#অস্তিত্ব
#পর্বঃ১৭
#বনলতা
বারান্দায় বসে আছে জাহানারা। কন্যাশোকে সে আজ বিধস্ত। জীবনে সুখ আসলেও তা ক্ষণস্থায়ী জাহানারার জীবনে। ছোটবেলা থেকেই মামার বাড়িতে বড় হয়েছে।বিয়ের পরে সুখটা যখন তার ঘরের দোরে তখনই তার মা মারা যায়।তখন সে ছয়মাসের সন্তান সম্ভবা।মাকে কখনও ভালো করে নিজের কাছে পায়নি সে।মায়ের শোক ভুলে গিয়েছিলো মায়াকে দেখে।কত স্বপ্ন কত আশা ছিলো জাহানারার চোখে।মেয়েকে ভালো ঘরে বিয়ে দেবে।মায়ার ঘর আলো করে ছেলেপুলে আসবে।ব্যাস আর কি চাই।মিষ্টি তো ছোট।কিন্তু এই সুখটাও তার কপালে নেই।
জানাযা শেষে সবাইকে বাতাসা দিচ্ছে জহির।চারদিকে লোকে লোকারণ্য। সবাই ফিরে যাচ্ছে।যে যার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়বে এখন।যার কষ্ট সেই বোঝে, বাকিরা সব গল্প খোঁজে। বাতাসা গুলো আনা হয়েছিলো মায়ার বিয়ের জন্য। গ্রামে একটা প্রচলন আছে।বিয়ের কালিমা পড়ানো শেষে উপস্থিত সবার মাঝে বাতাসা বিতরন করা হয়।এই কাজেই বাতাসা এনেছিলো।আজ সেই বাতাসা বিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু বিয়ের বিদায়ে নয়,অন্তিম যাত্রায়।
শাহীন ঘরে এসেই আলমারি খুলে কাগজপত্র খুজতে থাকে। প্রায় আধাঘন্টা পর শামীম ঘরে প্রবেশ করে।শার্টের বোতামগুলো লাগাতে লাগাতে শাহীন এর কাছে যায়।
“সবগুলো কাগজ পাইছিস,” শামীম জিজ্ঞেস করে শাহীনকে।
“শুধু মায়ার জন্মনিবন্ধন এর কাগজ বাদে সব পাইছি,”
মিষ্টি দৌড়ে মায়ার রুম থেকে মায়ার জন্মনিবন্ধন এর কাগজটা এনে দেয়।তা নিয়েই বেরিয়ে পড়ে দুজনে।বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে গাড়ি।সরাসরি ওরা সদর পুলিশ স্টেশনে যাবে।রওনা হয় দুইভাই।কিছু দুর যাওয়ার পর গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষা করে।একটু পরই শাহীনদের সাথে যোগ দেয় মুহিন,ইমরান আর শান্তা।সকলে মিলে একসাথে যাত্রা শুরু করে পুলিশ স্টেশন এর দিকে।
____________________
দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেওয়া আছে তমালের রুমের।বাহিরের জলচৌকিতে বসে আছে বাতাসি বিনি।পাশেই বসে আছে আসলাম।প্রচুর গরম পড়েছে আজ।এখন আগের মতো আর বাহিরে যাচ্ছে না সে।এর কারন তার মাথার চুল।আজ সকালেই বাতাসি ওর ছেলের চুল কামিয়ে দিয়েছে। প্রচুর মানসিক চাপে আছে আসলাম।কিছুই ভালো লাগছে না তার।মনটা বড়ই অস্থির লাগছে।কোনো কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না সে।তাই বাতাসি নিজে বসে ন্যড়া করে দিয়েছে।
