প্রেয়সী পর্ব ৩৫

0
492

#প্রেয়সী ♥️(৩৫)
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা

৬৮.

গায়ে হলুদের পর্ব সারল রাত ঠিক ১১টা নাগাদ। বাড়ির সবাই আমাদের দুজনকে সারপ্রাইজ দিতে নাচ,গান এবং কবিতা আবৃত্তির অসাধারণ ব্যবস্থা করে রেখেছিলো। আমি এই বিষয়ে কিছুই জানতাম না! হঠাৎ করেই রাই এবং আরফান ভাইয়া একসাথে মিলে গেয়ে উঠলেন অসাধারণ এক গান। আর সেই গানেই তাল মিলিয়ে নাচ ধরল রিম্মি আপু আর নিতু আপু। রাহিয়ানও এই সারপ্রাইজের আংশিক ছিলো। তার বরাবর প্রসংশনীয় কবিতা দিয়েই সবার মন কাড়ল। বিশেষ করে আমার। উনার কবিতার লাইন গুলো এতোটা নেশা ছড়াচ্ছিল যে আমি সেই নেশায় নিজেকে মাতাল না করে পারছিলাম না।

বউমনি আর হিমাদ্র ভাইয়াও নাচের অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছে। আমি সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম যখন বড়-খালামনির এবং বড়-খালু গান গেয়ে একসাথে তালে তাল মিলিয়ে নেচেছেন। নিজেকে তখন বড্ড ভাগ্যবতী বলে মনে হচ্ছিলো। সত্যি বলতে এমন অসাধারণ পরিবার কয়জন মেয়ের ভাগ্য থাকে?

—-” কফি।”

রাহিয়ানের কন্ঠ পেয়ে চমকে উঠলাম! পাশ ফিরে তাকে দেখতে দেখতে সে অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বলল,

—-” কিছু ভাবছিলে? হঠাৎ চমকে উঠলে!”

আমি জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে উনার হাত থেকে একটা কফির মগটা নিয়ে বললাম,

—-” তেমন কিছু নয়। আপনি হঠাৎ এসে পড়লেন খেয়াল করিনি তাই একটু…”

উনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন আমার দিকে। ফিচেল গলায় বললেন,

—-” আর ইউ সিওর?”

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে দূর আকাশে দৃষ্টিপাত করলাম। তাঁরাদের মাঝে ঝলমলে আকাশ। আজ চাঁদের দেখা নেই! শুধু তাঁরাদের বিচরণ আজ।খন্ড খন্ড ঘন কালো মেঘের পাশ থেকেই উঁকিঝুঁকি দিয়ে যাচ্ছে শতাধিক তাঁরা। উনি আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে শীতল কন্ঠে বললেন,

—-” মন খারাপ?”

আমি দৃষ্টি ফেরালাম না। আকাশের পানে একই ভাবে তাকিয়ে থেকে বললাম,

—-” আজ বাবা থাকলে ভীষণ খুশি হতো বলুন!”

না তাকালেও বেশ বুঝতে পারলাম উনার শান্ত দৃষ্টি এসে ঠেকল আমার চিকচিক করা চোখের গোড়ায়। শুঁকনো ঠোঁটখানা জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে জোরপূর্বক হাসতে চেষ্টা করলেন উনি। যদিও চেষ্টা সফল হলো না। তাই আমার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে স্মিত হেসে এগিয়ে এসে ঠোঁট ছোঁয়ালেন আমার চোখের পাতায়। তার ছোঁয়া পেয়ে অনুভূতির জাতাঁকলে নিজেকে পিষে কেঁপে উঠলাম কিঞ্চিৎ। উনি আবারও পিছিয়ে গেলেন উনার জায়গায়। মুখে চমৎকার হাসি রেখে বললেম,

—-” আজ বাবা নেই কে বলল তোমায়? বাবা তো অলওয়েজ তোমার সাথেই আছে নীলাদ্রিতা। তুমি বাবাকে অনুভব করতে চাইলেই বাবা তোমার সামনে এসে দাঁড়াবে। কথা বলবে, হাসবে,বকবে,মজা করবে। তুমি যা চাও তাই করবে নীলুপাখি!”

