ্টিতে শতাব্দের দিকেও তাকাচ্ছে। ব্যপারটা শতাব্দের ছোট ফুপু ছবি বেগমের চোখে আটকালো। প্রথম থেকেই প্রিয়কে চোখে চোখে রাখছে। শতাব্দের মাকে ডেকে বললেন,
‘ ভাবি। ও ভাবি। শুনো না।’
অভিলাষা বেগম পিছন ফিরে চাইলেন। বললেন,
‘ হ্যাঁ ছবি বলো। শুনছি।’
ছবি বেগম প্রিয়’র দিক তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
‘ তোমাদের কি আন্দাজ জ্ঞান নেই কোন? বাড়িতে এতগুলো জুয়ান ছেলে। যাকে তাকে বাড়ি আনছো কেন?’
আভিলাষা বেগম কপাল কুঁচকে চাইলেন। বললেন,
‘ কার কথা বলছো ছবি?’
কন্ঠে বিরক্তি ঠেলে ছবি বেগম উত্তর দিলেন,
‘ ওইযে জুবাইদার বন্ধু! প্রিয়া নাকি প্রিয় কি জানো নাম? যাইহোক মেয়েটা বড্ড চতুর। চোখেচোখে রাখো। পিকনিকেও নাকি অনেক কান্ড বাঁধিয়েছে। লুবনা বলল। ঢাকার মেয়েতো! না জানি কখন তোমার কোন ছেলেকে ফাঁ*সিয়ে ফেলে।’
বিরক্ত হলো অভিলাষা বেগম। কন্ঠে কঠোরতা এনে বলল,
‘ ফাঁ*সালেই ক্ষ*তি কি? মেয়ে না যেন গুড়ের মাছি। কি শান্ত, ভদ্র, সুন্দর! এমন মেয়েকে ছেলের বউ করে আনতে কে’না চায়।’
কথাটা যেন পছন্দ হলোনা ছবি বেগমের। ভাবির মুখের উপর বলতে পারলো না কিছু। বাড়িতে অভিলাষা বেগমের বেশ চলে। এমন কি গ্রামের মানুষজনও বেশ মানে।

বাড়ি ফিরে তড়িঘড়ি করে হল ঘরের কাঠের আলমারি খুলে ছবির এলবামটা বের করল। অনেক গুলো ছবির ভেতর সেই কাঙ্খিত ছবিটা পেল। এই ছবিটাই তো এতোদিন খুঁজছিল প্রিয়। খালার পাশে শতাব্দের মামা দাঁড়িয়ে। একই রকম ইউনিফর্ম দুজনের। দেখে মনে হচ্ছে কলেজ জীবনের।
‘ আবারো পুরানো এলবাম ঘাটছিস! কতবার মানা করেছি প্রিয়?’
হ্ঠাৎ খালার গম্ভীর আওয়াজে কেঁপে উঠল প্রিয়। বুকে হাত রেখে নিজেকে শান্ত করে এক গাল হেসে বলল,
‘ শতাব্দ ভাইয়ার মামা শোয়েব আঙ্কেল তোমার বন্ধু খালা? কখনো বলোনি যে। যাইহোক আজ দুপুরে উনি দুবাই থেকে ফিরেছে। কিছুদিন ইমান্দিপুরেই থাকবে। জিজ্ঞেস করছিল তোমার কথা।’
আয়েশা বেগম কেঁপে উঠলেন। আচমকা তার চোখমুখ পাল্টে গেল। মুখশ্রীতে রাগ ফোটানোর চেষ্টা করল। ভ*য়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ঝাঁঝালো স্বরে বলার চেষ্টা করল,
‘ তুই আবার ওই বাড়িতে গিয়েছিস? কেন গিয়েছিস? আর যাবিনা ওইখানে। কোন দিন যাবিনা।’
‘ কিন্তু খালা…’
‘ আমি কোন তর্ক শুনতে চাইছিনা প্রিয়। ঘরে যা এক্ষুনি।’
হতভম্ব প্রিয় চলে গেল। আয়েশা বেগম সোফায় বসলো। কাঁপাকাঁপি হাতে পানির গ্লাস তুলে ঢকঢক করে পুরোটা পানি শেষ করল। ভীতু কন্ঠে বিড়বিড়িয়ে বলল,
‘ সে ফিরে এসেছে। সব বিনা*শ করতে আবার ফিরেছে! কিছুই ছাড়বেনা সে। শেষ করে দিবে সব।’

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here