একদম পুরোপুরি তৈরি হয়ে দরজা খুলে তমাল।বাহিরে দেখে বাতাসি আর আসলাম।এদের সাথে কথা বলা অহেতুক। ভাবতেই ঘৃণা লাগে তমালের। ছি!এরা নাকি মানুষ। একটা মানুষ কি করে এমন নিকৃষ্ট কাজ করতে পারে। বাতাসি শুধু চোখ তুলে একবার তমালের দিকে চায়।তারপর মুখ ফিরিয়ে বাঁকা হাসি হাসে।ফোনটা হাতে নিয়ে বের হয় তমাল।হঠাৎই ওর ছোটচাচি সামনে এসে দাড়ায়।হাতে একটা কাগজ।কাগজটা তমালের সামনে তুলে ধরে সে।
কাগজটা হাতে নেয় তমাল।ভালো করে পড়ে দেখে পুরোটা।বিস্মিত চোখে চেয়ে থাকে এশার মায়ের দিকে।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা সে।আচ্ছা আদৌও কি এশার মা জানে এটা কিসের কাগজ জানলেই বা কি হবে।
“এটা কে দিয়েছে চাচি,” কৌতুহলী কন্ঠে বলে ওঠে তমাল।
“কাগজটা এশার আব্বা দিয়েছে,ক্যান কি হইছে?কি লেখা আছে এতে।”
“তুমি জানো এতে কি লেখা আছে চাচি,”
“আমি জানলে কি আর তোমায় বলতাম তমাল।তাড়াতাড়ি পড়ে শোনাও।শুধু একটা কাগজ নাতো আরো আছে।তুমি তো মনে হয় কোনো জায়গায় যাইবা”
তমাল এশার মাকে বলে বাকি কাগজগুলো আনতে।পুরো মাথা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে।আজব এই ঘটনার কোনো কারন খুজে পায়না সে।একটু পরেই এশার মা সব কাগজ নিয়ে আসে।সাথে তমালের মা সহ সবাই আসে।তমাল
সবগুলো কাগজ একবার দেখে আর একবার সামনে দাড়িয়ে থাকা পাঁচজনের দিকে তাকায়।তমালের হাতে পাচটা কাগজ।পাঁচটাই ডিভোর্স পেপার।বাংলায় বলে তালাকনামা।
কাগজগুলো সব ছিড়ে কুটিকুটি করে ফেলে তমাল।চিৎকার করে ওঠে।ডাইনিং টেবিলে রাখা গ্লাসগুলো নিচে ফেলে দেয়। সবগুলো গ্লাস কুঁচি কুচি হয়ে যায়।হাতের কাছে রাখা স্টিলের প্লেট টা ছুঁড়ে মারে রান্নাঘরে রাখা শোকেসে। নিমিষেই কাচের টুকরা গুড়ো গুড়ো হয়ে পড়ে যায় নিচে।এই কদিনের জমিয়ে রাখা রাগটা যেন আজ চুড়ান্ত রুপ ধারন করেছে।
“কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ,
পাকলে করে ঠাস ঠাস।”
বাতাসি বিনি চেচিয়ে কথাগুলো বলে শুনাচ্ছে আসলামকে।
“দ্যাখ আসলাম দ্যাখ,এতদিন কারে আদর সোহাগ দিয়া মানুষ করলি।শত্রু কি আর বাহির থেকে ভারা করা লাগে।ভালো করে চেয়ে দ্যাখ নিজেগো পেট থেকেই শত্রু জন্মাইছে।”
তমাল ক্রোধে ফেটে পড়ে।এসে দাড়ায় বাতাসির সামনে।চিৎকার করে কৈফিয়ত চায় ওর চাচা আর দাদীর কাছে।কেন তারা সবার নামে ডিভোর্স পেপার বানাইছে।
বাতাসির ছেঁচা পানগুলো মুখে দিয়ে বলে ওঠে
“আমার সাফ কথা।আজ যদি তুই ওই ফকিন্নির পোলাগো লগে থানায় যাস বা কোনো স্বাক্ষী বিষয় এ থাকিস তাইলে তোর সাথে সাথে এই বড়বাড়ির পাঁচজন বউও একেবারে এক কাপড়ে এই বাড়ি থেকে বাহির হইয়্যা যাইবো।ভেবে দ্যাখ কি করবি।”
ঘৃণায় গা গুলিয়ে ওঠে তমালের।ছি!এতটাই নিচ হতে পারে কেউ।নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এতটা জঘন্য পরিকল্পনা কারো মাথায় আসে ক্যামনে।
