#প্রেয়সী♥️🥀
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব-০৮
১৫.
—-“এটা কি করলি তুই!”(মৃদু চেঁচিয়ে)
আমার রিয়াকশনে রানির মুখের হাসিটা কিছুটা মিইয়ে এলো। মুখটা ফ্যাকাশে করে বলল,
—-” সব দাগ কি উঠবার চায় কন দেহি! তয় আমি উঠাইবার একটা চেষ্টাও হাত ছাড়া করিনাই! এক্কেবারে ঘইষা ঘইষা সব দাগ উঠায় দিছি।”
আমি শার্ট টা রানির সামনে তুলে ধরে একবুক কষ্ট নিয়ে বললাম,
—-” তাই বলে এভাবে? পুরো শার্টটা কেচে কেচে আলুভর্তা করে তারপর জায়গা জায়গা থেকে ছিঁড়ে কুটিকুটি করে তো তোকে দাগ উঠাতে বলিনি রে বোন! তুই তো আমায় ম/রা/র আগেই মে/রে ফেললি!”
রানি প্রথমে খানিক উৎসাহ নিয়ে তাকালো। পরক্ষণেই কিছুটা নিভে গিয়ে কালো মুখ করে বলল,
—–” ম/রা/র আগে মা/র/ছি! ক্যামতে? আফনে কিয়া কন আফা?”
ধপ করে বিছানায় বসে পড়লাম আমি। বোধগম্য হলো রানিকে সিংহ মামার শার্টটা দেওয়াই হয়েছে সবচেয়ে বড় পাপ! বুক ফেটে কান্না আসছে আমার। গতকাল উনার এই শার্টে সামান্য কফি পড়ায় উনার সো কল্ড ফ্রেন্ডরা যা করলো আমার সাথে! তাতে করে আজ তারা এই ছিঁড়ে ফাটা শার্টের এমন করুন দশা দেখলে আমায় ঠিক দশতালা বিল্ডিংয়ের উপর থেকে ছুঁ/ড়ে ফে/লবে। পারলে তো এই শার্টের ন্যায় উত্তম মাধ্যম দিয়ে আমায় আলুভর্তা করে দিবে।
—-” আফা, আফ্নের কওনের পরই কিন্তু আমি এতো ভালা কইরা ধুইছি শার্ট টা। এবার আমারে কি জানি গিফোট দিবেন কইছিলেন। হেগুন দিবেন না?”
রানি আবারও উৎসাহিত কন্ঠে বলে উঠলো কথা গুলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললাম,
—-” শার্ট টা ফেরত দেওয়ার মতো অবস্থায় তো রাখলিনা! কিন্তু সেখানে গিয়ে সিংহ মামার থাবা থেকে বাঁচার জন্য অন্তত গর্জনটা সহ্য করতে হবে। আর সবশেষে যদি বাড়িতে ফিরে আসতে পারি তবে শিওর তোর জন্য কোনো গিফো… আই মিন গিফ্ট নিয়ে আসবো।”
রানি খুশিতে নেচে উঠলো। দুই তিনটা লুঙ্গি ডান্স মে/রে ঘর থেকে বিদায় নিলো। ওর আর কি? ওর ধৌতকরণের কাজ ছিলো ও করে দিয়েছে। কপাল তো আমার পো/ড়া। রাফিদ ভাইয়াকে ফেস করতেই মন সায় দিচ্ছে না। কি করে গিয়ে বলি,
“ভাইয়া আপনার শার্ট টা আমার বাসার কাজের মেয়ে রানি ভালো করে ধোয়ার তাগিদে ঘর মোছার উপযুক্ত করে ফেলেছে। এই নিন আপনার শার্ট! গায়ে তো আর দিতে পারবেননা! ভালো হবে বাসায় গিয়ে বাসার কারোর হাতে তুলে দিয়ে বলবেন, ঘর মোছার জন্য একজন গিফ্ট করেছে। যদিও আহামরি কোনো উপহার নয়। তবুও, উপহার তো, ফেলতে পারিনি। তাই নিয়ে এসেছি।”
