#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ৫
#Jhorna_Islam
গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে বালিশের নিচে থেকে মোবাইল টা তুলে নেয় দিনা। এমন লুকোচুরির কাজ কখনো সে এর আগে করেনি। হাত পা মৃদু কাঁপছে। কপালে ঘামের রেখা দেখা দিয়েছে। যা করার যুথি খেয়ে আসার আগেই করতে হবে।
চিঠিতে দেওয়া ইশানের ফোন নাম্বার মুখস্থ হয়ে গেছে দিনার। চিঠিটা সাথে আনেনি।খুব যত্ন সহকারে আলমারিতে নিজের কাপড়ের ভাজে লুকিয়ে রেখেছে।
মুখস্থ নাম্বার টা ডায়েল করে কানে ধরে। কিন্তু রিং হয়ে কেটে যায় অপর পাশ থেকে রিসিভ হয় না। দিনা কপাল কোচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে আবার ডায়েল করে। এবার কিছু সময় বাজার পর রিসিভ হয়।
“হ্যা বড় ভাবি।কি অবস্থা? দেওড়ের কথা মনে পরলো কি করে?” ইশান বলে উঠে।
দিনা শুকনো ঢুক গিলে ইশানের গলা শুনে। বুকটা তার কাঁপছে। লোকটা হয়তো ভেবেছে তার যুথি আপু।
ইশান অপর পাশ থেকে কোনো সারা না পেয়ে আবার বলে উঠে,, বড় ভাবি? কথা বলছো না কেন?
দিনা গলা খেকাড়ি দিয়ে বলে,,যুথি আপু না আমি বলছিলাম।
— আমিটা কে? জানতে চায় ইশান।
— আমি মা-মানে দিনা।
–ওহ আচ্ছা। কিন্তু ভাবির ফোন দিয়ে কেনো? তোমার ফোন নেই?
ইশানের কথা শুনে দিনার মন টা খারাপ হয়ে গেলো।মন খারাপ করেই বলল না।
আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি।এখন রাখো ভাবি তোমাকে আমার সাথে কথা কথা বলতে দেখলে সমস্যা হতে পারে।আমি কাল তোমাদের বাসায় হয়তো আসতে পারি।তুমি চিঠি লিখে মনের কথা জানিও আমায় কেমন? আমার এখন একটু কাজ আছে রাখছি।
জ্বি আচ্ছা। দিনা যুথির ফোন টা জায়গা মতো রেখে পিছনে ঘুরতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায়। পিছনে তার মা দাঁড়িয়ে আছে।
উড়নার অংশ হাতে পেঁচাতে পেঁচাতে মায়ের দিকে তাকায়।
কিরে তুই এখানে কি করছিস? আর দেখেতো মনে হচ্ছে কারো সাথে ফোনে কথা বলছিলি।
মায়ের গম্ভীর কণ্ঠে দিনা ঢুক গিলে। একবার যদি জানতে পারে কার সাথে কথা বলেছে তাহলে জ্য’ন্ত পুঁ/তে ফেলবে।এটাও বুঝতে পারে হয়তো শুনেনি দিনার কথা তার মা।তাই আমতা আমতা করে বলে ইয়ে মা আসলে আপুর ফোনটা বাজতে ছিলো। দুলাভাই ফোন দিয়েছে। তাই আমি ধরে বললাম আপু খেতে গেছে। কথাটা বলে মায়ের দিকে তাকায়। এই প্রথম দিনা মায়ের সাথে মিথ্যা কথা বলল।
ঠিক আছে যা।
দিনা আর এক মুহূর্ত ও ঐখানে দাঁড়ায়নি এক প্রকার দৌড়ে বেরিয়ে যায়। বড়ো বাঁচা বেঁচে গেছে।
—————————————
ইরহানের বাবা অনেক ছ’লচা’তুরী করেও ইরহানের থেকে যুথির জন্য পাঠানো টাকা নিতে পারেনি।
ঐসময় ইরহানের দাদির থেকে ফোন কেঁড়ে নিয়ে ইরহানের সাথে ভাব জমানোর অনেক চেষ্টা করে। ইনিয়ে বিনিয়ে বলে উনার কাছে যেনো টাকা দেয় উনি সব কিনে নিজে বড় বউমা কে পাঠাবেন।
ইরহান তার বাবার কথার ধরনেই বুঝি বুঝে গেলো মনের কথা। সাফ সাফ মানা করে দেয়।
আপনার এতো কষ্ট করার দরকার নেই এই বয়সে। আর টাকা আপনার হাতে গেলে আপনি যে কি করতে পারেন তা আমি খুব ভালো করেই জানি। কথাটুকু বলেই চুপচাপ ফোন রেখে দেয় ইরহান।
ইরহানের বাবা রা’গে ফোসতে থাকে। কতোদিন ধরে হাতে টাকা নেই। কিছু করতে পারছে না। মা/ল পানিও পরছে না পেটে। মেঝো ছেলে ইমন হচ্ছে একটা বউয়ের নে/ওটা যা একটু আকটু কাজ করে সব বউয়ের পিছনেই খরচ করে। আর ছোট টা তো অ’ক’ম্মার ঢেকি। ফোন টা ইরহানের দাদির হাতে দিয়ে বকতে বকতে বাইরে চলে যায়।
———————————-
পরের দিন ইশান ইরহানের কথা মতো জামা কাপড় আরো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যুথিদের বাড়িতে হাজির হয়।
ইরহান অবশ্য আগের দিন যুথিকে বলেছিলো তার ভাই আসবে।কি কারণে আসবে তা বলেনি।যুথি ভেবেছে এমনি হয়তো বেড়াতে আসছে।পরে ইশানের আসার আসল কারণ জানতে পারে।
যুথির মামা মামি আবার বাড়িতে নেই। দিনার নানির বাড়ি গেছে কি একটা দরকারে।তাই যুথিই ইশানের জন্য আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে যায়।
ইশান একা দেখে যুথি দিনা কে বলে একটু কথা বলার জন্য। দিনা না চাইতেও সুযোগ পেয়ে যায়। মনে মনে বেশ খুশি হয়। মুখে কিছু বলে না মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে চলে যায় ইশানের সাথে দেখা করতে। হাতে ইশানের জন্য লিখা একটা চিঠি।
দিনার জড়তা এখনো কাটেনি।ইশানের সাথে টুকটাক কথা বলে হাতে চিঠি টা গুঁজে দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসে। ইশান দিনার কাজে দিনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসে।
পরে ইশান যুথির আনা খাবার খেয়ে সব কিছু যুথিকে বুঝিয়ে দিয়ে চলে যায়। শুধু যুথির জন্য না সকলের জন্যই টুকটাক জিনিস পত্র পাঠিয়েছে।
যুথি ইরহানকে অবশ্য বলেছিলো এসবের এখন কি দরকার?
