প্রেয়সী পর্ব ৩৬

0
469

#প্রেয়সী ♥️(৩৬)
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা

৭০.

হুট করে মেয়ে বিয়ে করে ফেলেছে কাউকে কিছু না জানিয়ে ব্যাপারটা প্রত্যেক বাবা-মায়ের কাছেই যেমন অ*প*মা*নের তেমন ক*ষ্টে*র! রাইয়ের ক্ষেত্রেও বিপরীত কিছু ঘটেনি! একটা ছেলে বিয়ের জন্য জো*র করল বলে তাকেও যে ড্যাংড্যাং করে বিয়ে করে ফেলতে হবে সেই শিক্ষা তো রাই কোনো কালেই পায়নি! তাহলে এমন কাজ সে কি করে করতে পারল? এখানে তো কোনো নাটক সিনেমা হচ্ছে না যে হিরো হিরোইন কে জো*র করলো আর হিরোইনও ভ*য়ে ভ*ড়কে গিয়ে বিয়ে করতে বাধ্য হলো!

বিয়ের পর কিছুদিন ঝ*গ*ড়া*ঝা*টি হবে, আর তারপর তারা হবে সেরা কাপল! এমনটা শুধু টিভির পর্দাতেই মানায়! বাস্তব জীবন এর থেকে ভ*য়া*ব*হ কঠিন! রাইয়ের বাবা-মায়ের এমন কিছু বক্তব্যেই রাই এবং আরফান ভাই অ*প*রা*ধ বোধে হাসফাস করতে লাগলেন। কিন্তু সেই অপরাধ বোধ আরফান ভাইয়ের মধ্যে ততক্ষণই দেখা গেলো যতক্ষণ অব্ধি রাহিয়ান মুখ খুলেননি।

—-” আন্টি-আঙ্কেল, আপনাদের কাছে আমি প্রথমেই আবির.. আই মিন আরফানের হয়ে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ও হঠাৎ করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিয়েটা তৎক্ষনাৎ করে ফেলাতে আমরাও কম অবাক হইনি! কিন্তু, যা ঘটে গেছে তা-তো আমরা আর চেয়েও বদলাতে পারবনা বলুন? তবে আমি আপনাদের হলফ করে বলতে পারি আরফানের মতো ভালো ছেলে সত্যিই হয়না আর ওর থেকে ভালো ছেলে হয়তো আপনাদের মেয়ের জন্য আপনারা কখনোই পেতেননা!”

আন্টি চেতে উঠলেন রাহিয়ানের প্রতি। রা*গে ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন,

—-” তুমি তো একথা এখন বলবেই! কারন ঐ ছেলে যে তোমার বন্ধু। কপাল তো আমাদের পু*ড়ে*ছে। ভোগান্তিটা তো আমাদেরই ভুগতে হবে তাই না? সমাজে বের হলে পাঁচ কথা শুনে মাথা নীচু করে চলে আসতে হবে আমাদের! লোকজন আমাদের দিকে হাত তুলে বলবে ঐ দেখো মেয়েকে এমন শিক্ষিত করলো যে মেয়ে তাদের না জানিয়ে একটা অপরিচিত ছেলেকে বিয়ে করে ফেলল! আজকের এই দিনটা দেখার জন্য কি তোকে পেটে ধরেছিলাম মু*খপুরি!”

আন্টির কথায় আহত নয়নে তাকালো রাই। মুখ ফুটে দু’চারটে কথা বলারও যে পথ নেই তার। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাইয়ের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলাম। রাই আমার দিকে মুখ তুলে তাকাতে আমি চোখের ইশারায় ওকে চুপ থাকতে বললাম! জানি এই সব কিছুতে ওর কোনো দো*ষ নেই কিন্তু যা ঘটে গেছে তার জন্য ওকে এমন অনেক মুখঝা*মটা সহ্য করতেই হবে। এটাই যে সমাজের নিয়ম! ঘরের লোক হোক বা বাইরের, মেয়েদের যে প্রতি পদে পদে খোঁটা দিবেনা সে যে অকল্পনীয়!

