#অস্তিত্ব
#পর্বঃ০৪
#বনলতা
এশার নামায আদায় করে ভাত খেয়ে বিছানায় শুয়ে আছে মায়া।চোখদুটো বড্ড জ্বলছে তার।চিনচিন করে বুকে হওয়া ব্যাথা জানান দিচ্ছে অতীতের কথা।না ভাবতে চায়না সে।ওর অতীতকে সে ভুলে গেছে।মনে করতে চায়না।আজ খাবার টেবিলে উঠেছিলো তমালের কথা।মায়ার বাবা চায়না নতুন করে কোনো ঝামেলা হোক।সেবার বহু কষ্টে সামাল দিয়েছিলো সব।মধ্যবিত্ত হয়েছে বলে কি সম্মান নেই।ভালোভাবে বাঁচার অধিকার টুকু নেই।দরকার হলে মায়া যেন কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দেয়।অনেক পড়াশোনা হইছে। মেয়েমানুষ এর এত পড়াশোনার দরকার নেই।
বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো জানালার পাশে দাড়ালো মায়া।সাবধানে খুলে দিলো জানালার কপাট।জানালা ভেদ করে জোছনা এসে হানা দিলো ঘরে।মায়াদের বাড়ির পাশেই বড় একটা জামগাছ।বড় কালো কালো জাম ধরে তাতে।গাছে চড়ে জাম পাড়ার কতশত স্মৃতি তার।আজ আবারও ইচ্ছে করছে শৈশবে ফিরে যেতে।মানুষের মন বড় অদ্ভুত। সর্বদা পরিস্থিতির বিপক্ষে যায় সে।ছোটবেলায় মনে করত বড় কবে হবে।আর আজ আবারও ইচ্ছে করছে ছোট হতে।বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস।এই দীর্ঘশ্বাসটা রাতের নিস্তব্ধতার আড়ালে হারিয়ে যায়।জামগাছটার আড়ালে চাঁদ দেখা যাচ্ছে। আশ্চর্য আজ পুর্নিমা।আস্তে করে জানালার কপাট টা আবারও বন্ধ করে দিলো।যেমন বন্ধ করেছিলো পাঁচ বছর আগে কতশত স্মৃতি জড়ানো সুখ আর বিষাক্ত বিষাদ।
আশা বাদে সবাই এসেছে আজ।আশাকে জরুরি ভাবে মামার বাড়ি থেকে তলব করা হয়েছে। কারনটা আশাও জানেনা।প্রথম ব্যাচ পড়ে ২য় ব্যাচের জন্য রওনা হয়েছে ওরা।মুহিনের গায়ে ঢোলাঢালা একটা টি-শার্ট। চুল আদোও আচড়ানো কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।ইমরান এর গায়ে সাদা টি-শার্ট আর কালো জিন্স।ইমরান বরাবরই পরিপাটি। শান্তা কালো কুর্তির সাথে কালো জিন্স পড়েছে।গলায় হলুদ স্কার্ফ পেঁচানো। চোখে চশমা।চুলগুলো উচু করে বাধা।মায়ার ভাষায় শান্তাকে আজ পার্ফেক্ট লইয়ার মনে হচ্ছে। মায়ার গায়ে সাদা সুতির থ্রি-পিস। তাতে সুক্ষ্ম সুতার কাজ করা।মায়া আর রোজার সেম ড্রেস।দুজনের চুলই ছেড়ে দেওয়া।কোমড় ছুঁই ছুঁই। মনে হচ্ছে দুজন জমজ বোন।ছোটবেলা থেকেই মায়া আর রোজা একই জামা নিয়েছে।বড় হয়েও তা পাল্টায়নি।
নিরবতা ভেঙে শান্তা বলে ওঠে,
“হঠাৎ কি হলো যে আশাকে মামার বাড়ি যেতে হলো।”
“জানিনা,বাসস্ট্যান্ডে অটোতে চড়ার সময় ওর মা ফোন করে বলে ফিরে যেতে। ওদের কি যেন জরুরি কাজ।কারন বলেনি।তাই আমি একাই এসেছি,” শান্ত গলায় কথাগুলো বলল মায়া।
রাস্তা দিয়ে একটা মেয়ে যাচ্ছে আর আড়চোখে ওদের দিকে তাকাচ্ছে। বিষয়টা খেয়াল করেনি মায়া।শান্তা ফিসফিস করে মায়াকে বলে।তা দেখে মেয়েটি চলে যায়।আশা থাকলে মেয়েটিকে কিছু কথা শুনিয়ে ছাড়ত।আশা নাছোড়বান্দা মেয়ে।দরকার হলে ওর পিছু পিছু দৌড়ে গিয়ে শুনিয়ে আসবে।আশাকে মিস করছে শান্তা।
।