ইরহান বলেছিলো দরকার আছে বলেই দিয়েছি যুথি রানী।
————————————
ইরহান আর যুথির ফোনালাপে দিন দিন তাদের মধ্যে জড়তা সব কেটে গেছে। এখন প্রতিদিন নিয়ম করে কথা হয়।যুথি দিন দিন ইরহানের প্রতি আসক্ত হয়ে পরছে।লোকটা কে ভালো না বেসে থাকার কোনো উপায় আছে?
সেই দূর দেশে থেকেও প্রতিনিয়ত খেয়াল রেখে চলেছে। এক অদৃশ্য মায়ায় যুথিকে নিজের সাথে আবদ্ধ করে নিয়েছে লোকটা তাকে।
এই যে একটু দেরি তে কল আসলেই যুথি ছটফট করতে থাকে। লোক টা কে একটু দেখার জন্য মনটা আনচান করে।
ভিডিও কল নিয়ে সে কি কান্ড যুথি কিছুতেই ভিডিও কলে আসবে না। তার লজ্জা লাগে অস্বস্তি হয়। ইরহান অনেক বুঝিয়ে ও সামনে আনতে পারে নি। ইরহান ভিডিও কল দিলেও যুথি কিছুতেই সামনে আসে না।
এই নিয়ে ইরহান যুথিকে একদিন কোনো কল বা মেসেজ কিছু দেয় নি।যুথি অনেক অপেক্ষা করার পরও দেয়নি।ভিতরে ভিতরে ছটফট করতে থাকে যুথি। শেষে না পেরে সব জড়তা এক সাইডে রেখে ভিডিও কলে দেয় ইরহান কে।
প্রথমে যুথি ইরহানের দিকে লজ্জায় তাকাতে পারছিলো না। লজ্জায় চোখ নামিয়ে রেখে ছিলো। ইরহানের সেই দিকে খেয়াল নেই সে দুই চোখ ভড়ে তার যুথি রানী কে দেখতে ছিলো।
তারপর আস্তে আস্তে যুথির সব জড়তা কেটে যায়। এখন প্রায়ই দুইজনের কথা হয়। একে অপরকে দেখা হয়।
—————————-
যুথি বিছানায় বসে বসে গুণ গুণ করে গান গাইছে আর মাথা আছড়াচ্ছে। মনটা তার আজ বেশ ভালো। অবশ্য এখন তার মন ভালোই থাকে। সারাক্ষণ ইরহানের কথা ভেবে মুখে হাসি ফোটে থাকে।
এমন সময় যুথির ফোনে কল আসে। যুথি তাকিয়ে দেখে ইরহান কল করেছে। মুখে অজান্তেই হাসি ফুটে ওঠে। তারাতাড়ি রিসিভ করে কানে ধরতেই ঐপাশ থেকে শুনতে পায় তার মানুষ টা যুথি রানী বলে ডাকছে।”
হুম।
— কি করে আমার যুথি রানী?
— কিছুই না বসে বসে ভাবছিলাম।
,— কি ভাবছিলে?
— আমি বলবো না। আপনি বলুন তো কি ভাবছিলাম আমি?
— উমমম আমার কথা?
নাকি আমাকে কাছে পাওয়া নিয়ে ভাবনার রাজ্যে বিভোর ছিলে?
— ধ্যাত আপনার যতো বা’জে কথা।
এর মধ্যে যুথির মামি যুথিকে ডাক দেয় একটা মোড়া দিয়ে আসার জন্য। পাশের বাড়ি থেকে কে নাকি এসেছে। যুথি কল না কেটেই ফোন হাতে নিয়ে মোড়া দিয়ে আসে।
আসার সময় কিছু কথা কানে আসে।
তা ভাবি আর কতো? এতোদিন দেখে এসেছেন। এখন তো বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। কেমন বিয়ে দিলেন শ্বশুর বাড়ি নেওয়ার খবর নেই। পরের জন্য আর কতো করবেন? নিজের মেয়ের কথা ও তো ভাবতে হবে। ভাই আর রোজগারই বা করে কতো বলেন?
এসব শুনে যুথি পিছনে ঘুরে তাকায়। ইচ্ছে করছে মহিলাটার মুখে ঝা’মা ঘ’ষে দিতে।মামির জন্য কিছু বলতেও পারবে না। যুথির মামি কি বলছে জানেনা সে।রা’গে নিজের রুমে এসে ফোন রেখে বসে থাকে।
অপর পাশে যে ইরহান ছিলো বেমালুম ভুলে গেছে যুথি। ইরহান ও এখন লাইনে নেই। সব শুনেই ফোন টা কেটে দিয়েছে।
#চলবে,,,,,,