#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ২
#Jhorna_Islam
সীমা ইরহান নামটা শুনেই বলে বাহ্ কি সুন্দর নাম। আমার খুব পছন্দ হয়েছে। বিয়ে করে নে দোস্ত। বাসা কোথায় জানিস?
যুথি সীমার মাথায় এক থা/প্পড় মে’রে বলে ,, আমি তোকে বললাম না আমি কিছু জানি না। আর এতোই যখন পছন্দ হয়েছে তাহলে তুই বিয়ে করে নে।
আমি তোকে দোয়া করে দিলাম এর সাথেই তোর বিয়ে হবে বৎস।কথাটা বলেই সীমা খিলখিল করে হেসে উঠে।
শ/য়তান মাইয়া দাঁড়া তুই কথাটা বলে যুথি সীমা কে দৌড়ানি দেয়। দুই বান্ধবী একে ছুটাছুটি করছে।একজন ধরার জন্য দৌড়াচ্ছে আরেকজন একজনের হাত থেকে বাঁচতে দৌড়াচ্ছে।
পরের কয়েকদিন বেশ আনন্দেই কাটে যুথির।সকালে উঠে একটু হাত লাগায় মামির কাজে।আর সারাদিন সীমা আর যুথি মিলে টইটই করে ঘুরে বেড়ায়।
বিয়ের কথা ভুলেই গেছে। বাড়িতে ও এই নিয়ে কোনো কথা হয়নি। মামা-মামি কিছুই বলেনি।যে যার মতো বিভিন্ন কাজ নিয়ে ব্যস্ত।
এর মধ্যে হুট করে একদিন যুথি কে তার মামা নিজের ঘরে ডেকে পাঠায়।এটা নিয়ে যুথি ভাবনায় পরে যায় কি নিয়ে ডেকেছে তাকে তার মামা।
বেশি জরুরি আর গুরুত্বপূর্ণ কথা না হলে মামা এমনভাবে ডেকে পাঠায় না।
যুথি গুটিগুটি পায়ে মামার কাছে যায়। যুথির মামা নিজের কাছে ডাকে।তারপর চোখের ইশারায় নিজের পাশে বসতে বলে।
যুথি চুপচাপ মামার পাশে বসে।
যুথির মামা যুথির মাথায় হাত বোলায়। যুথি চোখ পিটপিট করে মামার দিকে তাকায়। এমনিতেই কেউ মাথায় আদুরে হাত বুলালে যুথির কান্না পায়।
“যুথি মা মামার উপর ভরসা আছে না তোর?”
যুথি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
মামা যা করবে সেটা নিশ্চয়ই ভেবে চিন্তে করবে তাই না মা?
হুম মামা।
মামা তোমার বিয়ে ঠিক করেছে মা।অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত টা নিয়েছি।
যুথির মামার কথা শুনে যুথি বড় বড় চোখ করে তাকায়।এটা কি বলছে তার মামা।
আমি জানি মা তুমি হয়তো বেশ অবাক হয়েছো আমার কথা শুনে। আমি তোমার খারাপ চাই না। তুমি আমার বোনের রেখে যাওয়া আমানত।আমি তোমাকে আমার মেয়ের থেকে কোন অংশে কম দেখি না। তুমি আমার আরেকটা মেয়ে।
ঐদিন যে ঘটক রহমান এসেছিলো নিশ্চয়ই তোমার মনে আছে? উনি তোমার জন্য একটা বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছে। ছেলে আমাদের পাশের গ্রামের। আমি প্রথমে রাজি ছিলাম না। কিন্তু এতোদিন আমি সব খোঁজ খবর নিয়েছি।
ছেলে মাশাল্লাহ সব দিক দিয়ে ভালো। কোনো খারাপ রিপোর্ট পাই নি কারো কাছে। যার কাছেই ছেলের সম্পর্কে জানতে চেয়েছি সেই বলেছে ছেলে লাখে একটা। এমন ছেলে আজকালের যোগে পাওয়া বেশ মুশকিল। যারে জিজ্ঞেস করেছি সেই বলেছে চোখ বন্ধ করে রাজি হয়ে যান ভাইজান মেয়ে সুখী হবে।
যদিও বা ছেলের পরিবার নিয়ে আমার একটু অমত ছিলো। কিন্তু এখন আর নেই।আমিও কথা বলেছি ছেলের সাথে।
এখন তুমি কি বলো? মামার সিদ্ধান্তের ওপর কি তোমার কোনো সন্দেহ আছে?
