#প্রেয়সী♥️🥀
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্বঃ১৫
২৮.
—-” চা না কফি?”
আমি পানির বোতলটা হাতে নিয়ে খুলতে খুলতে বললাম,
—-” কনফিউজড!”
আদ্রিতা আপু মুচকি হাসলেন। চুলোর উপর কফির জন্য পানি চাপিয়ে বললেন,
—-” আমাকে নিয়েও কি নিধি একটু আধটু কনফিউজড?”
আমি আঁড়চোখে তাকালাম। মৃদুস্বরে বললাম,
—-” আমি ভেবেছিলাম তুমি রাহিয়ান ভাইয়ার বউ!”
আদ্রিতা আপু এবার বেশ শব্দ করেই হেসে উঠলো। পানিতে বলক উঠতেই নামাতে নামাতে বললেন,
—-” আমি হলাম হিমাদ্র সাহেবের বউ। রাহিয়ানের বড় চাচার দুই মাত্র ছেলের একমাত্র বউ। শুধু তারই বউ কিন্তু হু। আর বাকি সবার বউমনি। তোমার রাহিয়ান ভাইয়ারও। বুঝলে?”
আমি জিভ কেটে কপালে হাত চাপলাম। আদ্রিতা আপুর দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে তার মুখের ভঙ্গিমা দেখে সোজা হয়ে বসলাম। আমতাআমতা করে বললাম,
—-” আম রিয়েলি সরি আপু.. থুরি বউমনি! আসলে সেদিন তোমায় হঠাৎ দেখার পর কারোর না কারোর বউ বলেই মনে হচ্ছিলো। আর তারউপর আমরা রাহিয়ান ভাইয়ারই রুমে ছিলাম। তাই এমনটা ভেবে ফেলেছি। আরও একটা সিক্রেট কি জানো?”
বউমনি আমার দিকে প্রশ্ন সূচক মুখ করে তাকাতেই আমি আবারও বলতে লাগলাম,
—-” তুমি এতোই সুন্দরী যে আমি ভাবছিলাম, বাই এনি চান্স আমি যদি ছেলে হতাম তাহলে নির্ঘাত আমি তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতাম!”
কথাটা বলা মাত্রই বউমনি হাসতে লাগলো। তার হাসি দেখে এবার আমিও ফিক করে হেসে দিলাম। বলতে সমস্যা নেই, বউমনি সত্যিই ভীষণ সুন্দরী!
বউমনি নাক ডলে বড় করে নিঃশ্বাস ফেললো। অর্থাৎ হাসতে হাসতে তার দম ফুরিয়ে এসেছে। অতঃপর কফি,মিল্ক আর পানি সবকিছু একত্রে কফিমেকারে ঢেলে দিতে দিতে বলল,
—-” আমার বিয়ে হয় আরও চার বছর আগে। এদেশে নয় আমেরিকাতে হয়। আমার শশুড়-শাশুড়ি কিন্তু সব ওখানেই থাকেন। কেবল আমার সোয়ামিজি-ই ওখানে থাকতে পারলেন না। আসলে সে ছোট-মাকে ভীষণ ভালোবাসে তাই বাবা-মাকে ছেড়েই গত তিন বছর ধরে ছোট-মার কাছেই থাকছেন। আর তিনি যেহেতু আমার সোয়ামি সেই সূত্রে আমাকেও তাকেই সঙ্গ দিতে হচ্ছে।”
—-” তাই নাকি? বড়-খালামনির বড়ঝা আমেরিকাতে থাকেন? বাবা কি হাইফাই ব্যাপার গো তোমাদের! আমি তো বাপু বাপের জন্মে কখনো আমেরিকায় যায়নি। আর কখনো যাওয়ার স্বপ্নও দেখি না! কারন কখনো তো যাওয়াই হবে না। অযথা স্বপ্ন দেখে কি লাভ বলো?”
বউমনি সরু চোখে তাকালো। বলল,
—-” যাওয়া হবে না কি বলছো? তুমি ইচ্ছে করলেই যেতে পারো? আজকাল বিদেশ যাওয়া আহামরি কিছুনা।”
কথা কিন্তু বাস্তব। সত্যি দিন দিন দুনিয়াটা খুব সহজ হয়ে উঠছে। আজকাল কঠিন বলে আর কিছু হয় নাকি?
—-” সে দেখা যাবেক্ষন! তারপর বলো? তোমাদের কি লাভ ম্যারেজ নাকি এরেজ্ঞম্যারেজ?”
