#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ২৫
#Jhorna_Islam
মানুষের পা’পের শাস্তি কোনো না কোনো ভাবে সে ঠিকই পেয়ে যায়। হয় সেই শাস্তি টা একটু দেরিতে নয়তো সাথে সাথে। কাউকে ঠ’কিয়ে কেউ কখনো বেশি দিন ভালো থাকতে পারে না।
এইযে নিজের ভালোবাসার মানুষ টা কে চোখের সামনে রেখে দিনের পর দিন ঠ’কিয়ে গেলো।প্র’তা’রনা করলো।প’র’কি’য়া নামক জ/ঘ’ন্য কাজে নিজেকে জড়ালো। একটা মেয়ে কে মানসিক ভাবে এতোটাই ভেঙে দিলো যে সে এসব কিছু সহ্য করতে না পেরে নীরবে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলো। নে/শা করার টাকার জন্য নিজের ছেলেদের ঠ’কাতে ও একবার ভাবলো না। শেষে কি পেলো?
নে’শা করে নিজের জীবন দিলো।যেই নে’শার জন্য নিজের ছেলেদের ঠ’কালো সেই নে’শাই তার জীবন কেঁড়ে নিলো। একদিন আগেই মা’রা গেলো অথচ কেউ না জানতে পারলো না খুঁজ পেলো।
অতিরিক্ত নে’শা করার ফলে মা’রা যান তিনি। একদিন পর গিয়ে খোঁজ পান। ম’রে রাস্তার পাশে একটা ঝোপের পাশে পরেছিলো। ঐখানে বসেই নে’শা করেছিলো। এক মহিলা গাছের শুকনো পাতা কুড়াতে গিয়ে দেখে পরে আছে। মহিলাটি দেখে ঘা’বড়ে যায়। ভয়ে চিৎকার করে উঠে। তারপর গিয়ে আশেপাশের থেকে লোকজন নিয়ে আসে।
উল্টে পরেছিলো বলে তখন কেউ চিনতে পারেনি। তারপর কয়েকজন চে’ক করতে গিয়ে বুঝতে পারে লোকটা আসলে কে।
বাড়িতে জানায়। বাড়ির লোক ও নিখুজ হওয়ার পর ও খবর নেয় নি। কারণ তারা জানে সব সময় এমন করে।বেশির ভাগ দিন বাইরে পরে থাকে। তাই সবাই বিষয় টা স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে।
লোক দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক কষ্টে বাড়ি নেয় কয়েকজন। একেই তো অনেক গরম এজন্য পচন ধরে গেছে। শরীর থেকে গন্ধ ও বের হয়েছে। কয়েকজন উনাকে বাড়িতে নিয়ে গেছে এজন্য তারা অনেক বড়লোক নিশ্চয়ই টাকা পয়সা দিবে নিয়ে গেলে। অথচ ইমন ঘরের ভিতর ও ঢুকতে দিলো না। গেইটের কাছে থেকে পরিস্থিতি বুঝে লোক গুলো কে বলে দেয় যেনো উঠোনেই রাখে।
ইশান সব শুনে দৌড়ে বাড়ি আসে। সকল কার্যক্রম ই প্রায় শেষের দিকে। ইশান বাড়িতে এসে দেখে তার মা বারান্দায় পাথরের মূর্তির মতো বসে আছে।
ইমনের বউয়ের কোনো ভাবাবেগ নেই।সে তার মতো আছে। ইমন লোক দিয়ে দূরে থেকে সব তদারকি করছে। কাছে এগিয়ে বাবার চেহারা টা দেখার ও প্রয়োজন মনে করছে না।
পরিবারের সকলকেই একে একে ডাকে দেখার জন্য। সকলেই এক ন’জর দেখে নেয়। তাছলিমা বানু পাশে গিয়ে কেঁদে দেয়। কয়েকজন গিয়ে টেনে ঐখান থেকে সরিয়ে আনে তাছলিমা বানু কে। সকলের শেষে খাটিয়ার পাশে ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে বসে ইশান। বাবার মুখের দিকে তাকায়৷ কিছু সময় চুপচাপ তাকিয়ে রয়। ইশানের মনটা খুব করে কাঁদছে কিন্তু তার চোখ দিয়ে পানি পরছে না।
তারপর উঠে যায়। জানাজা পরে ঐখানে আর এক মুহূর্ত ও থাকে নি। ইশান ইরহান কে ফোন দিয়েছিলো। বলেছিল কল দিতে ফোনেই না হয় শেষ বারের মতো দেখবে। কিন্তু ইরহান মানা করে দেয়। দেখেনি সে।
যুথির যদিও বা একবারের জন্য একটু দেখতে ইচ্ছে করেছিলো।কিন্তু মনের ইচ্ছে মনেতেই চেপে রেখেছে।বাইরে আর প্রকাশ করে নি।
ইরহান চুপচাপ বসে আছে। ইরহানের ভিতরে কি চলছে বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই। যুথি বুঝতে ও পারছে না কি বলবে। কিছু প্রকাশ করছে না ইরহান। প্রকাশ করলে অথবা মনের কথাটা বুঝতে পারলে হয়তো কিছু একটা করা যায়।
ইরহান নিজের মনের অবস্থা কাউকে বুঝতে দেয় নি।নিজেকে শক্ত আবরণে ঢেকে রাখে।নয়তো যুথি ভেঙে পরবে। তাকে ঠিক থাকতেই হবে। অন্তত যুথির জন্য। এই মেয়েটার জন্য সকল দুঃখ কষ্ট নিজের ভিতর লুকিয়ে রাখবে।
———————————
শোকের ছায়া বেশিদিন থাকে নি। ইমন আর তার বউয়ের এমনিতেও কিছু যায় আসে না। তাদের দরকার ছিলো সম্পত্তি সেটা তারা পেয়ে গেছে।
বাড়ির সকল কাজ এখন তাছলিমা বানু করে। লিমা পায়ের উপর পা তুলে হুকুম দেয়। তাছলিমা বানু প্রথমে জোর দেখালেও এখন চুপ হয়ে গেছে। কিসের ভিত্তি তে সে জোর দেখাবে? নিজের ছেলেই যখন বউয়ের কথায় কথা শোনায়। লিমার কথা মতো সব না করলে বাড়ি থেকে যেনো বেরিয়ে যায়। ছেলে তো সে একা না।আরো আছে। সে একা কেন এই বো’ঝা টানবে?