আমার ভ্রু জুগল কুঁচকে এলো সঙ্গে সঙ্গেই। “নীলুপাখি”! আবার সেই নীলু! আমি উনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই উনি হেসে ফেললেন। হাসতে হাসতে বললেন,

—-” আই লাভ দিস নেইম নীলুপাখি!”

আমি ক্ষে*পা চোখে তাকিয়ে উনার বুকে কিল ঘুষি বসাতেই উনি “আউচ” বলেই আমার হাতটা চেপে ধরলেন। ব্যা*থা হজম করে লোকটা হেসেই চলেছে। তার হাসি দেখে আমার গায়ে জ্বা*লা ধরে যাচ্ছে যেন। আমি চোখ মুখ কুঁচকে রেখেই উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। খানিকক্ষণ বাদে উনি হাসিটাকে কোনোমতে চেপে বললেন,

—-” কফিটা কিন্তু ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে জান। টেস্ট করে বলো কেমন হয়েছে?”

আমি আর জবাব দিলাম না উনাকে। উনি আমার হাতটা ছাড়তেই আমি মা*র দেওয়ার ভঙ্গি করে ছোট্ট করে হাসলাম। উনি আমার মা*র থেকে বাঁচতে কফির মগটা তুলে ধরলেন। অতঃপর সেও হেসে উঠলেন আমার সাথে। দুজনে একসাথেই কফিতে চুমুক বসালাম। উনার তৈরি করা কফি বরাবরই প্রশংসনীয়। সেদিনের ভুলবশত খাওয়া উনার কফির স্বাদটা যেন আজও মুখে লেগে আছে। সেই একই স্বাদ। আমার সম্পূর্ণ মনোযোগ যখন কফিতে উনি আচমকাই আমার হাত থেকে কফিটা টেনে নিলেন উনার দিকে। আমি আচমকা ভড়কে গেলাম এমন কান্ড দেখে। আমার অবাক দৃষ্টি উনার মনোযোগ নষ্ট করতে পারল না। উনি আমার কফিটার সাথে উনার কফিটা পাল্টাপাল্টি করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। আমি কপাল কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতেই উনি চোখ টিপে বললেন,

—-” ভালোবাসা বাড়বে।”

আমি বিরস মুখে বললাম,

—-” একপাত্রে খেলে ভালোবাসা বাড়ে এভাবে এক্সচেঞ্জ করে নয়!”

উমি পড়লেন ভারী চিন্তায়। চোখেমুখে চিন্তাগুলো উঁকিঝুঁকি দিয়ে যেতেই উনি আশেপাশে তাকালেন। কিছু খুঁজছেন হয়তো। আমি প্রশ্ন সূচক মুখ করে উনার দিকে তাকাতে তাকাতে উনি একটা ছোট্ট টুলের উপর রেখে দিলেন নিজের কফিটা। আর তারপর দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে আমার কফিটা কেড়ে নিয়ে বললেন,

—-” আগে স্বামীর খাওয়া উচিৎ। এম আই রাইট?”

আমি বোবা চোখে তাকিয়ে বললাম,

—-” কফি কি করে একপাত্রে খাওয়া যায়?”

—-” একপাত্রে খেতে অসুবিধা হলে আমার ব্যক্তিগত পাত্র থেকে নিতে পারো। আই মিন টু স্যে…(উনার ঠোঁটের দিকে ইশারা করে)।”

আমি থতমত খেয়ে উনার থেকে দৃষ্টি নামিয়ে নিলাম। আমতাআমতা করে বলতে লাগলাম,

—-” আ্ আপনি তো ভারী অ*স*ভ্য লোক!”

