#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ৪
#Jhorna_Islam
প্রেম মানুষের জীবনে কখন কিভাবে আসে বলা মুশকিল। হুট করে এসে মন ছুঁয়ে চলে যায়। একজন মানুষের চিন্তা ধারা বদলে যায়। নিজের চারপাশের সব কিছু রঙিন লাগে।অজান্তেই যে মনে প্রেমের রং লাগায় তার কথা ভেবে মন হেসে উঠে। সমস্ত কাজ ফেলে স্বপ্নে বিচরণ চলে। তেমনই এক পনেরো বছর বয়সি কিশোরীর মনে প্রেমের দোলা লেগেছে।
নিজের বিছানায় শুয়ে শুয়ে প্রেমিক পুরুষের দেওয়া চিঠিটা বুকে আগলে নিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। এই নিয়ে সাত বারের মতো পড়া শেষ। তাও যেনো মন ভরছে না।
প্রেমিক পুরুষের দেওয়া এই কাগজের প্রেম নিবেদন সবকিছু এলোমেলো করে দিয়ে গেছে।
চিঠি টা ইরহানের ছোট ভাই ইশান যুথির মামাতো বোন দিনাকে দিয়েছে। দিনা এবার ক্লাস নাইনে পড়ে। যুথির এক বছরের ছোট দিনা। তবে দিনা ততো বেশি চঞ্চল না।খুবই শান্ত স্বভাবের সে।কথা কম বলে। আর দিনার বিপরীত হলো ইশান দুইবার মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে ফেইল করেছে পরে আর পড়াশোনা করে নি।সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়ায়। কোনো কাজ কাম নেই।
ইশানের সাথে প্রথম দেখা হয় যুথিকে যেদিন দেখতে আসে সেদিন। লোকটা হাত মোছার জন্য গামছা চাচ্ছিলো।দিনার মা দিনা কে ডেকে বলেছিলো গামছা দিতে। দিনা মায়ের কথা মতো গামছা এনে দেয়।
ইশান গামছা নেওয়ার সময় ভুলে দিনার হাতে তার হাতের ছোঁয়া লেগে যায়। দিনা চমকে চোখ তুলে তাকায়।
ইশান তখন স্বাভাবিক ভাবেই বলে ইচ্ছে করে দেইনি ভুলে লেগে গেছে। তারপর দিনার দিকে কিছু সময় অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। দিনা ও ইশানের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে ছিলো।কেন যেনো ছেলেটা কে তার ভালো লেগেছে।
ঐদিন যতক্ষন ইশানরা ছিল ততো সময় ইশান দিনার দিকে তাকিয়ে ছিলো। দিনা বুঝতে পেরে জড়োসড়ো হয়ে থেকেছে।
ইশানরা যাওয়ার পর ঘুমাতে পারেনি দিনা ঐরাত।যুথিকে ও কিছু বলতে পারেনি।শুধু লোকটার কথা গুলো আর চাহনি মনে পরেছিলো।ছোট্ট মনে বুঝি প্রেমের জোয়ার বইয়ে দিয়ে গেছে।
আজ ইশান ইচ্ছে করে দিনার সাথে কথা বলেছে।অনেক কিছু দিনার সম্পর্কে নিজে থেকেই জেনেছে ইশান।যাওয়ার আগে অবশ্য দিনার হাতে এই চিঠিটা ধরিয়ে দিয়ে গেছে। চিঠিতে একটা নাম্বার ও আছে। সরাসরি ইশান দিনা কে প্রেম নিবেদন করেছে চিঠি তে।যদি দিনা রাজি থাকে তাহলে যেনো ইশান কে একটা কল দেয়।
সেই থেকে দিনা চিঠি টা নিয়ে নিজের স্বপ্নে বিভোর।
————————————-
ইরহান প্রথমে বিয়ে করতে রাজি ছিলো না। নিজের পরিবার কে দেখে বিয়ে করার সখ মিটে গিয়েছিলো।তাইতো দূর দেশে এতো বছর ধরে পরে আছে দেশে আসার ইচ্ছে ও করেনি।
ইরহানের মা ছোট থাকতেই মা”রা গেছে। তাছলিমা বানু ইরহানের চাচাতো খালা। ইরহান জানে না কিছু তবে লোকমুখে শুনেছে ইরহানের বাবার সাথে তাছলিমা বানুর প”র”কি”য়া”র জন্য নাকি ইরহানের মা মা*রা গেছে। সেই থেকে ইরহানের বাবার সাথে তেমন তার সম্পর্ক ভালো না।
ইরহান বড় হয়ে তার মায়ের মৃত্যুর সত্যতা বের করতে চেয়ে ও পারেনি। কয়েকজন খারাপ বললেও সকলেই বলে অসুস্থতার জন্যই নাকি মা*রা গেছে ইরহানের মা। সব কিছু ইরহানের দাদি জানে।উনিই যখন বলেছে ইরহানের মা স্বাভাবিক ভাবে মা*রা গেছে এতে তার বাবার কোন দোষ নেই। তাই আর ঘাটায়নি ইরহান। কারণ তার দাদির সাথে খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো ইরহানের মায়ের। যদিও বা ইরহানের দাদি তার দাদার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। তার দাদির নিজের কোনো সন্তান নেই।
ইরহান তার বাবা কে লাস্ট কবে বাবা বলে ডেকেছে তার মনে নেই।কেন জানি ইরহান তা নিজেও জানে না।
ইরহানের বাবা তার সব সন্তানদের প্রতি খাপছাড়া। আগে কাজ করে সন্তানদের দায়িত্ব পালন করলেও এখন আর কাজ করে না।বসে বসে ইরহানের টাকাতেই খায়। আর পরে পরে ম*দ গি’লে।