নিজের এমন আহাম্মক মার্কা ভাবনায় নিজেই বিরক্ত হয়ে উঠলাম। শার্ট টার দিকে তাকালেই মনে হয় কেউ যেন পিঠের উপর ধপাধপ্ করে কিল-ঘুষি বসাচ্ছে। মনটা ছটফট করছে। এই শার্ট নিয়ে কিছুতেই রাফিদ ভাইয়ার মুখোমুখি আমি হতে পারবো না। অসম্ভব! শার্টটা হাতে নিয়েই উঠে গেলাম আলমারির কাছে। আলমারি টা খুলে ভেতরে মায়ের গয়নার বাক্সটার পাশেই সযত্নে তুলে রাখলাম তার শার্টটা। থাক এখানে। একটা শার্ট-ই তো। দরকারে হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়ে নিবো এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কাজের জন্য।
বুক ভরে নিঃশ্বাস আসলেও শান্তি নিয়ে ফেলতে পারলাম না। মনটা মানতে পারছেনা রানির আহাম্মকি মার্কা কাজটা। তবুও মানাতে হবে। যা হয়ে যায় তা তো আর বদলানো সম্ভব নয়। আলমারি দরজাটা বিষন্ন মন নিয়েই চাপিয়ে দিলাম। বিছানার সামনে এসে সময়টা তে চোখ বুলাতেই মনটা কেঁপে উঠলো। ৭ টা অলরেডি বেজে গেছে। আর মাত্র আধঘন্টা বাকি। এক্ষনি বের না হলে আরও কেলেঙ্কারি। দ্রুত পায়ে পুরো রুম একবার ঘুরপাক খেলাম। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ওড়না আর চুল ঠিক করতেই মনটা আরেকদফা কেঁপে উঠলো। ডান হাতের সেই অদৃশ্য তিলটা এখন দৃশ্যমান। মনটা হাই ভোল্টেজে কেঁপে উঠলো। ছটফট করতে করতে মস্তিষ্ক বলে উঠলো,
” সামনে কি অপেক্ষা করছে? ভালো কিছু নাকি খারাপ কিছু?”
১৬.
বড় বড় অক্ষরে ফোনের স্ক্রিনে ভাসছে 7ঃ43 AM। আত্মচিৎকার পেড়ে উঠলো মনটা। কত সময় লেট করে ফেলেছি। ক্যানটিনের পাশেই অপেক্ষা করছি রাইয়ের জন্য। মেয়ে টা আদৌও কি অর্ধেক পথও আসতে পেরেছে নাকি পারেনি? মনটা দোমনা করছে। একবার মনে হচ্ছে রাইয়ের অপেক্ষা না করেই রাফিদ ভইয়ার সামনে যাই আবার মনে হচ্ছে অসম্ভব! সিংহ মামার তাকানোতেই আমি জ্ঞান হারাবো। আর যখন উনি শুনবেন আমি উনার শার্ট টার এমন দশা করেছি তো নির্ঘাত গ/র্দা/ন কে/টে নিবেন। রাইয়ের কার্যকলাপে তো এটাই মনে হচ্ছে ও আসতে আসতে কম করে হলেও আরও ঘন্টা খানিক লাগাবে। কিন্তু আমার হাতে তো এতো সময় নেই। সময় অলরেডি ওভার। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে যতটুকু সম্ভব হলো টেনে বিশাল আকারের এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। রাফিদ ভাইয়াকে আমাকেই ফেস করতে হবে। রাই যে আজ আর আসবে না তা বোঝা হয়ে গিয়েছে আমার।
সময়ের দিকে তাকাতে গিয়ে কতক্ষণ রকেটের গতিতে ছুটি আবার রাফিদ ভাইয়া র/ক্ত/চক্ষুর চাহনির কথা মনে আসতেই থমকে যাই। ভ/য় আর জড়তা রীতিমতো পিষে ফেলছে আমায়। এতোটা ভ/য় জীবনে কোনো জিনিসে কখনো পাইনি! আজ পেতে হচ্ছে। রাফিদ ভাইয়াকে কি জবাব দিবো ভাবতেই ভ/য়ে ম/রে যেতে ইচ্ছে করছে।
—-” এখন লাইব্রেরীতে প্রবেশ করা যাবে না। ৮ টার আগে লাইব্রেরীতে প্রবেশ নিষেধ।”