উনি ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বললেন,

—-” বউয়ের সাথে অবশ্যই অ*স*ভ্য হতে হয় সুইটহার্ট। নয়তো প্রেমটা জমবে কেমন করে?”

—-” ধ্যাৎ!”

লজ্জায় বুকের ভেতরট থেকে ক্রমশই লাফিয়ে লাফিয়ে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে ছোট্ট হৃদয়খানা। লোকটার সামনে থাকাও যেন পাহাড় সমান লজ্জার মতো ঠেকছে। শাড়ির আঁচলে আঙ্গুল পেঁচাতে পেঁচাতে এখান থেকে যাওয়ারই ফন্দি আঁটছিলাম। হঠাৎই পেছনে থেকে হেঁচকা টান দিয়ে আমায় নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন উনি। আমি কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে নিলাম সঙ্গে সঙ্গে। উনি উনার ডানহাতে আমার কোমর চেপে ধরলেন। আমি ভ*য় পেয়ে কাঁপাস্বরে বলে উঠলাম,

—-” ক্ কফিটা কিন্তু গায়ে পড়বে! কি করছেন টা কি বলুনতো।”

উনি জবাব দিলেন না। হাতের বাঁধন শক্ত করেই আমাকে নিজের সাথে আরও শক্ত করে মিশিয়ে নিলেন। বা-হাত দিয়ে আমার পিঠে বিছিয়ে থাকা খোলা চুল গুলো বাম পাশের কাঁধে উঠিয়ে দিয়ে আবারও খানিক মিশিয়ে নিলেন আমায়। উনার তপ্ত শ্বাস আমার ঘাড়ের উপর আচড়ে পড়তেই আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো। উনি আমার ঘাড়ে নাক ঘসে ঘোর লাগানো কন্ঠ বললেন,

—-” আমাদের বিয়েটা আজ নয় কেন বলোতো?”

আমি কেঁপে উঠলাম। ঢোক গিলে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বললাম,

—-” কফিটা কি করলেন?”

উনি আগের ভঙ্গিতেই বলে উঠলেন,

—-” পাশাপাশি সাজিয়ে রেখেছি। দেখো?”

আমি ঘাড় ফিরিয়ে পাশে তাকাতেই দেখলাম ছোট্ট টুলটার উপরই জায়গা পেয়েছে আমাদের দুজনের কফি। হাতের মগটাও কখন ওখানে রাখলেন টেরই পেলাম না।

—-” আমরা এখানে রোমান্স করবো আর ওরা আলাদা থাকবে তা কি করে হয় বলো তো? তাই ওদেরও রোমান্স করার ব্যাবস্থা করে দিলাম।”

আমি লজ্জায় আরও কুঁকড়ে গেলাম। ইদানীং সব কিছুতেই এতো পরিমানে লজ্জা পাচ্ছি যে তা নিয়েও নিজেকে এখন ডিপ্রেসড লাগছে।

—-” হু বুঝেছি এখন ছাড়ুন আমায়! দেখুন খোলা ছাদে যেকোনো সময় যে কেউ এসে পড়তে পারে! আর এসে যদি আমাদের এভাবে দেখে ফেলে তাহলে কি ভাববে বলুন তো?”

উনি নড়লেন না এক ইঞ্চিও! আমাকে জড়িয়ে একই ভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন। উনার তপ্তশ্বাসে যে আমার করুন অবস্থা হচ্ছে তা কি করে বোঝাই তাকে। আমার ভাবনার মাঝেই উনি গাঢ় কন্ঠে আবৃত্তি করতে লাগলেন,