ইরহানের আপন আর কোনো ভাই বোন নেই। ইমন আর ইশান সৎ ভাই। তাছলিমা বানুর ছেলে।
এতোসব পে*চ নিজের পরিবারে যার জন্য বিয়ে করার ইচ্ছে জাগেনি।কিন্তু দাদির জন্য সেই করতেই হলো।সারাদিন ফোনে কান্নাকাটি করবে। যার জন্য বাধ্য হয়ে রাজি হয়েছে বিয়ে করতে। বাধ্য হয়ে করলেও নিজের দায়িত্ব কর্তব্য থেকে পিছপা হবে না ইরহান। মন দিয়ে নিজের স্ত্রী কে ভালোবাসবে।তার প্রাপ্য সম্মান দিবে।একজন আদর্শ স্বামী হবার চেষ্টা করবে।
—————————–
সকালের মিষ্টি রোদ চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় যুথির। কাল একটু দেরি করে ঘুমানোর ফলে আজ ঘুম ভাঙতে দেরি হয়ে গেছে। নয়তো সেই ভোরে ঘুম থেকে উঠে যায় যুথি।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দশটা বাজে।
যুথি বেশ অবাক হয়ে যায় মামি আজ এখনো ডাকলোনা কেন? সকালে রান্না করার জন্য সবতো তাকেই জোগাড় করে দিতে হয়।তবে আজ দেখি এতো ঘুমানোর পরও মামি চেচামেচি করলো না। বাহ বিয়ে হয়ে যাওয়ায়। বিয়ে করে বেশ লাভ হলো দেখা যায় যুথি মনে মনে বলে।
ফোনের ডাটা চালু করে দেখে ইরহানের থেকে মেসেজ এসেছে “শুভ সকাল ম্যাডাম”
যুথিও রিপ্লাই দেয়,, “শুভ সকাল। ”
ইরহান তখন লাইনেই ছিলো। সাথে সাথে মেসেজ আসে।
— ঘুম ভাঙলো ম্যাডামের?
— হুম।তবে আপনি এতো সকালে যে অনলাইনে? ঘুমান নি নাকি? মেসেজ সেন্ড করে যুথি নিজেই আহাম্মক হয়ে যায়। এটা বলার কি দরকার ছিলো? লোকটা এখন হয়তো ভাববে একদিন না যেতেই অধিকার দেখাচ্ছে।
যুথির ভাবনার মাঝেই ইরহানের রিপ্লাই আসে।
— নামাজ পরলাম ভোরে উঠে। পরে আর ঘুম ধরেনি তাই সজাগ।
— ওহ আচ্ছা।
— হুম আপনি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিন।আর হ্যা নামাজ পরার চেষ্টা করবেন। “আমি চাই আমার জীবন সঙ্গী শুধু ইহকালের সাথী না পরকালের ও সাথী হোক। ”
— যুথি কি বলবে বুঝতে পারে না। লোকটা কি সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দিলো তাকে সবসময় উনার পাশে চায়।মনে মনে ঠিক করে নেয় যুথি নামাজ পরবে।ইরহানের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে যায়।
হুম পরবো।আর আপনি আমাকে আপনি করে বলবেন না কেমন যেনো শুনতে লাগে।আমিতো আপনার ছোট। তুমি করেই বললে খুশি হবো।
— আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার মুখ থেকে শুনতে চেয়েছিলাম কথাটা তাই আপনি বলতাম। এবার যাও গিয়ে খেয়ে নাও রাতেও খাওনি।অসুস্থ হয়ে যাবা।
যুথিও আচ্ছা বলে ফোন বিছানায় রেখে হাত মুখ ধুয়ে খেতে চলে যায়।
যুথি যাওয়ার সাথে সাথে দিনা পা টিপে টিপে যুথির রুমে ঢুকে পরে।
———————————
ইরহান তার দাদি কে কল দেয়।এই একটা মানুষকে ইরহান খুব ভালোবাসে। দাদিই ইরহানের মায়ের পরে একমাত্র ভালোবাসার মানুষ। এখন হয়তো সেই খাতায় আরো একটা নাম যুক্ত হবে। আর বাকিদের প্রতি শুধু তার দায়িত্ব গুলো পালন করে যাচ্ছে ইরহান।
প্রায় অনেক কথাই বলেছে দাদির সাথে। কথা বলার একপর্যায়ে দাদি বলে উঠে,, দাদু ভাই আমার বড় নাত বউকে তো তেমন কিছুই দেওয়া হয়নি।জামা কাপড় ও দিতে পারিনি। তুমি কিছু করো।
হ্যা দাদি আমিও ভেবে রেখেছি। আমি এক কাজ করি টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি তুমি একটা লিস্ট করে ইমন অথবা ইশান কে দিয়ে আনিয়ে নেও। কতো পাঠাবো টাকা দাদি?
কতো লাগবে আমিও বুঝতে পারছি না দাদু ভাই।
আচ্ছা ঠিক আছে আমি পনেরো হাজার পাঠাচ্ছি। যা কিনার কিনে নিও আর বাকি টাকা একটা খামে ভরে যুথিকে দিয়ে দিও।তুমি বইলো সালামি হিসেবে দিয়েছো।নয়তো মেয়ে টা হয়তো লজ্জা পাবে আর নয়তো নিজেকে ছোট মনে হবে ঠিক ভাবে তো এখনো মিশতে পারেনি আমাদের সাথে।
আচ্ছা ঠিক আছে দাদু ভাই।
পিছন থেকে ইরহানের বাবা সবই শুনেছে।বাটন ফোনে কথা বললে এমনিতেও শোনা যায়। এতো টাকার কথা শুনে চোখ চিকচিক করে উঠে ইরহানের বাবার।
#চলবে,,,,,?