রাইয়ের বাবা নরম মানুষ। উনি এক দৃষ্টিতে মেয়ের গতিবিধি নিরীক্ষণ করে চলেছেন। বউয়ের কথায় তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে মেয়েকে কয়েক মিনিটের জন্য আলাদা করে পেলে মন ভরে দু’চারটে কথা বলে যেতেন। সবার মতো কথা শুনাতেন না! সমাজের এই ঝড় হাওয়া থেকে মেয়েকে রক্ষা করতে হয়তো কিছুটা সাহস জোগাতে সাহায্য করতেন।

আরফান ভাই রাইয়ের মায়ের উদ্দেশ্যে কঠিনস্বরে বললেন,

—-” আপনি যা বলার আমাকে বলুন আন্টি! দয়াকরে রাইকে কিছু বলবেন না। ও আপনাদের একমাত্র মেয়ে হলেও আজ থেকে আমার বউ ও! তাই ওকে কিছু বলতে গেলে অবশ্যই আমাকে আগে বলতে হবে।”

রাইয়ের মা রা*গে*র অতিমাত্রায় পৌঁছে নিজেকে সামলাতে না পেরে দাঁড়িয়ে গেলেন। স্বামীর দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন,

—-” তোমার মেয়ে ভালোই প্রেমিক পুরুষ জুটিয়েছিলো! তাই বাবা-মাকে না বলে বিয়েটাও করে ফেলতে পেরেছে! আর এখন তাকে কিছু বলতে গেলে নাকি তার স্বামীর পারমিশন নিতে হবে! আমি তোমায় বলে রাখছি, এই মেয়েকে আমি আর কখনও ঘরে তুলবো না! আমি আজ থেকে জানবো আমাদের কোনো মেয়ে নেই! ম**রে গেছে আমাদের মেয়ে!”

—-” মা….”

রাইয়ের কন্ঠ ভে*ঙে এলো। মায়ের পরের শব্দ গুলো নিজের মতো করে আর জুড়তে পারলো না! আন্টি হনহন করে বেরিয়ে গেলেন বাসা থেকে। আঙ্কেল সঙ্গে সঙ্গেই গেলেন না। কিছুক্ষণ মাথা নীচু করে বসে থেকে আস্তেধীরে উঠে দাঁড়ালেন। রাইয়ের চোখ জোড়া ছলছল করে উঠলো। বাবার দিকে একবুক আশা নিয়ে অসহায়ের মতো চেয়ে রইলো! কিন্তু আঙ্কেল আন্টির মতো মেয়েটাকে আশাহত করে হনহনিয়ে বের হয়ে গেলেন না। যদিও চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আস্তেধীরে হাঁটা ধরলেন! রাই ছুটে গেলো তার দিকে। তার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই কেঁদে ফেলল মেয়েটা। নিজেকে সংযত করা যে আমার পক্ষেও সম্ভব হচ্ছিল না! রাই বাবার সামনে হাত জোর করে দাঁড়াতেই আঙ্কেল ডুকরে উঠে জড়িয়ে ধরল রাইকে। আমি চোখের জল ফেলে হেসে উঠলাম! প্রশান্তি এটাই যে আন্টি রাইকে ভুল বুঝলেও আঙ্কেল ওকে ভুল বুঝেনি।

—-” চিন্তা করিসনা মা সব ঠিক হয়ে যাবে!”

কথাটা আঙ্কেল রাইকে বললেও আমার মনে হচ্ছিলো যেন আমার বাবা এই কথাগুলো আমায় বলছে। মনটা আবারও অসহায়ের মতো কেঁদে উঠতে চাইলে সামলে নিলাম নিজেকে। চোখজোড়া বন্ধ করে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে রাহিয়ানের কথাটা মনে করলাম। ‘বাবা অলওয়েজ আমার সাথেই আছে!’ সত্যিই যে বাবা আমার সাথে আছে। একেক সময় একেক রূপে বাবা আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। আজ যেমন রাইয়ের বাবার রূপ নিয়ে আমার সামনে এলো। আর বলে গেলো,

—-” চিন্তা করিস না মা সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আঙ্কেল রাইকে ভালোমন্দ কয়েক কথা বলে সেও চলে গেলেন। রাই বাবার যাওয়ার পানে তাকিয়ে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে রইল। আমি ওর কাছে যেতে নিলে রাহিয়ান হাত ধরে থামিয়ে দিলেন। আরফান ভাইয়ার কাঁধে হাত রেখে বললেন,

—-” ওকে নিয়ে রুমে যা । অনেক ধকল সইলো বেচারী।”

আরফান ভাই আমার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে রাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন। ধীরপায়ে রাইয়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে রাইয়ের হাতটা শক্ত করে ধরতেই চমকে উঠল রাই! আ*হ*ত নয়নে আরফান ভাইয়ের দিকে তাকাতেই আরফান ভাই আলতো করে রাইকে বুকে আগলে নিলেন। আস্তে করে বললেন,

—-” চিন্তা করো না রাই। আমি আস্তে আস্তে সব ঠিক করে দিবো।”