শান্তা বরাবরই শান্ত মেয়ে।পুরো নাম উম্মে হাবিব হাফসা।ডাকনাম শান্তা।ইমরান শান্তা চাচাতো ভাইবোন।শান্তা বড্ড ভয় করে ইমরানকে।যা বলে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে।ভাইয়ের ভয়ে বোনকে আজ অবদি কেউ সামনাসামনি বা আড়ালে কিছু বলার সাহস পায়নি।
———————————
রোজা আজ বড় খুশি।ওর হাসবেন্ড রাফিদ কিছু দিনের জন্য ঢাকা যাবে। কিনা কি অফিসের কাজ। তাই এ কয়দিন রোজা বাপের বাড়ি থাকবে।রোজার আর তর সইছে না।
মায়া আর রোজা একসাথে আজ কলেজ যাচ্ছে। কতদিন পর ওরাএকসাথে হইছে।হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে ওরা।হাতে সময় নিয়েই বেরিয়েছে। রাফিদ কল দেওয়াতে রোজা দাড়িয়ে কথা বলছে।মায়া একটু দুরে দাড়িয়ে আছে।হঠাৎই মায়ার চোখ পড়ল কৃষ্ণচুড়ার গাছের দিকে।পুরো কৃষ্ণচুড়ার গাছ লালে লাল হয়ে আছে।পৃথিবীর সব লাল রংটুকু যেন ঢেলে দেওয়া হয়েছে তাতে।
মায়া ধীর পায়ে এগিয়ে যায় সেদিকে।হায়রে অভাগী মেয়ে।ও যদি ঘূর্ণাক্ষরেও জানত গাছের কাছে দাড়িয়ে থাকা যুবক এর মুখোমুখি হলে তাক কি পোহাতে হবে তবে সে ওদিকে পা বাড়াতো না।বোবা নিয়তি তাকে দেখতেই দেয়নি গাছের নিচে দাড়িয়ে থাকা পুরুষকে।
মাটিতে পড়ে থাকা একটা ফুল কুড়িয়ে নিলো মায়া।হঠাৎই বুঝতে পারে ওর কাছে কেউ আছে।কে হতে পারে রোজা।না রোজা তো ফোনে কথা বলছে।মায়ার হুশ হয় এটা উত্তর পাড়া। আর ও বড়বাড়ির সামনে যে কৃষ্ণচুড়া গাছ আছে ওটার সামনে বসে আছে।
সামনে দাড়িয়ে থাকা যুবকের দিকে তাকায়না মায়া।ওর ইচ্ছে করেনা।বরাবরই নিজের ইচ্ছানুযায়ী চলে সে।এতদিন পর তার সাথে দেখা।অপ্রত্যাশিত সাক্ষাৎ। কি করবে ভেবে পায়না সে।আস্তে আস্তে চোখ তুলে তাকায় সে।গায়ে কালো টি-শার্ট আর কালো থ্রি কোয়াটার পড়ে আছে ছেলেটি।পুরুষালী লোমে পুরো পা ঢাকা।ছেলেটার চোখের দিকে তাকায় মায়া।দেখতে পায় জোড়া ভ্রু ওয়ালা চোখের অধিকারী পুরুষটি ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।
একদিন এই ছেলেটাকেই নিজের বলে দাবী করাতেও মনটা লজ্জায় কুকড়ে যেত।আফসোস আজ আর সেই অনুভূতি নেই।ভালোবাসার মনটা নিদারুন অপমানে অভিমানের দেয়ালে তৈরি হয়েছে অজস্র ঘৃনা আর অবহেলার চরম অভিযোগ। দেয়ালটা তাদের দুজনকে নিয়ে গেছে বহু যোজন যোজন দুরে।
“আর কতদিন পালিয়ে বেড়াবে মায়া,দিনশেষে ধরা দিতেই হবে”। শান্ত গলায় বলে ছেলেটি।
মায়া মন প্রাণ দিয়ে চেচিয়ে বলতে চাইল, ” এই ছেলে আমি তোমায় ভালোবাসি না।কখনো না।আই যাস্ট হেইট হউ”।কিন্তু পারল না।
এভাবে দাড়িয়ে থাকলে কেউ যদি দেখে নেয়।তবে মায়ার কি হবে।আশেপাশে তাকিয়ে রোজাকে খোজার ব্যার্থ চেষ্টা চালালো সে।হঠাৎই দৌড়ে পালালো সে।হতভম্ব হয়ে গেল ছেলেটি।ও ভেবেছে মায়া রাগ করছে,অভিমান করেছে।ছেলেটির ঠোটের কোনে ফুটে ওঠে হাসির আভা।
দুরে কোনো একজন না চাইতেও তাদের সামনাসামনি দেখে ফেলে।রাগে হিতাহিত ঙ্গানশুণ্য হয়ে পড়ে সে।কাধের ব্যাগটা ছুড়ে মারে।
রাগে ফেটে পড়ছেন বাতাসি বিনি।সকালে ছাঁদে দাড়িয়ে সবটাই দেখেছে সে। যা করার তা জলদি করতে হবে।এতদিন পরেও তমাল শুধরায় নি।আর ওই মেয়েটা।যেই বড়লোকের হাড়ি দেখেছে অমনি ছিকেয় উঠেছে।