—-” তোর জন্য ফুল কুড়িয়ে নিলে,
সঙ্গে খানিক ভুল কুড়িয়ে নিলে,
ভুল করেই বললে ভালোবাসি,
তুই কি তবু হাসবি অমন হাসি?
একটুখানি ভুলের ছঁলে ছঁলে,
একটুখানি সুবাসমাখা ফুলে,
একটুখানি ডোবাই যদি ঠোঁট!
‘ঢের হয়েছে’,বলবি, ‘এবার ওঠ’!
তোর জন্য খানিক মায়া হলে,
বুকের ভেতর মেঘের ছায়া হলে,
বললে, ‘তোকে আমার ভীষণ চাই,
ভাববি কি তুই, সবটা অযথাই?
তোর জন্য ভীষণ কান্না পেলে,
তোর জন্য আস্ত আকাশ ফেলে,
তোর দুয়ারে দাঁড়িয়ে যদি রই,
বলবি কি তুই, আমি তোর নই?””

কবিতার শেষ লাইন বলেই উনি মুখ ডুবালেন আমার ঘাড়ে। ছোট্ট করে একটা ভালোবাসার পরশ একে মুখ তুলে কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললেন,

—-” বলবি কি তুই, আমি তোর নই?”

—-” না ভাই বলবে না! অনেক হয়েছে তোমাদের একান্ত, ব্যক্তিগত সময় কাটানো! এবার নীচে চলো।”

আকস্মিক অপ্রত্যাশিত কারোর গলা ভেসে আসতে ছিটকে পড়লাম দু’জনেই। উনি কয়েক কদম পিছিয়ে গেলেন আর আমি কয়েক কদম সামনে এগিয়ে গেলাম। আমাদের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে সবাই। বউমনির পাশেই মুখ টিপে হাসতে থাকা রাই আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে বউমনিদের পাশে এনে দাঁড় করালো। আর ওদিকে রাহিয়ানকে ঘিরে দাঁড়ালো আরফান ভাইরা। কথাটা অবশ্য বউমনির ছিলো। তাই হঠাৎই হিমাদ্র ভাইয়া নিজের ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে বলে উঠলো,

—-” আমি বলেছিলাম এখন ছাদে এসে কাজ নেই। ভাইটা আমার একটু নিরিবিলি সময় কাটাচ্ছিলো কিন্তু তোমরা? মহিলা মানুষ মানেই ঝামেলা বুঝলা!”

রাহিয়ান আঁড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে হঠাৎই চোখ টিপলেন। আমি গোলগোল চোখ করে উনার দিকে তাকাতেই পাশ থেকে বউমনি ক্ষে*পা গলায় বলে উঠলো,

—-” কি বললে? মহিলা মানুষ মানেই ঝামেলা? এখন ভইকে পেয়ে দল চেঞ্জ হু? এতক্ষণ যে হাতে পায়ে ধরছিলে ওদের জ্বা*লা*নো*র জন্য তখন?”

হিমাদ্র ভাইয়া বউমনির কথাগুলো সম্পূর্ণ অস্বীকার করার কায়দায় বলল,

—-” আমি? কখন? কবে? কোথায়? এই আবির, জিয়ান, রাফিন ভাই তোমরা বলোতো? আমি কি এমন কিছু বলেছি?”

হিমাদ্র ভাইয়ার কথাকে সবাই ঠিক প্রমাণ করতেই একসাথে বলে উঠলো,

—-” হ্যাঁ হ্যাঁ হিমাদ্র ভাইয়া ঠিক কথা বলেছে! একদম ঠিক কথা বলেছে!”

বউমনি যেন আকাশ থেকে হোঁচট খেয়ে পড়ল। হিমাদ্র ভাইয়ার দিকে ক্ষে*পা দৃষ্টিতে তাকাতে মেয়েদের গ্রুপে বাকিরাও জ্ব*লে উঠল। নিতু আপু, রাই, হিয়া আপু, রিম্মি আপু সবাই একসাথে জোর গলাতে বলে উঠলো,

—-” হিমাদ্র ভাইয়া মিথ্যে বলছে, মিথ্যে বলছে।”

মেয়েরা সুর দিয়ে উঠতেই এবার ছেলেরাও সুর দিয়ে বলে উঠলো,

—-” হিমাদ্র ভাইয়া সত্যি বলছে, সত্যি বলছে।”

বলা বাহুল্য দু’পক্ষের ছোটখাটো একখানা মিছিল শুরু হলো।

৬৯.