আসলাম উঠে এসে তমালের হাতে পাসপোর্ট আর টিকিট ধরিয়ে দেয়।আরেক হাতে পাচঁ পাচটা তালাকনামা।আসলামের মুখে কোনো অনুশোচনা নেই।কোনো অনুতাপের চিহ্ন নেই।একেবারে ভাবলেশহীন।তার পৃথিবী একেবারে স্বাভাবিক।
ধপ করে বসে পড়ে তমাল।কিছু ভাবতে পারেনা সে।এশার মা ধীর পায়ে কাছে এসে দাড়ায়। হঠাৎই সকল ভাবনাকে দুরে ঠেলে তমালের পা দু’টো জোড়ে চেঁপে ধরে।হু হু কেঁদে ওঠে।দুরে দাড়িয়ে আরো পাঁচ জন মুখে আঁচল চেঁপে কাঁদছে। পা থেকে হাতদুটো ছাঁড়িয়ে নেয় তমাল।বুকের মাঝে নিয়ে কাঁদতে থাকে।
উভয় দিকে আজ বিপদ। কোন দিকে যাবে সে।হঠাৎই বেজে ওঠে ফোন।ফোনস্কীনে জ্বলজ্বল করে লেখা ভাসছে,শামীম।কলটা কেটে ফোনটা অফ করে দেয় সে।
#চলবে
#অস্তিত্ব
#পর্বঃ১৮
#বনলতা
নিজের ঘরে বসে আছে তমাল।পাশেই ওর মা ওর ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছে। চোখের পানিতে বুক ভেসে যাচ্ছে তার।শুকনো অল্প সামান্য পিঠা ওর ব্যাগে তুলতে লাগে তমালের মা।তমাল উঠে এসে ব্যাগ থেকে পিঠা গুলো নিয়ে দুরে ছুড়ে মারে।চিৎকার মেরে বলে উঠে,
“আমি যতটা ঘৃণা করি এই বাড়ির লোকদের ঠিক ততটাই ঘৃণা করি তাদের বাড়ির সকল জিনিসপত্রকে।যদি পারতাম না তাহলে এই দেহের শিরা-উপশিরা,রক্তবিন্দু পর্যন্ত এখানে রেখে যেতাম।কিন্তু আফসোস এই কাজটা করা সম্ভব নয়,”
ঘুরে দাড়ায় তমালের মা।চোখের পানিগুলো মুছে বলে ওঠে,
“দ্যাখ তমাল মানুষ যখন বেঁচে থাকার সব আশা ভরসা হারিয়ে ফেলে তখন তারা শুধু সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে পাহাড় সমান কষ্ট বুকে নিয়ে বেঁচে থাকে।তুই বেঁচে আছিস। একদিন না একদিন আমি তোকে দেখতে পাবো।জড়িয়ে ধরব।তবুও আমার চোখের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে না।কান্না থামছেনা।কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে ।একবার ভেবে দেখতো যে সন্তানের অস্তিত্ব এই পৃথিবীতেই নেই,সেই মায়ের কি হচ্ছে। এইযে তুই এই বাড়ির লোকদের এত এত ঘৃণা করিস, এই এত এত ঘৃণার ঝুলি থেকে যদি সিকি পরিমাণ ঘৃণা তুই মায়াকে করতি তাহলে এক মায়ের মন তার সন্তানের জন্য হাহাকার করত না। মায়া আজ বেঁচে থাকত।”
এয়ারপোর্টে দাড়িয়ে আছে ইমরান আর শান্তাসহ ওদের বোন উর্মি আর আর ওর বর নীলয়।ফ্লাইটের আর আধাঘন্টা দেরি আছে।সেই কখন থেকেই একটু পর পর চোখ থেকে চশমাটা খুলে চোখের পানি মুছতে ব্যাস্ত শান্তা।উর্মি ওর মেয়ে নীলাকে নিয়ে ব্যাস্ত আছে।নীলয় ফোনে কার সাথে জানি কথা বলছে।ইমরান শান্তার মাথাটা নিজের কাঁধের ওপর নিলো।ভাইকে জড়িয়ে কাদঁছে শান্তা।