বিশাল আকারের গোঁফ লোকটার মুখে। গলার স্বরটা অনেক মোটা। কালো করে রোগা পাতলা। মোটা একটা লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। আমাকে দেখতেই লাঠিটা বাড়িয়ে দিলো কয়েক হাত। গম্ভীর স্বরে কথা গুলো বলে আবারও নামিয়ে নিলেন লাঠিটা। আমি থমকে গিয়ে চমকে তাকালাম। একেই ভ/য়ে ছিলাম। তারউপর ভ/য়ে/র চোটে জ্ঞান হারানোর জন্য উনার লাঠিটাই যথেষ্ট ছিলো। এভাবে মোটা স্বরে কথা বলে আরও ভ/য় না দেখালেও পারতো। শুকনো গলায় ঢোক গিলে আমতাআমতা করতে লাগলাম। কিছু একটা বলতে চাচ্ছি কিন্তু বলতে পারছিনা। কথা গুলো পেটে আসছে কিন্তু মুখে আসছেনা। উনি বোধকরি আমার হাবভাবে বেশ মজা পাচ্ছেন। গোঁফ নাড়িয়ে আবারও বলে উঠলেন,
—-” লাইব্রেরীতে কেউ নেই। একা একা এখানে আসবেন না। আর সময়ের আগে তো আরও নয়।”
আমি মৃদুস্বরে বললাম,
—-” র..রাফিদ ভাইয়া ডেকেছেন।”
লোকটা ভ্রু কুঁচকালো। হাতের কালো ঘড়িটায় সময় দেখে বললেন,
—-” ভেতরে কেউ নেই। আপনি আসতে পারেন।”
—-” না না আছেন তো। ভেতরে রাফিদ ভাইয়া আছেন। আপনি উনাকে একটু ডেকে দিন আমি উনার সাথে কয়েক মিনিট কথা বলেই চলে যাচ্ছি।”
লোকটা চোখ মুখ কুঁচকে তাকালেন। ভারী বিরক্ত গলায় বললেন,
—-” আমি এখানে নাইট ডিউটি করি। রাত ১২ টা থেকে সকাল ৮ টা অব্দি আমার ডিউটি। তাই এখানে কেউ আসলে বা গেলে অবশ্যই আমার চোখের সামনে থেকে আসা যাওয়া করতে হবে। আর গত ৬,৭ ঘন্টায় এখান থেকে কাউকে আসতে যেতে আমি দেখিনি।”
আমি গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়লাম। রাফিদ ভাইয়া ভেতরে না থাকলে তো আলহামদুলিল্লাহ। কেননা,উনি পৌঁছানোর আগেই আমি আসতে পেরেছি সেই অনেক। তাই যে করে হোক আমাকে এর ভেতরে যেতেই হবে। এই মোটাস্বর আঙ্কেলের নজর পেরিয়েই যেতে হবে আমায়। আমার ডান সাইডের সরু রাস্তা ধরে বড় একটা সিঁড়ি আছে। ওখান থেকে বেশিরভাগ স্টুডেন্টসরা লাইব্রেরীতে আসে। আমার চোখ জোড়া ছটফট করতে করতে সেদিকে চোখ পড়তেই যেন মাথার মধ্যে লাল বাত্তি জ্বলে উঠলো। মুখে একখানা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে উত্তেজনা নিয়ে বলে উঠলাম,
—-” আস্তাগফিরুল্লাহ!!”
লোকটা বিস্মিত চোখে আমার দিকে তাকালেন। আমি উনার বিস্ময়টাকে আরেকটু দীর্ঘ করতে হা করে তাকালাম সেদিকে। অবাকের উপর অবাক হওয়ার ভান করে বললাম,
—-” ছি ছি।”
লোকটা আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে তেমন কিছুই বুঝতে পারলেননা। কেননা, ঐ পাশের কিছু উনাকে দেখতে হলে উনার জায়গা পরিবর্তন করে আমার পাশে এসে দেখতে হবে। আর যা উনি আপাতত চাচ্ছেন না। তাই আমার মুখ থেকেই কথা বের করার তাগিদে বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠলেন,
—-” কি, কি? কি হয়েছে? কি দেখছো ওদিকে?”
আমি মুখে হাত চেপে বললাম,
—-” ঐ সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে স্টুডেন্টসরা এসব করে। শুনেছি ঐদিকে তো সিসিটিভি ক্যামেরাও নেই। ইশশ, দেখেছেন আঙ্কেল ঠিক এই কারনেই দেশটা আজ রসাতলের মোড়ে দাঁড়িয়ে।”
—-” কি বলছো? কে কি করছে ঐ দিকে? কি দেখছো তুমি?”