—-” আমি রাইকে বিয়ে করতে চাই!”

বিয়ে বাড়ির সোরগোল থেমে গেলো আরফান ভাইয়ার ছোট্ট কথাটিতে। আমরা সকলেই ভ*য়া*ব*হ বিস্ময় নিয়ে তার পানে চেয়ে আছি। কাজী সাহেব আমাদের সামনে বসে আছেন। বিয়ে পড়ানো হচ্ছিলো আমাদের। হঠাৎ কোথা থেকে তার উদয় ঘটল টের পেলেননা কেউই! আমাদের ন্যায় কাজী সাহেবও বিস্মিত চোখে তাকালেন। উনার বিভ্রান্ত মনে কেবল একটা কথাই থেকে থেকে প্রশ্ন তুলছে, বিয়ে কি একটা হবে নাকি দুটো?

—-” মানে?”

গম্ভীর মুখে প্রশ্ন ছুঁড়লেন রাহিয়ান। আরফান ভাইয়া নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থেকে আবারও বললেন,

—-” আমি রাইকে বিয়ে করতে চাই! আজ আর এক্ষনি!”

—-” তোর মাথা ঠিকাছে তো? কি বলছিস এসব?”

—-” হ্যাঁ আমি সবটা ভেবেই বলছি!”

আরফান ভাইয়ের মুঠোবন্দিতে রাইয়ের হাত খানা খুব শক্ত ভাবে আঁটকে আছে। যেন আলগা হতেই রাই পালাতে না পারে। রা*গে, অভিমানে রাইয়ের ফর্সা মুখটা র*ক্তশূণ্য হয়ে উঠেছে। আমি রাইয়ের দিকে বোবা চোখে তাকাতেই রাই তেতে উঠল আরফান ভাইয়ার উপর। নিজের হাতটা ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টায় লিপ্ত থেকে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,

—-” আমি আপনাকে বিয়ে করবো না! ছাড়ুন আমায়!”

আরফান ভাই নির্লিপ্ত চাহনি দিয়ে বললেন,

—-” তুমি না চাইলেও তোমায় আমাকেই বিয়ে করতে হবে রাই!”

—-” আপনি আমাকে জোর করতে পারেন না!”

—-” আমি তোমাকে ভালোবাসি রাই! আর সারাজীবন আমি তোমার সাথে কাটাতে চাই!”

রাই জ্ব*লে উঠে বলল,

—-” কিন্তু আমি তো আপনাকে ভালোবাসিনা! তাহলে আমি কেন আপনাকে বিয়ে করবো?”

—-” ভালোবাসো না কিন্তু ভালোবাসবে!”

রাহিয়ান স্টেজ থেকে নেমে গেলেন রাই এবং আরফান ভাইয়ার কান্ড দেখে! আমি অবাক চোখে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছি। হচ্ছে কি এখানে?

—-” আবির তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তুই রাইয়ের সাথে জো*র করতে পারিসনা!”

—-” আমি রাইয়ের সাথে জো*র করছিনা রাফিদ! আমি ওকে ওর ক*ষ্ট গুলো থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করছি মাত্র! তুই বল, অরিনের কঠিন ষ*ড়*য*ন্ত্রে এই মেয়েটা কেন এতো ক*ষ্ট পাবে? কোনো দো*ষ না করেও সারাক্ষণ নিজেকে অপরাধী ভেবে যাবে! রূপের মতো একটা কা-পুরুষের কাছে বারবার ফিরতে চাইবে! এগুলা কি অ*ন্যা*য় হচ্ছে না ভাই? আ্ আর ভালোবাসলেই তো সবটা নিজের করে পাওয়া হয়না তাই আমি ওকে বিয়ে করতে চাচ্ছি! আমিও কাউকে ভালোবেসেছি.. কিন্তু কখনও বলার সাহস করতে পারিনি! হয়তো কখনো বলতেও পারবনা!”

