#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ৩
#Jhorna_Islam
যুথি হাতে ফোন টা নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। মনে মনে ভাবছে হয়তো ওর না দেখা বর মহাশয় ই কল টা দিয়েছে। যুথি কল রিসিভ করবে কি করবে না এটা ভেবে পাচ্ছে না। কেমন একটা দ্বিধা কাজ করছে।
ইরহান নামক লোকটা এখন যুথির কাছে অপরিচিত অতি আপনজন।
কল বেজেই চলেছে কিন্তু যুথি রিসিভ করছে না। রিসিভ করতে গিয়ে ও আঙুল সরিয়ে নিচ্ছে। কি জিজ্ঞেস করতে পারে ভাবতে থাকে আর মনে মনে কথা সাজাতে থাকে।
এর মধ্যে দুইবার কল বাজতে বাজতে কেটে যায়। তৃতীয় বারের মতো বেজে উঠে। এবার যুথি তারাতাড়ি করে রিসিভ করতে গিয়ে কল কেটে দেয় ভুলে।
যুথি মাথায় হাত দিয়ে বলে,,হায় হায় যুথি তুই এসব কি শুরু করলি? লোকটা কি ভাববে? আবার ও কল আসে এবার যুথি খুব সাবধানে কল রিসিভ করে কানে ধরে।
অপর পাশ থেকে কেউ গম্ভীর পুরুষালি কন্ঠে সালাম দেয়।
কন্ঠ স্বর শুনে যুথির বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায়। দাঁত দিয়ে নখ কামড়াতে কামড়াতে আস্তে করে বলে,, সালাম তো আমার আগে দেওয়া উচিত ছিলো । লোকটা কি ভাববে?
যুথি সালামের জবাব দিয়ে চুপ হয়ে যায়।
ইরহান এবার গলা খেঁকারি দিয়ে বলে,,,,, ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন নাকি?..
“নাহ্।”
ওহ আচ্ছা আমি ভাবলাম ঘুমিয়ে গেছেন এজন্য কল রিসিভ করছিলেন না।
ন-না ঘু-ঘুমাইনি।
আমিকি শেষ মেষ তু’তলা বউ বিয়ে করলাম?
ইরহানের এমন দ্বারা কথায় যুথি ব্রু কোচকে ফেলে। লোকটা তার সাথে মজা নিচ্ছে কেমন ব”দ। সে তো একটু ঘা’বড়ে আছে বলে কথা জড়িয়ে গিয়েছিলো।তাই বলে লোকটা তাকে তু’তলা বলবে? নিজেকে সামলে তবুও যুথি বলে উঠে আমি মোটেও তু’তলা না।
“ওহ আচ্ছা। আমিতো ভ’য় ই পেয়ে গিয়েছিলাম। খাওয়া দাওয়া করেছেন ম্যাডাম?”
নাহ্।
এখনও করেন নি? নাকি স্বামীর বাড়ির খাবার খেতে পারেন নি বলে সেই আফসোসে আজ উপোস দিয়েছেন কোনটা? কথাগুলো বলেই ফোনের অপর পাশে ইরহান মিটমিটিয়ে হাসে। নিশ্চয়ই এখন তার সদ্য বিয়ে করা বউ ভ’রকে গেছে আর তাকে নির্লজ্জ বলে আক্ষায়িত করে ফেলেছে।
ভাড়ি ব’দ তো লোকটা। প্রথম আলাপে কেউ এসব কথা বলে? এমনিতেই কথা বলতে কেমন কেমন লাগছে তারউপর আবার মজা নিচ্ছে লোকটা।
বয়েই গেছে আপনার বাড়ির খাবারের জন্য না খেয়ে থাকতে। কথাটা বলে যুথি কল কেটে দেয়। কল কেটে যুথি সোজা হয়ে শুয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে ভাবে তার জীবন বদলে গেছে হুট করে। সে এখন একজনের বউ হয়ে গেছে।
এরমধ্যে যুথির ফোনে মেসেজ আসে।
“ম্যাডাম মনে হয় আমার সাথে কথা বলতে আনইজি ফিল করছে।ব্যাপার না এটাই স্বাভাবিক। কথা বলতে না পারলে মেসেজ করেই না হয় ফ্রি হলেন।এখন আপনার ফেসবুক আইডি বা ইমু দিলে ভালো হতো।আপনার এই নাম্বারে মনে হয় ইমু নেই। এজন্য নাম্বার সেভ করার পরও আসে না।”
যুথি ইরহানের মেসেজ পেয়ে তারাতাড়ি সোজা হয়ে বসে।এখন কিছুতেই লোকটা কে ফেসবুক আইডি দেওয়া যাবে না। লোকটা নয়তো আরো মজা নিবে।ফেসবুক আইডি তে দিনে সে কতো হাসির জোকস পোষ্ট করে। এসব দেখলে লোকটা তাকে পা”গল ভাববে। দুইদিন আগে ও একটা পোষ্ট দিয়েছিলো “ইমুর অপর নাম স্বামী বিদেশ।” এখন যদি ইরহান এটা দেখে ছিঃ ছিঃ কি ভাববে।পোষ্ট সে ডিলিট ও করবে না।এই পোষ্টে কতো কতো হাহা রিয়েক্ট পরেছে অন্যান্য পোষ্টের তুলনায়।
তাই তারাতারি করে গিয়ে ইমু ইন্সটল দেয়। নাম্বার দিয়ে ইমু সেট করে। যাদের নাম্বার ফোনে সেভ করা তাদের মধ্যে যারা যারা ইমু চালায় তাদের সবাই এসে পরে। ইরহানের ইমু আইডিও আসে। ইরহান হয়তো ইমুতেই ছিলো তাই সাথে সাথে মেসেজ আসে ইরহানের আইডি থেকে।
“বাহ ল’ক্ষী বউ আমার। ”
যুথি মেসেজ টা সিন করে কিন্তু রিপ্লাই দেওয়ার আগেই ইরহানের প্রোফাইল পিক এ ন’জর যায়। ক্লিক করে। পিক টা দেখে নিজের অজান্তেই মুখ থেকে মাশাআল্লাহ বেরিয়ে আসে। যুথি পিক টা সেভ করে নেয় নিজের ফোনে।
তারপর ইরহানের মেসেজের রিপ্লাই হিসেবে লজ্জা পাওয়া ইমোজি দেয়।
“খেয়ে আসেন ম্যাডাম।তারপর মেসেজ দিচ্ছি। ”
— খাবো না খিদে নেই। সন্ধায় খেয়েছি। আপনি খেয়েছেন?