আমি হাত তুললাম ডানপাশের দিকে। অসহায় কন্ঠে বললাম,
—-” আপনি চাইলেই দেশটাকে রসাতলের মোড় থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আঙ্কেল। দেখুন ওখানে ওরা দাঁড়িয়ে কি করছে। ছি ছি আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছিনা!”
লোকটা আর স্থীর থাকতে পারলেননা। আমাকে অতিক্রম করে লাইব্রেরীর দরজা ছেড়ে এপাশে এসে দাঁড়ালেন। আমি সেদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উত্তেজিত স্বরে বললাম,
—-” আরে আরে এক্ষনি নেমে গেলো। আঙ্কেল চলুন চলুন। আমরা এখন গেলেও ওদের ধরতে পারবো। আসুন।”
আমার বলতে দেরী হলেও আঙ্কেলের সেদিকে দৌড় দিতে দেরী হলো না। আমাকে রেখেই উনি দৌড়ালেন সেদিকে। আমি শব্দ করে হেসে ফেললাম। হাত ঘড়িত সময় দেখেই বড় বড় ধাপ ফেলে লাইব্রেরী তে ঢুকে পড়েলাম। বাইরে সূর্যের আলো ঝলমল করলেও ভেতরটা এখনো অন্ধকার। পুরো লাইব্রেরী জুড়ে অসংখ্য কৃত্রিম লাইটের ব্যবস্থা থাকলেও নিয়ম মেনে সবই নিভে আছে। শুধু জলছে কিছু ড্রিম লাইট।
আর তাতেই আবছা আবছা বোঝা যাচ্ছে কিছুটা। পা টিপে টিপে একদম লাইব্রেরীর শেষ প্রান্তে চলে এলাম। এখানে সচারাচর কেউ আসেনা। তাই আপাতত এখানে থাকাটাই মঙ্গলকর মনে হচ্ছে। হাতের বাম পাসে ছোট্ট একটা জানালাও আছে। সেটা দেখেই বুক চিঁড়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস বের হয়ে আসলো। আশেপাশে তাকিয়ে কারোর হদিশ চালালে ফলাফল শূন্য মিলল। মনে প্রশান্তি নিয়ে সতর্কতার সহিত জানালাটা খুলে দিতেই ভূতের মতো ভেসে উঠলো কারোর মুখ। ভেতরটা কাঁপিয়ে উঠতেই গগনবিদারী চিৎকার দেওয়ার সমস্ত পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে ফেললাম। হা-ও করলাম। কিন্তু শব্দ হলো না কোনো। মুখে কারোর হাত পড়তেই বুক শেল্ফের সাথে ধাক্কা খেয়ে নীচে পড়লাম।
অনুভব হলো আমার সাথে টান খেয়ে হয়তো বুক শেল্ফটা আমার উপরই পড়েছে! নীচে পড়ে আবারও এক গগনবিদারী চিৎকার দেওয়ার কায়দা হলো। কিন্তু এবারও আমায় নিরাশ হতে হলো। যেখানে ভেবেছি ব্যাথা পেয়ে মাথা ফেটে যাওয়ার জোগাড় সেখানে কেবল মাথার নীচের কারোর কোমল হাতের ছোঁয়া মিলল।
চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিয়ে আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলাম। আমার ধারনা মতে এতো বড় বুক শেল্ফটা আমার উপর পড়লে আমার বাঁচার কথা না। কিন্তু পরক্ষণেই গলায় কারোর গভীর চুম্বনে কেঁপে উঠলাম। না চাইতেও চোখ জোড়া খুলে ফেললাম। অন্ধকারের মধ্যে হাতড়ে কারোর মুখ দেখতে না পারলেও তার সুঠাম দেহ আবিষ্কার করলাম। মনের মধ্যে তোলপাড় হচ্ছে। খুব বিশ্রী ভাবে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জানি মানুষটার করা এই অপ্রত্যাশিত কাজটা ইচ্ছে করে নয় তবুও মনটা বারবার আহত হচ্ছে ভেতরটা। মুখের উপর তার গরম নিঃশ্বাস আঁচড়ে পড়তেই আবারও চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিলাম। চিন্তাক্লিষ্ট মন আমার এই অজানা ছোঁয়ার হদিশ চালাতে বসলেই শরীর শূন্য হয়ে আসলো। চটজলদি চোখ জোড়া মেলতেই তার অস্তিত্বের বিলুপ্তি ঘটার আভাস পেলাম। ধড়ফড়িয়ে উঠে দাঁড়ালাম। আশেপাশে নজর দিয়ে তাকে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু কারোর হদিশই মিলল না। পুরো লাইব্রেরী জনমানবশূন্যতায় খা খা করছে। আমার মনের ছটফটানির কাছে হার মেনেই এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম। পা টিপে টিপে আবারও হাঁটা ধরলাম। দু-তিন টা বুক শেল্ফ ফেলে আসতেই দেখলাম স্টুডেন্টরা এক এক করে ভেতরে ঢুকছে। ডিম লাইট গুলো আস্তে আস্তে নিভে গিয়ে বাকি লাইট গুলো জলে উঠছে। চারপাশে আলো পড়তেই সমস্ত অন্ধকার কেটে গেলো। চারপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে ভাবলাম,
—-” ঐ মানুষ টা কে ছিলেন?”