ইমরানের চোখে টলমল করছে পানি।সেই পানিকে পাত্তা না দিয়ে ভাবতে থাকে মায়ার কথা।আচ্ছা মায়াও নিশ্চয়ই শামীম-শাহীনের কাছে এতটাই আদরের ছিলো,যতটা শান্তা ওর কাছে আদরের। আজ পাঁচদিন হতে চলল মায়ার মৃত্যুর। কিন্তু এই পাঁচ দিনেই যেন পুলিশ হাঁপিয়ে উঠেছে।তাগাদা দিচ্ছে মামলা উঠিয়ে নেওয়ার।স্বাক্ষ্য প্রমাণের দিক দিয়ে একেবারেই শুণ্য তারা।সেদিন ওরা তমালের বাবা-চাচাদের নামে কেইস ফাইল করে আসে।তমাল বলেছিলে ওদের সাথে যাবে এবং যতকিছু করা লাগে সব করবে।কিন্তু শেষ পর্যন্ত তমাল যায়নি।এমনকি ওর ফোন পর্যন্ত বন্ধ। এই অবদি কেইস চুল পর্যন্ত নড়াতে পারেনি তারা।কেমনে পারবে।মেডিকেল রিপোর্টই তো ওদের বিপক্ষে।
চারদিকে এনাউন্সমেন্ট হচ্ছে।নীলয় আগে চলে গেছে। উর্মি তাড়া দিচ্ছে শান্তাকে।এগিয়ে যায় শান্তা ইমিগ্রেশন এর দিকে।লম্বা লাইন এর প্রায় শেষের দিকে শান্তা।ইমিগ্রেশন শেষ করে সামনে এগিয়ে যা।হঠাৎই দেখতে পায় তমালকে।নিজের চোখের জল,কষ্ট গুলো বুকে চেপে ধরে হাসিমুখে এগিয়ে যায় শান্তা।
গিয়ে দাড়ায় তমালের একেবারে সামনে।চোখে টলমল করছে পানি।চোখেমুখে প্রকাশ পাচ্ছে আকুতি। যেন চিৎকার করে বলছে, কেনো এমন করলে তুমি কেনো?এই আকুতিভরা দৃষ্টিকে উপেক্ষা করতে পারেনা তমাল।তমাল শান্তার হাতদুটো চেপে ধরে।চোখের পানিগুলো এতটা অবাধ্য যে বাধা মানছে না।একবুক কষ্ট নিয়ে বলে ওঠে তমাল,
“আমাদের পৃথিবীটা অনেক সুন্দর শান্তা। কিন্তু এই পৃথিবীতে বাস করা প্রতিটা মানুষ কিন্তু সুন্দর নয়।তারা অবয়বে মানুষ হলেও কেউ কেউ আমার পরিবারের মতো অমানুষ,আবার আমার মতো কেউবা স্বার্থপর।যারা রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়।আমি বড্ড স্বার্থপর যে কিনা নিজের ভালোবাসার চেয়ে নিজের পরিবারকে বেশি মুল্যায়ন করেছি।কিন্তু এখন আমি নিরুপায়,আমি পারিনি সেদিন নিজের সাথে সাথে আরো পাঁচ জনকে রাস্তায় নামাতে।কাপুরষরা মরার আগে বারবার মরে।পাঁচ বছর আগে একবার মরেছিলাম।আর পাঁচ বছর পর আরোও একবার মরে গেলাম।”
দিন যায় রাত আসে।রাত যায় দিন আসে।একের পর এক তারিখ পরিবর্তন হয়।মাস পরিবর্তন হয়।বছর পরিবর্তন হয়ে পুরো ক্যালেন্ডার শেষ হয়ে যায় তবু হারানো মায়ার অস্তিত্ব ফিরে আসেনা।মামলার ফাইলটা টেবিল থেকে পুরোনো মামলার ফাইলের স্তুপের কোথাও নিজের জায়গা করে নেয়।ছোট্ট মিষ্টির গায়ে স্লিভলেস ফ্রক বাদ দিয়ে ফুল স্লিভ জামা শোভা পায়।উঠোনের কোণে কলম করে রাখা গোলাপ গাছটা টব ছেড়ে মাটিতে নিজের জায়গা করে নেয়।ছোট ছোট ডালপালা আস্তে আস্তে বড় হয়ে যায়।বাড়ির পাশের জামগাছটার পাতাগুলো সব ঝরে পড়ে গিয়ে আবার নতুন পাতা গজায়।একের পর এক বসন্ত পার হয়ে যায়।মায়ার ডায়রি খানা পড়ে নিরবে দাড়িয়ে থাকা মিষ্টি মায়ার মতোই বড়ো হয়ে যায়।ভালোবাসা আর প্রেমপ্রীতির ওপরে জন্ম নেয় চরম বিদ্বেষ।