ঘরের বাকি সদস্যরা নীরব দর্শকের মতো এতক্ষণ কাহিনী দেখলেও এবার সবাই একসাথে হৈচৈ করতে লাগল। বিয়ে বাড়ি এমন নীরব নিস্তেজ থাকলে কি মানায়? রাই আর আরফান ভাইকে আর কেউ জ্বা*লা*লো না! বউমনি আর নিতু আপু মিলে রাইকে রুমে দিয়ে এলো। কিছুক্ষন বাদে আরফান ভাইকেও পাঠিয়ে দেওয়া হলো রেস্টের জন্য! আরফান ভাই যেতেই রাহিয়ানের বন্ধুমহল রাহিয়ানকে নিয়ে আড্ডায় বসলেন। তাদের উদ্দেশ্য আজ আড্ডায় আড্ডায় রাহিয়ানকে বাসর ঘরে আর পা রাখতে দিবে না! কিন্তু এদিকে বেচারা উনি তো কিছু বলতেও পারছেন না করতেও পারছেন না!

৭১.

ঘড়ির কাটায় ঠিক ১টা বেজে ৩০ মিনিট। বন্ধুদের ফাজলামো,শ*য়*তানি,ডেয়ার সব শেষ করে মাত্রই রুমে পা রাখলেন রাহিয়ান! আমাকে আরও ঘন্টা খানিক আগেই রুমে পাঠানো হয়েছে। এতক্ষণ আমি একা একাই তার অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলাম! অপেক্ষার সময়টা বেশ কঠিন হলেও এই মুহুর্তে সময়টা আমার কাছে বেশ অস্বস্তি লাগছে। খট করে শব্দ হতেই আমি ঘোমটার আড়ালে উনাকে এক পলক দেখে নিলাম। উনি রুমে পা রাখতেই যেন আমার বুকের ভেতরটা ছ্যাঁ*ত করে পু*ড়*লো। আমি শুঁকনো গলায় ঢোক গিললাম। বুকের ভেতর কেউ যেন ঢোল পিটিয়ে যাচ্ছে বারবার। উনি রুমের দরজাটা লক করে পেছন ফিরে তাকাতে আমিও নেমে গেলাম বিছানা ছেড়ে।

বউমনিরা শিখিয়ে দিয়েছে, বাসর রাতে নাকি স্বামীর পায়ে হাত রেখে সালাম করতে হয়! এটাই নিয়ম। আজকাল এতো এতো নিয়মের মাঝে নিজেকে যেন হারিয়ে ফেলছি আমি। আমাকে আচমকাই নিজের সামনে আবিস্কার করতে খানিক ভড়কে গেলেন মহাশয়। আমতাআমতা করে কিছু বলতে নিলেই আমি ঝুঁকে গেলাম তার পায়ের কাছে। উনি চমকে উঠে প্রায় জোরেশোরেই বলে উঠলেন,

—-” আরে আরে কি করছো?”

আমি থতমত খেয়ে উনার পায়ের কাছে নেমেই থেমে গেলাম। উনার এমন হাইপার রিয়াকশন আমি আশা করিনি। উনি গোলগোল চোখ পাকিয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন উত্তরের আশায়। আমি বোকা গলায় জবাব দিলাম,

—-” সালাম করছি!”

উনি অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বললেন,

—-” সালাম করছো? কিন্তু কিভাবে?”

—-” পায়ে হাত দিয়ে। বউমনি বলেছে এভাবে সালাম করা নাকি নিয়ম!”

—-” হোয়াট?”

—-” হু। দেখি এবার সালাম করতে দিন।”

আমি উনার পা ছোঁয়ার জন্য হাত বাড়াতেই উনিও ঝুঁকে এলেন আমার সামনে। আমি চোখ জোড়া ডিম্বাকৃতির ন্যায় করে উনার দিকে তাকাতেই উনি ঠোঁট বাঁকিয়ে বললেন,

—-” দু’জনে একসাথে সালাম করি?”

আমি হা করে উনার দিকে তাকালাম। উনি স্বাভাবিক কন্ঠেই বললেন,

—-” হা মার্কা রিয়াকশন দেওয়ার কিছু হয়নি! আজ থেকে আমরা যা করব দু’জনে বরাবর করব। তুমি যা করবে আমিও তাই করব। যদি তুমি আমার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করো তবে আমারও উচিৎ তোমার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা।”

উনার কথায় ঠিক কতটা স্বাভাবিক এবং কতটা হাইপার রিয়াকশন দিতে হবে আমি প্রায় ভুলেই গেলাম।বোবা চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে উনার মনের মধ্যে প্যাঁচ লাগানো কথা গুলোর জোট খোলার প্রচেষ্টা চালালাম। আখেরে ফলাফল শূন্য হতেই দাঁড়িয়ে গেলাম আমি। আমার দাঁড়ানো দেখে উনিও দাঁড়িয়ে গেলেন। কি বলব বুঝতে না পেরে হাতের কাছে যা পেলাম ধরিয়ে দিলাম উনাকে। উনি কিছুক্ষন হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,