আমার প্রশ্নে বউমনি লজ্জা পেয়ে গেলো। কানের পাশে চুল গুঁজতে গুঁজতে বলল,
—-” লাভ ম্যারেজ।”
“লাভ ম্যারেজ” শুনতেই আমার মনটা নেচে উঠলো খুশিতে। আমি হাতের উপর ভর করেই কেবিনেটের উপর বেশ আয়েস করে করলাম। উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললাম,
—-” রিয়েলি! তাহলে বলো তোমাদের লাভস্টোরি? আমি শুনবো।”
বউমনি আমার কান্ড দেখে হাসতে লাগলো। আমি তার হাসিকে পাশে চাপিয়ে আবারও বললাম,
—-” জলদি বলো?”
” নিধি আপু আপনার ফোন বাজছে।”
উপর তালা থেকে লিয়ার কন্ঠ পেতেই মন খারাপ হয়ে গেলো আমার। এমন একটা মোমেন্টে কেউ কল দেয়? বেটার নির্ঘাত কোনো টাইমিং সেন্স নেই। ধপ করে কেবিনেট থেকে নেমে বউমনির দিকে তাকালাম। বউমনি মুচকি হাসছে। আমি অসহায় মুখে তাকাতে বউমনি বলে উঠলো,
—-” আগে কথা বলে এসো। তারপর না হয় আমাদের লাভস্টোরি তোমায় শুনাবো। জলদি এসো কেমন? কফি কিন্তু রেডি।”
আমি চোখ ঝাপটে মাথা দুলালাম। উপরের উঠে আসতে আসতে মনে মনে প্রশ্ন জাগলো, “কার কল হবে? হৃদের?”
রুমে ঢুকে দেখলাম বিছানা ফাঁকা পড়ে আছে। রিম্মি আপু হয়তো আমার ফোনের টোনেই উঠে পড়েছে। ইশশ, কি বাজে ব্যাপার। বেচারি কত আরামে ঘুমচ্ছিলো…
আমার ভাবনার ব্যাঘাত ঘটিয়ে বিছানার উপর আমার ফোনটা আবারও বেজে উঠলো। আমি বিরক্তি ভরা চোখে তাকালাম ফোনটার দিকে। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে ফোনটা হাতে তুলে নিতে হৃদের নামটা দেখে আরও একরাশ বিরক্তি চেপে বসলো আমার শরীর মন জুড়ে। হাজারও বিরক্তি আর অভিমান পাশে রেখেই ফোনটা কানে তুললাম আমি,
—-” লক্ষি? কেমন আছো তুমি? আঙ্কেল এখন কেমন আছে?”
আমি ফোনটা কান থেকে নামিয়ে নিলাম। বুক ভরে নিঃশ্বাস আসতেই টলমল চোখে তাকালাম ফোনটার দিকে। এই মানুষ টা সত্যি সত্যি আমায় ভালোবাসে তো? বাবার অসুস্থতা আজ দু’দিন ধরে আর সেটা হৃদ জানা সত্যেও আজ দু’দিন বাদে কল করে জানতে চাচ্ছে যে বাবা কেমন আছে? কি করে পারছে এতোটা নি/ষ্ঠু/র হতে?
আমি চোখ থেকে জল গড়াতে দিলাম না। ঢোক গিলে কান্না গুলো একপ্রকার গিলেই নিলাম। কঠিন স্বরে বললাম,
—-” এই মুহুর্তে তোমার কলটা আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিলো হৃদ।”
হৃদ থমকালো বুঝি। অসহায় কন্ঠে বলতে লাগলো,
—-” আমার ভীষণ চাপ যাচ্ছে নিধু! আমি চেয়েও তোমায় একমিনিটের জন্য কল দিতে পারছিনা। বিশ্বাস করো আমার ভীষণ চাপ যাচ্ছে! ফ্যামিলির কারোর সাথেই আমি কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না। লাস্ট ফিফটিন ডেস যাবৎ। এখন তুমিই বলো না আমি কি করবো?”
—-” কি এমন ব্যস্ততা তোমার?”
হৃদ আবারও থমকালো। আমতাআমতা করে বলল,
—-” প..পড়াশোনার চাপ। ফাইনাল চলছে তুমি তো জানো?”