— না।সময় হয়নি এখনো খাওয়ার।
যুথি ভুলেই গিয়েছিলো ঐখানে যে কয়েক ঘন্টা পার্থক্য।
ইরহানের সাথে আরো কিছু সময় মেসেজ করে টুকটাক বলে ঘুমানোর কথা বলে বিদায় জানায়। ইরহান ও আর বাঁধা দেয় না।
এর মধ্যে সীমা ইমুতে মেসেজ দেওয়া শুরু করছে।
“কিরে বান্ধুবী কে যেনো বলছিল আমি জীবনে ও ইমু চালাবো না।খুবই বিরক্তকর জিনিস। আহা কি ভাব নিয়ে ছিলি বল।আমার সাথে মজা করতি আমি ইমু চালাই দেখে।
এখন দেখ তোর জামাই ও বিদেশি আর প্রথম দিন ই তোকে ইমু খুলতে হলো।
যুথি সীমা কে কয়েকটা রাগের ইমোজি দিয়ে বলে,, তুই তোর নানির বাড়ি থেকে একবার আয় শুধু।
কেন রে বান্ধবী তোর কি মন খারাপ? দুলাভাইয়ের সাথে কথা হয়নি?
তুই ঐ দিন দোয়া করায় আজ আমি মিংগেল হয়ে গেলাম।তুই কি ভেবেছিস আমি চুপচাপ বসে থাকবো? তোরে ও একটার গলায় ঝুলানোর ব্যবস্থা করতেছি।দেখি আসে পাশে ল্যাং”ড়া,কা”না,কাউকে পাই কি না।আর না পেলে আমার একটা দেবর আছে ঐটার সাথেই দিয়ে দিবো।তারপর বড় জা হয়ে তোর চুল টেনে টেনে ছি’ড়বো। তোর উপর হুকুম চালিয়ে খাবো।
এই তুই আমার বন্ধু নাকি শত্রু?
তুই খালি তোর নানির বাড়ি থেকে আয় পরে বুঝতে পারবি আমি কে।
তারপর ফোন রেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে যুথি।আসলেই তার এখন ঘুমানো প্রয়োজন।
———————————
অন্য দিকে ইরহানের বাড়িতে রাগারাগি চলছে।তার মা তাছলিমা বানু খুবই রে’গে আছে। স্বামী কে ঝা’ড়ছেন।
ম/দ খো’র বে’ডা না করছিলাম এখন আমি এইসব বিয়ে শাদী না দিতে।আমার একটা কথা ও শুনে নাই। কি দরকার ছিলো এখন ছেলেকে বিয়ে করানোর?
” পর পর ই হয়।পর কখনো আপন হয় না। যদি আপন হতো তাহলে মায়ের কাছে একবার জিজ্ঞেস করতো মা বিয়েতে রাজি কি না। মুখে মুখে শুধু মা, মা করে।কাজের বেলা এই তাছলিমা বানুর খবর নেই। কাজের সময় দাদিই সব।
এজন্য লোকে বলে পিঠের চা’মড়া কখনো পেটে লাগে না।”
ইরহানের বাবা নিজের বউয়ের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বালিশ দিয়ে কান চে’পে ধরে শুয়ে পরে। এখন কিছু বলে লাভ নেই। এই মহিলা থামবে না।এখন কিছু বলতে গেলে উল্টো উনার উপরই চ’ড়াও হবে।
এর মধ্যে ইরহানের দাদি চুপ থাকার মানুষ নয়।পাশের রুম থেকে সবই শুনতে পাচ্ছে। এতো কিছু বলার পরও যে ইরহানের বাবা কিছু বলবে না তা তিনি খুব ভালো করেই জানেন।
তাই উনি ও বলে উঠে,,,, নিজের বেলা ষোল আনা,অন্যের বেলা চার আনা ও না। আমার বড় নাতি বিয়ে করায় মানুষের এতো জ্বলছে কেন? নিজের এক ছেলে যে অন্যের বাড়ির মেয়ে কে চু’রি করে নিয়ে এসেছে সেই বেলা তো ভেজা বিড়াল সেজে ছিলো একটা রা কাটেনি মুখ দিয়ে। এখন জ্বলতাছে আমার নাতি টাকা কম দিবো সংসারে সেই ভয়ে না?
#চলবে,,,,,,