#চলবে,,,,,,,
#অস্তিত্ব
#পর্বঃ০৫
#বনলতা
আজ মায়া অন্যদিনের তুলনায় চুপচাপ। আশাও চুপ হয়ে আছে।সেদিন মামার বাড়ি যাওয়ার পর এসে থেকে সে আর বেশি কথা বলে না।যেন সে কথা বলা ভুলে গেছে।অরেন্জা রেস্টুরেন্টে বসে আছে ওরা।আজ কারো মুখে কথা নেই।অথচ কদিন আগে কতই না প্রাণবন্ত হাসিখুশি ছিলো ওরা।এই তো সেদিন যখন ওরা জেনেছিলো রোজার বেবি হবে এইত এইখানেই সেলিব্রেশন করেছিলো ওরা।রোজার শরীর ভালো লাগছে না তাই ওরা ফিরে এলো।
বাসায় এসে ব্যাগটা রাখতেই সামনে এসে দাড়ালো মায়ার মা।গম্ভীরমুখে বলল,
“কই ছিলি এতক্ষণ ”
“কলেজে”
ঠাস করে একটা চড় পড়ল মায়ার গালে।
“কতবার কল দিতে হয় তোকে।কি এমন রাজকার্য করিস যে কল দিলে রিসিভ করে কথা বলার সময়টুকু পাস না।” চেচিয়ে বলে ওঠে মায়ার মা।
ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে মায়া।ঘটনার আকস্মিকতায় সে হতভম্ব। গালে হাত দিয়ে ভাবতে থাকে।অপমানে,ক্রোধে আর লজ্জায় ডুকরে কেঁদে ওঠে মায়া।এমন ঘটনা প্রায় ঘটে।কই মা তো কখনও গায়ে হাত তুলেনি।আজ কি এমন করলাম।
মেয়েকে কাঁদতে দেখে হুশ হয় তার।মেয়ে বড় হয়েছে। ছোট নেই। রাগের মাথায় যেন ভুলে গিয়েছিলো সে।মাথায় স্বযত্নে হাত বুলাতে গিয়েও ফিরে আসেন উনি।ভেঙে পড়লে চলবে না।শক্ত হতে হবে।যতটা শক্ত হলে কারোর অপমানের উচিত জবাব টুকু দেওয়া যায়।আজ যা হয়েছে তা সহ্যের বাহিরে।সবকিছুর একটা সীমাবদ্ধতা থাকে।আজ ওরা যা করেছে তা সকল সীমাবদ্ধতা অতিক্রম হয়ে গিয়েছে।
“আগামী শুক্রবার তোকে দেখতে আসবে।তৈরি থাকিস।আবার বলতে হয়না যেন।পারলে ঢাকঢোল পিটিয়ে সারাপাড়া জানিয়ে রাখিস।”কথাগুলো একদমে বলে মায়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে চলে যান মায়ার মা।
এত এত পরিস্থিতির সামনে মায়া ভেবে পায়না কি করবে।আজ সে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। কি এমন হয়েছে আজ।যার কারনে মায়ার ওপরে কারোরই মায়া নেই।চাপা স্বরে কাঁদতে থাকে মায়া।
—————————–
অনেক রাত হয়ে গিয়েছে তবুও বড়বাড়ির আজ সবাই জেগে আছে।যেখানে সবাই সন্ধা রাতেই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।ছোট্ট এশাও ঘুমায়নি।মায়ের কোলে গুটিশুটি মেরে ঘাপটি মেরে আছে।আর ঘুমাবেই বা কি করে।ভাতই খাওয়া হয়নি কারোর।একটু আগেই বড়বাড়িতে অনেক কথা-কাটাকাটি হয়েছে।
—————————————
# তুমি না ডাকলে আসব না,
কাছে না এসে ভালোবাসবো না।
দুরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়,
নাকি দুরে যাওয়ার বাহানা বানায়।
দুরের আকাশ নীল থেকে লাল,
গল্পটা পুরনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি,
তুমি না বাসলেও আমি বাসি❤️
একটাই গান।কিন্তু তা শুনে চলেছে দুরন্ত পাচজন মানব-মানবী।কি আছে তাদের ভাগ্য। পরবর্তীতেই বা কি হতে চলছে তাদের জীবনে।
(এতটুকুর জন্য দুঃখিত।পরের পর্বটা বড় হবে ইনশাআল্লাহ। ব্যাস্ততায় লেখা হয়নি।এতটুকুই লেখা ছিলো)
চলবে