শেষ কথাটা বলেই আরফান ভাইয়া আমার দিকে তাকালেন। মনে হলো যেন কথাটা উনি আমাকেই বললেন! আমি উনার দিকে তাকাতেই দৃষ্টি ঘুরিয়ে ফেললেন আরফান ভাই। রাইয়ের হাতটা শক্ত করে ধরে রাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললেন,

—-” তাই আমি ওকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি!”

রাহিয়ান রাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,

—-” রাই? তোমার কি মত?”

রাই মুখ তুলে তাকালো। অ*প*রাধী গলায় আমতাআমতা করে কিছু বলতে নিলেই আরফান ভাইয়া বলে উঠলেন,

—-” রাই রাজি।”

—-” কিন্তু আবির…”

—-” আমি ওকে ভালোবাসি এটাই এনাফ রাফিদ! প্লিজ তুই আমাকে বাঁধা দিস না!”

রাহিয়ান আর বাঁধা দিলেন না আরফান ভাইয়াকে। উনি স্টেজে এসে আমার পাশে বসতে বসতে আরফান ভাইয়া আর রাইও উঠে এলো স্টেজে। কাজী সাহেবের পাশে দাঁড়াতেই বড় খালু চেঁচিয়ে বলে উঠলেন,

—-‘ এই কে কোথায় আছিস আরও দুটো চেয়ার এনে দে। আজ আমার দু’টো ছেলের একসাথে বিয়ে হবে।”

বড় খালুর উৎসাহে ঘেরা মুখটা দেখে আরফান ভাইয়া ছোট্ট করে হেসে উঠলো। হাসি মুখেই বড় খালুর উদ্যেশ্যে বলে উঠলো,

—-” থ্যাংক্যু আঙ্কেল।”

বড় খালু ভরসা চোখে তাকালেন। ততক্ষণে দুটো চেয়ার নিয়ে হাজির হলেন ফাহিম ভাইয়া আর জিয়ান ভাইয়া। চেয়ারে পাশাপাশি রাই আর আরফান ভাই বসতেই কাজী সাহেব বিয়ে পড়াতে আরম্ভ করলেন। লেখালেখির পর্ব সেরে রাহিয়ানের উদ্দেশ্য বলে উঠলেন,

—-” বাবা বলো, ‘আলহামদুলিল্লাহ কবুল’?”

কাজী সাহেব বলার প্রায় সাথে সাথে রাহিয়ান বলে উঠলেন,

—-” আলহামদুলিল্লাহ কবুল।

রাহিয়ান তিনবার কবুল বলতেই এনার কাজী সাহেব আমাকে বলে উঠলেন,

—-” বলো মা আলহামদুলিল্লাহ কবুল।”

আমিও নির্দিধায় বলে উঠলাম,

—-” আলহামদুলিল্লাহ কবুল।”

আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হতেই কাজী সাহেব রাই আর আরফান ভাইয়েরও বিয়ে সম্পন্ন করলেন। একসাথে আমাদের চারজনেরই বিয়ে সম্পন্ন হলো। রাইয়ের শুঁকনো মুখটার দিকে তাকিয়ে আমার অবচেতন মনটা বলে উঠলো,

—-” যা হয় ভালোর জন্যই হয়! রাই আর আরফান ভাইয়ের বিয়েটা হয়ে খারাপ হয়নি। মেয়েটার জীবন থেকে আর ভালোবাসা হারিয়ে যাওয়ার ভ*য় রইলো না। এবার হয়তো রাইকেও কেউ নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসবে।”

#চলবে____________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here