—-” ছোট বেলায় বাংলা সিনেমাতে দেখতাম এসব! তুমিও দেখছি সিনেমার নায়িকাদের মতো শুরু করলে।”

উনি হাত থেকে দুধের গ্লাসটা নামিয়ে রেখে আমার হাত ধরে কাছে টেনে নিলেন। বিগলিত হেসে বললেন,

—-” বাকি সব কিছুও কি বাংলা সিনেমার মতোই করতে ইচ্ছুক?”

আমি লজ্জা পেয়ে মুখ লুকিয়ে নিলাম দু’হাতের মাঝে। উনি মৃদু হেসে আমার মুখ থেকে হাত নামিয়ে দিয়ে বললেন,

—-” আর লজ্জা পেতে হবেনা ম্যাডাম! ওখানে একটা শাড়ি রাখা আছে জলদি গিয়ে শাওয়ার নিয়ে এসো। তোমার এই ভারী শাড়িতে যেন আমারই দমব-ন্ধ হয়ে আসছে। তারউপর এতো ভারী ভারী গয়না! কি করে পারো বলোতো?”

আমি শাড়িটার দিকে একবার দৃষ্টিপাত করে বললাম,

—-” মেয়েরা সব পারে। যেখানে গোটা একটা সংসার সামলাতে পারে সেখানে এই ভারী গয়না পরে ঘুরে বেড়ানো আর কি ক*ষ্ট বলুন?”

উনি মৃদু হাসলেন। আমাকে যাওয়ার তাড়া দিয়ে বললেন,

—-” আই নো। এবার জলদি যাও!”

—-” আপনিও ফ্রেশ হয়ে নিন?”

—-” একসাথে হবো? আসবো তোমার সাথে?”

আমি হোঁচট খেয়ে তাকালাম। মেকি রা*গ দেখিয়ে বললাম,

—-” তাই বললাম নাকি?”

—-” তো কি বললে?”(শ*য়*তা*নি হাসি দিয়ে)

—-” ধ্যাৎ! কিছুনা।”

আমি আর দাঁড়িয়ে না থেকে দ্রুত পায়ে চলে এলাম উনার সামনে থেকে। পেছন থেকে উনার হাসির শব্দ ভেসে আসতে লাগলো। মানুষটা জ্বা*লি*য়ে মা*র*ল আমায়।

শাওয়ার নিয়ে শাড়ি পড়ে ভেজা চুল নিয়ে বের হলাম ওয়াসরুম থেকে। সারাদিনের সমস্ত ক্লান্তি এক গোসলেই যেন কেটে গেলো। এখন যে কতটা শান্তি লাগছে উনার কথায় ফ্রেশ না হলে বুঝতামই না। হাতে টাওয়াল নিয়ে উনার বিখ্যাত আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালাম। যতই বলি শান্তি লাগছে, এতো রাতে চুল ভিজিয়ে শাওয়ার নেওয়াটা মোটেই ভালো কথা নয়। জ্ব/র-টর না এলেই হলো। টাওয়াল হাতে চুল মুছতে মুছতেই উপলব্ধি করলাম ঘরের মধ্যে মাতাল করা ফুলের সুগন্ধ। সারা ঘরময় ফুলোর এমন সুবাসে ‘ম’ ‘ম’ করছে। আমি জোরে টেনে নিঃশ্বাস নিলাম। অদ্ভুত মাতাল করা গন্ধ। ফুলের সুগন্ধ নিতে নিতে মনে হলো উনি ঘরে নেই!

ভেতরটা ধ*ক করে উঠলো। ঘড়ির কাটা ২টার উপর স্থীর হয়ে আছে। ঘরের মৃদু আলোয় উনাকে কোথাও আবিস্কার করতে পারলাম না। ফ্রেশ হতে বলে কোথায় গেলেন উনি? আমি হাতের তোয়ালেটা ফেলে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে গেলাম। উনি ছোট্ট মোড়াটায় বসে আছেন গিটার হাতে। আজ আকাশে মস্ত বড় একখানা চাঁদ উঠেছে। সেই চাঁদের আলোতেই আকর্ষণীয় হয়ে ফুটে উঠেছে উনার মুখ। ব্যালকনিতে আসার পথে বড় থাইটার কাছে আমার উপস্থিতি টের পেয়েই ঘাড় ফেরালেন উনি। আমার দিকে তাকিয়ে উনি ঠোঁটের কোনের হাসিটুকু দীর্ঘ করলেন। হাত থেকে গিটারটা নামিয়ে রেখে ধীরপায়ে এগিয়ে এলেন আমার দিকে। তার চাহনিতে মাদকতা ভরপুর। গাঢ় চাহনিতে আমার ভেতরটা লন্ডভন্ড করে দিতে লাগলো।