—-” মিথ্যে বলছো তুমি।”
আমার শক্ত কথায় হৃদ বারবার দমে যেতে লাগলো। আমি আবারও বলে উঠলাম,
—-” কল দিতে চাচ্ছো না ইট’স ওকে হৃদ। আমার তাতে বিন্দু মাত্র সমস্যা নেই। আমি তোমায় কল দিলে তুমি কল তুলো না সেটাও ঠিকাছে। কিন্তু তাই বলে মিথ্যে বলতে হবে? তুমি আমায় মিথ্যে বলছো আমি তো ভাবতেও পারছিনা! তুমি বলছো তোমার নাকি ফাইনাল চলছে? কেবল কি তোমারই ফাইনাল চলছে? কই রাহিয়ান ভাইয়ার তো ফাইনাল চলছে না, তোমার বন্ধু ইরহাম ভাইয়ার তো ফাইনাল চলছে না! সেতু আপু, রুবিনা আপু, সাদি ভাইয়া এদের কারোরই তো ফাইনাল চলছে তবে তোমার একার কি করে ফাইনাল চলে? জবাব দাও?”
হৃদ থতমত খেয়ে কলটা কেটে দিলো। আমি ফুস করে নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম! হৃদের ব্যাপার টা যে কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না আমার। ও জানে আমি মিথ্যে একদম সহ্য করতে পারিনা তবুও কেন মিথ্যে বলছে? কি এমন দরকার পড়লো যে ওকে মিথ্যে বলতে হচ্ছে?
গলা ফাটিয়ে চেঁচাতে চেঁচাতে ফোনটা আবারও বেজে উঠলো। আমি ফোনটার দিকে না তাকিয়েই উঠে বসলাম। টেনে বার কয়েক বড় বড় দম ফেলে নিজেকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা চালালাম। উদ্দেশ্য কলটাকে সম্পূর্ণ রূপে উপেক্ষা করা। কিন্তু হাতে গোনা দশ সেকেন্ডের বেশিও নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলাম না! হৃদের নামটা এবার না পড়েই কানে তুললাম ফোনটা। ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই বলে উঠলাম,
—-” তুমি যদি আবারও ভেবে থাকো আমায় মিথ্যে বুলি দিয়ে ভোলাবে তাহলে ভালোতে থেকেই কল টা কেটে দাও প্লিজ! অন্যথা তুমি আর কখনো আমার সাথে কথা বলা তো দূর আমার মুখ অব্দি দেখতে পাবেনা!”
—-” হাউ কিউট! একদম আপনি সোজা থেকে তুমি তে? বিলিভ মি নীলাদ্রিতা আমি আমার কানকেও বিশ্বাস করতে পারছি না। এই একটা চিমটি কাটবে আমায়?”
থতমত খেয়ে ফোনটা হাতে তুলে নিলাম আমি! এটা কে? নাম্বারটায় চোখ বুলালে চিনতে পারলাম না! কিন্তু ভয়েস টা…. আরে ইয়ার এটা তো সেই অপরিচিত লোকটা!
—-” হ্যালো… হ্যা…লো? হ্যালো? নীলাদ্রিতাআআআ….”
ফোনটা পূনরায় কানে উঠাতে উঠাতে উনার চেঁচানো কন্ঠ কানের পর্দায় এসে বারি খেতেই আমি ঝাঁঝ মেশানো গলায় বলে উঠলাম,
—-” ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছেন কেন?”
কথাটা বলতেই ওপাশ থেকে কাশির শব্দ ভেসে আসলো। কাশতে কাশতে বেচারা কিছু বলতে নিলেই আমি আবারও অ/গ্নিমূ/র্তি রূপ নিয়ে বললাম,
—-” যক্ষা রোগীদের চিকিৎসা কেন্দ্র নীলাদ্রিতার নাম্বার নয়। নেক্সট টাইম আমাকে কল করার আগে অবশ্যই চিকিৎসা কেন্দ্রে কল করে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়ে আসবেন।”
এটুকু বলেই কল টা উনার মুখের উপরই কেটে দিলাম আমি। হৃদের রা/গ টা অপরিচিত মানুষ টার উপরই পুরালাম। কি করবো? লোকটা মাঝেমধ্যে কই থেকে যে উদয় হয় আর আমাকে জ্বা/লি/য়ে মা/রে কে জানে?