—-” হোয়্যার ইজ মাই শার্ট?”
মনটাকে স্বস্তির করেই হাঁটছিলাম। আচমকা পাশ থেকে কারোর কন্ঠ পেতেই ধড়ফড় করে উঠল মন। চমকে উঠে দুই হাত জড়ো করে মুখ চেপে ধরলাম। কাঁপা-কাঁপি করে পাশ ফিরে তাকাতেই মনটা আরেক দফা ধড়ফড় করে উঠলো। বাবাকে বলে খুব শীঘ্রই কোনো ডক্টরের কাছে এপয়েনমেন্ট নিতে হবে। কেননা, সামান্য ব্যাপার গুলোতেই খুব বেশি বেশি চমকাচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে একদিন ঠিক হা/র্ট অ্যা;টা;ক এসে যাবে। তখন আমার আত্মা গান গাইবে, আমি জ্ঞান হারাবো ম/রে/ই যাবো! বাঁচাতে পারবেনা কেউ!”
রাফিদ ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছেন। হাতে বোধকরি এসাইনমেন্টের কিছু খাতা। লিখতে এসেছেন নাকি এগুলো দিয়ে কাউকে বাঁশ দিতে এসেছেন?
মুখে জোরপূর্বক হাসির রেখা টানার চেষ্টা করলাম। আমতাআমতা করে বললাম,
—-” ববব ভালো আছেন ব্রো!”
রাফিদ ভাই ভ্রু কুঁচকে ফেললেন। আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ ঘুরিয়ে দেখে গম্ভীর মুখে বললেন,
—-” হু,ভালো। তুমি কেমন আছো?”
উনাকে গম্ভীর নয় শান্ত চাহনিতেই বেশি ভালো লাগে। হয়তো উনি জানেন না। তাই এভাবে গম্ভীর মুখে তাকিয়ে কথা বলছেন। আমি শুঁকনো গলায় ঢোক গিলে আবারও আমতাআমতা করে বললাম,
—-” ভ..ভালো! না! ভালো না!”
রাফিদ ভাই শান্ত চোখে তাকালেন এবার। শান্ত কন্ঠে বললেন,
—-” ভালো নাকি ভালো না?”
এবার আর কাঁপা-কাঁপি ব্যাপারটা আসছেনা আমার ভেতর থেকে। কারনটা হয়তো উনার শান্ত চাহনি আর শান্ত স্বর। উনার সো কল্ড ফ্রেন্ড গুলো আশেপাশে নেই। এই সুযোগ। আমি জানি উনি মোটেই খারাপ মানুষ নন। উনি যতটা দেখান ততটা তো একদমই নন। আশা করি উনাকে শার্টের ব্যাপার টা বুঝিয়ে বললে উনি ঠিকই বুঝবেন।
—-” ভাইয়া, আ..আসলে আ..মি আপনাকে একটা কথা বলতে চাই! আই মিন স..সরি বলতে চাই। আসলে হয়েছে কি…”
—-” রাফিদ।”(গলা উঁচিয়ে)
আসলে আর কিছুই হওয়ার সুযোগ দিলো না তার বন্ধুরা। শায়তানকা নাম লিয়া তো শায়তান হাজির। এবার আমার কপালে খারাপ কিছু ঘটে যাওয়া থেকে আর কেউ আটকাতে পারবেনা।
#চলবে____________________
[ ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]