আমি চোখ নামিয়ে নিলাম উনার থেকে। উনি উনার শেরওয়ানি পাল্টে সাদা শার্ট পরেছেন। শার্টের বেশির ভাগ বোতাম লাগানো থাকলেও বুক বরাবর তিনটা বোতামই খোলা! উনার সুঠাম দেহে শার্টটা টাইট হয়ে আঁটকে আছে। শার্টের লম্বা হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা। চাঁদের আলোয় উনার ডার্ক রেড ঠোঁট দু’খানা আরও কঠিন রূপ নিয়েছে। মাথার সিল্ক চুলগুলো চিকচিক করছে। সেই সাথে ঝিরিঝিরি বাতাসের তালে মৃদুভাবে ভাসছে।

উনি উঠে দাঁড়ালেন। একপা একপা করে এগোতে লাগলেন আমার দিকে। উনার ফেলা প্রতিটি কদমে আমার ভেতরটায় তোলপাড় করা বাড়ছে বৈ কমছেনা! উনি আমার একদম কাছে এসে দাঁড়ালেন। আমি নিঃশ্বাস আঁটকে ধরে উনার চোখে চোখ রাখলাম। উনি উনার শীতল হাত জোড়া তুলে আমার দু’গালে স্পর্শ করতেই কেঁপে উঠলাম আমি। বুকের ভেতরটার ধুমধাম ঢোল পেটানোর আওয়াজে বিচলিত হয়েই আকস্মিক জড়িয়ে ধরলাম তাকে! উনার বুকে মাথা রাখতেই অস্থিরতা কমার নাম করে আরও বেড়ে গেল উনার হৃৎস্পন্দনের শব্দে। আমার থেকেও যেন পাল্লা দিয়ে দ্রুত ছুটছে উনার হার্টবিট। উনি কিছু না বলেই দু’হাতে আগলে ধরলেন আমায়। আমার ভেজা চুল গুলোর মাঝে হাত চালিয়ে বললেন,

—-” চুল গুলো ভালো করে মুছলেনা কেন? ঠান্ডা লেগে জ্ব*র বাঁধতে কিন্তু সময় নিবেনা।”

আমি ছোট্ট করে জবাব দিলাম,

—-” আপনাকে হঠাৎ দেখতে না পেয়ে ভ*য় পেয়ে গিয়েছিলাম!”

উনি মুচকি হাসলেন বুঝি! আমাকে নিজের সাথে আরেকটু মিশিয়ে নিয়ে বললেন,

—-” তোমার অপেক্ষা করছিলাম!”

—-” এখানে কেন?”

—-” আমাদের মিলনের সাক্ষী চাঁদ থাকবে বলে!”

আমি লজ্জায় কুঁকড়ে গেলাম! জবাবে আর কিছুই বলতে পারলাম না উনাকে। উনি আমাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে আকস্মিক কোলে তুলে নিলেন। আমি অস্থির নয়নে উনার চোখে চোখ রেখে উনার শার্টের কলার আঁকড়ে ধরলাম। উনি মাদক হাসি হেসে রুমের ভেতর পা রাখতে রাখতে বলে উঠলেন,

—-” আমার বড় সাধ হয়,
একবার তোমার নিঃশ্বাস আটকায়ে দেখি,
তুমি ম*র,না আমি!
ইঁচালি-বিঁচালি শরীরের ভাঁজে ভাঁজে,
আ*গু*ন জ্বা*লা*য়ে দেখি,
তুমি পো*ড়,না আমি!”

ফুলে ফুলে সজ্জিত বিছানায় ভালোবাসার নতুন আবির্ভাব ঘটালাম দু’জনে। কিছু সুখ, কিছু বে*দ*নাকে সাক্ষী রেখেই আজ থেকে নতুন করে সূচনা হলো আমাদের অন্যরূপ ভালোবাসার। বুঝি এই সুখই শেষ নয়! সামনে হয়তো আরও অনেক অনেক ভালোবাসার নতুন রূপে বারবার সূচনা রটাতে থাকবে আমাদের এক মন এক প্রান। হাজার ভুল,হাজার ঠিককে একত্র করেই ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলবে দুজন দুজনকে।

#চলবে____________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here