ক্ষিধেয় যেন পেটের মধ্যে ইঁদুরের পঞ্চম বি/শ্বযু/দ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে! না, আর এখানে বসে থেকে এদের সাথে ঝ/গ/ড়া করে বকাবকি করা চলবে না। আগে জরুরি ভিত্তিতে কিছু খাওয়া দরকার। নীচে তো বউমনি অপেক্ষা করছে আমার জন্য। আমি বরং নীচেই চলে যাই। ফোনটা পাশে রেখে উঠতে যাবো ঠিক তখনই আবারও কল আসলো অপরিচিত লোকটার। বেটার শিক্ষা হবে না জীবনে! এবার তো উনাকে বকা দিয়ে উনার পুরো গুষ্ঠি পরিবার উদ্ধার করবো। হাতে তুলে ফোনটা কানে চেপে কিছু বলতে যাবো তার আগেই ওপাশ থেকে তার মোহনীয় স্বরটা জাদু ছড়ালো আমার চারিপাশে। সাথে কিছু মন জুড়ানো বাক্য,
—-” তুমি, বৈশাখী ঝড়ো হাওয়ায় লণ্ডভণ্ড
অখণ্ড প্রকৃতির প্রশমন~
তুমি, নিপুণ হাতে গড়ে তোলা
অবুঝ মনের সবুজ বাগিচা |
তুমি, ছোট্ট শিশুর প্রাণচঞ্চল
অবিকল মায়াবী হাসি ~~
তুমি,তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা
জৈষ্ঠ্যের রসালো ফল।
তুমি, তুমি প্রেয়সী আমার প্রেয়সী।”
🥀 প্রেয়সী (অংশবিশেষ) 🥀
২৯.
ভেবে ভেবে হয়রান হয়ে মাথার গিলু অব্দি গুলিয়ে ফেলছি আমি! তবুও বুঝে উঠতে পারছিনা কে এই আজনাবি। ফাল্গুন মাস। চারপাশের সমস্ত গাছপালা তার শরীরটাকে উজাড় করে তার শরীরের প্রত্যেকটা পাতা ঝড়িয়ে দিচ্ছে। কতটা সুন্দর সেই মনোরম দৃশ্য। এসব অহেতুক ভাবনা বাদ দিয়েই মন ডুবালাম প্রকৃতিতে। গার্ডেনটা শুকনো পাতা গুলো দিয়ে ভরে আছে। আমি তার মধ্যে দিয়েই হাঁটছি। সময় টা এখন খুব সম্ভবত ৪টা কিংবা ৫ টা। ঘন্টা দুয়েক আগেই দুপুরের খাবার খাওয়া হলো। খেয়ে দেয়ে ঘন্টাখানিক রেস্ট নিয়েই বের হয়ে এলাম এখানে ৷ এ-বাড়িতে আসা মাত্রই এই গার্ডেনটা নিয়ে আমার খুব কৌতুহল। কখন এখানে আসবো আর কখন ঘুরেফিরে সবটা দেখবো সেই ভাবনাতেই আঁটকে ছিলাম।
—-” নিধি? কি করছো এখানে একা একা?”
পেছন থেকে পুরুষালী কন্ঠ পেয়ে ঘুরে তাকাতে দেখলাম আরফান ভাইয়া ওরফে আবির ভাইয়া দাঁড়িয়ে। আমি স্মিত হেসে জবাব দিলাম,
—-‘ জ্বী। এই তো তেমন কিছুই না ঘুরেফিরে দেখছিলাম সব।”
উনিও হাসলেন আমার ন্যায়। বড় বড় ধাপ ফেলে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আশেপাশে দেখতে দেখতে বললেন,
—-” আন্টিদের গার্ডেনটা বরাবরই মা/রাত্মক সুন্দর। আমার ভীষণ পছন্দের!”
—-” সত্যিই মা/রাত্মক সুন্দর। আমার তো সবটা দেখে চোখ ধাঁধিয়ে আসছে বারবার। আমি তো তখন থেকে এটাই ভাবছি যে কারোর বাড়ির গার্ডেন কি করে এতোটা সুন্দর হতে পারে?”
আরফান ভাইয়া আমার পেছনের দিকে সুইমিংপুলটার দিকে ইশারা করে বলল,
—-” সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে এই যে সুইমিংপুলটা।”
আমি সুইমিংপুলের নীল পানিতে তাকিয়ে বললাম,
—-” একদমই তাই।”
—-” তারপর বলো, বাবা এখন কেমন আছেন? কথা হয়েছে বাবার সাথে?”