থাকতে দিয়েছে খাওয়াচ্ছে এটাই অনেক। তাছলিমা বানু শুধু ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো। অথচ এই ছেলেদের জন্য তিনি পুরো জীবন টা দিয়ে দিলেন। আর সেই ছেলের কাছে তিনি বো’ঝা হয়ে গেলেন। উঠতে বসতে জামাই,বউ এখন তাকে কথা শোনায়।কাজের লোকের মতো ব্যবহার করেন। অথচ নিজের শ্বশুর বাড়ির লোকদের কতো খা’তির যত্ন। তার এক বিন্দু ও উনাকে করে না।
তাছলিমা বানু খুবই ভেঙে পরেছেন। ইশান টা কোথায় আছে জানে না। হয়তো ভাবছে নিজের ছেলের কাছে আছে মা হয়তো ভালোই আছে। নিজের ভাইদের কাছে খারাপ হলেও নিজের মা কে তো আর অবহেলা করবে না।
কিন্তু সে তো জানে না নিজের মা কে এখন কাজের মহিলা মনে করে ইমন। শ্বশুর বাড়ি ই তার কাছে সব। তাছলিমা বানু এখন আফসোস করে।দিন রাত চোখের পানি ঝড়ায়। হয়তো এসব উনার পাপের ফল।যা দুনিয়াতেই তিনি ভোগ করছেন। মানুষকে মানসিক আর শারীরিক ভাবে তো আর কম কষ্ট দেয় নি।
————————-
ইশানের ব্যবসা ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। সে তার কাজে সফল হচ্ছে। ব্যবসাটা ভালো ভাবে বুঝে নিজের চিন্তা শক্তি কাজে লাগাতে পারলে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় না। পরিস্থিতি বুঝে সঠিক সিধান্ত নিতে পারলে সফলতা নিশ্চিত। ইশান নিজের নামে আর ইরহানের নামে একটা জায়গা কিনে। অবশ্য ইরহান কে বিষয় টা সে জানায় নি। নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে সে জায়গা কিনেছে। এখানে সে বাড়ি বানাবে। বাড়ির কাজ ও ধরেছে। আস্তে আস্তে করছে সব।
বাড়ি তৈরি করে পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিক করে রেখেছে দিনা দের বাড়িতে আবার প্রস্থাব নিয়ে যাবে। এবার রাজি না হলে দরকার পরলে পায়ে ধরবে।যার জন্য এতো আয়োজন এতো কিছু তাকে যদি না পায় তাহলে সব বৃথা। দিনা কে পাবে না এই কথাটা ভাবতে গেলেও ইশানের বুকে ব্যাথা হয়।
ইশান নিজের কাপড়ের দোকানে বসে বসে হিসাব মিলাচ্ছিলো এমন সময় ইশানের ফোনে কল আসে। ইশান ফোন নিয়ে দেখে দিনার বান্ধবী কল দিয়েছে। ইশান মাঝে মাঝে তার সাথে কথা বলে। মূলত দিনার খবরাখবর নেয়। মেয়ে টা ইশান কে অনেক সাহায্য করে। ইশান তো তাকে বোনের স্থান দিয়েছে।
ইশান কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ফোঁপানোর শব্দ পায়।
হ্যালো?
ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসছে না ফোঁপানো ছাড়া।
ইশান মিনিট দুয়েক পর ডেকে উঠে,
দিনা? এই দিনা কি হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেন বলো আমায়।
দিনা কান্নার জন্য কিছু বলতেই পারছে না।
দিনার থেকে তার বান্ধবী ফোন টা নিয়ে নেয়। তারপর ইশান কে সব খুলে বলে। দিনার মা তার কোনো এক বোনের ছেলের সাথে তার বিয়ে ঠিক করেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে কালই তারা আকদ করিয়ে রাখবে।
সব শুনে ইশানের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। তাও নিজেকে ঠিক করে দিনা কে বলে টেনশন না করতে।সব ঠিক হয়ে যাবে। সে ইশানের ই বউ হবে।
দিনা কে স্বান্তনা দিলেও এখন ইশান কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। এখন একজনই তাকে সাহায্য করতে পারে বা বুদ্ধি দিতে পারে সেটা হলো ইরহান। তাই আর সময় নষ্ট না করে তারাতাড়ি ইরহান কে কল লাগায় ইশান।
#চলবে,,,,,,