যুথি পরে যায় বি’পাকে।এমন ভাবে তার মামা জানতে চাইলে সে কি করে বলবে যে এখন সে বিয়ে করতে চায় না। তার উপর প্রবাসী ছেলে তো একদম ই না।যুথির এসব প্রবাসী ছেলে একদম পছন্দ না।
যুথি উশখুশ করছে।মামার সামনে কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। ভিতরে ভিতরে চিৎকার করলে ও সামনা সামনি মুখ পুরোপুরি বন্ধ। অসহায় চোখ নিয়ে মামার দিকে তাকায়।
যুথির মামা হাসি মুখে যুথির দিকে তাকিয়ে আছে উত্তরের আশায়।
একটু সাহস যুগিয়ে মামা কে কিছু বলতে নিবে তার আগেই চোখ যায় দরজার দিকে। মামি বাইরে থেকে রা’গী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
কিছু একটা ভেবে বলে উঠে আমি কিছু জানি না মামা।তোমার যা ভালো মনে হয় তাই করো।তোমাদের মত ই আমার মত। যা ভালো বুঝো করো।
যুথি কথা গুলো বলে দৌড়ে বের হয়ে আসে।
যুথির মামা হাসি মুখে কল লাগায় ঘটক কে। তারপর নানান কথা বলতে থাকে।
হুট করে মানুষের জীবন বদলে যায়। যেটা আমরা কখনো কল্পনা ও করিনি সেটাই হয়ে যায়। পর মানুষ কে আপন করে নিতে হয়।
যুথি কখনো ভাবতেও পারে নি তার জীবনে হুট করে এমন বদল ঘটে যাবে।এক অদৃশ্য শিকলে নিজের জীবন বাঁধা পরবে।
পরের দিনই কয়েকজন লোক মিলে তাকে দেখতে আসে। যুথি উনাদের সামনে গেলেও চোখ তুলে কারো দিকে তাকায় নি। শুধু যা যা জিজ্ঞেস করেছে তার উত্তর দিয়েছে। এর মধ্যে একজনের সাথে শুধু আলাদা করে একটু কথা হয়েছে। ইরহানের দাদি। কথা বলে যা বুঝলো মহিলা অনেক মিশুক আর ভালো।
দুই দিন পর ই যুথির আকদ হয়ে যায়। ছেলেকে এক ন’জর দেখেও নি সে। যুথির মামা বলে ছিলো দেখার জন্য যুথি দেখেনি।দেখেই বা কি করবে? পছন্দ না হলেও বলতে পারবে না মামা যে পছন্দ করেছে। মামা কে সে কষ্ট দিতে পারবে না। তাই না দেখাই ভালো।
বাড়িতে কয়েকজন লোক এসেছে যুথি জানে না। সামনে ও যায় নি। শুধু একজন এসে সব কার্যক্রম সম্পন্ন করে গেছে।
যুথি এখন বিছানার উপর দ আকৃতির মতো বসে হাঁটুতে মুখ ঠেকিয়ে আছে।তার কোনো রকম অনুভূতি হচ্ছে না।
এর মধ্যে কেউ একজন রুমে ঢুকে আসে।
কই কই দেহি আমার নাত বউরে।
যুথি তারাতারি ঠিক করে বসে মাথায় শাড়ির আঁচল টেনে নেয়।
কিরে নাত বউ এমন বড় ঘুমটা দিয়ে কি হবে? আমার নাতি টা তো কাছে নাই।এতো লজ্জা পেতে হবে না।
যুথি মুখ তুলে তাকায়।এটা ইরহানের দাদি।ঐ দিন তাকে দেখতে এসেছিলো।
এখন এমন করে থাকতে হবে না তোকে নাত বউ। আমার নাতি আসলে তারপর থাকিস কেমন? কথাটা বলেই যুথির হাত ধরে।
যুথি কথা শুনে মুখ নিচে নামিয়ে ফেলে।
আরে আরে লজ্জা পাচ্ছিস নাকি? এখনই লজ্জা পেয়ে সব লজ্জা শেষ করে ফেললে চলবে? আমার নাতির সামনে পাওয়ার জন্য ও কিছু বাচিয়ে রাখ।
যুথি হাত ঘষতে ঘষতে মনে মনে বলে,,,লজ্জা পাচ্ছে কে? আমি তো লজ্জা পাওয়ার অভিনয় করছি নতুন বউ বলে।
মুখে বলে কি যে বলেন না আপনি দাদি।
আমার নাতির ফোন নাম্বার আছেনি লো নাত বউ তোর কাছে?
যুথি মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়।তার কাছে নেই।
দাদি কাকে যেনো ডেকে এনে যুথির ফোনে নাম্বার সেভ করে দেয়। তারপর খাওয়া দাওয়া আরো কিছু সময় কথা বলে উনারা চলে যায়।
যুথি হাফ ছেড়ে বাঁচে। তারাতাড়ি শাড়ি বদলে বিছানায় এসে শোয়।এতোসময় সং সেজে ছিলো।শাড়ি পরে কি গরম যে লাগতেছিলো।আহা এখন শান্তি।
এর মধ্যে যুথির ফোন টা বেজে উঠে। এই সময় কে কল করেছে ভেবে চোখ মুখ কোচকে ফেলে যুথি। অলস ভঙ্গিতে ফোন টা হাতে তুলে নিয়ে দেখে বিদেশি নাম্বার।
#চলবে,,,,,,