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।
—-” বড় খালামনির সাথে কথা হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। বাবা আগের থেকে বেটার। আজ রাতে বাবার লাস্ট মেজর অপারেশন টা হবে। ডক্টর বলেছেন অপারেশন সাকসেসফুলি হতেই বাবা ঠিক আগের মতো সুস্থ হয়ে যাবে।”
—-” গ্রেট নিউজ। সত্যি বলতে তোমার বাবাকে নিয়ে সেদিন থেকেই ভীষণ টেনশনে ছিলাম! ভেবেছিলাম তোমার নাম্বারটা নিয়ে নিবো। মাঝেমধ্যে কল করে না হয় তোমার বাবার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিলাম?”
আমি আঁড়চোখে আরফান ভাইয়ের মুখের এক্সপ্রেশন দেখলাম। নাহ্, স্বাভাবিকই আছেন। কোনো রকম
শ/য়/তা/নি ছাপ নেই মুখে। আর থাকারও কথা নয়। কেননা সে রাহিয়ান ভাইয়ারই তো ফ্রেন্ড।
আমি মৃদু হেসে বললাম,
—-” হ্যাঁ নিশ্চয়ই।”
আমার সহমত পেতেই উনি ফোন বের করে আমার সামনে ধরলেন। মুখের হাসিটা খানিক প্রশস্ত করে বললেন,
—-” এই নাও এটায় তোমার নাম্বারটা তুলে একটা মিসড্ কল দিয়ে রাখো!”
আমি ঘাড়টা হালকা কাত করে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আবারও বলে উঠলন তিনি,
—-” তোমার ফোন নেই সাথে?”
আমি আমার শূন্য হাতের দিকে একনজর তাকিয়ে বললাম,
—-” না রুমে রেখে এসেছি।”
আমার জবাবে উনি হতাশ কন্ঠে বললেন,
—-” ওকে নো প্রবলেম। আমার নাম্বারের লাস্ট টু ডিজিট হলো সিক্স, নাইন। সেভ করে নিও?”
আমি জোরপূর্বক হেসে মাথা দুলালাম। ফোনটা উনার হাতে তুলে দিয়ে বললাম,
—-” সেদিন আপনি আর রাহিয়ান ভাইয়া বাবার জন্য অনেক কিছুই করেছেন। তার জন্য আপনাকে বিশেষ একটা ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ ছিলো। কিন্তু পরে তো আপনার আর দেখাই মিলল না!”
আরফান ভাই স্মিত হেসে বললেন,
—-” ধন্যবাদ দিলে তো আমি শুনছি না!”
আমি উনার কথার আগাগোড়া বুঝতে না পেরে বোকা গলায় প্রশ্ন করলাম,
—-” জ্বী… মানে?”
আমার প্রশ্নের জবাবে আরফান ভাই মুচকি হাসলেন। মাথা চুলকে মিনমিনে গলায় বললেন,
—-” তোমায় দেখলেই আমার মনটা উৎসাহ নিয়ে বলে উঠে তোমার হাতের রান্নার সাধ অসাধারণ হবে। আর আমি একদিন তোমার হাতের রান্নার সাধ নিতে চাই। প্লিজ, না করো না।”
আমি শুঁকনো মুখে তাকালাম। গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম,
—-” হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।”
—-” ফ্রী-ই আছো না? চলো না সামনের রোডটা একটু হেঁটে আসি?”
—-” অ্যা?”
—-” সামনের রোডে কিছুদূর যেতেই একটা টি-স্টল আছে… চলো যা….”
আরফান ভাইয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই কোত্থেকে উদয় হলেন রাহিয়ান ভাইয়া। কোনো কথা বার্তা না বলেই আমার হাতটা টেনে নিয়ে বাসার দিকে হাঁটা ধরলেন। প্রথম দফায় উনার মুখটাও দেখতে পেলাম না। পরক্ষণেই উনার রা/গা/ন্বি/ত মুখটা দেখে ভড়কে গিয়ে পেছনে ফিরে তাকালাম। আরফান ভাই হা করে দাঁড়িয়ে আছেন। রাহিয়ান ভাইয়া আরও দুই কদম এগোতে পেছন থেকে আরফান ভাইয়া ডেকে উঠলেন,
—-” রাফিদ, নিধিকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?”
রাহিয়ান ভাইয়া জবাব দিলেননা আরফান ভাইয়ার কথার। আরফান ভাইয়ার মতো আমারও একই প্রশ্ন! আমাকে নিয়ে উনি এভাবে করে কোথায় যাচ্ছেন?
কিন্তু উনার আ/গ্নে/য়/গি/রি/র মতো জলজল করা মুখটার দিকে তাকিয়ে আর জিজ্ঞেস করার সাহস পেলাম না আমি।
#চলবে____________________