_________________________
সুন্দর এক ঝকঝকে সকাল।ঘড়িতে দশটা বাজে।কোর্ট প্রাঙ্গণে দাড়িয়ে আছে মুহিন।গায়ে সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট। হাতে কালো ব্যান্ডেড ঘড়ি।একটু পরেই আদালতের কাজ শুরু হয়ে যাবে। পাশেই দাড়িয়ে আছে আশা।গায়ের চাদরটা দিয়ে পেটটা ভালোভাবে ঢেকে নিলো সে।আর ক’দিন পরেই ওর কোল আলো করে আসবে কেউ।রোজা ওর ছেলেকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। দাড়িয়ে থাকতে আশার কষ্ট হচ্ছে।মুহিন অনেক বার বলার পরেও তাকে ভেতরে পাঠাতে পারেনি।ইফতিই অনেকবার বলেছে কিন্তু আশা নারাজ।টুংটাং শব্দ করে বেল বাজিয়ে কোর্ট চত্বরে আসে এক রিকশা।তা থেকে নেমে আসে এক বয়স্ক লোক আর হার হাতটা ধরে নিয়ে আসে এক তরুনী।গায়ে কালো চুড়িদার আর গলায় পেচানো কালো ওড়না। দেখে মনে হচ্ছে এটাই মায়া।শুধু গায়ের রংটায় মিল নেই।মায়া গায়ের রং ছিলো একেবারে ফর্সা আর মিষ্টির গায়ের রং উজ্জল শ্যামলা।তবুও মায়া আর মিষ্টি যেন একই দেখতে।মুহিনের সাথে টুকটাক কথা বলে ভেতরে চলে যায় মিষ্টি।
হঠাৎই একটা দামী গাড়ি এসে প্রবেশ করে কোর্ট চত্বরে। গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসে তিন বছরের এক মেয়ে।ভীষণ মিষ্টি দেখতে।গায়ে জিন্সফ্রক আর পায়ে হাইহিল।চুলগুলো সামনে ছোট করে কাটা।পেছনের চুলগুলো দিয়ে দুটো ঝুঁটি করা।এতটুকু মেয়ে তবু এত উঁচু জুতোয় নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। মুহিনকে দেখা মাত্রই দৌড়ে আসে।মুহিন দুহাতে ওকে উচু করে তুলে ধরে।বাচ্চা মেয়েটা খিলখিল করে হেসে ওঠে।বড়ই চেনা সেই হাসি।
গায়ে সাদা জামা, গলায় কালো ফিতা চুলগুলো উচু করে বাঁধা আর হাতে কালো কোর্টটা নিয়ে এগিয়ে আসে শান্তা।চোখে মুখে আনন্দের দ্যুতি।আজ বিজয় তাদের দোরগোড়ায়। ওরা আজ জিতবেই ইনশাআল্লাহ। এতদিন ধরে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া মামলার আজ শেষ শুনানি।আজ যদি উপযুক্ত প্রমাণ তারা দিতে পারে তাহলে রায় আজকেই হবে।আর না দিতে পারলে এই মামলার নিষ্পত্তি হয়ে যাবে আজ।
কেটে গেছে অনেকগুলো বছর।সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হইছে অনেক কিছুর।শান্তা লন্ডন থেকে ল’পাশ করা একজন উকিল। পাঁচ বছর আগে বিয়েও করেছে। ওর হাজবেন্ড একজন বিজনেসম্যান।তিন বছর আগে তাদের কোল আলো করে এক মেয়ে আসে।যার নাম রেখেছে,”মায়া”
#চলবে